🍁নমস্কার🍁

---

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

---

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা ভালই আছেন। আমিও মোটামুটি ভালোই আছি। আমার বাংলা ব্লগের সমস্ত বন্ধুদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

---

---

Source

~ বলতো কে বেশি সুন্দর?
~ ছেলে মেয়ের মধ্যে বলছিস?
~ আচ্ছা তাই ধরে নে, এবার বল
~ অবশ্যই মেয়েরা! এতে বলার কি আছে।
~ ধ্যাৎ, ছেলেরা।
~ তোর কি চোখে ন্যাবা হল?
~ না রে,
~ তবে?
~ আচ্ছা তর্কের খাতিরে তুই ভেবে দেখ সিংহ বাঘ ময়ূর সবারই কিন্তু পুরুষ ভার্সনটা বেশি সুন্দর।
~ এইভাবে কে তর্ক করে?
~ কেন যুক্তি কি নেই?
~ তোর সাথে কথা বলা দায়। তুই তো নিজেও একটা মেয়ে তাও এরকম বলছিস?
~ হা হা হা! তাতে কি? বলবো না?

ডিভাইস DSLR N90
Location

কে বেশি সুন্দর, নারী না পুরুষ, তাই নিয়ে যুক্তি-তর্ক হাসাহাসির সভায় আপনাদের আমন্ত্রণ

পৃথিবীর মতো সুন্দর আর কিছু আছে কি? অথচ পৃথিবীর ভেতর যা কিছু তা সবার নজরে সুন্দর নয়। এই আপেক্ষিক অনুভূতিটি আসলেই কী অদ্ভুত তাই না? এই যেমন দেখুন যখন দেখাশোনা করে বিয়ে হয় একটি মেয়েকে দেখতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ছেলে রিজেক্ট করে দিল, তাহলে কি মেয়েটার বিয়ে হয় না? নাকি যে লোকটা বিয়ে করেছে সে ভাবছে 'ইস আমি একটা কুৎসিত মেয়েকে বিয়ে করলাম!' আবার দেখুন দোকানে একটা জামা কিনতে গেলে আমরা কতই না জামা নেড়েচেড়ে দেখি সব ভালো লাগেনা কিন্তু যেগুলো ভালো লাগেনা সেগুলো আবার কারণ না কারোর ভালো লেগে যায়। দিন শেষে কিছুই তো পড়ে থাকে না তাই না?

কিন্তু আজকে আমরা আপামর দেখব। প্রথমে আমরা মানুষের মধ্যে দেখি, নারী পুরুষের আমরা যতই ভেদাভেদ করতে না চাই, ভেদাভেদ কিন্তু আছেই। নারী পুরুষ সমান সমান এ কথাটা শুধু কথার কথা বলেই আমার মনে হয়। যেদিন থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং সৃষ্টি যুগের পর যুগ ধরে অভিযোজন ঘটিয়ে এগিয়ে চলেছে সেদিন থেকেই নারী পুরুষ হল মুখোমুখি দুটি সূর্য কিংবা আলো। এ তো গেল তাত্ত্বিক কথা। কিন্তু আমাদের ঘরোয়া দৃষ্টিতে দেখলে স্পষ্ট হয় নারী আর পুরুষের মধ্যে পুরুষরাই বেশি সুন্দর। এই কথাটা আমি একজন মেয়ে হয়ে বলছি বলে অনেক মেয়েই আমাকে তেড়ে আসতে পারেন, কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি, আমরা যখন কোথাও নেমন্তন্ন বাড়ি যাই বা বেড়াতে যাই আমাদের মেয়েদের কিন্তু সাজের অভাব নেই। কি না কি করি কত ঘন্টা ধরে সাজতে থাকি। আর শুধু কি তাই? তারপর কোন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুললে আমাদের দেখতে ভালো লাগবে সেই নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা। এমনকি কি শাড়িটার সাথে কি ব্যাগটা নেব তা নিয়েও চিন্তার শেষ নেই অথচ বাড়ির ছেলেদের দেখুন একটা জামা প্যান্ট গলিয়েই চলে যায়, কিংবা বেশি সাজগোজের প্রয়োজন হলে চোস্তা পাঞ্জাবি। তাদেরকে পাউডার মেখে ফর্সা দেখাতে হয় না, অনেক ধরনের গয়না পরে নিজেকে উজ্জ্বল দেখাতে হয় না। তাও সেন্টার অফ অ্যাটট্রাকশন হিসেবে ছেলেরাই নজর কাড়ে।

