"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
হ্যালো বন্ধুরা ❣️❣️

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন
সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করছি। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আজকে আমি আবার উপস্থিত হয়েছি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে।

আমার বাংলা ব্লগ চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমি উপস্থিত হয়ে গেলাম। আমার স্কুল জীবনকে ঘিরে ভালো এবং মন্দ সব ধরনের ঘটনায় জড়িত। সেই ভালো মন্দ থেকে আমি আপনাদের সাথে আমার স্কুল জীবনের তোমার একটি ঘটনা শেয়ার করব।

image.png

উৎস

আমি মনে করি জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় মানুষ অতিক্রম করে স্কুল জীবনে। হাসি কান্না আবেগ দুষ্টু মিষ্টি কাজকর্ম নিয়ে আমাদের এই স্কুল জীবন। আর স্কুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো শিক্ষক এবং সহপাঠীরা

স্কুল জীবনের তিক্তময় ঘটনা

আজকে যে ঘটনাটি শেয়ার করব তা আমার এবং আমার সবথেকে কাছের বন্ধুকে নিয়ে। তার নাম হল কনিকা। আমি এমন একজন ছাত্রী ছিলাম পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুলের সকল অকর্ম সবকিছুইতেই সেরা ছিলাম। অন্য সহপাঠীদের খোঁচানো অন্যান্য স্টুডেন্টদের ভয় দেখানো সহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলাম। শুধু পড়ালেখায় সামান্য ভালো সব ধরনের ঝামেলা থেকে বেঁচে যেতাম স্কুলে। সকল স্যারদের এক কথা ছিল ভালো কিন্তু একটু দুষ্টামি বেশি করে। কিন্তু যত যাই হোক না কেন আম্মুর হাত থেকে কখনো রেহাই পেতাম না।

student-1822451_1280.jpg

উৎস

সকল ভালো এবং মন্দ কাজের সঙ্গী ছিল আমার ফ্রেন্ড কনিকা। একদিন আমি, আমার ফ্রেন্ড এবং তার ছোট বোন আমাদের স্কুলের সিকিউরিটি গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে গেলাম। আমি আর কণিকা ক্লাস সেভেনে পড়তাম আর কনিকের ছোট বোন ক্লাস ফাইভে পড়তো। সেদিন আমাদের ক্লাস করার কোন ইচ্ছেই ছিল না। স্কুল থেকে বের হয়েই আমরা তিনজন প্রথমে রেলওয়ে স্টেশন চলে গেলাম। তারপর তিনজন গাছের নিচে বসলাম এবং কি সময় যাওয়ার অপেক্ষা করলাম। তিনজন চালতার আচার খেলাম। তারপর ভাবলাম স্কুলে চলে যাব । কিন্তু এখন স্কুলে ঢোকা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায় অসম্ভব।

স্কুলের ক্যান্টিনে ভাইয়া নেই বলে বাহিরে দোকানে যাওয়ার অজুহাতে আমরা বের হয়েছিলাম। শেষে আমি আর আমার ফ্রেন্ড ডিসাইড করলাম আমরা হেটে হেঁটে বাড়ি চলে যাব। স্কুলের এখনো তিন ঘন্টা বাকি। তাই ভাবলাম হেঁটে হেঁটে যেতে আমাদের এই তিন ঘন্টা সময় লেগে যাবে। বাড়ি থেকে স্কুল সাড়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। আমাদের স্কুল গাড়িতেই আসা যাওয়া ছিল। কিন্তু যেহেতু স্কুলে ফিরে যাব না গাড়িতেও আসা হবে না।

pexels-photo-10661061.jpeg
উৎস

যাইহোক আমরা হাঁটছি তো হাঁটছি হাঁটছি তো হাঁটছি। হেঁটেই যাচ্ছি আর এই কথা সে কথা বলে হাসাহাসি করতে করতে যাচ্ছি। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সুন্দর একটি বাড়ি পড়ে। বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি পুকুর বসার জন্য জায়গা বিভিন্ন ছোট গাছপালা ছিল। তিনজন আইসক্রিম কিনে পুকুর ঘাটে বসে পানিতে পা দিয়ে গল্প করতে করতে আইসক্রীম খেলাম। যদিও আমার ভেতরে অজানা একটা ভয় কাজ করছিল। এভাবে কখনো স্কুল পালিয়ে এতদূর রাস্তা হেঁটে বাড়ি যাবো, কখনো কল্পনা করিনি। যাই হোক আমরা এবার হাটা ধরলাম বাহির উদ্দেশ্যে আবার। তিনজন কিছুক্ষণ জুতা হাতে নিয়ে হাঁটলাম। আর তিনজন বলাবলি করছি বাড়ি যেতে ভয় লাগছে। তবে আমি সেদিন এভাবে হেঁটে আসার সাহস করেছিলাম আম্মু বাড়ি ছিল না। নানুর অসুস্থতার কথা শুনে আম্মু মামার বাড়িতে গিয়েছিল।

