একদা বর্ষাদিনে যখন আমিও ফটোগ্রাফার।। প্রথমবার ছবির ঝাঁপি নিয়ে হাজির হলাম।।

in আমার বাংলা ব্লগ15 days ago

।। নমস্কার বন্ধুরা।।


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~


নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত



1000116457.jpg

বাঙালির মিষ্টিমুখ দিয়ে আজকের পর্ব শুরু করছি।

বন্ধুরা কেমন আছেন? আপনাদের ওদিকে মেঘ ঢোকেনি এদিকে আদ্রতা চরমে তাই তো? এমন অবস্থা যে হাড়ে মজ্জাতেও ঘাম দিয়ে দেবে৷ এই সময় শরীরের খেয়াল রাখা খুবই প্রয়োজন। এদিকে পশ্চিম ভারতে কিন্তু বেশ বৃষ্টি৷ ভারতের পশ্চিমে আমি প্রায় ন'বছর। এতো বৃষ্টি দেখে বলি আরব থেকে জল তুলে এখানেই হুড়হুড়িয়ে ঢেলে দেওয়া৷ কাজে পরিশ্রম কম বলেই হয়তো প্রয়োজনের অতিরিক্ত জলই ঝরে পড়ে৷ না না তা নয়। আসলে এই অঞ্চলটা আগে রেইন ফরেস্ট এলাকা ছিল। এখন জনবসতি বেড়ে যেতেই ফরেস্ট ভ্যানিশ। তাই বলে যে বৃষ্টি কমেছে তা নয়। ভারসাম্য হারিয়ে সব কিছুই বেড়ে গেছে৷
বিগত কয়েকদিন ধরে বেশ নাজেহাল করার মতো বৃষ্টি পড়ছে৷ আজও রোদের মুখ দেখিনি। তাই ভাবলাম এই স্যাঁতসেঁতে দিনে আপনাদের সাথে কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করি৷ তবে আজকালের তোলা না। গতবছর লোনাভালা গিয়ে তুলেছিলাম। লোনাভালা বললে আপনারা যতটা না চিনবেন তার থেকেও বেশি চিনতে সুবিধে হবে যদি বলি খান্ডালা। ওই আমির খান আর রানী মুখার্জির গানটা মনে আছে? 'এ ক্যায়া বলতি তু...আতি কা খান্ডালা", ওই খান্ডালা। বৃষ্টির দিনে যেন চেহারাই বদলে যায়৷ আমি তো বলি পশ্চিমের মেঘালয়৷ বন্ধুরা কখনও মুম্বাই দেখতে এলে বর্ষাকালে আসবেন৷ দেখবেন পৃথিবীর প্রকৃতি কেমন নর্তকী হয়ে ওঠে।
যাইহোক ফটোগ্রাফি খুব বিশাল না পারলেও মোটের ওপর শখটা ষোলআনা। জানেন আমাদের ছোটবেলায় মোবাইল ফোন তো ছিলই না৷ ক্যামেরাও গুটি কয়েক। মা বলেন বাবার এক খানা ছিল, কিন্তু কে নাকি নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেয়নি। তবে আমার ছোটমেসোমশাই খুব ছবি তুলতে ভালোবাসতেন৷ যখন সেভেন এইটে পড়ি তখন মেসোমশাই শিখিয়ে দিয়েছিলেন ল্যান্ডস্কেপ তোলার নিয়ম কি কিংবা মানুষের ছবি কেমন তুললে ভালো লাগবে, আবার ফুলের ছবি কিভাবে তুলব। এখন তো আগের মতো রিল সিস্টেম না, মোবাইলে দেখে তোলা যায় তাই ভুল হবার সম্ভবনা প্রায় নেই। তাও ওই কয়েকটা কথা আজও মাথায় রাখি৷ আর বাড়ি গেলে, মাসি বাড়ি গেলে মেসোর তোলা ছবিগুলো টেকনিকালি দেখি। আজ মেসোমশাই নেই। তাও কথাগুলো মনে রাখি৷ আসলে শুধু ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে না৷ মেসোমশাই ছিলেন আমাদের কাছে জীবনের আধুনিকতাকে সহজ করে বুঝিয়ে পথ চলতে শেখানো দুটো সহজ চোখ। কিভাবে নতুন কে নেব। আর নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে নতুন করে গড়ব সেসব তাঁর পাঠে ছিল উন্মুক্ত।
মেসোমশাইয়ের কথা আরেকদিন বলব। আজ বরং ছবি দেখুন। আর বলুন কেমন শিখেছি। আগেই বলে নিই খুব সামান্য ফিল্টার করেছি। তবে বেশিরভাগ ছবিই মোবাইলে তোলা। এই F54 এ।

