আবৃত্তি: নাটক “জে জীবন ফড়িংয়ের” বিক্ষিপ্ত সংলাপগুলো সমন্বয় করে পাঠ || 10% for shy-fox
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
সেইদিন আমি আপনাদের সামনে একটি নাটক এর রিভিউ দিয়েছিলাম।এবং নাটকটি ছিলো একটি মাস্টারপিচ।এবং আমি সেদিন আপনাদের বলেছিলাম নাটক এর সংলাপ গুলো এতটাই বাস্তবমুখী এবং তীব্র ছিলো জে শুধু সংলাপগুলো জন্যেই কয়েকবার দেখেছিলাম নাটকটি।এবং আপনাদের বলেছিল সামনে নাটক এর সেই সংলাপগুলো সমন্বয় করে আপনাদের পথ করে শুনাবো।আর সত্যি বলতে নাটক এর সংলাপ গুলো আর হৃদয়ে গেঁথে আছে তাই আর বেশি দেরি করতে পারলাম না,তাই দেরি না করে নাটকের সেই সংলাপ গুলো আবৃত্তি করে শুনাতে চলে আসলাম আমি।
গুণী নাট্যনির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের নাটক “জে জীবন ফড়িং এর” এর অন্যতম একটি চরিত্র হচ্ছে মুদ্রা জে জীবন বোধে তাড়িত একজন হতাশ কবি।এবং এই নাটকে মুদ্রার একজন বন্ধু হাশেম সে আবার একজন ক্ষুধার্ত দার্শনিক।হাসেম কিন্তু আবার একজন হকার,কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সে একদিন ও কোনো পত্রিকা বিক্রি করতে পারে না তাই রোজ না খেয়ে থাকতে হয় তাকে এবং দিনশেষে ডাস্টবিনের খাবার খেয়ে খুদা নিবারণ করে।আর এই নাটক জুড়ে মুদ্রা আর হাসেম জীবনের মানে খুজতে গিয়ে কিছু জীবন সন্ধানী সংলাপ বলে।যেগুলো আমাদের মানবিকতা আর চেতনাকে নাড়া দেয়।নতুন করে ভাবতে শিখায় জীবন এর মানে।আর এখন সেই সংলাপ গুলোই পাঠ করবো আপনাদের সামনে।
আবৃত্তি:
নাটক এর সংলাপ গুলি:
আপনি ও আপনারা জানতে চেয়েছেন, আমি কে? আপনারা বলছেন আশরাফুল মাখলুকাত, মানুষ। কিন্তু আমি হলাম সেই কাঠামো, যে একটা মাংস, পোশাক, সভ্যতা ইত্যাদি ইত্যাদি বয়ে বেড়াচ্ছে। আমার মগজ আনা হয়েছে বার্কিংহোম প্যালেসের কোনও রেফ্রিজরেটর থেকে। আর তা রাখার শক্ত খুলি দিয়েছে পেন্টাগন। এই দারুনণ মেরুদণ্ড ইজ মেড বাই জাপান। আমার বুকের হাড়গুলো একেবারে খাঁটি ইন্ডিয়ান। আমার চোখজোড়া বানিয়ে আনা হয়েছে ভ্যাটিকান সিটি থেকে। দৃষ্টির গভীরতা দিয়েছে এথেন্স। জ্ঞানের সীমানা চীনের প্রাচীরে সমাহিত কনফুসিয়াস। আমার কবরের জমি একেবারে খাঁটি বাংলাদেশি। আমি দুর্ভিক্ষের চেয়ে তীব্র। কিন্তু আমি একজন হতাশ মানুষ।
আমি বিট জেনারেশনের আহ্বানে জন্মেছিলাম। জুরিখে একদল বেয়ারা শিল্পী লা-ভলতয়ের পত্রিকার পাতায় আলপিনের খোঁচা মারতেই উনিশ শতকের জীর্ণ কোমর থেকে আমি বেরিয়েছি। ভারতবর্ষের অলিতে-গলিতে আমার চোখে প্রজন্মের হাহাকার দেখে হাংরি হাংরি বলে গান তুলেছিল একদল উন্মাদ কবি। আমি সেবার হাংরিদের প্রতিনিধি হয়েও জন্মেছিলাম। জলে নামলে মাছ আর ডাঙায় হাঁটলেই সরীসৃপ। গিয়েছিলাম জলপরিদের দেশে। পাকস্থলির দেয়ালে শিংমাছের খোঁচা লাগতেই বুঝেছিলাম, খিদের যন্ত্রণা কীরকম শিরশিরিয়ে ওঠে। কিন্তু বিশ্বাস করুন বন্ধুরা, আমি পাকস্থলি চাইনি। চেয়েছিলাম মগজের শুশ্রুষা। সে দেশে প্লেটোও ছিলেন। তার ওপরের দেয়ালে মহামতি সক্রেটিস, আহ! তাদের কারো কোনও পাকস্থলি ছিল না।
