🪷নমস্কার বন্ধুরা🪷

🙏🙏🙏

---

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

---

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা বেশ ভালই আছেন। আমিও ভালো আছি।

আমার বাংলা ব্লগে আসার পর থেকে আমি অনেকবারই ভেবেছি এই পোস্টটা শেয়ার করার কথা। কিন্তু সময়ের অপেক্ষা করেছি। ভেবেছিলাম কোন এক বিশেষ দিনে আমার বন্ধুকে উপহার হিসেবে দেব। আসলে আমাদের বাসস্থান গত দূরত্ব এতই বেশি যে আমি চাইলেই কোন কিছু দৌড়ে গিয়ে দিয়ে আসতে পারি না। হয়তো ডাক মাধ্যমে সম্ভব, কিন্তু আজও সেভাবে জেনে উঠতে পারিনি। কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, একদিন আমি ঠিক জেনে নেব।

এক মাসের সামান্য বেশি কিছুদিন হয়েছে আমাদের আলাপ। আমাদের মানে আমার আর সেলিনা সাথীর। সেদিন বেশ সকাল বেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতা গিয়েছিলাম, ডেকেছিলেন পূবালী দেব দিদিভাই, কিছু কাজ মিটিয়ে কলেজস্ট্রিট পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেছিল। কলেজস্ট্রিটের রাজর্ষী হোটেলে যেতে বলেছিলেন দিদিভাই৷ সে এক পুরনো বাড়ি! সিঁড়ি উঠেই যাচ্ছি ঘর আর আসে না৷

ও পুবালী দি
-এই ঘরে না, ওই দিকে।
-ওহ, সরি সরি।
-না না, আসুন না, বসবেন৷
-না না ঠিক আছে। ওইদিকেই যাচ্ছি। আপনি রেস্ট করুন।(উনি হেলান দিয়ে রেস্ট করছিলেন)।

হুড়মুড়িয়ে সামনের ঘরটা থেকে বাঁ দিকে চলে গেলাম। সেখানে আরও কিছু বাংলাদেশী কবি ও পুবালীদি বসেছিলেন। আলাপ হল৷ কথা হল। খানিক পর ওই সামনের ঘরের মেয়েটি যিনি ঘর দেখিয়েছিলেন, ফুলছাপের দুধসাদা চুড়িদারে এলেন এই ঘরে৷ টুকটুক করে আলাপ হল। আস্তে করে বিছানায় উঠে আমার ঠিক পাশটিতে সামনের দিকে মুখ করে বসলেন। বসলেন সেলিনা সাথী। বললেন, 'দিদি আপনার কানের দুলটা তো বেশ', ততক্ষণে বাকিদের সাথেও আলাপপর্ব শেষে আমরা নানান বিষয়ে গল্প করছি। ওনারা নন্দনে যাবেন বেড়াতে৷ আমরা যাব রবিঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে। সবার সাজগোজ পর্ব শেষ হলে শুরু হয় ছবি তোলার পালা। আমি কোনদিনই খুব একটা ফটোপ্রেমী নই। বরং হঠাৎ করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই অস্বস্তি বোধ হয়ে৷ সাথী বললে, 'দিদি দাঁড়ান না, এই স্মৃতি ধরে রাখি, যখন একা হব বা হঠাৎ দেখব সব মনে পড়বে'। ওনারা আমাদের অতিথি। প্রথম পরিচয় আমার সাথে হলেও আহ্নিকের (পত্রিকা) পক্ষ থেকে ওনারা আমাদের আমন্ত্রিত অতিথি৷ তাই কথা ফেলার সাধ আর সাধ্য দুটোই ছিল না। কলেজ স্কোয়ারকে পেছনে রেখে শুরু হল ফটো সেশন৷

