জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি ||
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
বর্তমান যুগের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো মোবাইল।এই মোবাইল আবিষ্কার হওয়ায় মানুষ পুরো পৃথিবীটাকে এক প্রকার হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।তো মোবাইল হাতে পাওয়াটা সবসময় একটা স্বপ্নের মত ছিল আমার কাছে।সবসময় চাইতাম আমার নিজের একটা মোবাইল থাক।যেটাতে গান শুনতে পারবো গেমস খেলতে পারবো কিন্তু পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটা খুব সহজ একটা ব্যাপার ছিল না।আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি ঠিক ওইসময় আব্বু একটা নতুন মোবাইল কিনেছিল।তখন খুব করে ইচ্ছে জাগতো আব্বুর মোবাইলে একটু গেম খেলি কিন্তু ঐযে আব্বুর কড়া নিরাপত্তার কারণে সেটা হয়ে উঠে নি।আব্বু যেদিন মোবাইল নিয়ে আসছে ঠিক তার পরের দিনই আব্বু আমাকে ডেকে বলেই দিয়েছে "তোমার কাজ পড়াশুনা করা,ভুলেও মোবাইলে হাত দিবা না।তোমার যখন সময় হবে এমনিতেই মোবাইল পেয়ে যাবা"।কিন্তু তারপরেও নতুন জিনিস এর প্রতি আগ্রহ একটু বেশিই থাকে।আর এইজন্য আব্বু যখন মোবাইলে রেখে বাইরে যেত তখন চুপি চুপি মোবাইল চাপতাম। আর এই অপরাধে ধরাও পড়েছি বহুবার আর কয়েকবার তো গণধোলাই ও খেয়েছি।তো ক্লাস ফাইভ এর ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার সমবয়সী তখন অনেকেই মোবাইল চালায়।এই দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হতো, ইশ ওদের মত যদি একটা মোবাইল থাকতো।আর তখন মোবাইলটা অনেকটাই স্বপ্নের মত ছিল।তো মাঝখানে একবার মোবাইল কেনার জন্যে বেশ তোড়জোড় করে টাকা জমানো শুরু করলাম,কিন্তু সেই মিশন ও ব্যর্থ।কিছু টাকা জমলেই সব খেয়ে ফেলি😆।এইরকম করতেই করতে JSC পরীক্ষাও দিয়ে ফেললাম তবুও মোবাইল কেনা আর হলো না।
জেএসসি পরীক্ষা শেষে নবম শ্রেণীতে ভর্তি ও হলাম।তখন আবার সবার হাতে বাটন মোবাইল এর পরিবর্তে স্মার্ট ফোন তথা টাচ ফোন।আর আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুর হাতে মোবাইল দেখে খুব খারাপ লাগতো।ওদের সবার হাতে স্মার্ট ফোন আর আমার একটা বাটন মোবাইলেই নাই।ওদের আবার ওইসময় সেই ভাব।ক্লাস লুকায় লুকায় ফোন নিয়ে এসে শো ওফ করে আর আমরা সবাই মিলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি।কিন্তু বেটারা এতই খারাপ ছিল ওদের ফোন গুলা একটু হাতে নিয়ে ছুঁইতেও দিত না। তো একদিন ক্লাস চলতে চলতে হটাৎ করলে স্কুলের পিয়ন এসে আমাদের কয়েকজনের নাম ধরে বললো তোমরা যেকোনো একসময় অফিস রুমে গিয়ে যোগাযোগ করিও।প্রথমে আমরা বুঝতে পারি নাই কিসের জন্য। পরে গিয়ে শুনি আমরা নাকি বৃত্তির টাকা পাবো।মনে মনে ভাবলাম বৃত্তির টাকা দেওয়া তো শেষ এখন আবার কিসের,আর জেএসসি এর বৃত্তির রেজাল্ট তো এখন দেয়ই নাই তাইলে কেমনে কি! পরে স্যার বললো তোমরা পিএসসিতে যে বৃত্তির টাকা পাইতা ঐটার শেষবারের টাকা পাবা।এই কথা শুনে আমার আর পায় কে টাকাটা খালি নিলাম স্যার এর কাছ থেকে তারপর ক্লাসের সবাইরে গিয়ে কইলাম।