ভ্রমণকাহিনী, মেঘনা থেকে পাড়াতলী

in আমার বাংলা ব্লগ4 years ago (edited)

মেঘনা থেকে পাড়াতলী

বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গাছপালায় ঘেরা ছোট্ট গ্রাম পাড়াতলী। বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি শামসুর রাহমান এর পিত্রালয় এই ছায়া সুনিবিড় গ্রামে। এতো সুন্দর মেঘনার অববাহিকা এবং গাছপালা ঘেরা মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সবারই কবি হতে ইচ্ছে করবে। সেই বিশিষ্ট কবির বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হলাম আমরা তিন বন্ধু।

![IMG_20211210_150657.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmNtT8z58LsMferDK3Gngi2RrRMB9AKY4sQoS6Sqi6R/IMG_20211210

২৭ তারিখ, নভেম্বর মাস, ২০২১ সাল। সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম।মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হবে ওপারে। কিছুটা পথ সিএনজি করে যেতে হবে। সিএনজিতে যেতে একটা বাজার চোখে পড়লো নাম ' তুলাতুলি বাজার'। আমরা তিন বান্ধবী ছিলাম যার একজনের নাম ছিলো সোনিয়া এবং অন্যজন তুলতুল মহান্ত। ওর নামের সাথে তুলাতুলি নামের অনেক মিল পেয়ে কিছুক্ষণ হাসি ঠাট্টা করলাম আমরা।কিছুক্ষণের মাঝেই নদীর ঘাটে পৌঁছে গেলাম। সারি সারি নৌকা বাঁধা। বড়, ছোট হরেক রকমের নৌকা। কোনটা মাছ ধরার,কোনোটা বালি তোলার আবার কোনোটা যাত্রী পরিবাহী। আমাদের যেতে হবে মাঝারি একটা ছইওয়ালা নৌকোয়। সবাই ছইয়ের উপরেই বসবে। আমার প্রথমে ভয় লাগছিলো।পরে বুঝলাম আসলে ছইয়ের ভিতরে বসে কোনো মজা নেই।এই অপরূপ সৌন্দর্য আস্বাদ করতে পারতাম না। শীতকাল তাই নদীতে স্রোত খুব কম, রোদের তীব্রতাও তেমন নেই। হালকা ঢেউয়ের পানির উপর সোনালি রোদ পড়ায় তা হীরার মতো জ্বলজ্বল করছে।
দুইপাশে অনেক দূরে দূরের কিছু গ্রামের গাছপালা দেখা যায়। ইঞ্জিন চালু হওয়ার সাথে সাথে নৌকা চলতে শুরু করলো তুখোড় বেগে। ফাল দিয়ে বিদ্যুৎ এর বেগে পানি কেটে সামনে এগুতে লাগলো নৌকো। আমরা ছবি তোলা আর ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত।

B612_20211129_123534_810.jpg

আকাশে মাঝে মাঝে গাঙচিলের আনাগোনাও বেশ দেখা যাচ্ছিলো। প্রায় আধঘন্টা নৌকায় থাকার পর আমরা পৌঁছালাম পাড়াতলীতে। কিছুক্ষণ হাঁটার পথ। এরপর আমরা পেয়ে গেলাম শামসুর রাহমান এর সেই পুরোনো বাড়ি। অনেক আগে বাড়ি হলেও বেশ ঐতিহ্যমন্ডিত। সেকালের একতলা বাড়িটা।

IMG_20211129_140504.jpg

পাশেই সেই পুকুরঘাট, বকুলতলা। সবকিছু যেন ছবির মতো সুন্দর। একদম গ্রামীণ পরিবেশ হলেও প্রাণবন্ত। চারিদিকে সবুজে ঘেরা। মনে হচ্ছিল অনন্তকাল এখানেই থেকে যাই।হারিয়ে যাই এই মন মাতানো পরিবেশে।মেঠোপথ, গাছপালা, নদী সবকিছু যেন নৈসর্গিক।

IMG_20211129_134845.jpg

কিছুক্ষণ বসে আমরা অনুভব করার চেষ্টা করলাম। একটা পুরোনো মসজিদ পাশেই ছিলো। বাড়ির ভিতরে অনেক পুরাতন একটি কুয়া ছিলো।আমার বান্ধবী সোনিয়া এই প্রথম কুয়া দেখে অনেক উত্তেজিত হয়ে গেলো।আমরাও অনেক মজা করলাম।এবার ফেরবার পালা।

