আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-১৯ | বৃষ্টির দিনের আমার অনুভূতি
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে আবারও একটি চমৎকার প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য।যেহেতু ছয় ঋতুর এই দেশ এবং প্রতিটি ঋতুর একটা নিজস্ব রূপ ও সৌন্দর্য আছে।এবং আমার বিশ্বাস প্রতিটি মানুষকেই ঋতুর এই আবহ বিভিন্নভাবে মোহিত করে।আমিও যেহেতু মানুষ তো সেই হিসেবে আমারও ভালো লাগা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।তবে দিন যত যাচ্ছে যত বড়ো হচ্ছি সবকিছুই যেনো একটু ফিকে মনে হয় আমার কাছে।যাইহোক তারপরেও আজকে চেষ্টা করবো বর্ষার সময় আমার অনুভূতি কিছুটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার।
বর্ষাকাল মানেই চারদিকে থই থই পানি আর প্রকৃতি সাজবে তার অপরূপ রূপে।ব্যাপারটা ভাবতেই যেনো এক অসাধারণ অনুভূতি মনের মধ্যে দোল দিয়ে যায়।বিশেষ করে হাওড় আর গ্রামীণ এলাকা গুলো একেকটা যেনো সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়।আগে বর্ষাকাল আসলে মনের মধ্যে এক আনন্দ কাজ করতো,আকাশে মেঘ দেখলে খুশিতে আর গোসলই করতাম না।অপেক্ষায় থাকতাম কখন বৃষ্টি শুরু হবে আর আমি বৃষ্টিতে ভিজবো।কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই আগ্রহটা আগের মত আর নেই।এখন তো অতিরিক্ত ঘন বৃষ্টিতে তিক্ত হয়ে যাই।এখন বৃষ্টি আসলেই ভাবি হায় উপর ওয়ালা এই বৃষ্টি যেনো গযবের বৃষ্টি না হয়।কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যে কি পরিমানে ক্ষয়ক্ষতি আর বিপদের সম্মুখীন হতে হয় কেবল মাত্র ভুক্তভুগী মানুগুলাই জানে।তাই বর্ষাকাল আসলে যতটা না ভালো লাগে তার চেয়ে খারাপ লাগে ঐসকল মানুষদের জন্য যারা দিন আনে দিন খায়।খারাপ লাগে ওই সকল মানুষদের জন্য যারা আশ্রয়হীন।আরো খারাপ লাগে অবলা প্রাণীগুলোর জন্য।আমাদের নাহয় খাবার মজুদ থাকে কিন্তু ওইসব প্রাণীগুলোর কি অবস্থা হয় একবার ভাবুন।আমার বাড়ির কথাই ভাবি,যখন বৃষ্টির দিন প্রাণীগুলো সারাদিন না খেয়ে দিন পার করে।আর তাদের ওইসময় করুন চেহারা দেখতে বড্ডো খারাপ লাগে।সারাদিন শুধু পথ চেয়ে থাকে কখন তাদের সামনে একটু খাবার নিয়ে আসবে তার মালিক।তবে এতকিছুর পরেও বৃষ্টি আসলে মনের মধ্যে আলাদা এক প্রশান্তি কাজ করে।সারাদিনের গরমের রেশ কাটিয়ে মুহূর্তের মধ্যে যেনো পুরো পৃথিবীর বুক চিরে শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়।চারদিকে নিদারুণ এক থম থমে আবওহা বিরাজ করে।আর মনে হয় কিছুক্ষনের জন্যে হলেও এই নিষ্প্রাণ নগরীতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।আর এইসময় খোলা আকাশের নিচে হিমেল হওয়ায় চোখ বন্ধ করে তাজা নিশ্বাস যখন শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায় তখন মনে হয়,ভেসে যাই ওই নীল আকাশের পানে।আর মেঘের রাজ্যে গিয়ে আবারও শ্রাবণ ঝরাই এই মরা উষ্ম ধরিত্রীর বুকে।বৃষ্টির দিন আসলেই অনেক সুন্দর তবে বিরক্ত লাগে ঘর বন্দী থাকতে, বৃষ্টি তো আসে আমাকে ভিজিয়ে দিবে বলে; আমার সব পাপ ধুয়ে মুছে পবিত্র করবে বলে।আকাশ থেকে যখন বিন্দু বিন্দু জল পড়ে মাঝে মাঝে আকাশে দিকে উদাস হয়ে ভাবি, আহা আকাশের কত দুঃখ তাই হয়তো সে এত কাদে।আর তার এই কান্নার জ্বলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব দুঃখী মানুষগুলোর সহায় সম্বল।যাইহোক আমি এই বৃষ্টির দিনে দুঃখী হতে চাই না,বরং তাকে বলতে চাই তোমার ঐ কান্নার জলে মরা পৃথিবীটা যে আবার সেজে উঠে তাতে আমি অনেক শান্তি খুঁজে পাই।