মেয়েদের সব থেকে হাস্যকর ব্যাপারটা হল, এক আলমারি ভর্তি জামা কাপড় থাকার পরেও কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় তাদের কোন জামাকাপড় থাকে না। শুধু তাই নয় তাদের মানাবে এমন কোন জামাও নেই। অথচ প্রতিটা পোশাকই বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে দোকানদারের মাথা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে কেনা। আর এক্ষেত্রে ছেলেদের! বছরে তারা প্রয়োজনের খুব বেশি হলে দুটি কি চারটি জামা প্যান্ট কেনে। আর যতদিন না একেবারে ছিড়ে যায় ততদিন তাদের পরার মতো জামা উপচে পড়ে। ভুল বলছি, খুব একটা?

আচ্ছা মানুষ বাদ দিই সত্যি সত্যিই যদি পশু পাখির মধ্যেও দেখি পুরুষরা কিন্তু অনেক বেশি সুন্দর, নরম এবং মনোরম হয়। যেমন দেখুন ময়ূর ময়ূরী, আমরা যাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা করি সেটা কিন্তু ময়ূর। আবার সিংহ সিংহী, বাঘ বাঘিনী। এমনকি ছেলে পাখি মেয়ে পাখির মধ্যেও ছেলে পাখিগুলোই বেশি সুন্দর হয়। আমি জানি না কেন মেয়ে পাখি গুলোর মধ্যে বেশ রুক্ষতা থাকে। অথচ কথায় বলে পুরুষ জাতটাই নাকি কঠিন। সত্যিই কি তাই? পুরুষ হাউমাউ করে দেখাতে পারেনা বলে, তারা সবটা গিলে নিতে পারে বলে তারা কঠিন? নাকি তাদের সহ্য ক্ষমতা বেশি? নাকি তাদের লড়াই করার ক্ষমতা বেশি?

ডিভাইস- DSLR N90
Location

আসলে 'সুন্দর' এই আপেক্ষিক বস্তুটি নির্ভর করে মনের ওপর। নারী বা পুরুষ উভয়েরই যার মন যতখানি পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ তাকে ততখানি সুন্দর দেখায়। আমার এই কথাটা যদি মনে না ধরে একটা শিশুর কথা ভাবুন সে ছেলেই হোক বা মেয়ে, পৃথিবীর সমস্ত শিশুদের আমরা বলি ঈশ্বরের মতো সুন্দর। অথচ দেখুন পৃথিবীতে মতো শব্দটির কিন্তু কোন গুরুত্ব নেই। কিছু একটা খানিকটা অন্য কিছুর মতো। আগাগোড়া হুবহু একই রকম দুটো জিনিস হয় না। এমনকি যমজ সন্তানদের মধ্যেও তফাৎ আছে। তাই এই মতো শব্দের জোরটা খানিকটা সামান্য এবং তাৎক্ষণিক। এই কথার উপর ভিত্তি করে আমরা যদি বিচার করি তাহলে একটি শিশু ততক্ষণ ঈশ্বরের মতো যতক্ষণ সে অবলা শিশু। যতক্ষণ তার চাহিদাগুলো জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন এবং সাধারণে আটকে থাকে। মানে, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমোনো এবং বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের করা। একটি শিশু তখনই কাঁদে যখন তার ঘুম পায়, যখন তার খিদে পায়, সে মুখে বলতে পারে না কিন্তু ওইভাবে সে জানান দেয়। এছাড়া তার কিন্তু সত্যি সত্যিই বিশেষ কোনো চাহিদা থাকে না। আবার এই শিশুগুলিই যখন বড় হয়ে যায় তখন তাদের মধ্যে নানান ধরনের লোভ লালসা জন্ম নেয়, ক্ষণে ক্ষণে মুখের ভাব ভঙ্গি বদলায়। বলা ভালো মনের ভেতর চলতে থাকা আলোড়নের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যখন কিছু প্রাপ্তি ঘটে তখন তার মুখ সেই মুহুর্তে খুশি থাকে, আর সেই সময় কিন্তু ফর্সা কালো ট্যারা বাঁকা কোন কিছুই প্রাধান্য পায় না, তাকে সুন্দর দেখতে লাগে। যা সুখের প্রতিফলন, আনন্দের প্রতিফলন।