আবার মেঘনা নদী পাড়ি দিতে হবে ভেবেই মনটা আনন্দে ভরে গেলো। এবার নৌকোতে একদম সামনে বসলাম। বাতাসে মনে হচ্ছিল আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মনে মনে ভাবলাম বাংলার এতো সুন্দর রূপ থাকতে কেনই বা আমরা কবি হবো না। এবার স্রোতের অনুকূলে আসতে দশ মিনিট সময় কম লাগলো। বিশ মিনিটের মাঝেই আমরা আবার পৌঁছে গেলাম ঘাটে। এরপর তুলাতুলির বাজারে এসে দুপুরের খাবার খেলাম প্রায় তিনটার সময়। সবাই ক্লান্ত তবে মন অনেক উৎফুল্ল এতো সুন্দর একটা ভ্রমণ শেষে।

লোকেশন: নরসিংদি জেলা, পাড়াতলী
ক্যামেরা: Huawei y7pro


ধন্যবাদ আপনাকে আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পড়ার জন্য।

Sort:  
 4 years ago 

আপনার লিখাটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
আর মূহুর্ত গুলোও খুব সুন্দর মনে হয়েছে আমার কাছে।
তবে লোকেশনটি এভাবে দিয়েন না আপু, লোকেশন কিভাবে দেওয়া হয় তা নিয়ে টিউটোরিয়াল পোস্ট রয়েছে পিন পোস্টে।সেখান থেকে জেনে নিবেন।

 4 years ago 

ধন্যবাদ আপু। এভাবেই ভুল ত্রুটি ধরে দিয়ে পাশে থাকবেন। 😍😍

 4 years ago 

২৭ তারিখ, ডিসেম্বর মাস, ২০২১ সাল। সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম।মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হবে ওপারে। কিছুটা পথ সিএনজি করে যেতে হবে। সিএনজিতে যেতে একটা বাজার চোখে পড়লো নাম ' তুলাতুলি বাজার'। আমরা তিন বান্ধবী ছিলাম যার একজনের নাম ছিলো সোনিয়া এবং অন্যজন তুলতুল মহান্ত। ওর নামের সাথে তুলাতুলি নামের অনেক মিল পেয়ে কিছুক্ষণ হাসি ঠাট্টা করলাম আমরা।

আপু মনে হয় তারিখটা একটু মিসটেক করে ফেলেছেন দয়া করে চেক করে ঠিক করে নেবেন।

খুবই মজার ছিল আপু দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনাদের তিনজনের এই আনন্দঘন মুহুর্তটি। আপনাদের এই আনন্দঘন মুহুর্তটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। বন্ধু-বান্ধব মিলে এভাবে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাদের এই আনন্দঘন মুহুর্তটি।

 4 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া হুম তারিখ ভুল করেছি নভেম্বর হবে।

 4 years ago 

আশা করি আপনাদের নৌকা ভবনটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার বিবরণ গুলো ছিল অসাধারণ। মেঘনা নদীতে নৌকা নিয়ে আমার ঘুরতে যাওয়ার অনেক শখ।

 4 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 4 years ago 
আপনি খুব সুন্দর একটি মুহূর্ত উদযাপন করেছেন।ভ্রমন করতে সবাই এ ভাল অনেক ভালো লাগে এবং আসলেই আমাদের সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। ভ্রমণকাহিনী করলে আমাদের শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে এবং বান্ধবীদের সাথে আপনি দারুন একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন।
 4 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মতামতের জন্য। দোয়া রাখবেন।

 4 years ago 
  • ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জোরে পথ পাড়ি দেওয়ার মুহূর্ত টা আমার অনেক ভাল লাগছিল ।আপু আপনি অনেক সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি। আপনার ভ্রমণকৃত প্রত্যেকটি মুহূর্ত অনেক অসাধারণ ছিল। দর্শনীয় জায়গা গুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এত সুন্দর মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য।
 4 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।পাশে থাকবেন, সাপোর্ট করবেন।

 4 years ago 

ভ্রমণ করতে সকলের ভালো লাগে। আর এই ভ্রমণটা যদি বন্ধু বান্ধবীদের সাথে হয় তাহলে আরো বেশি মনে হয়। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে ভ্রমণ করেছেন এবং মেঘনা নদীর ভ্রমণ কাহিনীটা আমার বেশি ভাল লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল

 4 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। পাশে থাকবেন আশা করছি।

 4 years ago 

আপনার ভ্রমণ কাহিনীর পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে আপনি খুবই উপভোগ করেছেন এ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। আমিও ভ্রমণ করতে খুবই পছন্দ করি। আপনার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 4 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।

 4 years ago 

চমৎকার ছবি এবং আপনার পোস্ট খুব আকর্ষণীয়, আমার অন্তর্দৃষ্টি যোগ করুন

 4 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.30
JST 0.037
BTC 105120.26
ETH 3562.26
USDT 1.00
SBD 0.56