সেদিন যে যার পথে বেঁকে যাবার আগে কথা হল পরেরদিন ঘোরাব, শপিং এ নিয়ে যাবো৷

এদিকে সকালে বেরিয়ে বাস পেতেই এতো দেরি লজ্জার মাথা খেয়ে প্রায় এক ঘন্টা পর এসে পৌঁছোলাম৷ ওরা কিছুই খায়নি তখনও, আমার খুব খারাপ লাগছিল৷ সোজা নিয়ে গেলাম হাতিবাগান। ডিম পাউরুটি আর মাটির ভাঁড়ে চা। কলকাতার ছোট্ট দোকানগুলির এই সামান্য রান্না কিন্তু অনায়াসেই সকলের মন জয় করে। সেখানে টুকটাক কিছু কসমেটিকস, মেয়েদের জাংক জুয়েলারি এসব কেনাকাটির পর গেলাম বড়বাজার৷ কলকাতার মানুষরা জানেন, বড়বাজারের অলিগলি কত ঘিঞ্জি আর ভিড় হয়৷ সাথী আমার হাত ধরল। আমরা আপনি থেকে তুমিতে এলাম। আমি জানি না সাথী সেদিন কি ভরসা খুঁজেছিল কিন্তু ওই পথে আমরা অনেক গল্প করলাম। একে অপরের অযথা নাক-গলানো গল্প ছাড়া সব রকম কথা বললাম৷ সাথী অনেক ছবি তোলে৷ আমি অবাক হয়ে ওকে দেখেছি শুধু, দেখেছি ওর ভেতরের শিশুকে।

কথায় কথায় সাথী স্টিমিটের গল্প বলল। বলল, আমার বাংলা ব্লগের কথা। আমি শুনে ভাবছিলাম, কলকাতায় যা সাহিত্য করি তা সবটাই সাহিত্যের টানে। এখানে পাওয়ার কিছু নেই৷ তাছাড়া আমরা এখানে কিছু পাব বলে যে লিখি তেমনটা নয়। যে যার পকেটের কড়ি খরচা করে আনন্দ হুল্লোড় করি৷ বলা যায় কবিতা করতে যাবার নাম করে দৈনন্দিন জীবন থেকে একটু পালিয়ে শ্বাস নিই৷ কিন্তু সাথীর কথাটি বেশ মনে ধরল। বললুম 'আমরা পারব?' সাথী না বলেনি৷ হয়তো না বলতে পারেনি। কথা হল, ও দেশে ফিরে গেলে তারপর সব শিখিয়ে দেবে৷ মনে তখন কত উত্তেজনা। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল, ওদের তাড়া, আমাদেরও। তাও জোর করে নিয়ে গেলাম লস্যি খাওয়াতে। বড়বাজারের লস্যি না খেলে যেন বড়বাজার আসাই বৃথা হয়ে যায়। কি বলো সাথী? কেমন ছিল সেদিনের লস্যি?

তাড়াহুড়োতে হোটেলে ফিরে আমি আর সাথী এক ঘরে ঢুকে ঝড়ের গতিতে শাড়ি পরলাম, সাজলাম। ওর দুটো অনুষ্ঠান, দ্বিতীয়টা আমাদের সাথে, আর আমি আমাদের পত্রিকার সদস্য হিসেবে সেদিনের হোস্ট৷ তাই ধীরে চলার ফুরসতই ছিল না৷ সেদিন সাথীর থেকে শিখেছিলাম উঁচু জুতো পরলে শাড়িটা জুতো পায়ে গলিয়েই পরতে হয়। কিন্তু উঁচু জুতো পরে কি করে রাস্তায় হাঁটব তা শেখা হয়নি৷ পরেরবার দেখা হলে শিখব৷