আমার ফটোগ্রাফি ব্লগের নাম দিলাম

~স্টুডিওপাড়া~



ফটোগ্রাফি ১

1000182394.jpg

বিবরণ- মহারাষ্ট্রের লোনাভালাতে তোলা ছবিটি। এটা কোন অ্যাপ এফেক্ট না এভাবেই মেঘ এসে পায়ে লুটিয়ে পড়ে৷ এক একঝোঁকে মেঘ এমন এসে পড়ে যে গাড়ির লাইটও দেখা যায় না৷ তখন চালানো মুশকিল হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কারণ বর্ষাকালে এদিকে মৌমাছির চাকের মতো মানুষ কিলবিল করে। তার ওপর কিছু মদ্যপ লোকজন তো থাকেই। তাই নিজের সাবধানতা নিজের কাছে৷



ফটোগ্রাফি ২

1000182395.jpg

বিবরণ- লোনাভালাতেই লায়নস পয়েন্ট দেখতে যাবার পথে। এতো মেঘ নেমে আসে যে কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না৷ এই সব দেখে দু'কথা লিখতে মন চায়। যেমনই হোক আমি তো আসলেই শব্দ শ্রমিক। বর্ষায় হয়তো জল কাদা ভালো লাগে না কিন্তু বুকের ভেতর বৃষ্টির শব্দে কত কি রিনরিন করে৷ মনের সিংহ দরজা খুলে সূর্যকে বলি ওগো আজ যে তোমারও ভেজার দিন, এতো পুড়িয়ে চলো, একটু বদলা আমিও নিই? সার সার ঝর্ণায় কত কি ভিজছে, আমায় ডুবিয়ে মারছ অথচ ভাসিয়ে দাও না। নিজেও তো পারো ভেসে যেতে। কি হবে? বড় জোর হারিয়ে যাবো। জানো, যত হারাবে ততই পাবে৷ হোক না নতুন, হোক না অপ্রিয়। তবুও তো পাবে।
এসব বলা হয় না। সিংহ দরজা কেশর চাপা হয়ে পড়ে থাকে আর আমিও পেরিয়ে যাই এক একটা আনকোরা বর্ষা।



ফটোগ্রাফি ৩

1000182396.jpg

বিবরণ- কাঁকড়া পাহাড়ের ওপর কিভাবে এলো আমি জানি না। কারণ আমার কাছে কাঁকড়া মানেই পুকুরে বা খালে বা মাঠে ঘুরে বেড়ানো। ওহ হ্যাঁ সমুদ্রের কাঁকড়াও আছে। কিন্তু পাহাড়ের ওপরে দেখিনি৷ কিন্তু এই কাঁকড়াটি তরতরিয়ে এদিক ওদিক হচ্ছিল। মজার বিষয় কি জানেন? আমি যখন মোবাইল তাক করে ওর পেছন পেছন ছুটছি ও কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে আবার চলে গেল। আমি ভাবছি, আমায় পোজ দিল? এদিকে কাঁকড়াটি ভাবছে হয়তো কোথা থেকে এক আদদামড়া প্রাণী এলো, আবার আমার পেছন পেছন দৌড়োয়, কেন? এ পা তুলে দিলেই তো আমি মরে যাবো! দাঁড়া একটু মেপে নিই, সেই মতো দৌড়ের গতি বাড়াব। হা হা হা!
এরম কিছু ভাবতেই তো পারে, তাই না? শুধু কি মানুষ ভাবে? তা কিন্তু না। সমস্ত প্রাণীই ভাবে তাদের মতো করে। আমরা সবারটা বুঝতে পারি না।



