বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ লোকগীতি || ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য 🇧🇩
আসসালামুআলাইকুম
আজ-৩১শে আশ্বিন | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | ১৬ ই অক্টোবর | ২০২১ খ্রিস্টাব্দ |৮ ই রবিউল আউয়াল |১৪৪৩হিজরি |শনিবার |শরৎকাল
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল ভাই ও বোনদের প্রতি আমার হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা,প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন অবিরাম। সকলেই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আজকে ভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমাদের দেশে বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ বলা যায় বটে লোকগীতিকে। লোকগীতি আজকে বিলুপ্তি প্রায়। লোকগীতি নিয়ে কিছু লিখছি আশা করি সকলেই পড়বেন।
লোকগীতি দুটি শব্দের সমন্বয় করে গঠিত একটি শব্দ। অর্থাৎ,লোক+গীতি।এর সন্ধিক্ষণ বিচ্ছেদ করলে বোঝা যায়, লোক মানে মানুষ আর গীতি মানে প্রচলিত গান। মোটকথা হলো, জনজীবন থেকে সৃষ্ট গীতিকথাই হলো লোকগীতি। লোকগীতি দেশের কথা, দশের কথা বলে। সেজন্যই তো বলা যায় যে, লোকগীতি হলো বাংলার প্রাণ, বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ।লোকগীতির মাধ্যমে বেঁচে থাকে এদেশের আদি ভাবধারা। লোকগীতির সাহায্যে প্রকাশ পায় বাংলার মানুষের সরল জীবন-যাপনের প্রতিচ্ছবি।এদেশের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আর সেই সংস্কৃতি বেঁচে থাকে লোকগীতির ভিতর দিয়েই। লোকগীতির মাধ্যমে বাঙালির আদি থেকে বর্তমান জীবনধারার বিকাশ ঘটে অনন্ত মহিমায় মহিমান্বিতভাবে।
বাংলাদেশ সবুজ-শ্যামলে পরিপূর্ণ একটি রূপের ক্ষণি।চারিদিকের মাঠ,ঘাট,ক্ষেত,নদী,নালা,খাল,বিল সবমিলিয়ে এদেশ যেন রুপসী বাংলা। যেখানে রুপের কোনো সমাপ্তি নেই। যেদিকেই তাকানো যাবে সেদিকেই যেন অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই ছোট্ট সোনার বাংলা। সোনার বাংলা যেন সত্যিই মুক্ত আর মানিকদানায় পরিপূর্ণ। চারিদিকে যে সবুজের সমারোহ তা তো বর্ণনাবিহীন।বসন্ত এলেই কোকিলের মধুময়ী কণ্ঠে গান যেন সত্যিই অভাবনীয়। মাঠের উপর দিয়ে গরু-ছাগল নিয়ে রাখালের বিচরণ আর ঘাড়ে বা মাথায় একটি গামছা পরে গুণগুণানী গান কত যে আনন্দের। মাঠে কৃষকের কঠোর পরিশ্রম আর গৃহিণীর অনুপ্রেরণাদায়ী ভালোবাসা তো রয়েই গেছে অবিরাম অন্তহীন এক সুদীর্ঘ রুপায়নে।আর নদী যেন এদেশের মাতা।নদীর ওপর নির্ভর করে থাকে এদেশের হাজারো পরিবারের জীবীকা। প্রত্যেকটি নদী যেন স্বর্গীয় শোভায় সজ্জিত। নীরবে বয়ে চলেছে নদীর পানি। আর পানির ওপরে প্রগতিময় স্রোতধারা।জীবন্ত নদীর খেলা। নদীর তীরে মানুষের বসতি। নদীকে কেন্দ্র করেই অনেকে নির্ভরশীল।জীবনের তাগিদে অনেকেই নদীতে নৌকা বায়।মানুষকে বহন করে চলেছে নৌকায় করে। সুরে গান থাকবেই। আবার অনেক জেলেও রয়েছে। যারা কিনা নদীতে মাছ ধরে। মাছ বিক্রি করে জীবীকার তাগিদে। নিজেদের চাহিদাও পূরণ করে চলে। অনেক সময় নদীতে বুনোহাঁসের ঝাঁক দেখা যায়। বুনোহাঁসগুলি নদীতে খেলা করে। সাদা বকের দল নেমে আসে নদীর পাড়ে। মাছরাঙাও নেই পিছিয়ে। উভয়ই থাকে মাছ শিকারের তীব্র প্রচেষ্টায়।বাউলের একতারায় ধ্বনিত হচ্ছে সুমধুর গান।বাদ্যযন্ত্রগুলো অনেকটা সুন্দর করে তোলে আমাদের লোকগীতিকে।
তাছাড়া বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন জাতির মানুষ বসবাস করে। প্রত্যেকের নিজস্ব ধর্মীয় রীতি রয়েছে। সকলেই স্বাধীন ভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করে। মূলত হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজনই এদেশে বেশি। তাছাড়া অনেক উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও রয়েছে। তাঁরাও আদিকাল থেকেই এদেশে বসবাস করে আসছে।তাঁদেরও নিজস্ব কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আছে। ধর্ম বা সম্প্রদায় অনুযায়ী প্রত্যেকের জীবন-যাপনের রুপ বৈচিত্র্যময় হলেও জাতিগতভাবে সকলেই একই সুরে চলে। একই দেশে হাজারো ধর্ম বা জাতির মানুষ রয়েছে। প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ধারায় লালিত। আবার একই সুরকে প্রাধান্য দেয়। কি মজাদার একটি বিষয়।
