|| কুয়েটে এক দিন || কর্মব্যস্ততার সাথে ঘোরাঘুরি ||
আসসালামু-আলাইকুম,
হ্যালো স্টিমিটবাসী, কেমন আছেন আপনারা? আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। নতুন জায়গা দেখতে নতুন মানুষের সাথে মিশতে এবং নতুন কিছু শিখতে আমার সব সময় খুবই ভালো লাগে। নতুনত্ব আমার খুবই পছন্দের। তবে আমি মাঝেমধ্যেই একটি সমস্যার সম্মুখীন হই, সেটা হচ্ছে মানুষ যখন ঘুরতে যায় কোথাও নতুন জায়গায় দেখে বা নতুন কিছু দেখে সবাই তার মোবাইল বা ক্যামেরা বের করে স্থিরচিত্র ধারণ করে। কিন্তু আমি সত্যি বলতে ছবি তুলতেই ভুলে যাই। প্রকৃতি, নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা উপভোগ করতে করতে ছবি তোলার সময় থাকে না। তবে ফটোগ্রাফি আমার ভালো লাগে। কিন্তু অনেক সময় শুরুটাই করা হয় না। আর একটা সময় নিজের ছবি তুলতে অনেক ভালো লাগতো। এখন আর ইচ্ছেই করেনা। মানুষ পরিবর্তনশীল। সময়, পরিবেশ, সমাজ, সংসার সবকিছু সাথে মানুষের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের কিছু ভালো দিক থাকে কিছু খারাপ দিকও থাকে।
অনেক আবোল তাবোল কথা হলো এবার আসল কথায় আসি। গত ২৩শে জুন আমি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। আমি যেসকল ব্রিজে কাজ করি সেগুলো হচ্ছে প্রি-স্ট্রেস গাডার ব্রিজ (PSG)। এই সকল গাডারের পোস্ট টেনশনের জন্য হাইড্রোলক জ্যাক পাম্প ক্যালিব্রেশন করতে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিমুহূর্তে আমার ভিতর মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। অসাধারণ সুন্দর ক্যাম্পাস চারিদিকে পরিবেশ আর এখানকার মানুষের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। আমার কাজ ছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে বা পুরকৌশল প্রকৌশল বিভাগে।
২২শে জুন রাতে আমি বাগেরহাট আমার গ্রামের বাড়িতে যাই। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার খুব কাছের একজন ভাই, বন্ধু এবং সহকর্মীকে নিয়ে রওনা হলাম। উনার বাড়িও বাগেরহাটে। ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে সকাল ১১টা বেজে গিয়েছিল। আমি আগে আমার সকল কার্যক্রম শেষ করলাম। ফর্ম পূরণ করা, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া, জ্যাক পাম্প সঠিক জায়গায় সেট করা। যিনি টেস্ট করেছিলেন উনি কুয়েটের একজন লেকচারার। দুপুর ১২টায় টেস্ট শুরু হলো। রিডিং নিয়ে সকল কার্জ শেষ করতে ২টা বেজে গেল। টেস্টের রিপোর্ট দিবে বিকাল সাড়ে চারটায়। যেহেতু দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে আর খুদাও লেগেছে তাই আগে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে গিয়ে পেটপুজা শেষ করলাম। খিচুড়ি, চিকেন রোস্ট এবং আলু ভর্তা। খুবই সুস্বাদু ছিল খাবারগুলো। খুদা এত বেশী লেগেছিল যে খাবারের ছবি তুলতে মনে ছিল না।
কুয়েটের প্রধান ফটক। আমি বাংলাদেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দেখিনি। তবে যতগুলো দেখেছি তার ভিতরে কুয়েটের প্রধান দরজা আমার সবথেকে ভালো লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে গনানুগতিক ডিজাইনের বাইরে গিয়ে কুয়েট নতুনত্বের চেষ্টা করছে।
ভিতরে যাওয়ার পরে প্রথম এই লেখাটি চোখে পড়েছিল। এই জায়গাকে বলা হয় "হলিউড অব কুয়েট" এই স্তম্ভের আগে ঝাড়বাতি লাগানো আছে। আমি যেহেতু সন্ধ্যার আগেই চলে এসেছিলাম, তাই আমি এই সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারিনি।