বৃষ্টির দিনের তো অনেক মজার স্মৃতিই থাকে সবার জীবনে।আমারও বাতিক্রম নয়,আমারও অনেক ছিল।যদিও সবগুলো ঘটনা তুলে ধরা সম্ভব নয়।তবে দু একটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।আমি তখন মাধ্যমিকে পড়ি শুরুর দিকে মোটামুটি প্রতিদিনই ক্লাস করতাম।কিন্তু ৯-১০ম এর দিকে এসে অনেকটাই আলসে হয়ে জাই।তখন স্কুল ফাঁকি দেওয়া,বিভিন্ন অজুহাতে স্কুলে না যাওয়া একটা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছিলো।স্কুল না যাওয়ার জন্য বাসায় আম্মুকে কত যে মিথ্যে বলেছি তার কোনো হিসেবে নাই।কিন্তু আমার আব্বুও নাছোড় বান্দা,একদিন আমার ক্লাস টিচারকেই ফোন করে বসে। আর তাতেই আমার সব কর্মকাণ্ড ফাঁস।তারপর থেকে রোজ 7 টার সময় ঘুম থেকে উঠে স্কুল যাওয়া।আর কোনো অজুহাত ও দেখাতে পারছিলাম না বাসায় স্কুল না যাওয়ার জন্য।কিন্তু প্রত্যেকদিন আশায় থাকতাম সকালে উঠে যেনো বৃষ্টি হয়।আর মনে মনে বলতাম আজকে সকালে বৃষ্টি হলে মসজিদে 5 টাকা দিব।কিন্তু দুঃখের বিষয় বৃষ্টি একদিনও আসে না।আর বৃষ্টি আসলেও আমি যখন স্কুলে জায়ে পৌঁছাই ঠিক তখন আসে।কিন্তু একদিন সকালে উঠে দেখি ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো।আম্মুকে বললাম বৃষ্টি তো পড়ে আজকে স্কুল যাবো না।আম্মু বলে এগুলা বৃষ্টি একটু পর থেমে যাবে তুই নাস্তা করে ড্রেস পরে রেডি হও,আর আব্বুও পাশে ছিল তাই আর কিছু বলতে পারলাম না।কিন্তু ওমা জেই রেডি হয়েছি অমনি বৃষ্টি পড়া বন্ধ।শেষমেষ সাইকেল নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।কিন্তু ওইদিন মোটেও স্কুল যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না।তাই কিছুদূর গিয়ে একটা প্ল্যান করলাম আজকে যাওয়ার সময় রাস্তায় ইচ্ছে করে কাদার মধ্যে পড়ে যাবো তাহলে বাসায় আর কিছু বলতে পারবে না।আবার ওইদিন ক্লাসের ও কোনো বাড়ির কাজ করি নাই।যাইহোক যেই প্ল্যান সেই কাজ,কিছুদূর গিয়ে কাচা রাস্তায় ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে সাদা শার্টে কাদা লাগিয়ে গেলাম বাসায়।গিয়ে বললাম যাওয়ার সময় কাদায় স্লিপ করে পড়ে গিয়েছি।কিন্তু আমার ভুল ছিল শুধু শার্ট এর সামনের দিকে কাদা লাগাইছি কিন্তু সাইকল, প্যান্ট আর ব্যাগে কাদা লাগাতে ভুলে গেছি।বাড়িতে এই অবস্থায় দেখে আম্মু তো মহা গরম,আম্মু তো বলেই দিলো এটা কি তোর স্কুল না যাওয়ার নতুন টেকনিক।আর পাশ থেকে আমার বড়ো আপু বলে দিলো মা দেখ তোর ছেলে স্কুল না যাওয়ার জন্য ইচ্ছে করে শার্টে কাদা লাগায় নিয়ে আসছে।কিন্তু আমি তারপরেও জোর গলায় তাদের মোকাবিলা করতে থাকলাম স্কুল না যাওয়ার জন্য।আর ওই মুহূর্তে আব্বু ঘর থেকে বের হয়ে আম্মুকে বললো ওর আরেকটা ইউনিফর্ম আছে না?ঐটা পরে তারাতারি স্কুল যাইতে বল,আর ব্যাস গেলাম আমি ফেঁসে।শেষমেষ বাধ্য হয়ে আবারও ড্রেস পরে গেলাম স্কুলে।এরপর সুন্দর মত প্রতিটি ক্লাসের টিচাররা এসে বেঞ্চের উপর দাড় করায় ডাইরি টা লিখে দিয়ে গেলো।