📱 সিঙার বাত নাকি ভাদুরি বৃষ্টি?

সবাইকে অবিরাম বাদলের শুভেচ্ছা

বারান্দার বাহিরে আঙিনায় নামতে আদরের নাতিটা ধপাস করে, পা পিছলে মাটিতে পড়ে গেল। চলছে ভাদর মাষের 'শাতা' বা 'সাতওয়া'(অবিরাম বৃষ্টি)। আঙিনা-খুলি, রাস্তা-ঘাট সবই শেমলা রঙ ধারন করে ভয়াবহ পিচ্ছিল মুর্তি ধারন করেছে। তার উপর পা দিলেই পিছলে ধপাস করে ফেলে দিচ্ছে
()ছাতা মাথায় আমি

IMG_20210826_175104.jpg বৃষ্টির ফোটা

নাতিটার কান্না এখনো থামে নাই। সবাই ওকে নিয়ে ব্যাস্ত। বেশি আঘাত পেয়েছে কিনা, তা সবার জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করছ

এবার ওর জেঠিমা বলে উঠল সিঙার বাতে এংকেয়(এরকম) ঝড়ি হয়। কারো বাড়ি থেকে বের হওয়ার দরকার নাই

এবার নাতি ধরে বসল। দাদি সিঙার বাত কি? দাদি কয় তুই বুঝবিনা। সে মেলা(অনেক) কথা।

:কওনা দাদি সেই মেলা কথা।
:ঘরে চল শুনাচ্ছি।

তারা ঘরে গিয়ে বসল।
দাদি এবার সেই সিঙার বাতের গল্প নাতিকে শুনাতে লাগল।
: সেই কয়েক হাজার কোটি বছর আগের কথা। তখন নাকি ছিল সত্যযুগ।
সেই সময় ছিল, 'সিঙা' নামের অনেক মোটা লোক।

: বলিস কি দাদি, অনেক মোটা লোক?
: হ,অনেক মোটা লোক
: তারপর কি হলো দাদি?
: শুন বলার সময় কথা কবিনা, বুঝচিছ,শুধু শুনবি। বুঝলি!।

: হ দাদি, ক।

: এত মোটার কারনে ওকে সবাই 'গোদা' বলে ডাকত।
গোদার কারনে, ওকে কেহ বিয়ে দিতে চায়না। বহু জায়গায় মায়ে, বাপে, গ্রামবাসী এবং আত্মীয় স্বজন সবাই মিলে পাত্রী খোঁজে কিন্তু পাত্রি মিলে না। সিংগা গোদা নিজেই পাত্রি খোজে। কিন্তু পায়না।
একদিন তার দলের এক লোক বলল। না, হয় এবার তোর মায়ের বেটি(মেয়ে) হলে, তাকে বিয়ে করিস।
কথাটি সিঙে গোদার মনে ধরে।

IMG_20210826_165531.jpg

IMG_20210826_175017.jpg

: কও কি দাদি বোনকে বিয়ে করবে?

: আরে চুপ করে শুন, কথা কসনে।এবার সিঙা গোদা, বাপ-মায়ের কাছে বায়না ধরল।তার মায়ের পেটের বোনকে বিয়ে করতে। কিন্তু তা কি করে সম্ভব। বোনের সাথে ভাইয়ের বিয়ে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম কি করবে। এবার সত্যি সিঙে গোদার মা গর্ভবতী হলো। এবার তারা বুদ্ধি করে, সিঙে গোদাকে বহুদুর বানিজ্যে পাঠিয়েদিল। তার মা তাকে বলল তোর বোন হলে, তুই ফিরে আসার পর বিয়ে দেওয়া হবে।

: কওকি দাদি মায়ে বিয়ে দিতে চাইল?

: আরে কথা কসনে, খালি শুন।

: এবার সিঙা গোদা পাখিদের সঙ্গে নিয়ে, বানিজ্যে গেল।
এদিকে তার মায়ের মেয়ে হলো, এগারো বছর বয়সে মেয়েকে এক রাজ বাড়িতে ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হলো।

: সিঙার সাথে যে বিয়ে দিতে চাইল দাদি।

: আরে চুপ কর, কমুইনা কিন্তু.....

: আচ্ছা কথা কমুনা, তুই ক।

: শুন, আর কথা কবিনা। এবার সিঙা গোদা বানিজ্য করে, বারো বছর পর ফিরে এলো।
এ দিনটা ছিল শাওন মাষের ২৬ তারিখ। প্রথমে গ্রাম বাসির কাছে শুনল, পরে মা-বাবার কাছে শুনল। তার বোন হয়েছে, বড় হয়েছে, তাই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাোনের বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হয় নাই। ২৭শে শাওন সিঙা গোদা হুংকার ছাড়তে শুরু করে। তার হুংকার আকাশ ও পাতালের সবাই শুনতে পায়। আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে, তার বাবা-মা ভয় পেয়ে ঠিকানা বলে দেয়। পাখিরা এসে হাজির হয়।

