আবৃত্তি- দুই বিঘা জমি || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"


today 08 August,2022
আজ ২৪ শ্রাবণ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


20220808_231526.jpg

gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuyPyLtziXuiY51n1gLdQGefbfeQ8vHJkyyWXbYNzASDQzaRn7j1W6CqJWVTXjCViStoQuXMQE5T6w296N4TNw1XdTBHp4ReqaBr19y.webp


মার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।


অনেকদিন থেকেই আপনাদের সাথে কোনো কবিতা আবৃত্তি শেয়ার করা হচ্ছে না।আজ করবো কাল করবো করে কেনো জানি হয়েই উঠছে না।তবে কাল হটাৎ করে দেখলাম দাদা একটি ঘোষণা দিল কবি গুরুর মহাপ্রয়াণ নিয়ে।তো হটাৎ করেই মাথায় চিন্তা আসলো তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই একটা কবিতা আবৃত্তি করলে কেমন হয়।কারণ এর আগে কবি গুরুর কবিতা কখনোই আবৃত্তি করা হয় নাই। তো ভাবতেছিলাম কি কবিতা আবৃত্তি করবো।হটাৎ করেই মাথায় আসলো আরেহ সেই “দুই বিঘা জমি ” কবিতার কথা। যেই কবিতাটা প্রথম পড়েছিলাম নবম শ্রেণীতে যখন উঠি।ওইসময় কবিতাটা অত্যন্ত প্রিয় ছিল আমার কাছে।এবং ওই কবিতাটা তখন বাংলা সাহিত্যের অংশ ছিল।কবিতাটা তখন এতই ভালো লাগতো যে প্রায় কবিতাটা পড়তাম।তো যাইহোক আজকে সেই কবিতাটি আপনাদের সাথে আবৃত্তি করে শোনাতে চলেছি।আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।


আবৃত্তি:


gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuyPyLtziXuiY51n1gLdQGefbfeQ8vHJkyyWXbYNzASDQzaRn7j1W6CqJWVTXjCViStoQuXMQE5T6w296N4TNw1XdTBHp4ReqaBr19y.webp


কবিতার লিরিক্স:


দুই বিঘা জমি


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, ‘আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’

পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে –
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য –
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।।

নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি –
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ –
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে –
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি, রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।।

ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার – এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ –
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন –
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ী, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী – হলে দাসী।।

বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি –
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালককালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন –
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।।

হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব –
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ –
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, ‘মারিয়া করিব খুন।’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে –
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।।


এই কবিতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই।এই কবিতাটা বরাবর আমাদের সকলের কাছে অনেক প্রিও।এবং এই কবিতার মূলভাব কি সেটাও আমরা জানি তাই নতুন করে সেই বিষয় নিয়ে আর লিখতে চাই না।তবে আবৃত্তি শুনুন ভালোও লাগতে পড়ে আপনাদের।আর আপনাদের উৎসাহ পেলে সামনে আরো আবৃত্তি করার সাহস পাবো।যাইহোক সবাই ভালো থাকেন নিরাপদে থাকে সেই প্রার্থনা করি।



8SzwQc8j2KJZWBXFXnbnQ1FtoZhRqrTWozhqoqWHpGmpmnKbH2aXgvEHL86Grag4XAKog4igp4yqWuDvpB3jnZYauA71PhjLSqVVjyBkKwBxpSheevA.png

আমার পরিচয় :

আমি এই সমাজের তথাকতিত সকল নিয়ম এর ঊর্ধ্বে।আমি কেবল আমার সত্তায় বিশ্বাস করি,আর বুক ভরা সাহস নিয়ে পথ চলি।একদিন এই ঘুনে খাওয়া সমাজের পরিবর্তন আমার মত কারো হাত ধরেই হবে এটাও আমি জানি।সেদিন সকল পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে আমি উড়বো মুক্ত নীল আকাশে,তখন লোকে কি বলে বলুক কিছুই যায় না আসে মোর তাতে।আজ শুনেছি আমি বিজয়ের গান,আমি পেয়েছি নতুন আহ্বান।আজ মুক্ত আমি বাঙালি হয়ে বাংলাই আমার প্রাণ।


45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZuj6oTYKs1WsMYL4GjvYG8jyHvkLUASU9U7Y2WqhDjpgqe1KPEzN7jG6YN7NQ...mcwa2hjjKJYshWHKGUWNaMKwm8JQJfFkzq1wnaVJP8bHftgupwV2ndY1mzFkthygVSsL4V9Rt51ksbGZpNUu9FPxSstPSnWwHgF3SYhKeeZuufdGBrCXiJ8gAS.png