মামা আজকে আমারে মোবাইল কিনা থেকে কেউ ঠেকাইতে পারবে না।তখন টকা পাইছিলাম 1500 আর ওইসময় বাটন ফোন গুলোর দাম ও খুব বেশি ছিল না।তো ওইসময় বাজারে একটা নতুন ব্র্যান্ড itel।itel এর বাটন ফোন গুলো বাজারে তুমুল চলছিল তখন।আসলে ওই ফোনগুলো বেশি হাইপে থাকার মূল কারণ ছিল স্বল্প বাজেটের মধ্যে অনেক বেশি ফিচার অ্যাড করা থাকতো। যা অন্যান্য ফোন গুলোতে থাকতো না।তো যেই টাকা হাতে পাইছি কোনো রকম ঐদিনের ক্লাসটা শেষ করে আমি আর আমার কয়েকটা বন্ধু মিলে সোজা বাজারে।কারণ আজকে মোবাইলে কিনতেই হবে।তারপরে বাজতে গিয়ে 1200 টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনলাম।বাটন মোবাইল কিন্তু, মেলা গুলা ফিচার ছিল আর জাভা ফোন হওয়ায় ওই ফোন দিয়ে ফেসবুক ও ব্রাউজ করা যেত।আর এইসব ফিচার দেখে আর কোনো বাছ বিচার ছাড়াই শাটাম নিয়ে নিলাম।আর সাথে 200 টাকা দিয়ে একটা মেমোরি আর ব্যাস পায় কে আমায়।ওই অবস্থায় কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে শুরু মেমোরি লোড।কিন্তু মোবাইল কেনার পর পড়ে গেলাম আরেক বড়ো সমস্যায়।কারণ আমি যে মোবাইল কিনছি এইটা বাসায় কোনো মতেই জানতে দেওয়া চলবে না।বাসায় যদি ভুলেও কেউ একবার জেনে যায় তাইলে খেল খতম।মোবাইল সাইলেন্ট করে সব ব্যাগের মধ্যে ঢুকায় বাড়িতে গেলাম।বাড়িতে প্রথমে গিয়েই মোবাইলের বক্সটা এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখলাম যেনো কেউ খুঁজে না পায়।এরপর গোসল করে কোনরকম খাওয়া খাওয়া-দাওয়া সেরে। মোবাইল নিয়ে রিচার্স শুরু।কারণ নতুন মোবাইল নিছি আর মোবাইল এর সব ফিচার এখনো ঘটিয়ে দেখা হয় নি।এরপর আমার রুমে গিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে শুরু হলো মোবাইল রিচার্স।তারউপর মোবাইলে নতুন নতুন গান বড় নিয়ে আসছি সেগুলাও দেখতেছি।আর মোবাইল হাতে পাওয়ার পর মনে হইতেছিল আমি মনে হয় আকাশে উড়তেছি আমারে আর পায় কে।আর পড়াশুনা এদিকে মায়ের ভোগে।খালি কোনো রকম স্কুলে যাই আর আসি তাছাড়া বাকি সময় মোবাইল নিয়েই পরে থাকি।আর এলাকায় ও তখন সেই একটা ভাব নিয়া চলতাম।সবাই মবাই খালি আমার মোবাই হাতে নিত আর কইত কবে নিছিস।আমি আবার সবার কাছ থেকে সত্যটা লুকায়ে রাখতাম।কারণ সত্যটা সবাই জেনে গেলে কেই যদি আবার আমার বাড়িতে বলে দেয় তখন তো সর্বনাশ।আর ওই মোবাইলটা নেওয়ার পর মোবাইলটা সবসময়ের জন্য সাইলেন্ট থাকতো।আর স্কুলে যাওয়ার সময় মোবাইল একটা গোপন জায়গায় সাইলেন্ট করে রেখে যেতাম যেনো কেউ না দেখে।তো এইভাবে বাসায় না জানিয়ে টানা দেড় বছর এই মোবাইলটা ব্যাবহার করেছি।আর সত্যি বলতে এই ঘটনা এখন পর্যন্ত কেউ জানেই না আমার বাড়িতে।তারপর অবশ্য আব্বু একটা ফোন কিনে দিয়েছিল।যখন এসএসসি পরীক্ষার পর বাইরে ভর্তি হলাম ঠিক সেইসময়।আব্বু তো জন্য আমার ফোন নাই,আর বাইরে গেলে একটা ফোন লাগবে।এই জন্য আব্বু আমি মেসে যাওয়ার ঠিক কয়দিন আগে একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে আনে।প্রথমে ফোনটি দেখে আমি ভেবেছিলাম আব্বু হয়তো এটা তার জন্যেই কিনেছে পরে যখন আব্বু আমাকে ডেকে বলে এটা তোমার জন্য নিয়া আসছি।তখনকার ওই মুহূর্তটাও আমার জন্যে সেরা ছিল।