সাথীকে সাথীর প্রথম অনুষ্ঠানে একই রকম হাত ধরে পৌঁছে দিলাম। আমি গেলাম আমারটায়। খানিক পর ওরা সবাই এলো। অনুষ্ঠান চলল, লোকজন বক্তৃতা দিলেন। সবের শেষে সাথী তার বইটি আমার হাতে দিয়ে বললে 'পড়ো তুমি'। আমি হাসছিলাম। আমার মন ভারী হয়ে আসছিল, ওরা চলে যাবে৷ হয়তো আর দেখাই হবে না৷ আমার কত স্বল্প পরিচিত মানুষ চলে যায়, আমি হাসতে হাসতে টাটা করি। কিন্তু সাথীর কাছে মনখারাপ হচ্ছিল। কৃষ্ণপদ মেমোরিয়াল হলের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। কখন নেমে আসবে৷ আরেকবার দেখা করে চলে যাব৷ মন খারাপ হলেও ওকে অনেকটা হাসি দিয়ে বিদায় দিয়েছি।

তারপর কথা নেই। আমার ব্যস্ত ছুটির দিন, ওরও ঘোরাঘুরি। হঠাৎ সন্ধেতে ম্যাসেজ করলাম। ও ফোন করল। গ্রামের বাড়িতে নেটওয়ার্ক-এর সমস্যার দরুন কথা ভালো শোনা যায় না৷ তাও ও বলল অ্যাকাউন্ট খুলতে। খুললাম। শুরুর পথটা ওই দেখিয়ে দিয়ে বলেছিল, ক্লাস মন দিয়ে করো। আমার মান রেখো৷ সিংহাসনে বসা সহজ, সিংহাসন ধরে রাখা কঠিন। আমার আজও তাই মনে হয়৷ ওই বন্ধুত্ব আমাদের আজও চলছে। আমরা আগের থেকে অনেকটাই সহজ হয়েছি৷ আমি এখন ওর কণ্ঠে মায়ের গন্ধ পাই। যেন মনে হয় সাথী আমায় স্নেহ দিচ্ছে।

আজ যখন রেফারেন্সের কথা শুনি বারবার ভাবি সাথী কিভাবে রিস্ক নিল! অন্য দেশের মানুষকে এতো ভরসা কেউ করে? সাথীকে বললে ও একটা দামী কথা বলে। সে আমার ব্যক্তিগত। তাকে মনের ভেতর লালন করি। সাথীর প্রতি অনেক ভালোবাসা মনে জমা হয়। কিজানি কিভাবে বোঝাবো। আজ পর্যন্ত তো কোন বন্ধু এতো কাছের হয়নি, আমার জন্য এভাবে কেউ ভাবেওনি।

তবে জানেন বন্ধুরা, এখানে এসে একেবারে অপরিচিত জোনে শুরুর দিকে বেশ অসুবিধেই হচ্ছিল। কত ভুল করেছি সে আমিই জানি। আজও কত কি বুঝে উঠতে পারি না। সাথী শুধু সাহস দিয়ে বলে ক্লাসটা করো নীলম, সব পারবে, সব শিখে যাবে৷ মন থেকে করো। সাথীর কথাই শুনে চলি। সবটা ঘিরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভুলত্রুটি হচ্ছে, সবটাই অজ্ঞাতে৷ তাই শুধরে নিয়ে আবার এগিয়ে চলার বাসনা নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ খুলি।

সাথী তোমায় নিয়ে এই একটা ব্লগে এতোটুকুতে কিই বা বলব? এভাবে তো আর ভালোবাসা দেওয়া যায় না৷ সব জমিয়ে রাখছি। অনেক আদর তোলা রইল তোমার জন্য। জানো, আমার এমনিই বন্ধু সংখ্যা কম। সেই আকালের মধ্যে কিভাবে তুমি আমার কাছের বৃক্ষ হয়ে উঠলে তা আজও বুঝি না৷ এভাবেই পাশে থেকো। তোমার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা সখী। @selinasathi1

বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের শুরুর গল্প। দিন যত যাবে গল্প ততই হবে৷ তখন আবারও লিখব। লেখার মধ্যে ধরে রাখব নানান স্মৃতির সুদিন।

আপনারাও ভালো থাকুন বন্ধুরা, লেখা, সৃষ্টি, শিল্প সংস্কৃতি সব কিছুর মধ্যে আনন্দে থাকুন। আজ আসি।

টা টা।