রাতের অন্ধকারের গভীর অরণ্যে পথ ভুলে যখন হারিয়ে যাই সবাই ||
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
তবে আমি এক দিশেহারা পথিক
একা চলেছি হেঁটে
ঠিকানাবিহীন পথে”
আমি জীবন নিয়ে খুব একটা ভাবি না।কিন্তু এইযে সময় মাঝে মধ্যে ভাবতে বাধ্য করায়।মাঝে মাঝে ভাবি এই জীবন থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো।এমন অজানায় হারাবো যেখানে কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।সেখানে আমি থাকবো নিজের মত করে সেখানে গান গাইব,আকাশে ডানা মেলে উড়বো আর বোবা প্রাণীদের সাথে নিজের ভাবের আদান প্রদান করব।কিন্তু সব চাওয়া তো পূরণ হয় না কারণ আমি যে বন্দী হয়ে আছি এক জেলখানায় যেখানে কিছু মানুষের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছি তাদের ফেলে দূরে যাওয়া একদম অসম্ভব।
যাইহোক বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধুমহলে একটা আলোচনা হচ্ছিল যে সবাই মিলে চলো কোথাও ঘুরতে যাই।আর বেশিদিন তো হাতে সময় নাই পরীক্ষা শেষ হলেই কে কথায় যাবো তার তো কোনো ঠিক নাই।তবে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কারো পকেটে টাকা ছিল না।মাসের শেষ মেসে থাকা পোলাপাইনদের কি অবস্থা হয় সেটা সবার জানা।তো হটাৎ করে দুপুরে সজীব আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে চল রেডি হও আজকেই যাবো।আমি একটু ইতস্তত করে বললাম আমার কাছে তো টাকা নাই। ও আবার কার কাছ থেকে ম্যানেজ করে বললো এই নে তোর টাকা বাড়ি থেকে টাকা আসলে আবার আমাক দিয়ে দিস।তো আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম যাচ্ছি কোথায় সেটা তো বল আর এখন বাজেও দুপুর 2 টা এখন যাবো কখন ঘুরবো কখন আর ফিরবো কখন? ও কিছু না বলে খালি বললো সবাই রেডি হচ্ছি তাড়াতাড়ি রেডি হও যা।যাইহোক আমিও আর বেশি কথা না বাড়িয়ে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে প্রস্তুত হলাম।
যাইহোক রেডি হয়ে নিচে নামলাম সবাই।এবার আমাকে বললো আমরা যাচ্ছি নবাবগঞ্জ ফরেস্ট।সেখানে গিয়ে আজকে একটা অ্যাডভেঞ্চার ফিল নিবো।যদিও এর আগে একবার গেছিলাম কিন্তু সেবার বোনের ভিতরে ঢুকা হয় নাই এমনি কাঠের ব্রিজ টা দেখেই চলে আসছি।কিন্তু এবারের এক্সাইটমেন্টটা একটু বেশি।কারণ রাতের মধ্যে আমরা ফরেস্টের মধ্যে কিছুক্ষণ থাকবো রাতের থমথমে বনের আবওহাটা অনুভব করব।আর রাতের শুনশান বিরান এলাকায় গলা ফাটিয়ে গান গাইবো।আর এরকম সুযোগ তো বার বার আসে না।আর এগুলা শুনে আমার তো আগ্রহ আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।কিন্তু এই ভ্রমনটাকে আরো পূর্ণতা দিয়েছে বৃষ্টি।যখন বিরামপুরে গিয়ে সিএনজি তে উঠলাম আর শুরু হলো মুশল ধারে বৃষ্টি।ওই বৃষ্টির মধ্যেই ভিজতে ভিজতে গিয়ে পৌঁছলাম ফরেস্ট কিন্তু তবুও বৃষ্টি থামার কোন নাম নাই।বৃষ্টি পড়ছেই তো পড়ছেই।তবে আমার বেশ ভালই লাগছে।আমি শুধু ভাবছি গহীন অরণ্য সাথে বন থাকবে ভেজা উফ দারুন একটা অনুভুতি।
অতঃপর বিকেলে 5 টার দিকে বৃষ্টি একটু কমলো কিন্তু আকাশে তখনও ঘনো কালো মেঘের সমারোহ।আর আমাদের সাথে যেহেতু বৃষ্টি থেকে বাঁচার কোনো সরঞ্জামাদি ছিল না তাই মোবাইল গুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু পলিথিন এর ব্যাগ নিয়ে সবার মোবাইলগুলো দেখানোর রাখা হলো।এরপর আমাদের প্ল্যান ছিলো বেলা যতক্ষণ আছে ততক্ষন ব্রিজে থাকবো কিছু ছবি তুলবো।আর যখন সন্ধা নেমে আসবে তখন কিছু খাবার দাবার নিয়ে একদম বোনের ভিতরে ঢুকে যাবো।তো ঘুরতে ঘুরতে একটি বিষয় আমার চোখে পড়লো।দেখি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা আর সাথে একটি ছোট বাচ্চা,বাচ্চাটি সম্ভবত ওনার নাতনি হবে।তারা নৌকায় করে কিছু ছাগল নিয়ে যাচ্ছে।আমি অবশ্য একটু কৌতূহল নিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলাম চাচী এগুলা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।উনি বললেন বাবা আমার বাড়ি বিলের ওই পাড়ে ছাগল গুলারে এই জঙ্গলে চরাইতে নিয়ে আসছিলাম এখন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