দার্শনিকদের পেট থাকতে নেই। তাদের কেবলি ভাবনা আর সেই ভাবনায় উঠে আসে নারী। নারীর নিষ্পাপ বিস্মিত হাসির জন্য আমি পৃথিবীর সবকিছুকে বড় অথবা ছোট করে দিতে পারি। কবিরা কিছু পায় না। উপাসনালয়ের বাইরে জুতা রেখে গেলে জুতা চুরি হয় না। বাসে চাপলে পকেটমাররা পকেটে ব্লেড চালায় না। নারীকে কামনা করে, স্পর্শ পায় না। নারী তো নরম, শিমুল তুলার মতো সুন্দর। একটি আপেলগাছের নিচে আমি হাজার বছর ধরে বসে থেকেছি। আপেল খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত হয়েছে পাকস্থলি। তবু নারীর স্পর্শ পাইনি কোনোদিন। অথচ নারী যাকে ভালোবাসে, সেই লোকটি তার নিজের জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছে টাকার কাছে। তার দেহে শক্ত মেদের প্রাচীর। ত্বক আয়নার মতো তীব্র। শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানগুলো প্রতিফলিত হয়, এমন আয়নার মতো তীব্র। ঠোঁটের পাশে শতভাগ কর্পোরেট অহংকার। হৃদপিণ্ডের পাশে কসথেটা সাইনথেটা টেনথেটা রুটওভার। মানে ছোটখাটো হিসেবের মেশিন। ভালোবাসা বিকিয়ে যাচ্ছে শেয়ার বাজারের সূচকে।
সব নাকি জীবনের নিরাপত্তার জন্য। নিরাপত্তাই যদি শেষ কথা হতো, তাহলে মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তার ভিতরে থেকে যেতাম। এই ধুলোর পৃথিবীতে আর আসতাম না। কিন্তু আমার মা-বাবা ও পূর্বপুরুষরা যে কথা বলতে পারেনি, সে কথা বলতে চেয়েই আমার এই পৃথিবীতে আসা। আজো পত্রিকায়, নিউজ পোর্টালগুলোতে ছেপেছে, অন্ধকার রেস্টুরেন্ট থেকে জোড়ায় জোড়ায় আটক। আমাদের সংবাদ মাধ্যেম আর প্রশাসন এতটাই দায়িত্ব জ্ঞান যে, গোড়া উৎপাটন না করে চলছে আগা সংস্কারের কাজ। মৃত্যুর পর আমি আমার কবরটি উইল করে রেখে যেতে চাই পৃথিবীর সব প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য। কবরের ওপরে থাকবে ফলবতী গন্ধম অথবা আপেল গাছ। যার মাথায় আপেল পড়বে সে পাবে অসূর্যস্পর্শা প্রথম নারী। অথবা নিউটন আর তার ডায়মন্ড নামে আরাধ্য কুকুর। পৃথিবীর প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য যারা সুযোগ্য আবাশভূমি গড়ে যেতে পারেনি। তাদের কাছে এইসব পাগলের প্রলাপ বলেই মনে হয়। আমি আসলে পাখি হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলাম। ছোট্ট চড়ুই, শহরে ম্যাটপাই বন্দুক আবিষ্কার হওয়াতে আর পাখি হয়ে জন্মানোর সাহস হলো না।
মানুষ হয়ে জন্মিয়ে লাভ হয়নি কোনো। বুক ফুটো হয়ে বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে যখন তখন। গোলমেলে ট্রাফিক নিয়মে পিষিয়ে যেতে পারে গাড়ির চাকা। যখন তখন মরো, যখন তখন বাঁচো। কিন্তু... কিন্তু আমরা সবাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। ব্রেকিং নিউজ। অভিজাত শপিংমলে আগুন। পিলখানায় সামরিক বিদ্রোহ। ভেঙে পড়েছে রানা প্লাজা। ক্যান্টনমেন্টে সংস্কৃতিকর্মী ধর্ষণ ও খুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ। প্রেসক্লাবে মানববন্ধন। শাহবাগে গণজোয়ার। ছবিরহাটে আমরণ অনশন। কিন্তু আমরা সুখি, বিস্ময়কর এবং হতাশ।
মৃত্যু একটি বিকল্প ধারণা মাত্র। বেঁচে থাকলে হয়তো পৃথিবীর কোনো একটা নিয়ম বদলে যেত। কবি তার কাঙ্ক্ষিত নারীকে পাবে, এই নিয়ম পৃথিবীতে নেই। কবির মাংস খসে পড়বে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাবে যুগোপদ প্রেম আর পুঁজিপতিদের চেনা ফাঁদ। তা কি হয়? কিন্তু আমি জানি, পৃথিবীর পথে পথে আবারো ফসল ফলবে। নদীর ঘ্রাণ লেগে থাকবে শিশুর নাকে। সব ফুলে পুজো হবে সব দেবতার। দেবতারাও সাম্যবাদী হবেন নিশ্চয়ই। মানুষ মরছে আমি মরছি তুমি মরছো। তুমি মরছো সবাই সবাই মরছে সবাই সবাইকে খাবে। বাস্তুসংস্থান, আমরা মরেছি বহুবার, আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু হয়েছে যতবার। এবং জন্মেছি যতবার। আমাদের শেষকৃত্য হবে শূন্যতায়। এন নেরিয়াল অব চিউরি, শূন্যতায় শোকসঙ্গীত। কেননা আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাকলুকাত। আমরা ভীষণ সুখি, বিস্ময়কর এবং হতাশ।
