ওঁ অর্থ হ্যাঁ ; প্রবন্ধ আলোচনা ; ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।
ওঁ অর্থ হ্যাঁ
পরম ঈশ্বরের যে তিনটি ভাগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছেন তার মাঝে প্রথমটি হলো 'সত্যম্'। আমরা যে পরম সেই সত্তার সৃষ্টি এটাই হলো সত্যম্ অর্থাৎ সত্য । আমরা আছি এবং এই থাকার তাগিদে আমাদের অনেক কাজ। উদর পুর্তি থেকে শুরু করে, বেঁচে থাকার লড়াই সকলেরই, শুধু যে আমরা টিকে আছি সেই প্রতিযোগিতার জন্য। আমাদের বংশ বৃদ্ধি হলো কিনা, আমার ভবিষ্যতে কোন্ প্রজন্ম বংশের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবে, আমার পুত্র হলো বা কন্যা হলো এই সকল কর্মই শুধু এই টিকে থাকার লড়াই। কিন্তু শুধু টিকে থাকার লড়াই করলেই কি আমরা জীবনের পরম আনন্দ লাভ করতে পারবো? আত্মাকে ঈশ্বরের ভোগ্যরূপে গড়ে তুলতে পারবো?
অবশ্যই না। মানুষের মাঝে দ্বিতীয় যে ঈশ্বরের অংশটি আছে তার চর্চা আমরা শুরু করেছি আদিম কালের শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। গুহাবাসী থেকে ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে অনেক কিছু জানার কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখন প্রশ্ন করতে জানি জিগ্যেস করতে জানি। আত্মাকে হৃদ্য করতে জানি। এটাই হলো 'জ্ঞানম্'। জ্ঞান দ্বারা মানুষ জানতে শিখেছে চাঁদে কীসের চিহ্ন দেখা যায়। ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন কেন আসে। অথচ পূর্বে মানুষ ঝড় দেখে ভয় পেত। তার উৎস জানতো না। বহু দেবতায় বিশ্বাস করতো। ঝড়কে দেবতা বলে মানতো। ক্রমে মানুষের শিক্ষা -দীক্ষা বেড়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শিখেছে। এখন মানুষ সবকিছুর বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম। কিন্তু এতোসবের পরেও কি মানুষ সেই পরম সত্তার সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছে? সেই পরমানন্দ লাভ হয়েছে?
নিজের জ্ঞান আকাশ সম করলাম কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ পেতেই দিলাম না, তাহলে আনন্দ কোথায়? তৃপ্তি কোথায়?
নিজের মাঝে সবকিছু আবদ্ধ করায় তো কোনোকিছু পাওয়া সম্ভব নয়। বৃক্ষের দিকে তাকালে তা আমরা বুঝতে পারি। তার সার্থকতা দানে। তাহলে মানুষেরও তাই। আমাদের মাঝের যে প্রকাশ শক্তি, আমরা শিল্পে, কলায়, আর্টে যা প্রকাশ করি তার মাঝেই প্রকৃত সুখ বা শান্তি। ধরুন কেউ একটি গল্প লিখেছে। এটাকে সে তার মনের মাঝে, নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু যখন সে একশত টি গল্প লিখবে তখন আপনা থেকেই তার সবকিছু প্রকাশ করে দিতে ইচ্ছে করবে। তার মাঝে পরমানন্দ লাভ করবে।
এবার আসুন অর্থ বিত্তের কথায়। অর্থ কি মানুষকে পরমানন্দ দিতে পারে?
প্রথম কথা হলো কেনো পারবে না। যখন আপনার কাছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ থাকে এবং সেই অর্থ যদি আপনি নিজের হৃদয়ের দীনতা বশত মুষ্টি করে আঁকড়ে ধরে না থাকেন তবে তা বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেও পাওয়া যায় পরমানন্দ, পাওয়া যায় ঈশ্বরকে। ফুল যেমন ফুটে নিজেকে প্রকাশ করে তেমনি আমাদের চিত্তের প্রকাশও অত্যাবশ্যক। এই প্রকাশই হলো 'অনন্তম্'। এর মাঝে আমরা অমৃত সুধা পান করতে পারি। জীবনকে উপভোগ করার জন্য এবং পরম সত্তার সান্নিধ্য লাভ করার জন্য আমাদের মনের যে দারিদ্র্য তা দূর করতে হবে। অন্তর চক্ষু দ্বারা উদার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। সবকিছুর জন্য আপনাকে বিলিয়ে দিতে হবে আর বলতে হবে ওঁ অর্থ হ্যাঁ। আমি আছি সকলের সাথে।
আমাদের মাঝে অনেক ধনী মানুষ আছেন। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে উদাহরণ দিয়েছে সম্রাট শাহজাহান এর কথা। তার প্রতাপ, দ্বন্দ্ব, শৌর্য, বীর্য কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু তার প্রেম এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তাজমহল যুগ যুগ ধরে মানুষ পূজা করে আসছে। এখানেই হয় ভালোবাসার শতশত প্রতিজ্ঞা।
তাই নিজের প্রকাশ করতে হবে এবং সেই প্রকাশের মাঝে থাকতে হবে সৌন্দর্য, মাধুর্য, প্রেম। আর নিজের বাঁচার কথা শুধু চিন্তা না করে সকলের সাথে বাঁচতে শিখতে হবে। সকলের সাথে সমস্বরে বলতে হবে ওঁ।
ধন্যবাদ সকলকে। আমার রবীন্দ্রনাথ এর প্রবন্ধ 'সাহিত্য' পড়ার পর এই অনুভূতি বিষয়ক আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আসলে আমাদের সকলের মাঝেই সত্য সুন্দর প্রকাশের ইচ্ছে থাকতে হবে। তাহলেই আমরা লাভ করবো পরমানন্দ।