তারপরে দেখতে পাই কুয়েটের শহীদ মিনার। কয়েকটা শব্দ বা বাক্য দিয়ে এই জায়গার সৌন্দর্য প্রকাশ করা অসম্ভব। ছবিতেও আমি এই শহীদ মিনারের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছি। যদি ড্রোন দিয়ে ছবি তোলা যেত তবেই এই জায়গার প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
এবার একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ে খান জাহান আলী ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসের সামনের প্রকৃতিটা খুবই সুন্দর। সবুজ গাছপালা এবং অনেক গাছে ফুল ধরেছে সেগুলো পরিবেশটা খুবই মনোমুগ্ধ করে তুলেছে। আমি যত ভিতরে ঢুকছিলাম ততই মনে হচ্ছিল আমি প্রকৃতির মাঝে ডুবে যাচ্ছি। ইচ্ছা করছিল প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই, এখানেই থেকে যাই।
বঙ্গবন্ধু কর্ণার, এখানে বঙ্গবন্ধুর চির অমর ভাসনগুলো লেখা। ভিতরে হয়ত আরো অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু আমি ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পাইনি। হয়ত ভিতরে বঙ্গবন্ধুর আরো কিছু নিদর্শন ছিল।
বঙ্গবন্ধু স্তম্ভ, পাশে একটি বট গাছ আছে। যেটা পরিবেশটাকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এটি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার বা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ কেন্দ্র। এই বিল্ডিং এর ডিজাইনটা অসাধারণ সুন্দর। আর চারিপাশের সবুজ পরিবেশ স্থাপনাটি আরো মনোমুগ্ধকর ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
জলরং দিয়ে তৈরিকৃত একটি চিত্রকল্প, বর্ষবরণ ১৪২৯ উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রন বার্তা। চিত্রতে একটি মেয়ে বৃষ্টির রাতে ছাতা মাথায় সোডিয়ামের আলোতে কালো পিচের উপর খালি পায়ে হাঁটছে। যে এই চিত্রটি অঙ্কন করেছেন তার কল্পনার গভীরতা সত্যিই প্রশংসনীয়।
এটি সিভিল ডিপার্টমেন্টের ভিতর তৈরিকৃত একটি কাঠামো যেটি বিভিন্ন জ্যামিতিক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
করোনার সময় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য সেনিটাইজের ব্যবস্থা।
ক্যাম্পাসের ভিতরের একটি পুকুরের মাঝে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা ফুল। যা দৃশ্যটিকে করে তুলেছে মনোমুগ্ধকর। পুকুরের চারপাশে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ। যেখানে বসে পুকুরের চারিপাশের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।
"দুর্বার বাংলা" মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ।
এইছিল আমার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন। আমার প্রকৃতি অনুভূতি এমন ছিল যে, যদি আমি এই ক্যাম্পাসে পড়তে পারতাম।
- ফটোগ্রাফার: @mynulshovon আমি নিজে
- ডিভাইস: samsung M21s 48MP ক্যামেরা
- স্থান: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ধন্যবাদ সকলকে। আপনাদের দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি।
কুয়েটের পরিবেশ যে এত সুন্দর এটা জানা ছিল না। আপনার ছবিগুলির মাধ্যমে সেখানকার পরিবেশ সম্বন্ধে মোটামুটি একটি ধারণা পেলাম। আসলেই চমৎকার একটি ক্যাম্পাস।
Hi there. This is Alegnita. One of the moderators of the New community of travel and I invite you to join there in order to share great content about your trips. Regards from my part.
https://steemit.com/trending/hive-163291