অনেক সুন্দর ভাইয়া মুগ্ধ হয়ে গেলাম কথাগুলো শুনে। আর কথাগুলো সত্যিই অনেক বাস্তব। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে ভাইয়া আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভবিষ্যতেও এভাবেই পাশে থাকবেন।
অনেক সুন্দর করে কবিতাটি অনেক সুন্দর করে আবৃতি করছেন।এতে সুন্দর কবিতা আবৃতি করার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।ভবিষ্যৎ আরে ভালো মানের কবিতা আবৃতি চাই।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
খুব সুন্দর ছিল আপনার উপস্থাপন করা কথাগুলো।অনেক সুন্দর করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংলাপ গুলো নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে আবৃত্তি করেছেন।আপনার কণ্ঠ খুব সুন্দর।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই কবিতাটি আবৃত্তি করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
আমার কন্ঠ কতটুকু সুন্দর সেটা আমার জানা নেই কিন্তু আপনার কাছে যে ভালো লেগেছে তাই আমার বড় প্রাপ্তি। ধন্যবাদ পাশে থেকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
বাহ্!! ভারী চমৎকার হয়েছে আপনার আবৃত্তি আমার শরীরের লোম শিউরে উঠেছিল আপনার আবৃত্তি শুনে সত্যিই চমৎকার আবৃত্তি করেছেন আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা আগামীতে আরও চমৎকার সুন্দর সুন্দর আবৃত্তি শুনতে চাই আপনার মুখে।♥♥
এর থেকে বড় হওয়ার কিছু নেই সত্যিই আপু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপনার প্রতি। ভালো থাকবেন সবসময়। আর হ্যাঁ অবশ্যই চেষ্টা করব সামনে আরো সুন্দর সুন্দর আবৃত্তি নিয়ে আসতে।
ভাই আপনাকে প্রথমে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই কারণ আপনি আজকে যে নাটকে দিয়েছেন কন্ঠে আবৃত্তি করে এ নাটকে আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি। সবচেয়ে ভালো লাগতো আমার নাটকের মাঝে কথাগুলো আমি কথা গুলো কেটে কেটে মাঝে মাঝে শুনতাম আর আজকে আপনার কন্ঠ শুনে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। আপনার জন্য ভালোবাসার প্রিয় ভাই আমার।
আমি এসব তেমন বুঝিনা, তারপরও ভাল কিছু একটা মনে হচ্ছে। প্রশংসনীয় ভয়েস। সুন্দর।
না বোঝার কিছু নেই ভাই অবশ্যই বলবেন। লেখাগুলো একবার পড়ে নিন চোখ বুলিয়ে নিন তাহলেই বুঝবেন।
💝🌹
টুইটার
"জে জীবন ফড়িংয়ের" নাটকের রিভিউ শেয়ার করেছিলেন একদিন। অনেক ভালো ছিল নাটকটা।ওই দিনই অবশ্য বলেছিলেন কবিতা আবৃতি করার কথা। আর আজকে কবিতা আবৃতিও করে দেখালেন। সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
যাই হোক ভাল লাগল যে আপনি নাটকটা দেখেছ। আর সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অনিকেত প্রান্তর গানের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আপনার আবৃত্তিকে আরো কোয়ালিটি সম্পন্ন করেছে। আমি হেড়ফোন লাগিয়ে পুরো আবৃত্তি শুনলাম আর মুগ্ধ হলাম ভাই। আশা করি মাঝে মাঝেই এমন ভিন্ন কিছু আমাদের উপহার দিবেন। 💕💕💕
হ্যাঁ এই ফুলেট টিউনটা যেকোনো জায়গা ইউজ করলে অনেক সুন্দর লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর টি মন্তব্য করার জন্য।