যাইহোক এরপর আমরা ব্রিজে গেলাম।গিয়ে আবার একজন পরিচিত ক্যামেরা ম্যান এর সাথে দেখা। উনিও আবার আমাদের চিনতে পেরেছেন।এর আগের বার আমরা যখন আসছিলাম ওনার কাছেই ছবি তুলেছিলাম।যাইহোক ওনার ক্যামেরা দিয়ে কিছু গ্রুপ পিক আর সিঙ্গেল পিক তুললো সবাই।পড়ে ওনাকে টাকা দিতে চাইলে উনি নিতে চাচ্ছিল না।তারপরেও জোর করে দিলাম।
এরপর সন্ধা নামল আর ওখানকার ট্যুরিস্টরা যে জার মত চলে গেলো।আর দোকানগুলো বন্ধ হওয়ার আগে আমরা কিছু খাবার কিনে রাখলাম।আর সবাই যখন চলে গেলো মুহূর্তের মধ্যে যেনো বনের পরিবেশটা পাল্টে গেলো।চারদিকে শুধু নিস্তব্ধতা কোনো জনমানবের সাড়াশব্দ নাই।দুর থেকে শুধু কানে ভেসে আসছে কিছু ঝিঁঝিঁ পোকা ডাক।আর কখন দমকা হওয়ায় গাছের পাতা হুড়মুড়িয়ে নড়ে উঠছে যাকে বলে ভুতুড়ে এক পরিবেশ।আর এরকম পরিবেশে গা শুধু শিরশিরিয়ে উঠছে কিন্তু তারপরেও ভালো লাগছে।এরপর হাঁটতে হাঁটতে বনের ভিতরে একটা ফাঁকা শুকনা জায়গা দেখে বসে পড়লাম।আর আমি তো মনের আনন্দে সেই জোরে চিল্লায় চিল্লায় গান শুরু করে দিলাম কেউ কেউ আবার কারো প্রিয়তমা এর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার বার্তা ছুড়ে দিল।তারপর খাওয়া দাওয়া শেষে এবার ঢুকলাম বোনের আরো ভিতরে।যতই ভিতরে যাচ্ছি শরীর তো শিউরে উঠছে মনে হচ্ছে কোথাও যেনো হারিয়ে যাচ্ছি।আমি আবার মাঝে মধ্যে মজা করে বাচাও বাচাও বলে করে চিৎকার করতেছিলাম আর আমার কথাগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে আবার আমার কাছেই ফিরে আসতেছিল।আর এটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর ছিল। বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে রাত 10 টা হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে আর বেশিক্ষণ দেরি করা উচিত হবে না বলা তো যায় না কখন কোন বিপদের সম্মুখীন হই।কিন্তু আমরা যে বিপদে ইতিমধ্যে পরেই গেছি সেটা অবশ্য তখনও কেউ বুঝতে পারে নাই।ফেরার পথে অর্ধেক পথ আসার পর কেউ একজন হটাৎ করে বলে উঠলো আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি আর ভুল পথে হাঁটছি।যাইহোক একঘন্টা ধরে এদিক সেদিক হাটার পথ ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি।তারপর সেখান থেকে সোজা স্টেশন সেখানে এসে নাস্তা করতে করতেই দেখি ট্রেন এসে হাজির। পরে ট্রেন করে পার্বতীপুর এসে দেখি ঘড়িতে বাজে 1 টা।আর এখন দিনাজপুর যাওয়ার ও কোনো ট্রেন নাই এদিকে বাস তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।পড়ে অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি কোনো অটো ও নাই।শেষমেষ নিরুপায় হয়ে রাস্তায় বসে আছি সিগারেট টানছি তারপর হটাৎ দেখি একটা ট্রাক আসতেছে।ট্রাক টাকে দাড় করায় শেষমেষ সেই ট্রাকে চড়ে দিনাজপুর আসছি।
যাইহোক সবমিলিয়ে জীবনে দারুন একটা অ্যাডভেঞ্চার ছিল নিঃসন্ধে বলাই যায়।আসলে এখনই সময় ঘুরে বেড়ানোর নয়তো একটা সময় পর কোনো এক নরক কারখানার গেটে বাধা কুকুরের মত জীবনটাকে পার করতে হবে।তখন হয়তো টাকা থাকবে কিন্তু এই সময়টা আর থাকবে না।যাইহোক সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।ভালো থাকবেন সবাই।
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
অবস্থান | আশুরার বিল,নবাবগঞ্জ |
বন্ধুদের সাথে ভালো একটি দিন কাটিয়েছেন তবে ওই কিছু সময় টুকু সত্যি ভয়ঙ্কর ছিল, এরকম পরিস্থিতিতে পরেও আপনারা ঠিকভাবে ফিরে আসতে পেরেছেন এটাই শুকরিয়া, মানুষ পথ ভুলে গেলে আতঙ্ক হয়ে যায় কিন্তু আপনারা সঠিকভাবে ফিরে আসতে পেরেছেন শুভকামনা রইল ।
হ্যা ভাই তা ঠিক।
তবে আমি বেশ উপভোগ করেছি।একটা অ্যাডভেঞ্চার এর ফিল ও পাইছি।
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আপনারা রাতে বনের ভিতর সত্যই হারাই গেছিলেন। পরে আবার বুঝলাম রাতে বনে থাকবেন,লাষ্ট এসে দেখলাম ভংকর কোন বিপদ হওয়ার আগেই বন থেকে বের হতে পেরেছেন। যায়হোক গা শির শির করছে, ভাল থাকবেন।। ধন্যবাদ।
হ্যা ভাই এরকম গহীন বনে হারিয়ে গেলে সত্যিই অনেক ভয় হয়।অনেকেই তো ঘাবরে গিয়েছিল।তবে সহিশালামত ফিরতে পারছি এটাই অনেক।