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81R73dHAE6Ew3WjyveXn6UfQ8ahESLfvvdHjthdnPNKJby2matSBUDur7QMrVroCpwxQmohTSZHpBAXjQT9ZkpEa.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZuj6oTYKs1WsMYL4GjvYG8jyHvkLUASU9U7Y2WqhDjpgqe1KPEzN7jG6YN7NQ...mcwa2hjjKJYshWHKGUWNaMKwm8JQJfFkzq1wnaVJP8bHftgupwV2ndY1mzFkthygVSsL4V9Rt51ksbGZpNUu9FPxSstPSnWwHgF3SYhKeeZuufdGBrCXiJ8gAS.png

Sort:  
 2 years ago 

এক কথায় অসাধারণ আবেগ-অনুভূতি, অভিনয়, সুমধুর কন্ঠ, দক্ষতা সবকিছুই ছিল আপনার আজকের এই আবৃত্তির মধ্যে, বেশ লম্বা সময় ধরে আপনার কবিতা শুনলাম, আমরা বইয়ে খুব ছোট করেই বলেছিলাম কিন্তু আপনার আবৃত্তির দক্ষতায় কখন যে সময় পার হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। শুভকামনা রইল ভাই।

 2 years ago 

আপনার মক্তব টি আমার জন্য বিশেষ অনুপ্রেরণা।
আপনাদের ভালো লেগেছে জানলে আমারও ভীষণ ভালো লাগে।ভালো বাসা নিবেন ভাই।

 2 years ago 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতাটি খুবই সুন্দর ও নাটকীয় ভাব আছে।আপনার কবিতা আবৃত্তি খুবই সুন্দর হয়েছে, শুনে ভালো লাগলো।কবিতাটি বেশ বড়,ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

হ্যা আপু।আর ওই বিষয়টায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।যদিও অতটা ঠিকঠাক হয়েছে বলে মনে হয় না আমার।

 2 years ago 

কবিতা টা সম্ভবত অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ছিল। বেশ ভালো লাগত পড়তে। ছন্দ এবং অর্থের এক অসাধারন মিল রয়েছে এই কবিতায়।দারুন আবৃত্তি করেছেন ভাই কবিতা টা চমৎকার। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে সুন্দর আবৃত্তি টা শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।

 2 years ago 

আমার ঠিক মনে নাই তবে 10 এ ছিল বলে মনে হচ্ছে।আচ্ছা শেষ যাইহোক একসময় পড়েছিলাম সেটাই অনেক।😁

 2 years ago 

ভাই আপনার ভক্ত আগে থেকেই। আপনার এই কবিতা আবৃত্তিগুলো অসাধারণ লাগে আমার কাছে। আজকের এই কবিতাটিও আমার অনেক প্রিয়। ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

ভালোবাসা নিবেন ভাই।
এভাবেই পাশে থেকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগাবেন ইনশআল্লাহ।

 2 years ago 

এর আগেও আপনার কবিতা আবৃতি শুনেছি আমি। খুব ভালো লাগলো ভাই। অসাধারণ একটি কবিতা আবৃতি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

জ্বি ভাই চেষ্টা করেছি।তবে আপনাদের ভালো লাগা দেখে নিজেও অনেক খুশি।দোয়া করবেন যেন সামনে আরো সুন্দর সুন্দর আবৃত্তি আপনাদের উপহার দিতে পারি।

 2 years ago 

দুই বিঘা জমি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতাটি আমার বেশ পরিচিত। কারণ অষ্টম শ্রেণীতে আমি ২৬ শে মার্চের দিনে এই কবিতাটির আবৃত্তি করে আমি প্রথম হয়েছিলাম। আমার স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে গেল আপনার পোস্টটি পড়ে কবিতাটিও বেশ মজার। ধন্যবাদ এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ঠিক আমারও তাই।হটাৎ মনে পড়লো কবিতাটি তাই ভাবলাম আবৃত্তি টা করাই যায়।তবে যাইহোক আপনার কবিতা টি শুনতে চাই।

 2 years ago 

এই কবিতাটি যে পড়া শুরু করবে সে অবশ্যই শেষ করবে। কারন কবিতাটার মধ্যে মাটির একটি টান আছে। কবিতাটির মাধ্যমে এই শোষিত সকমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

একদম যথার্থ বলেছেন ভাই।
কবিতাটা শুধুই কবিতা না।এটা একটা বাস্তব, যা একজন সাধারণ মানুষের অবস্থাকে তুলে ধরে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59575.00
ETH 2607.14
USDT 1.00
SBD 2.43