এই সুখ আর আনন্দর সামনে যদি নারী-পুরুষের মধ্যে নিয়ে আসি তাহলেও আমরা দেখতে পাই মেয়েদের অসন্তোষের শেষ নেই। ছেলেরা যেখানেই যাক যেমনই থাকুক সবেতেই তারা মানিয়ে নেয়, হয়তো জীবনবোধটা তাদের সামান্য হলেও বেশি। আবার মেয়েদের দেখুন, ফাইভ স্টার হোটেল চাই, মাসে হাত খরচের জন্য অন্তত কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার টাকা চাই, এবং সবটা মিটে গেলেও পাশের বাড়ির বন্ধুকে যদি দেখে তার থেকে কোন অংশে একটুখানি বেশি বা তার থেকে আলাদা তাহলেই ভাবতে বসে যায় "যাঃ ওটা তো আমার নেই তাহলে কি হবে " যেন পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ধ্বস নামলো।

অবশ্যই এই কথাগুলো কিন্তু সমস্ত পুরুষ এবং সমস্ত নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হিসেবে জায়গা পায় না। ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমেরই উদাহরণ হয়। কারণ এর মধ্যে যে হিংসা নেই বিদ্বেষ নেই একথা বলা কখনোই নীতি সম্মত নয়। নারী-পুরুষ উভয়েই মানুষ এবং ষড়রিপু সম্পন্ন মানুষ। সেই রিপুকে কে কিভাবে প্রকাশ করছে, কে কিভাবে ব্যালেন্স করছে তার প্রতিফলন যেমন তার মনের উপর পড়ে তেমনি মুখের উপরেও ছাপ আসে। আর তার ওপরেই নির্ভর করে কোন মানুষের সৌন্দর্য। শুধু মানুষের নয় পশু পাখি সবাইরেই। একটি সিংহ যখন কোন কুকুর ছাগলকে কামড়ে খায় তখন তাকে ক্ষুধার্ত হিংস্রই লাগে, সুন্দর মনোরম লাগে না।

ডিভাইস DSLR N90
Location

আসলে সৌন্দর্যের শিরদাঁড়া হল ভালোবাসা। যে যত উন্মুক্ত ভাবে কাউকে ভালোবাসতে শিখেছে এবং পেরেছে তার মতো সুন্দর পৃথিবীতে আর কেউ নেই। জীবন তো ক্ষণিক আজ আছি কাল নেই। ছোট ছোট চাওয়া পাওয়ার পেছনে প্রতিযোগিতামূলক ইঁদুর দৌড়ে নাম না লিখিয়ে পৃথিবীকে, তথা জীবনকে তথা প্রকৃতিকে তথা একে অপরকে ভালবাসাই সত্যিকারের সৌন্দর্য। উন্মুক্ত মন নিয়ে, উন্মুক্ত চোখ নিয়ে ভালবাসুন। ভালোবাসার কোন বিকল্প নেই। ভালোবাসার মতো নিরাময় জগত সংসারে আর কিছুই নেই।

বন্ধুরা, আর বেশি বকবক করবো না, লেখার পরিধি এখানেই শেষ করছি। আপনারা খুব ভালো থাকুন, আর সবাইকে ভালো রাখুন। কাউকে ভালো রাখার মত ভাল কাজ পৃথিবীতে বোধহয় দ্বিতীয় কিছু নেই।

এলাম।

টাটা।

---

---

৫% বেনিফিসিয়ারি এবিবি স্কুল ও ১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে

---

---