মধুবনী চিত্রকলা || অপক্ক হাতের আঁকিবুঁকি || আর্ট পোস্ট

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000227250.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদের জন্য এনেছি মধুবনী চিত্রকলা৷ ছবির বিস্তারিত ধাপ সম্পর্কে বলার আগে আপনাদের বলতে চাই মধুবনী চিত্রকলা কি৷

শোনা যায় মিথিলার রাজা জনক তার কন্যা সীতার যেদিন দশরথ পুত্র শ্রী রামচন্দ্রের সাথে বিবাহ হয়েছিল সেইদিন রাজা আদেশ দিয়েছিলেন এই বিবাহদৃশ্য চিত্রায়ণ করার জন্য৷ সেই যুগে যেহেতু ক্যামেরার প্রচলন ছিল না তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই চিত্রায়ণের দিকেই মানুষের জোর ছিল বেশি। এমন দৃশ্য বা গল্প আমরা পরবর্তীকালে অনেক রাজারাজড়াদের ক্ষেত্রেও দেখেছি। মিথিলা রাজ্যের এক মহিলা শিল্পী চিত্রায়ণ করেছিলেন৷ তারপর থেকেই ঐতিহ্যগতভাবে এই চিত্রকলা বিভন্ন সম্প্রদায়ের মহিলারা করে থাকেন৷ মূলত ভারত বর্ষের বিহার রাজ্যের মধুবনী জেলা ও নেপালের মিথিলা অঞ্চল এই শিল্প উৎপাদনের কেন্দ্র৷ এই বিশেষ ধরণের চিত্রকলাটি আঁকার জন্য ব্যবহার করা হয়, দেশলাই কাঠি, নিব কলম, পাতলা ব্রাশ এবং আঙুল। চিত্রকলার বেশিরভাগ কলকাই খুব সুক্ষ্ম ও জ্যামিতিক আকারের হয়। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই চিত্রকলা আঁকার জন্য ব্যবহার করা হত প্রাকৃতিক রঙ।

একটা বর্গাকার বা আয়তাকার চার বাহুর ভেতরে চিত্রায়ণ করা হয়৷ হিন্দু ধর্মের নানান উৎসব অর্থাৎ নানান পূজো পার্বন না অনুষ্ঠান যেমন কালী পূজা, দূর্গাপূজা, বিবাহ, জন্ম, দোলযাত্রা, সূর্যশক্তি, উপনয়ন ইত্যাদির জন্য এটির নির্দিষ্ট ও আলাদা রীতিগত বিষয়বস্তু রয়েছে। বেশ কিছু চিত্রকলায় তৎকালীন সমাজের নারীরের জীবনযাপনের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়, যেমন মেয়েদের সাজগোজ সমেত কোন চিত্রায়ণ, আয়না, শাড়ি পরার ধরণ ইত্যাদি। বর্তমানেও এই সব চিত্রকলা তৈরি হয়৷ তবে সময়ের সাথে সাথে অভিযোজন ঘটেছে। নানান ধরণের পশু পাখি সহযোগেও চিত্রায়ণ হয়৷ যেমন ময়ূর, পাখি মাছ উল্লেখযোগ্য।

আমি আজ একটি মাছ এঁকেছি৷ যার বর্ডারে কোন কলকা করিনি। তবে মধুবনী চিত্রকলার চারপাশে জ্যামিতিক কলকা হয়৷ আসলে আমি গতকাল থেকেই খুব ব্যাক পেইন ও স্পন্ডালাইটিসের সমস্যায় আক্রান্ত৷ তাই করে উঠতে পারিনি৷ পরেরবার যখন আঁকব তখন অবশ্যই করব৷ এই চিত্রায়ণ কোনভাবেই এক দিনে করা যায় না৷ কিন্তু আমি যেহেতু শুধু মাছ এঁকেছি তাই এক দিনেই কয়েক ঘন্টায় হয়ে গেছে৷ আমার আরও বেশ কিছু মধুবনী আর্টের ছবি আছে৷ পরে পরে আপনাদের সাথে তার ছবি শেয়ার করব৷ তবে বলে রাখি আমার কোন প্রথাগত শিক্ষা নেই৷ গুগুল, ইউটিউব থেকেই মূলত শিখেছি। এছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করার সময় সামান্য জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল। যেখান থেকে এই চিত্রকলার ইতিহাস ও বাকি বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে আজ লিখতে পারলাম। ভুল ত্রুটি তো অনেক আছে। নিজগুণে সেইগুলি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করব৷

1000227664.png

  • স্কেচবুক
  • কালো জেল পেন
  • পেন্সিল
  • ইরেজার
  • স্কেল
  • জল রঙ
  • গোল ও চ্যাপটা তুলি

