কোজাগরী লক্ষীপুজো ২০২১
প্রতিবছর মা দুর্গার কৈলাস যাত্রার পর মা লক্ষী আসেন আমাদের মাঝে। কোজাগরী শব্দের অর্থ কে জেগে আছো?
আর্শিন মাসের শেষে পূর্ণিমা য় কোজাগরী লক্ষী পূজা করা হয়।
এই দিনে মা লক্ষী স্বর্গ থেকে আমাদের মাঝে নেমে আসেন।
যাদের ধন সম্পদ নেই তারা ধন সম্পদ পাওয়ার আশায় আর যাদের ধন সম্পদ আছে তাদের সম্পদ না হারারোনোর আশায় মা লক্ষীর পূজা করে থাকেন। কোজাগরী লক্ষী পূজার দিন মা লক্ষী সবার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন কে জেগে আছো? যে ভক্ত জেগে থাকে তার বাড়িতেই মা লক্ষী আসেন। কোজাগরী লক্ষী পুজো র রাতে ঘরের দরজা খুলে রাখতে হয় যাতে মা ঘরে আসতে পারেন।
মা লক্ষী হলেন নারায়ণের পত্নী, তিনি ধন সম্পদের দেবী। অবাঙালীদের মধ্যে কালীপুজোর দিনে লক্ষীপুজো করা হয়।
অনেকে আবার সারাবছর বৃহস্পতিবার লক্ষী পুজো করে থাকেন।আমরা আর্শিন মাসের শেষে পূর্ণিমাতে লক্ষী পুজো করে থাকি।
গত কাল ছিল লক্ষীপুজো অনেকে আবার পরশুদিন ও করেছে সে দিন ও পূর্ণিমা ছিল । আমি পুজো করেছি গতকাল। সকাল থেকেই উপোস ছিলাম। পরশু আবার গেলাম পুজোর উপচার সামগ্রী কিনতে শাখারি বাজার । আমাদের এখানে পুজো সব কিছু পাওয়া যায় না। তাই আমি আর আমার শাশুড়ি মা চলে গেলাম শাখারি বাজার। শাখারি বাজার ঢাকার পুরোনো এলাকা , এখানে পুরোনো অনেক সনাতন ধরলম্বীদের বসবাস।
অনেক মন্দির এখানে আছে যেমন তেমনি সব ধরণের পূজা আর্চার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। তাই লক্ষীপুজোর কেনাকাটা করতে আমি বরাবরই চলে যায় ওখানে। এবার আমার শাশুড়ি মা বললেন তার একটি শাখার সেট কেনা দরকার তো তিনি ও আমার সাথে গেলেন । অনেক পুরোনো রাস্তা ঘাট , ছোট গলি পথ তাই গাড়ি সেখানে ঢোকেনা অজ্ঞতা গাড়ি গলির বাইরেই রেখে গেলাম। আমরা আসতে আসতে গলির ভিতরে প্রবেশ করলাম। গলির মধ্যে ঢুকে দেখলাম লক্ষ্মী পুজোর সব উপচারের দোকান বসেছে। আমরা প্রথমে মা লক্ষ্মীর একটি মূর্তি কিনলাম। তারপর ফুল বেল পাতা থেকে শুরু করে ধান ,দূর্বা , পঞ্চ মিষ্টি, পঞ্চ ফল, প্রদীপ
সবই কিনলাম। এবার পুজো র সব কেনাকাটা শেষ করে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
পুজোর দিন:
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম ,উঠেই স্নান সেরে নিলাম।
বাড়ির গৃহবধূ রা সাধারণত সবাই উপোস করে। আমি যেহেতু পুজো করবো তাই সারাদিন উপোস ছিলাম। পুজোর সব কিছু গুছাতে শুরু করলাম যাতে তাড়াতাড়ি পুজো কম্পিলিট হয়ে যায়। আবার রাত ৮ টা নাগাদ পূর্ণিমা শেষ হয়ে যাবে। পূর্ণিমার মধ্যেই পুজো টা কম্পিলিট করতে হবে। লুচি আর ছোলার ডাল আগেই রান্না করে রেখেছিলাম। তাই অনেকটা গুছানো ছিল বলতে হবে। এবার আর বাসায় নাড়ু করিনি , কিছু নাড়ু বাজার থেকে নিয়ে এসেছিলাম।
যা হোক মোটামুটি সবকিছু গুছিয়ে রেখে তাড়াতাড়ি শাড়ি পরে নিলাম। খেয়াল ও তার বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা সবাই মিলে
