কি অপরাধ ছিল আমার ভাই বোনদের?
শুভ রাত্রি
আজ ২৮ ই জুলাই,
রবিবার ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ।
আসসালামু আলাইকুম,
আমি @nazmul01 ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ থেকে।
হ্যালো "আমার বাংলা ব্লগ" পরিবার। কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে হাজির হলাম জেনারেল রাইটিং পোস্ট নিয়ে। আশাকরি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
কি অপরাধ ছিল আমার ভাই বোনদের? তাজা প্রাণগুলো অঝরে ঝরে গিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র ছাত্রীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে যায়। তাদের সকলের দাবি ছিল কোটা সংস্করণ করা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, হঠাৎ করেই সরকারের নির্দেশ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা ও অত্যাচার বেড়ে যায়। গুলি করা হয় শিক্ষার্থীদের বুকের মাঝে। নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে, অবরোধ এবং মিছিল মিটিং করা হয়। এ আন্দোলনে যোগ দেয় প্রশাসনিক বাহিনী, বিরোধী দল, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। খারাপ দলগুলো এক সঙ্গে দেশের মাঝে জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। তখন দেশের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। চারিদিকে শুধু অন্ধকার ও কালো ধোয়া। দেশ ও দেশের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। চারিদিকে শুধু মৃত্যুর হাহাকার।
এ অবস্থার মাঝে আমার স্ত্রী খুব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার স্ত্রী ছিল প্রেগনেন্ট। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাসায় আমি এবং আমার মা ছাড়া কেউ ছিলাম না। এক হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য দেশের অবস্থা খুবই খারাপ অপর দিকে আমার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। তখন আমার বন্ধুকে ফোন করি এবং খুব তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলি। রাস্তা অবরোধ এবং আন্দোলনের জন্য কোন অটো রিকশা এবং সিএনজি হসপিটালে যেতে রাজি হয় না। তখন আমার এক চাচা তার নিজস্ব অটো নিয়ে এসে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ছিল। আমার বন্ধুর সহযোগিতায় খুব দ্রুত আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। বারো ঘন্টা যাওয়ার পর আামর স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
আমি আমার স্ত্রীর জন ক্যান্টিনে খাবার আনতে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। আমি একটু এগিয়ে দেখলাম গুলি খেয়ে আহত অনেক শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা ইমারজেন্সি বিভাগে ছুটে চলছে। কিছু সময় পর জানতে পারলাম একজন ছাড়া বাকি সবাই শহীদ হয়েছেন। এই ঘটনা আমার চোখের সামনে দেখে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপর ঘটনা শুনে জানতে পারলাম আমাদের পার্শ্ববর্তী থানা গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ নিরীহ ছাত্র ছাত্রীদের উপর গুলি করেন। শুধু আমাদের জেলা নয় সারাদেশে শুধু মৃত্যুর ঘটনা শোনা যাচ্ছিল। পরিস্থিতি খারাপ থাকার কারণে হাসপাতালে আমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসতে পারেনি। আমি নিজেই সবাইকে আসতে বারণ করেছিলাম। তারপর আমি তখন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
তখন বন্ধ হয়ে যায় আমাদের ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই নেট, সব কিছু একদম অচল হয়ে পড়ে। আগুন এবং ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে। বন্ধ হয়ে যায় আমাদের সামাজিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ইন্টারনেট। সরকারের নির্দেশে সারা দেশে কারফিউ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দেশের সকল মানুষ হয়ে যায় গৃহবন্দি। দাবি কিছুটা মেনে নেওয়ার পর দেশের আন্দোলন কিছুটা কমে যায়। কিন্তু সারা দেশে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা মৃত্যুবরণ করেন।