  • 1000227670.png


    আসুন ধাপে ধাপে দেখে নিই কিভাবে এঁকেছি।

    প্রথমেই আমার স্কেচবুকে এই ভাবে আয়তাকার বর্ডার এঁকে নিয়েছি। আর সংযোগ লাইনগুলো মুছে দিয়েছি৷

    এবার একটি মাছের আকার আঁকলাম এবং ল্যাজের দিকটা ডিজাইন করলাম।

    মাথার দিকে কয়েকটি কানকো আঁকার মতো করে লাইন টেনেছি। আর বডিতে কারুকার্য করার চেষ্টা করছি।

    পুরো পেন্সিলের আউটলাইন আঁকাটা এমন দেখতে করেছি। এবার এটাই পেন দিয়ে আঁকব৷ কালো জেল পেন এঁকেছি।

    অল্প অল্প করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখন আর পেন্সিল ব্যবহার করছি না৷ সরাসরি পেন দিয়েই করে নিচ্ছি৷ আমার পেনটি সাধারণ কালো রঙের জেল পেন৷

    একটু একটু করে আমার কাজটা প্রায় শেষের পথে। মাছের গায়ে আমি আঁশের মতনই অর্ধ বৃত্ত এঁকেছি। আর সেটা কেই সুন্দর যাতে দেখায় তাই ভেতরগুলো ডার্ক করে দিয়েছি কালো কালি দিয়েই। সবশেষের ছবিতে চোখ আর মুখ এঁকেছি৷

    মাছ এঁকে নেওয়ার পরে ভীষণ খালি খালি লাগছিল তো ভাবলাম কি যেন একটা হয়নি, সেই না হওয়াটা আসলে মাছের পাখনা। তাই দুদিকে করে মোট চারটি পাকনা এঁকে নিয়েছি। আর সেগুলোও হাল্কা করে কারুকাজ করেছি৷ সব শেষে ভেতরের ফাঁকা অংশটা লাল রঙ দিয়ে ভরে কালো রঙের বর্ডার দিয়েছি। আমার কাছে পোস্টার কালার নেই৷ তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই জল রঙ ব্যবহার করেছি৷ যে কারণে কালো রঙটা গাঢ় হয়নি৷ একটু হাল্কা হাল্কা দেখাচ্ছে৷ লাল রঙটাও ভালো হয়েছিল না প্রথমে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেল যখন তখন আরেক কোড চাপালাম। দিতে অনেকটা উজ্জ্বল ও সুন্দর দেখাতে শুরু করেছে৷

    এই যে সব শেষে এসে সিগনেচার দিয়ে দিলাম। আর এই ভাবেই আমার বাংলা ব্লগের জন্য তৈরি করে ফেললাম প্রথম মধুবনী চিত্রকলা৷


    1000227677.png


    1000227579.jpg

    1000227581.jpg

    বন্ধুরা, আপনাদের কেমন লাগল আমার আজকের নিবেদন? আমি জানি আমার বেশিরভাগ বন্ধুরাই এখন নেই এখানে। তবে আশা করব আপনারা পরে যখন দেখতে পাবেন অবশ্যই জানাবেন কেমন হয়েছে। আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি।

    টা টা

    1000205476.png


    1000216462.png

    পোস্টের ধরণআর্ট পোস্ট
    ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
    মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
    লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
    ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


    1000217106.jpg


    ৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে


    1000217198.png


    1000227693.png


    1000162998.jpg

    আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



    কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

    আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

    🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


    1000205458.png

    1000205505.png

    Sort:  
     5 days ago 

    আহা। যেমন ছবি, তেমন মধুবনী আর্টের হাল হকিকত ব্যাখ্যা। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। তোর শিল্পসত্ত্বা মাঝে মাঝে আমায় চমকে দেয়। একাধারে কাব্য রচনা থেকে শুরু করে চিত্রকলার দক্ষ কাজ, আবার রন্ধনশিল্পে জাদুকরী দক্ষতা, সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ একটি মানুষ। হাতের কাজ দেখলে যেন তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। অসাধারণ হয়েছে মাছটি৷ আর মধুবনী আর্টের ব্যাখ্যাও অসাধারণ।

     4 days ago 

    তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হয়েছি। তুমি তো জানোই আমি এইসব নিয়ে একটা সময় প্রচুর কালচার করেছিলাম। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে লকডাউনের অনেক সময়। রোজদিন কিছু না কিছু বানাতাম আর তোমাকে কত ছবি পাঠিয়ে পাঠিয়ে জ্বালাতাম। এখন আবার এখানে এসে নতুন করে শুরু করেছি।

    Coin Marketplace

    STEEM 0.17
    TRX 0.13
    JST 0.027
    BTC 60843.64
    ETH 2711.61
    USDT 1.00
    SBD 2.43