IMG_20210826_165518.jpg

এবার সিঙা গোদা বোনকে ধরে এনে বিয়ে করবে বলে পন করে। ২৮ ও ২৯ শাওন, সে বোনের বাড়িতে যাওয়ায় ফলার সহ বহু খাদ্য সামগ্রী যোগাঢ় করে।
তার মা আগেই এসব খাদ্য নিতে বলেছিল। তানা হলে তেরো তেউড়ির ভিতরে যাইতে পারবেনা। আসলে এই বাড়ির তৈউরি ছিল ১৪ টি।
এবার সিঙা গোদা তের তেউড়ি পার হওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করে, পাখিদের ঘাড়ে, মাথায় ও পিঠে সব মালামাল তুলে দিল । এবার নিজেই পাখির পিঠে চড়ে সামনের সারিতে রওয়ানা দিল। দিনটি ছিল শাওন সংক্রান্তী।
এদিকে সিঙার মাও ২৬ শাওন থেকে কমবেশি কেন্দে কেন্দে চোখের পানি ফেলতে শুরু করেছে। তাতেই শুরু হলো এই সিঙার বাতের বৃষ্টি। বুঝলি মিয়া ভাই।

: হ বুঝনু, তাড়াতাড়ি শেষ কর, আমাক ভোক নাগচে।

: শুন তাহলে, সিঙা গোদা বোণের বাড়িত রওয়ানা দিলে,তার মা আরও জোরে জোরে কান্না কাটি শুরু করে দিল। তার মেয়ে কে ধরে আনবে নাকি মেরে ফেলাবে, এই ভেবে। এতে তার চোখের পানি জোরে ঝরতে থাকল। এই চোখের পানিই হলো, সিঙার বাতের ঝড়ি(বৃষ্টি)।

এদিকে সিঙা তেরো দিনে তের টি তেউরি পার হলো হলো। বোনের সাথে দেখা করতে ১৪ তেউরি পার হবে। কিন্ত সে রকম মালামাল তার সাথে ছিলনা। তার বোন জানালা দিয়ে ভাইকে নয়ন ভরে দেখল। ভাই দেখতে পেলনা।
শেষে সিঙা গোদা হুংকার দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসল। তার মায়ের কান্না ও চোখের পানি বন্ধ হলো। এবার ১৩ ই ভাদ্রের পর খরা হতে শুরু করল।
এভাবেই প্রতি শ্রাবন মাষের ২৬ তারিখে সিঙার বাত বা সিঙার মায়ের কান্নাকাটি শুরু হয়।যা শেষ হয় ১৩ ভাদ্র শেষ হয়।
ঐ নাতি,দেখিসনা, ভাদর মাষের শেষের দিকে, কিছু পাখির, ঘাড়ের, মাথার ও পিঠের চুল উঠা থাকে, ওরাই বোনের বাড়িতে ভার নিয়ে গেছিল। দেখবি এসময় পুরোনো ভিটায়,ছোট ছোট মাটির গোল গোল টিবি মত হয়। এগুলো সিঙার ভার ফেলার কারনে উচু হয়ে থাকে।
: তাইনাকি দাদী
: হ, এই ছিল সিঙার বাতের পৌরাপুরাণিক কাহিনি।
পাঠক গ্রামের মানুষের পুরনো বদ্ধমূল ধারনা টুকু এখান তুলে ধরা হলো।

IMG_20210826_174934.jpg

IMG_20210826_165511.jpg

IMG_20210826_174928.jpg

IMG_20210826_165545.jpgছাতা মাথায় আমি

Best Regard by @mrnazrul Bangladesh

Device, Walton Primo-6 Max

3W3 Location

https://w3w.co/induces.touchy.deducted
///induces.touchy.deducted

Sort:  
 3 years ago 

সারা বাংলাদেশে এই একই অবস্থা। আর বাচ্চাটার মনে হয়ে একটু বেশি আঘাত লাগছে। কারণ বাচ্চারা অল্প ব‍্যাথা পেলে কান্না করে না। আশাকরছি এতোক্ষণে ঠিক হয়ে গেছে।

সিঙার বাত কে, ফোকাস করার করার জন্য এমন একটি গল্পের অবতারনা করা হয়েছে। এখানে কল্পিত বাচ্চাটি এ গল্পের নায়ক।
আদিকাল থেকে লালন করা, পৌরাপুরাণিক কাহিনি 'সিঙার বাত'কে অল্প কখায় তুলে ধরার এটি চেষ্টা মাত্র।আপনাকে সবসময় স্বাগতম।

 3 years ago 

🙂🙂

 3 years ago 

আমাদের এখানেও একি অবস্থা ভাই । খালি বৃষ্টি আর বৃষ্টি । ভালো লিখেছেন ভাইয়া ।শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

লেখাটি আসলে পৌরাপুরাণিক একট রুপ কথা নিয়ে। এটা আমাদের এলাকায় খুবই প্রচলিত। স্বাগতম আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 60222.69
ETH 3303.10
USDT 1.00
SBD 2.36