ফটোগ্রাফি ৪

1000182398.jpg

বিবরণ- এই ছবিটি লোনাভালাতে নয়৷ আমি তখন থানে তে থাকতাম, একদিন বিকেলে গুজরাটের দিকে যে রাস্তাটা গেছে সেই দিকে বেরিয়েছিলাম, তো দেখলাম একটা পরিত্যক্ত রাজবাড়ি আছে। একটু উঁচুতে। বৃষ্টিতে রাস্তা খুব খারাপ হয়ে গেছিল ঠিকই কিন্তু সবুজ এতোই ঘন ছিল লোভ সামলাতে পারিনি ওপরে যাবার। ভাগ্যিস গেলাম। নইলে প্রকৃতি যে এমন গাঢ় হয় তা কিভাবে দেখতাম? গ্রামঘরের সবুজ এক রকম আর শহর পেরিয়ে পাহাড়ি সবুজ আরেক রকম। মেয়ে যখন ছবি আঁকে ও বলে 'মাম্মা, কত রকমের সবুজ হয় তুমি জানো?' আমি ওকে হাতে করে দেখাই পৃথিবীর রঙ। আর বলি সব কিছুর নাম লেখা থাকে না। নিজেও কিছু কিছু নাম দিতে হয়। এই যেমন রবিঠাকুর অ্যালামন্ডা ফুলকে বলতেন অলকানন্দা৷



ফটোগ্রাফি ৫

1000182399.jpg

বিবরণ- এই সেই অ্যালামন্ডা। রবিঠাকুরের অলকানন্দা। বৃষ্টি অতিরিক্ত যখন হত তখন এক একসময় মেঘ না থাকলেও হত৷ এমনই এক দিন সকালে উঠে ই ছবিটি তুলেছিলাম। আমার ব্যলকনি বাগান জুড়ে তখন কত ফুল। একবার হিসেব করলাম ঘরে বাইরে করে প্রায় আটত্রিশটা টব। যাযাবর জীবনে কোন কিছুই স্থায়ী নয়৷ এখন এই অলকানন্দা আর নেই। এই ছবির সময় গাছটির বয়স ছিল ৭ বৎসর।



ফটোগ্রাফি ৬

1000182397.jpg

বিবরণ- বৃষ্টির দিনে আমাদের সোসাইটি বাংলায় যাকে পাড়া বলি, সেখানে মেয়েদের আলাদা গ্যাদারিং হত। মানে আমরা নিজেরাই টাকা তুলে এক একজনের বাড়িতে বিকেলে বা দুপুরে বা রাতে আসর জমাতাম, নাচ, গান, আড্ডা নানান ধরনের খেলা এই সব থাকত৷ শহরে সবই শহুরে ব্যপার। তাই যার বাড়িতে যেতাম সে নিজে সমেত তার ঘরটিকে খুবই প্রেজেন্টেবল রাখত। এরমই এক গ্যাদারিং এ একজনের বাড়ির খোলা দেওয়াল আলমারিতে এগুলো ছিল। কি বলুনতো? DIY তে দেখেছেন। মোটা পুরু সুতোকে বেলুনের চার পাশে আঠা দিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে বল তৈরি করা হয় না? এইগুলো ওই পেট খালি সুতোর বল। ভেতরে রঙিন টুনিবাল্ব দেওয়া রয়েছে বলে আরও খুলেছে ব্যপারটা। কী দারুণ দেখতে তাই না? প্রতিবিম্বিত হওয়ার কারণে রূপ যেন ষোলকলায় পরিপূর্ণ৷



অনেকগুলো ছবি দেখিয়ে ফেললাম। ছবিগুলো বেশিরভাগেরই ফোনে আড়াআড়ি তোলা। তাই এগুলো ঘুরিয়ে দিয়েই এরম সরু ও ছোট হয়ে গেছে৷ আচ্ছা বন্ধুরা কেমন দেখলেন বলুন আমার তোলা ছবি৷ ছোট বয়সে ঠিক মতো শিখেছিলাম?
আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকবেন সব সময়। আকাশের মতো আলোকিত হোক আপনাদের রোজের জীবন। অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা জানিয়ে আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। আবার আসব অন্য কিছু নিয়ে৷

টা টা!