তো যাইহোক এই ছিল আমার ঘটনা। যানি না জার কেমন লেগেছে।তবে আমার কাছে এই মুহূর্তগুলো সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।সবাই ভালো থাকেন সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ।
অনেক ভালো লাগলো আপনার অনুভূতিটি পড়ে। আসলে এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা অনেকের জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি জানতে পারলাম, যেটা হয়তো প্রতিযোগিতা না রাখলে জানা হতো না ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম ভাই। দারুন ছিল একটা প্রতিযোগিতা। তবে আমি আমার না বলা কথাগুলো আজকে সবার সামনে বলতে পেরে বেশ ভালই বোধ করছি।
যাক তাহল তো ভালো কথা ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন সর্বদায়
ভাই আপনার স্মৃতি গুলো অনেক মজাদার ভাবে তুলে ধরেছেন ভাই।অনেক ভাল লাগল ভাই।
জি ভাই চেষ্টা করেছি একটু বিনোদনমূলকভাবে উপস্থাপন করার। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
এটা বেশ হাস্যকর ছিল ভাই। ফোনের জন্য ক্যালানি খাওয়া। এবং এতোদিন ফোনটা গোপনে রেখেছিলেন সত্যি বিশাল ব্যাপার বলা যায়। অন্যরা হলে কয়েকদিনে ধরা পেতে যেত। দারুণ ছিল আপনার প্রথম ফোনের অনূভুতি টা। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
হ্যাঁ ভাই প্রায় বেশ কয়েকবার ক্যালানি খেয়েছি 😆। ফোনটা গোপন না রেখেও কোন উপায় ছিল না এইজন্য একপ্রকার বাধ্য হয়েই গোপন রেখেছি।
আপনার মোবাইলের গল্প শুনতে শুনতে গলা শুকিয়ে গেছে। তবে আপনি অনেক ছোট থাকতে মোবাইলের স্বপ্ন পূরণ করেছে এটা জেনে খুবই ভালো লাগছে। যদিও এই মোবাইলের উপরে অনেক ঝড় ঝাপটা গিয়েছিল। আপনার আব্বুর মোবাইলে হাত দেওয়ার কারণে অনেক পিটুনি খেয়েছেন এবং কি স্মরণীয় ঘটনাগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।
তাহলে এক কাজ করুন ভাই এখন এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। 😁
যাইহোক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই বরাবরের মত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
ভাইয়া তাহলে আপনি বৃত্তির টাকা দিয়ে প্রথম মোবাইল কিনলেন। এমনই ভাইয়া কেউ টাকা জমিয়ে কেউ গিফট আর কেউ টিউশনি করে আবার আপনি বৃত্তির টাকা পেয়ে প্রথম মোবাইল ফোন কিনলেন। আপনার প্রথম মোবাইল আইটেল। ধন্যবাদ পড়ে ভাল লাগলো।
জি ভাই আমার প্রথম মোবাইল আই টেল এবং আমি বৃত্তির টাকা জমিয়েই এই মোবাইলটি কিনেছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি খুব সুন্দর ভাবে মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। পরে খুব ভালো লাগলো। সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
জি ভাই আপনার অনুমতি দাও অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে তুলে ধরেছিলেন আপনি। আপনার জন্যেও শুভকামনা রইল ধন্যবাদ আপনাকে।