কি দোষ ছিল তাদের ? অধিকার আদায় করতে গিয়ে রক্তাক্ত দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। হাসপাতালগুলোতে শুধু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রোগীর সংখ্যায় অনেক বেশি। অনেকগুলো মায়ের বুক খালি হয়েছে। এমনও শিক্ষার্থী ছিল তারা তাদের সংসারে খরচ একা বহন করতো। বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে চাকরি পাবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন ছেলে মেয়েকে হারিয়ে বাবা-মা শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। সৃষ্টিকর্তার কাছে সব সময় প্রার্থনা করি, আমরা যেন সঠিক এবং ন্যায্য বিচার পাই। যাইহোক এই ছিল আমার আজকের আয়োজন। আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। কেমন লেগেছে তা অবশ্যই জানাবেন? আপনাদের সবার মতামত আশা করছি। আজকের মত এখানেই বিদায় নিলাম। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ💞
বিভাগ | জেনারেল রাইটিং। |
---|---|
ডিভাইস | শাওমি রেডমি ৯। |
বিষয় | কি অপরাধ ছিল আমার ভাই বোনদের? |
লোকেশন | ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ। |
রাইটার | @nazmul01। |
আমি মোঃ নাজমুল হাসান, আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহ জেলায় থাকি। আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি বাঙালি। বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে আমি গর্ব বোধ করি। আমি একজন শিক্ষার্থী এবং অনার্সে অধ্যয়নরত। আমি বর্তমানে বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছি। ফটোগ্রাফি করতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া কবিতা,আর্ট করা,ঘুরতে যাওয়া এবং রান্না করা আমার খুবই প্রিয়। প্রিয়জনদের সাথে ঘুরতে যাওয়া এবং বাহিরে খাবার খেতে আমার অনেক ভালো লাগে। নতুন রেসিপি শেখার আমার খুব আগ্রহ রয়েছে। আমি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টিমিটে জয়েন হয়েছি। "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটি একটি পরিবারের মতো। আর এই পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি অনেক খুশি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।
ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য | এখানে ক্লিক করেন |
---|
আপনার মতো আমি নিজেও এমন অনেক ছাত্রদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছি। নিরীহ ছাত্রদের এভাবে হত্যার কথা মনে হলে বুক কেঁপে উঠে। তাদের ভিতরে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই, থাকলে হয়তো এভাবে মায়ের বুক খালি হতো না। এই সময় আবার আপনার স্ত্রী অসুস্থ। আপনাদের ভাগ্য ভালো হাসপাতালে পৌঁছাতে পেরেছেন। আমাদের এখানেও একজন লোক কারফিউ এর মাঝে তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রী কে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো। আপনার স্ত্রীর জন্য দোয়া রইল।
আপনার গুছানো মন্তব্য পেয়ে খুশি হলাম আপু, কারফিউ এর মাঝে আপনাদের ওখানে প্রেগন্যান্ট স্ত্রী কে নিয়ে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয়নি জেনে খুব খারাপ লাগলো।
https://x.com/nazmulhasanbd01/status/1817766621869650396?s=19
বর্তমান দেশের পরিস্থিতি কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আপনার ওয়াইফ অসুস্থ ছিলো খবর পেয়েছিলাম। তবে কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারি নি। এমন কি আমাদের এখানে ইন্টারনেট তো দুরের কথা ফোনে রিচার্জ করার মতো অবস্থা ছিলো না। অবশেষে অনেক কষ্টের পর আপনার ওয়াইফ সুস্থ হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। চোখের সামনে মৃত্যুর দৃশ্য দেখলে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লাগে। দোয়া করি সব কিছু যেনো স্বাভাবিক হয়ে যায়। আপনার পরিবারের জন্য শুভ কামনা রইল সাবধানে থাকবেন।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য। দুয়া করি দেশ যেন আগের মতো সচল হয়ে যায়। আপনার পরিবারের জন্য শুভকামনা রইল ভাই ভালো থাকবেন।
ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দেশ কোটা সংস্কার করলো ঠিকই।অনেক ভাই বোন হারালাম আমরা।অথচ এটি শান্তিপূর্ণভাবে হলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতো।এই অপূরণীয় ক্ষতিকখনোই পূর্ণ হবার নয়।ভালো লাগলো পোস্টটি,ধন্যবাদ ভাইয়া।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে, আমার পোস্ট ভিজিট করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।