পুজো দিতে বসলাম । উলুধ্বনি র মধ্যে দিয়ে পুজো আরম্ভ হলো, শাঁখ বাজানো হলো। লক্ষী পুজো র দিনে শঙ্খ বাজানো হলো গুরুত্বপূর্ণ একটা রীতি। আবার লক্ষীপুজো তে ঘন্টা বাজানো নিষেধ।
উলুধ্বনি দিয়ে , মা লক্ষী কে প্রণাম করে পাঁচালী পড়া শুরু করলাম। সবাই লক্ষী দেবীর ব্রত কথা ভক্তি ভোরে শুনে অঞ্জলি প্রদান করলাম। অঞ্জলি প্রদান করে মাকে নিজেদের মনের কথা জানালাম। প্রণাম করার মাধ্যমে পূজা শেষ হলো।
তার পর সবাই কে প্রসাদ দিলাম। এভাবেই এবারের কোজাগরী লক্ষী পূজা শেষ হলো। আসছে বছর আবার মায়ের আগমনের অপেক্ষা ....
লক্ষীপুজো র কয়েকটি পুজোর ছবি আপনাদের মাঝে শেয়ার
করছি:
চিত্র:১
সুসজ্জিতা মা লক্ষী
চিত্র:২
চিত্র:৩
চিত্র:৪
চিত্র:৫
চিত্র:৬
চিত্র:৭
চিত্ৰ:৮
চিত্র:৮
চিত্র:৯
ছবি: কোজাগরী লক্ষীপুজো
ছবির লোকসান: বাংলাদেশ
ছবির ডিভাইস: SamsungS20 ultra
আশাকরি লক্ষীপুজো র ছবিগুল সবার ভালো লাগবে। মা লক্ষী র কৃপায় সবার জীবন সুখ শান্তিতে ভোরে উঠুক এটাই প্রার্থনা করি।
আপু এত কিছু তো জানতাম ই না।
লক্ষ্মী পুজো হয় একটা এটাই জানতাম শুধু। তবে আপনার কারণে আজকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এত কিছু জানানোর জন্য অনেক বেশি ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ, আমার লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।
আপু প্রথমেই লক্ষি পুজার শুভেচ্ছা জানায়
।দিনটা খুবই ব্যাস্ত আর পরিশ্রমের মধ্যে কাটিয়েছেন বোঝা যাচ্ছে।
হ্যা, লক্ষী পুজোর দিন বাড়ির মেয়ে, বৌ রা সারাদিন বাস্ত থাকে, কোনো অবসর পাওয়া যায় না।
শুরুটা দারুন ছিল দিদি।একদম গুছিয়ে সব তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো। আর পূজোর আয়োজন টাও কিন্তু বেশ ছিল দিদি। মেঝের আলপনা গুলো কী আপনার হাতেই করা দিদি?খুব সুন্দর ছিল দেখতে
অনেক ধন্যবাদ , আর মেঝের আল্পনা গুলো আজ কাল সব কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোই কিনেছিলাম। সময় খুব বেশি ছিল না ,তাছাড়া এক হাতে সবকিছু করতে হয় এজন্য আল্পনা গুলো হাতে আঁকা হয়ে ওঠে নি।
আপু আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। উৎসব মানেই তো আনন্দ। আর আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে উৎসব করতে মহানন্দ করতে খুবই পছন্দ করি। লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে আপনার বর্ণনা এবং ফটোগ্রাফি গুলো খুবই সুন্দর হয়েছে যা পড়ে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। আপু আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য।
দিদি লুচি আর নারকেল দিয়ে বুটের ডাল । খুবি সুস্বাদু একটি খাবার। মা লক্ষী ঠাকুর সবার ঘরে বিরাজমান থাকুক এই প্রত্যাশা করছি। ভাল থাকবেন।
হ্যাঁ, লুচি আলুর দম না হলে লক্ষীপুজো মনে হয় ঠিক মতো জমে না । আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।