সমস্ত ছবিই আমার মুঠোফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি F54 এ তোলা।



~লেখক পরিচিতি~

1000003467.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। তবে বর্তমানে বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ বর্তমানে ভারতবর্ষের পুনে তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা




Sort:  
 15 days ago 

আপনার ছবিগুলোর সাথে বর্ণনা খুবই জীবন্ত ও প্রাণোচ্ছল দেখতে হয়েছে। বেশ নান্দনিক আর রূপময়, এমনিতে ভারতের বিচিত্র প্রকৃতি যদিও চিত্তাকর্ষক ভ্রমনপিপাসুদের জন্য, তবে ফটোগ্রাফিগুলো নজরকাড়া এক কথায়।

কাঁকড়ার মনের ভাষা বুঝতে পারার জন্য বাহবা জানাতে চাই। আপনাকে দেখে কাঁকড়া ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল,😃? জানতে মন চায়।
তবে, যাই বলুন আমি আপনার এ কথার সাথে একমত যে, সব প্রাণীরই নিজস্ব যোগাযোগের ভাষা আছে। যা অন্য প্রজাতির ঠিক বোধগম্য নয়।
তবে ইচ্ছে করলে অনেক চিন্তা অনুধাবন করতে পারা যায় ইন্দ্রীয়ের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে।
ভালো থাকবেন আর ছোটবেলার ক্যামেরার ফিল্ম বা স্লটের কথাটা সত্যিই স্মৃতি উদ্রেককর। সেই ক্যামেরা এখন নেই, তেমনি ফিল্ম স্টুডিওতে ও এখন ছবি ওয়াশ করা হয় না।

শুভকামনা রইলো, 💐

 14 days ago 

পালাবে না? আমি যে কাঁকড়ার সামনে প্রকান্ড মহিলা ব্রহ্মদৈত্য। হা হা হা।

যাইহোক আমার পোস্ট আপনি পড়েন ভালো বলেন, অনেক উৎসাহ পাচ্ছি৷

 14 days ago 

আপনাদের ওখানে এতো বৃষ্টি আর আমাদের এখানে বৃষ্টির দেখা নেই একেবারেই। বৃষ্টির আশায় বসে আছি। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার ছিল আপু। অসাধারণ করেছেন ফটোগ্রাফি গুলো এককথায় অসাধারণ। প্রত‍্যেকটা ফটোগ্রাফি আমার বেশ ভালো লেগেছে। তবে একটা কথা আপনার ছবি তে ওয়াটার মার্কটা যেকোনো একটা কোণায় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। একেবারে ছবির মাঝে দেওয়ার জন্য ছবির সৌন্দর্য টা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

 13 days ago (edited)

পশ্চিমেই আগে বৃষ্টি আসে৷ এবং প্রচুর হয়৷

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই৷ আমার তোমা ছবি যে আপনার ভালো লেগেছে তার জন্য আমি আপ্লুত৷ আপনার দেওয়া সাজেশন মাথায় রাখব৷

 9 days ago 

ওয়াও দিদি আপনার ফটোগ্রাফি পোস্টটি দেখে খুবই ভালো লাগলো।তবে প্রথম ফটোগ্রাফি একটু বেশি ভালো ছিল কয়েক রকমের মিষ্টি পিঠা,দেখেই তো খেতে ইচ্ছে করছে😁😁।সবগুলো ফটোগ্রাফি জাস্ট চমৎকার ছিল।ফটোগ্রাফি দেখেই বুঝতে পেরেছি আপনি বেশ দক্ষ এই বিষয়ে।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 9 days ago 

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

বাঙালির বিশেষ খাবার মানেই তো পিঠে পুলি। একসময় এমনই ছিল। আজ বিশ্বায়নের যুগে এসব বিলুপ্তপ্রায় যেন৷

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 61375.54
ETH 3383.44
USDT 1.00
SBD 2.49