|| বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি || আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-১৯ ||
##আসসালামু-আলাইকুম,
হ্যালো স্টিমিটবাসী, কেমন আছেন আপনারা? আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগে এই প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। আমার বাল্যকালের বৃষ্টিময় একটি আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত একটি স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
যদি বৃষ্টির দিন নিয়ে অনুভূতি শেয়ার করতে হয় তবে আমার জন্য নির্দিষ্ট একটি ঘটনা বা অনুভূতি নির্বাচন করা সত্যিই কঠিন। বাল্যকাল থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি নিয়ে অনেক অনুভূতি অনেক স্মৃতি আছে। তবে যেহেতু বাল্যকালের স্মৃতি সব সময় মধুর হয়। তাই আজ আপনাদের সাথে আমার স্কুল জীবনের একটি দিনের স্মৃতি শেয়ার করব। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম। আমার স্কুলের নাম মিতালী বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়। আমাদের স্কুলের দুটি শিফট ছিল। মর্নিং শিফট, ডে শিফট। মর্নিং শিফটে মেয়েদের ক্লাস হতো। আর ডে শিফটে ছেলেদের এবং বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা ক্লাস হত। বৃহস্পতিবার আমাদের ক্লাস ছিল সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুল শেষ করে আমরা খেলাধুলা করতাম, ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল অথবা ভলিবল। অনেক বড় একটা মাঠ ছিল আমাদের স্কুলে। সেদিন সকালে স্কুলে আসার সময় আমরা বল, ব্যাট, স্টাম্প নিয়ে এসেছিলাম মোটকথা ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ক্রিকেট খেলা হয়নি বৃষ্টির কারণে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত আমরা ফুটবল খেলবো। সে অনুযায়ী স্কুলের পাশে একজনের বাসা থেকে ফুটবল নিয়ে আসা হলো। আমরা সেদিন ১৬ জন ফুটবল খেলেছিলাম। খেলা শুরু হতে হতে তিনটা বেজে গিয়েছিল।খেলা শেষ হয়েছিল আনুমানিক বিকাল সাড়ে চারটায়। সেদিনের খেলাটি সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল এবং স্মৃতি মধুরও বটে। খেলার পুরো সময়টা বৃষ্টি হয়েছিল। কখনো মুষলধারে কখনও বা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। যদিও খেলা শেষ হতে হতে বৃষ্টিও থেমে গিয়েছিল। আমাদের ম্যাচের স্কোর ছিল ৫-৭। আমরা ২ গোলে হেরে গিয়েছিলাম। তবে চেহারাতে খুব একটা অনুশোচনা বা আক্ষেপ ছিলনা। ছিল আনন্দ আর তৃপ্তি। আমদের সবার কাদা মেখে খুবই বাজে অবস্থা।
আমরা খেলা শেষ করে সবাই গোসল করতে গেলাম। আমাদের এলাকায় একটা পুকুর ছিল। পুকুরটাকে আমরা ঠাকুর বাড়ির পুকুর নামে চিনতাম।জানিনা কেন পুকুরটাকে ঠাকুরবাড়ি পুকুর কেন বলা হতো। যদিও সেখানে আমি ছোট থেকে দেখে এসেছি সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছিল। এখনো হয়তোবা আছে। বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আমরা গোসল করলাম। গোসল বলতে পুকুরে লাফালাফি করলাম। সেদিন কি হয়েছিল, আমি সাতার পারি না। পুকুরের পানি খুবই গভীর ছিল। তো সবাই ককশিট নিয়ে পানিতে নেমেছিল। ওদের দেখাদেখি আমিও বুকের নিচে একটি ককশিট দিয়ে পুকুরের একটু ভেতরের দিকে যেতে লাগলাম। সত্যি বলতে কি আমি বাল্যকালে যে বন্ধুগুলো পেয়েছি সত্যি ভাগ্য করে বন্ধু গুলো পেয়েছি। তো আমাকে পুকুরের মাঝে যেতে দেখে আমার একজন বন্ধু নাম মবিন আমাকে টেনে নিয়ে আসলো সিঁড়ির উপরে। সিঁড়িতে বসিয়ে খুব জোরে আমার গালে থাপ্পড় দিল। সবাই অবাক হয়ে গেল কি হয়েছে। পরবর্তীতে ঘটনা বলল সবাইকে। সবাই বললো তাই বলে এভাবে মারবি। যাই হোক বন্ধু এমন হওয়া উচিত ভালোবাসা, দুষ্টামি, আবেগ থাকবে সাথে শাসনটাও থাকা উচিত। আর একটা কথা বলে রাখা দরকার