যা-ই হোক, আজকের আলোচনার মূল বিষয় লোকগীতি হলেও এতক্ষণ ধরে এই দেশ এবং দেশের জনজীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর কারণ একটাই। আর তা হলো দেশীয় জীবনধারার সাথে লোকগীতির মিলন।
আসলেই লোকগীতি হলো বাংলার প্রাণ।কেননা, কেবল লোকগীতির মাধ্যমেই প্রকাশ পায় দেশীয় জীবনধারার বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের আভা।
আমি লোকগীতির সাথে দেশীয় জীবনধারার মিলনের কয়েকটি কারণ সম্পর্কে কিছু বলবো।আর সেটা হলোঃ-
বাংলাদেশের অঞ্চল ভেদে লোকগীতিরও কিছু প্রভেদ আছে। যেমন,
১.উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গান
২.পূর্ববঙ্গের ভাটিয়ালি গান।
এছাড়াও, ধর্মভেদেও কিছু প্রভেদ আছে। যেমন,
১.ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহর অস্তিত্ব এবং রাসূলে (সা.) এর গুণকীর্তি বা ভক্তিগীতি।
২.সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের অনুযায়ী ভগবান বা হরে,কৃষ্ণের কীর্তি এমনকি তাদের ধর্মীয় বিভিন্ন গুণগান।
মানবতাকে প্রাধান্য দিয়েও কিছু প্রভেদ লক্ষ্য করা যায়। যেমন,
১.ফকির লালন সাঁঈয়ের দর্শন অনুযায়ী রচিত বিভিন্ন লোকগান
২.বাউল সাধকদের রচিত বিভিন্ন ধরনের জারি,সারি,মরমি,দেহতত্ত্ব ইত্যাদি নানা রকমের লোকগান রয়েছে।
এককথায় এই বলা যায় যে, লোকগীতি এমন একটি বিষয় যেখানে বাংলা সংস্কৃতির সকল বিষয় পরিলক্ষিত হয়।অর্থাৎ,দেশ ও দেশের মানুষের জনজীবনকে নিয়ে উভয়ের সংমিলিত মিশ্রণে তৈরি হয়েছে লোকগীতি।লোকগীতি লোকমুখে প্রচলিত হওয়ায় অনেক সময় অশিক্ষিত মানুষেরাও এই লোকগীতি তৈরি বা গেয়ে থাকে। লোকগীতি ছাড়া এদেশের সংস্কৃতির পরিচয়কে টিকিয়ে রাখার মতো অন্য কোনো সহজ মাধ্যম আর নেই। লোকগীতির ভিতর দেশ এবং দেশের জনজীবনের এমন কোনো বিষয় নেই যেটি বাদ পড়ে গেছে।
এজন্য লোকগীতির প্রতি আমাদের সকলের ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতে হবে। যেন বৈদেশিক অথবা পাশ্চাত্য কোনো সংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির ওপরে আঘাত হানতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সকলকে। আর অবশ্যই যেকোনো উপায়ে হোক লোকগীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ, মনে রাখতে হবে লোকগীতি বাঁচলে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে। আমাদের নিজস্ব পরিচয়, জাতীর পরিচয়, সংস্কৃতির পরিচয় কেবল লোকগীতির মাধ্যমেই অমর হয়ে থাকবে।
আশা করি সকলেই আমার পোস্ট পড়বেন। আমরা সকলেই এই করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক অবলম্বন করি। সবার দীর্ঘয়ু কমনা করছি। ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।
আপনার লেখার হাত খুব ভালো বলতে হয়। লোকগীতী সম্পর্কে খুব ভালো লিখেছেন। আপনার পোস্ট টা অনেক তথ্যবহুল ছিল। ধন্যবাদ এই ধরনের পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা।।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।মহামূল্যবান একটি মতামত শেয়ার করার জন্য।
আপনি অনেক ভালো লিখতে পারেন।সত্যি বলছি আপনাকে যত দেখি তত অবাক হয় আমি। আপনার পোস্টে অনেক ইনফরমেশন ছিলো যা জানতে পেরে ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।আপনার একটি সুন্দর মতামত আমার আগামী দিনের চলার পাথেয়।
লোকগীতি দুটি শব্দের সমন্বয় করে গঠিত একটি শব্দ। অর্থাৎ,লোক+গীতি। বিষয় টার বিশ্লেষন টা আমার খুব ভালো লেগেছে। সত্যি ভাই আপনার লিখার প্রশংসা করতেই হবে। খুব সহজ ভাষায় আপনি লিখেন যা খুব সহজেই বুঝা যায় কি বুঝাতে চেয়েছেন।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।লেখার উপস্থাপন সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় মতামত পোষণ করার জন্য।
লোকসংগীত এর প্রতি আগ্রহ, ইতিহাস ধরে রাখার মানষিকতা।
ধন্যবাদ ভাই। ভালোবাসা অবিরাম। এক লাইনে হলেও একটি অর্থবহুল কমেন্ট করার জন্য।
লোকগীতি নিয়ে আপনি বেশ ভালো একটা আর্টিকেল লিখেছেন। আসলে আমাদের গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যে এখনো লোকগীতি খুবই প্রচলিত । এগুলো আমাদের সংরক্ষণ করা দরকার। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
জি ভাই। আপনার সুচিন্তিত মতামত আমাকে অনেক ভালো লেগেছে। সত্যিই বেশ আনন্দ পেলাম। আশা করি,কিভাবে আরো ভালো করা যায় সেই বিষয়ে আমাকে সুপরামর্শ দেবেন। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা অবিরাম অন্তহীন আপনার চলার পথে অবিচল। ধন্যবাদ ভাই। ❤️❤️