শেকড়ের টানে।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

BeautyPlus_20220427063527994_save.jpg

বাড়ি থেকে যেদিন আমি প্রথম বের হয়েছিলাম পড়াশোনা করার উদ্দেশ্য সেদিন আমার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর। ক্লাস সিক্সে পড়তাম জেলার একটি সনামধন্য সরকারি স্কুলে। রীতিমতো ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকতে হয়েছিল এই স্কুলে। ১২৮৯ জন পরীক্ষা দিয়েছিল তার মাঝে আমরা ২০০ জন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি হয়েছিলাম ৩৯ তম। এই আমার শিক্ষাজীবন শুরু। পরিবারের কেউ ভাবেনি আমি এখানে টিকবো। পাতলা ফিনফিনে এক মেয়ে ছিলাম তখন।সবার ছোট মনে হতো আমাকে দেখলে। চার ফিট উচ্চতা, দুই ইঞ্চি চুল কদম ছাট দিয়ে কাটা তার সাথে কঙ্কালের মতো শুখনা। কেউ বলতেই চাইতো না যে আমি সিক্সে পড়ি। এখন অবশ্য বড় হয়ে গেছি।

BeautyPlus_20220427055822449_save.jpg

এর পর একে একে অনেক ধাপ পেরিয়ে এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। বাড়ি থেকে প্রায় ৮ ঘন্টার দুরত্ব বাসের রাস্তায়। জীবনের তাগিদে, শেখার তাগিদে, ভালো জ্ঞানার্জনের তাগিদে আসতে হয়েছে এতোটা দূরে।

বাবা-মা কে ছেড়ে থাকার অভ্যাসটা ছোট বেলাতেই হয়ে গেছে তবুও একমাসের বেশি কোথাও থাকতেই পারিনা। বার বার মনে হয় এবার বাসায় গিয়ে এনার্জি নিয়ে আসতে হবেই জীবনীশক্তি বুঝি ফুরিয়ে গেছে।

IMG_20220427_054838.jpg

হল জীবনে ক্ষণস্থায়ী অনেক ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি। আবার হঠাৎ মনে হয় কোথাও কেউ নেই। এটাই বাইরের জীবন। কারো উপর ভরসা করেছেন তো ডুবেছেন। এখানে নিজের তাগিদে নিজেকে বাঁচতে হয়। কেউ আপনার পাশে দাঁড়ানোর নেই, কেউ সাপোর্ট করার নেই। যদি সত্যি কেউ থেকেও থাকে সে হলো সেই হাজার মাইল দূরত্বে থাকা পরিবার। তাই যতোই দূরে থাকুন যতোই ব্যস্ত থাকুন পরিবারকে কেউ কখনও ভুলে যাবেন না। আমার একজন শিক্ষক সবসময় বলতেন,
তোমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো তোমাদের পরিবার।তাই পরিবারকে সম্মান করো।

IMG_20220427_060241.jpg

আসলেই যে যাই বলুক বাবা-মায়ের মতো স্বার্থহীন ভালোবাসার মানুষ এই পৃথিবীতে নেই বললেই চলে।

এই আমার বাড়ি।গাছপালায় ঢাকা বিশাল জায়গার মাঝে ছোট্ট একটা ছবির মতো সুন্দর বাড়ি। এখানেই আমার জন্ম। যদিও বেড়ে ওঠা বিভিন্ন জায়গায় বাবার চাকুরী সূত্রে তবুও এই বাড়ির প্রতি একটা অদম্য টান রয়েছে সবসময়। বাড়িতে যে কয়টা দিন থাকি আমাকে বম মারলেও সে কয়টা দিন কেউ কোথাও নিয়ে যেতে পারে না। বাড়িতে থাকার মতো শান্তি আর কখনো কোথাও কোনো জীবনে মনে হয় পাইনি।

IMG_20220427_055028.jpg

করোনাকালে সবার বাসায় বোরিং লাগলেও সেই দেড়বছরের সময়টা আমার কেটেছে স্বপ্নের মতো। সবচেয়ে দামী সময়। পরিবারের সবাই একসাথে। কতোই না আনন্দ আহা! কোনো চিন্তা নেই, পড়াশোনা নেই, বাঁচলেও সবাই একসাথে মরলেও সবাই একসাথে এই ছিলো আমাদের মূল কথা। কিন্তু ভালো সময় চোখের পলকে শেষ হয়। আবার শেষ হয়েছে বলে ভালোই হয়েছে। শুধু নিজের সুখ দেখলে তো হবে সবার কথাই চিন্তা করতে হবে।জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

IMG_20220427_060213.jpg

শুরু হলো আবারও পথ চলা। আবার জ্যাম, ধূলো বালির শহর ঢাকায় ফিরে আসা। দেড় বছরের বসে থাকার সুদে আসলে শিক্ষক রা নিতে শুরু করলেন। একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে চললাম। অবশেষে আবার স্বস্তির নিশ্বাস পড়লো।