সেটা হচ্ছে আমি ছোটবেলা থেকেই বাতজ্বরে আক্রান্ত। সে কারণে আমার রোদে যাওয়া, বৃষ্টিতে ভেজা, পানিতে থাকা, বেশি দৌড়াদৌড়ি করা এসব কিছু ডাক্তারের নিষেধ ছিল। কিন্তু সবাই খেলছে, দৌড়াদৌড়ি করছে আমি ছুটি হলে বাসায় চলে যাচ্ছি আমার অনেক খারাপ লাগতো। আমি যখন খেলছিলাম, আমি যখন পুকুরে গোসল করছিলাম তখন আমি জানতাম আজকে বাসায় গেলে আমি নিশ্চিত মার খাবো। তারপরেও যেহেতু আমি চলে এসেছি তাই আমি চিন্তা না করে সময়টাকে উপভোগ করতে লাগলাম। কারণ আমি যদি এখন এটা চিন্তা করে সময়টাকে উপভোগ না করি যে আমি বাসায় গেলে মার খাবো তাহলে আমি তখন যে মার খাবো সেই কষ্ট টাও পেলাম আর এখনকার সময়টাকে উপভোগ করতে পারলাম না, এখনোও কষ্ট পেলাম। লাভ কি তাহলে? এখন উপভোগ করি তখনকারটা তখন দেখা যাবে।
যাই হোক, বাসা থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম আম্মু পুকুর পাড়ে বেত হতে দাড়িয়ে আছে। আর অপেক্ষা করছে আমি কখন পাড়ে উঠবো। যাইহোক পারে তো আমাকে উঠতেই হবে। আমি তো সাঁতারেও পারিনা আর পানিতে বেশিক্ষণ থাকতেও পারবো না। বাসায়ও যেতে হবে। আর যেহেতু আমি মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম সেহেতু এতটা ভয় পেয়ে লাভ নেই। সত্যি বলতে আমি ভেবেছিলাম আম্মু হয়তো আমাকে পুকুরপাড় থেকেই মারতে মারতে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু আম্মু কিছুই বলল না, ব্যাগটা নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো। আমিও আম্মুর পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম। দৃশ্যটি অসাধারণ ছিল, একবার কল্পনা করে দেখুন আম্মু বেত হতে ব্যাগ কাধে রক্তবর্ণ চোখে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর আমি ভেজা কাপড়ে আম্মুর পেছন পেছন হাঁটছি। আমি ভেবছিলাম রাস্তায় কিছু বলেনি হয়ত বাসায় ঢুকে আগেই উত্তম মাধ্যম শুরু করবে। কিন্তু না, বাসায় গিয়ে আমাকে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করতে বলল। তারপর খেতে দিল। আমিতো পুরাই অবাক, আম্মু কি করছে এসব। নিয়ম অনুযায়ী আম্মুর তো আমাকে এখন মাইর দেওয়া উচিৎ। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে আম্মু কি করছে। তবে কি আম্মু ভালো হয়ে গেছে নাকি পাগল হয়ে গেছে। যাইহোক কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু সাভাবিক হয়ে গেলো। আম্মু তার নিজের রূপে ফিরে এলো। ভাত খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে এসে বসতেই আম্মু তার চিরাচরিত উত্তম মাধ্যম শুরু করলো, একটানা আধঘন্টা।
এই ছিল আমার বাল্যকালের বৃষ্টিময় একটি দিনের আনন্দ ও বেদনা মিশ্রিত অনুভূতি। ধন্যবাদ সকলকে। আপনাদের দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি।
অনেক সুন্দর ভাবে আপনার পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলেও বৃষ্টির দিনটা খুব ভালো লাগে। তবে দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি আমার কাছে অনেকটা বিরক্তিকর মনে হয়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি আমারও ভালো লাগে না। আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
বৃষ্টিতে ভিজতে আমি ছোটবেলা থেকেই খুব পছন্দ করতাম। প্রচুর বৃষ্টিতে ভিজেছি। তবে আল্লাহর রহমতে কখনো তেমন একটা অসুস্থ হইনি। তবে আপনার আম্মার আপনাকে শাসন করার ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। সবকিছু যখন মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তখন উত্তম মধ্যম। বেশ ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
জি আমার মায়ের শাষণ এখনও আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা করেই ছোটো ছোটো অন্যায় করি আম্মুর বকা খাওয়ার জন্য। আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।