আমার বাড়ি থেকে কনিকের বাড়ি আরেকটু দূরে। অবশেষে বাড়ির গলির দিকে আমি ঢুকছি ওদেরকে টাটা বাই বাই করে। ওরা সোজা চলে গেল আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম। ভিতরে আবার ১০ মিনিটের রাস্তা। বাড়িতে সুন্দর করে গিয়ে গোসল করে খাওয়া-দাওয়া সেরে দাদুর সাথে শুয়ে পড়লাম। সত্যি বলতে আসলেই অনেক ক্লান্ত ছিলাম এত রাস্তা হেঁটে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি আম্মু বাড়িতে উপস্থিত। সেদিন আম্মু আমাকে এত মার মেরেছিল আমার গায়ে শলার মুষ্টির দাগ বসেছিল।

car-3334785_1280.jpg

উৎস

যাইহোক প্রতিদিনের ন্যায় আমি সকালে স্কুল রেস্টুরেন্ট তৈরি হলাম এবং স্কুলের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গাড়ির হর্ন শুনে ব্যাগ নিয়ে আস্তে আস্তে রওনা দিলাম। আম্মুর চোখে চোখ রাখলাম না। গাড়িতে উঠার পর কণিকা এবং তার ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমিও তাদের চোখে চোখ রাখলাম। তাদের চোখ দেখে বুঝার বাকি রইল না তাদের উপর কত ডিগ্রি পড়েছিল। কিন্তু আমাদের মাথায় আসলো না আমাদের সকলের পরিবারকে কে জানিয়েছে। আমাদের ড্রাইভার ভাইয়া পিছন ফিরে গুন গুন করে গান গাচ্ছে আর হাসছে। ‌ এখন আমরা তিনজনে বুঝতে পারলাম আসল ভিলেন কে ছিল। যাই হোক পুরো রাস্তায় তিনজন নিশ্চুপ ছিলাম। গাড়ি থেকে নামার পর আমি আর কণিকা দুজন রাস্তার দুই মাথায় হাঁটছি। অথচ সবসময় একজনের হাতের ভিতর হাত থাকতো।

স্কুলে যাওয়ার পর সিকিউরিটি গার্ড চোখ বড় করে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল । আমিও একটা ভেংচি কেটে দ্রুত উপরে চলে গেলাম। ওমা ক্লাস রুমে গিয়ে দুজনের ডেক্স আলাদা করে। কিন্তু আমাদের দুজনের বই ও প্রয়োজনীয় কাগজ সব এক ডেক্সেই থাকতো এবং দুজনের ডেক্স একসাথে থাকতো। আমাদের ক্লাস টিচার আমাদেরকে অনেক কথা শোনালো। ক্লাসে যে স্যার আসছে তাদের চোখের দিকে তাকালেই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর বুঝার বাকি রইল না এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে। তারপর টিফিনের সময় কমনরুমে দুইজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে মনের দুঃখ প্রকাশ করলাম। এভাবে আমাদের আনন্দদায়ক দিনটি তিক্তময় দিনে পরিনত হলো।

যাইহোক কিছুদিন যাওয়ার পর আবার সব ঠিক হয়েগেলো। দুজন আবার একসাথে থাকা, এক ডেস্কে বসা শুরু হলো। কিন্তু কনিকার সাথে এখন তেমন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। সে তার মেয়ে ও সংসার নিয়ে ব্যাস্ত আর আমি আমার বাংলা ব্লগ নিয়ে ব্যাস্তময় জীবন পার করছি। স্কুল জীবনের কথা গুলো মনে পড়লে মুচকি হাসি ও চোখের কোনে পানি জমে যায়।

আমার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা কেমন লেগেছে তা অবশ্যই জানাবন।
সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা
@naimuu

ধন্যবাদ সবাইকে আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও পড়ার জন্য🥰🥰

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

 2 years ago 

বাহ বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিলো আপনার ফ্রেন্ড কনিকার সাথে৷ আসলেই আপনার সেই আনন্দদায়ক দিনটি তিক্ততার দিনে পরিনত হলো। তবে সেদিন আপনারা ৩ জন অনেক মজা করেছেন তা বুঝা যাচ্ছে। আর পুরো ঘটনায় আসল ভিলেন ছিলো ড্রাইভার ও সিকিউরিটি গার্ড। যাইহোক স্কুল জীবনের সাথে আমাদের অনেক অনেক সুখের ও দুঃখের স্মৃতি ঝড়িয়ে আছে। খারাপ লাগছে কনিকার সাথে আপনার তেমন যোগাযোগ হয়না৷ ভালো লাগলো আপনার এই তিক্ত অভিজ্ঞতাটি।

 2 years ago 

কনিকা আর আমি দুজন-দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড।

ঘটনায় আসল ভিলেন ছিলো ড্রাইভার ও সিকিউরিটি গার্ড।

জি আপু একদম ঠিক বলেছেন। যাইহোক ধন্যবাদ পুরো ঘটনাটি পড়ার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 66903.90
ETH 3098.58
USDT 1.00
SBD 3.67