তারপরের দিন সুন্দর মত নিজের ডায়রিটা নিজে সাক্ষর করে পরের দিন ক্লাসে উপস্থিত।কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ নয়। ম্যাথ ক্লাসের স্যার ওনার যে হটাৎ করে কি মনে হইলো।উনি হয়তো বুঝতে পারছে এই সাক্ষর গুলা আমরা নিজেরাই করছি এই জন্য উনি সবার বাড়িতে অভিভাবকদের ফোন দিতে লাগলো।আমার আব্বুকে যখন ফোন দিল,আব্বু তো সোজা বলে দিল আমাকে কোনো ডায়রি দেখায় নি।এদিকে পুরা ক্লাসের সামনে পড়ে গেলাম মহাবিপদে।আর মনে মনে ভাবতেছি এর থেকেও বোধয় বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে আমার বাড়িতে।তারপর ওইদিন ক্লাস শেষ করে আর বাড়ি যাই নি।সারাদিন একটা ফ্রেন্ড এর বাসায় ছিলাম।আমি মনে মনে ভাবতেছি আব্বু সন্ধায় বাজার যাবে আমি সুন্দর করে বাড়িতে যাবো।কিন্তু বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আব্বু ওইদিন বাজারে না গিয়ে আমার জন্যেই অপেক্ষা করতেছিল😴।আর যেই বাড়িতে গিয়ে ঢুকলাম,কেবল মাত্র সাইকেলটা রাখছি শুরু হয়ে গেলো উত্তম মাধ্যম।আর আর ঐটাই ছিল আব্বুর হাতে খাওয়া শেষ গণধোলাই🙂।আর এরপর থেকে একদিনও বৃষ্টির অজুহাতে স্কুল কামাই করি নি।প্রয়োজনে রেইনকোট পরে ভিজে স্কুলে গেছি।তবুও স্কুল আর মিস দেই নাই।আর এই ঘটনাটা এখনো আমরা জীবনের স্মরণীয় একটা ঘটনা।আর এই ঘটনাটা যখন মনে পড়ে তখন নিজেই মুচকি মুচকি হাসি।আহা কি দিন ছিল সেই সময়টা,বৃষ্টির অজুহাতে স্কুল যাবো না বলে ঘটিয়ে ফেলেছিলাম এক মহা বিপত্তি।তবে কখন ভাবিনি এই ঘটনা কখনো এভাবে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।আর এজন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগকে।
আসলে বৃষ্টির দিনের অনুভূতি বলে শেষ করার মতো না। বৃষ্টির দিন আমার কাছে খুবই ভালো লাগে বিশেষ করে চায়ের আড্ডা জমে বেশি। খুবই সুন্দর ভাবে আপনি তুলে ধরেছেন আপনার অনুভূতি গুলো। আর সব থেকে বেশি ভালো লাগলো প্রতিযোগিতায় আপনি অংশগ্রহণ করেছেন আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ঠিক বলছেন ভাই।তবে বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হলো মুড়ি মাখা খেতে।দারুন এক অনুভূতি।✌️
আসলে ভাই ঠিকই বলেছেন বৃষ্টি এমন একটা জিনিস কারো জন্য অভিশাপ হয়ে আসে। আবার কারো ভালোলাগার অনুভূতি। তবে যাই বলুন না কেন আপনার স্কুল কামাই এর কথাগুলো কিন্তু দারুণ ছিল। পড়েছি আর হেসেছি তবে শেষ পর্যন্ত আপনার বাবার হাতের মার খেয়ে একেবারে ভালো হয়ে গেছেন সেটা যেন আরো বেশী ভালো লাগছে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য আমাদের সাথে আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করেছেন। ভালো থাকুন সব সময়।
হাহা ধন্যবাদ ভাই।
আর দুঃখিত দেরি করে রিপ্লাই দেওয়ার জন্য।
আপনি এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তবে একটা বিষয় আমার কাছে তেমন একটা বেশি ভালো লাগেনি যে আপনি শুধু দুইটা ট্যাগি ইউজ করেছেন। চাইলে আরো ট্যাগ বাড়াতে পারতেন। তবে বলব খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন বর্ণনা সহকারে, যা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।
আচ্ছা যাইহোক পরবর্তীতে আরো বেশি ট্যাগ ব্যাবহার করবো।ধন্যবাদ😁