রমজান মাসের অর্ধেকের বেশি পর্যন্ত পরীক্ষায় চলে গেলো। অবশেষে এবার আবার সেই বাড়ির সন্ধানে ফিরে আসা। দীর্ঘ ৮ ঘন্টার জার্নি শেষে বাসায় ফিরলাম।খুব ভালো লাগছে। চারিদিকে এখন সবুজের সমারোহ।পাখির কিচিরমিচির, ঝিঝি পোকার ডাক, ব্যাঙ্গের ডাক, বৃষ্টির শব্দ, মুক্ত বাতাস সব মিলে প্রাণ যেন জুড়িয়ে যায়। নির্ভয়ে বুকভরা নিশ্বাস নেওয়া যায়। বার বার মনে হয় জীবনের শেষ সময় কয়টা যেন কোনো সুন্দর, ছোট্ট, ছায়া সুনিবিড় গ্রামের মাটিতে থাকতে পারি। তাহলে মরণেও সুখ।

কবিদের ভাষায় বলতে মনে চায়,

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই, পৃথিবীর মুখ আমি দেখিতে চাই না।

ডিভাইস :Huawei
মডেল:y7pro
ছবিতে :mstnusrat
লোকেশন:

Sort:  
 2 years ago 

জীবনে কখনো টসিে চিকেন এর নাম শুনিনি। তবে আপনার পোস্টের উপস্থাপনা অনেক ভালো লেগেছে এবং রেসিপিটি দেখে মনে হচ্ছে খেতে অনেক মজা হবে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

হাহহাহা ভাই এখানে চিকেন কোথায় পেলেন।আমি তো কোনো রেসিপি শেয়ার করিনি। আপনার ভুল হয়েছে মনে হয়।

 2 years ago 

নিজের বাড়িতে যে সুখ পাওয়া যায় তা কখনোই অন্য কোথাও পাওয়া যায়না।তাই নিজেকে অনেক সময় সুখী ব্যাক্তিই মনে হয়।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু।নিজের বাড়িতে আমরা সবাইসুখী।

 2 years ago 

আমিও ইনশাআল্লাহ কাল ঢাকা ত্যাগ করবো। অনেক মিস করতেছি নিজের গ্রামকে। আপনার পোস্ট পড়ে এখন আরো বেশি মনে হচ্ছে। আপনার ঈদ অনেক ভালো কাটুক শুভকামনা রইলো আপু।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ। আর ঢাকা তাড়াতাড়ি ছাড়ুন যে গরম পড়েছে ওখানে।গ্রামে শান্তি।

 2 years ago 

আসলে নিজের গ্রামে বসবাস করার মতো শান্তি আর কোথাও নেই। নিজের গ্রামের আলো-বাতাস পরিবেশ সকলেই যেন এক মায়া জড়িয়ে রাখে নিজেকে। আগামীকাল আমিও শিকড়ের টানে আমার গ্রামের বাড়িতে যাব। গ্রামের বাড়িতে সকলের সাথে ঈদ আনন্দ অনেক মজার হবে। আপনার গ্রামের বাড়িতে সকলের সাথে ঈদের মুহূর্ত অনেক আনন্দের হোক এই দোয়া করি, এবং পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে আমাদের জীবনের তাগিদে অনেক জায়গায় থাকতে হয়। কিন্তু শিকড়ের টান বলে একটা কথা আছে। যে যেখানেই থাকুক কিন্তু গ্রামের বাড়ির কথা ভোলা অসম্ভব।আপনার মত ক্লাস ফাইভ এর পর সিক্স থেকে আমিও বাইরে থাকি।একই রকম অনুভূতি হয় আমারও।কিন্তু গ্রামের বাড়ি কথা শুনলেই মনটা যেন ঠান্ডা হয়ে যায়।একটা ভালো লাগা কাজ করে।ধন্যবাদ আপু এরকম একটি মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য।

 2 years ago 

বাড়িতে থাকার মতো শান্তি আর কখনো কোথাও কোনো জীবনে মনে হয় পাইনি।

এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু। নিজের বাড়িতে থাকার মতো শান্তি আর আনন্দ জীবনে কোথাও পাওয়া যাবে না। অন্য কোথাও যত সুখ ও শান্তিতে থাকেন না কেন নিজের বাড়ির মত এমন আত্মতৃপ্তি আর কোথাও পাবেন না। ভালো লেগেছে আপনার কাছে এ গল্পটি পড়ে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

ওরে বাবা আপনি একদম ক্লাস সিক্স থেকে বাড়ি থেকে দূরে পড়াশোনা করেছেন। বিষয়টা আমার কাছে শুনে অবাক লাগলো। এত ছোট একটা মেয়ে এত দূরে থেকে পড়াশোনা করেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছেছেন দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনার অনুভূতির কথা গুলো শুনে বেশ ভালই লাগলো।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপু। দোয়া রাখবেন।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো আপনার জীবনের ক্ষুদ্র কিছু অনুভূতি আপনি আমাদের সামনে উপস্থাপন করলেন, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার জন্য আপনি পরিবার থেকে দূরে থেকেছেন, করোনার সময় আপনি খুব ভালো একটি সময় কাটিয়েছেন, তবে ওই সময়টা অনেকের কাছেই শুভ ছিল না, তবে আপনার গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো, পরিবারের সাথে ভালো একটি সময় কাটিয়েছেন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61320.84
ETH 2394.93
USDT 1.00
SBD 2.56