বাবা হারা ১৪ বছরের একটি ছেলের জীবন
আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধুগন
আমি @mostafezur001 বাংলাদেশ থেকে
আজকে রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৫/২০২২
আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন আমিও ভাল আছি। কত কালকে আমি আপনাদের মাঝে একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম যেখানে আমি বলেছিলাম শনিবার সকালে আমি আর আমার আব্বা গিয়েছিলাম আমার মামার মরিচের জমিতে মরিচ তোলার জন্য। আজকে আমি আপনাদের মাঝে যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে চলেছি সে বিষয়টি আমি সেখানে যাবার পরেই জানতে পারি। তখনই আমি চিন্তা করেছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে আপনাদের মাঝে একটা পোস্ট শেয়ার করা যায়। ঘটনাটি একটা চৌদ্দ বছরের ছেলেকে নিয়ে।
ঘটনাটি চৌদ্দ বছর আগের কথা যখন ছেলেটির বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। তারপর থেকেই ছেলেটি বাবা হারা হয়ে যায় ফলে মায়ের কাছে থেকেই বড় হয়েছে। তার একটা বড় বোনও রয়েছে যে কিনা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। ছেলেটির মুখ থেকে আমি জানতে পারি সে এখন অষ্টম শ্রেণী ছাত্র। বিধবা মা একা পরিশ্রম করে তাদের দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের খরচ চালাতে সক্ষম নয় তাই এত অল্প বয়সেই তাকে পরিশ্রম করতে হয়। যদিও আমি ঘটনাটির সাথে আগে অবগত ছিলাম না তাই আমি তার মুখ থেকেই সকল কিছু শুনলাম। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল ভাইয়া এখন ঘড়িতে কয়টা বাজে আমি তাকে বললাম তোমার কয়টার প্রয়োজন। সে আমাকে বলল তার ১১ টার প্রয়োজন আমি কারণ জানতে চাইলে সে আমাকে বলল সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে আর আজকে তার পরীক্ষা রয়েছে।
কথাটি শোনার পরে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম যে আজকে তার পরীক্ষা আর সে এখানে এসেছে মরিচ তোলার জন্য। বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরভাবে কথা বলতে বলতে পরে আমি জানতে পারলাম বাবা মারা যাবার কারণে তার পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের দেখার মত এই পৃথিবীতে কেউ নেই তাই সে পরিশ্রম করে আর তার এই পরিশ্রমের টাকা দিয়েই মা এবং বোনকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো সেটি হচ্ছে সে বাবা হারা একজন সন্তান হওয়া সত্বেও নিজে পরিশ্রম করে আর একই সাথে সে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি বোনের পড়ালেখার খরচও সে নিজেই চালিয়ে থাকে। তার মুখ থেকে জানতে পারলাম তার বাবার তেমন কোন সম্পত্তি ছিল না যার কারণে সে সেগুলো থেকে কোন ফসল উৎপাদন করতে পারে না। তাই সে সব সময় চেষ্টা করে অন্যের জমিতে কাজ করে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে।
আজকে সে আমার মামার জমিতে মরিচ তুলতে এসেছিল। তাই আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এই যে তুমি মরিচ তুলতে এসেছ তুমি কখন এসেছ? সে আমাকে উত্তরে বলল সে সকাল ছয়টার দিকে এসেছে কেননা তার আজকে পরীক্ষা তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে যেতে হবে। পক্ষান্তরে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি যে মরিচ তুলতে এসেছ তুমি কত টাকা পাবে? সে আমাকে জবাবে উত্তর দিল প্রত্যেক কেজি মরিচের জন্য সে দশ টাকা করে পাবে। আমি দেখতে পেলাম সে এক বস্তা মরিচ তুলে ফেলেছে। আর এই মরিচটা তোলা শেষ হয়ে যাবার পরে সে নিয়ে গেল আমার মামার বাড়িতে সেখানে ওজন করার জন্য। ওজন করা শেষে আমরা দেখতে পেলাম সে ২৩ কেজি মরিচ তুলেছে জমি থেকে। এই কাজ করে তার উপার্জন হয়েছিল ২৩০ টাকা। কিন্তু আমার মামা তাকে ৩০০ টাকা দিয়ে দিল আর সে খুশি হয়ে বাড়িতে চলে গেল।
আসলে আজকের এই পোস্টটির লেখার উদ্দেশ্য আমার অন্যরকমের। সত্যিই আমি ভাবতে পারছিলাম না যে এতোটুকু একটা বাচ্চা ছেলে বাবা হারিয়ে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এতটা অসহায় হওয়ার পরেও সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিজের মতো করে তার পরিবারের সদস্যদের কে নিয়ে বেঁচে থাকতে। যা এতোটুকু একটা ছেলের জন্য সত্যিই অনেক বড় একটা দায়িত্বের বোঝা। তখন আমি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম আজকে যদি আমার বাবা বেঁচে না থাকতো তাহলে হয়তবা বড় ছেলে হিসাবে আমার অবস্থাও ঠিক এই ১৪ বছরের ছেলেটির মতো হয়ে যেত। আসলে বাবা শব্দটি একটা ছোট শব্দ হলেও এই শব্দটির অর্থটা ব্যাপক। বাবা একটি বট গাছের মত। যাদের বাবা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তারা হয়তো বা বাবার গুরুত্বটা বুঝতে পারি না কিন্তু যাদের জীবন থেকে বাবা হারিয়ে গিয়েছে তারাই বলতে পারে তাদের মাথার উপর থেকে কত বড় একটা বটগাছ সরে গিয়েছে। এজন্য আমাদের সকলের উচিত এই বটগাছটাকে ভালোবাসা আগলে রাখা।
আজকের মত এ পর্যন্তই পরবর্তী সময়ে আপনাদের সাথে দেখা হবে নতুন কোন একটি পোষ্টের মাধ্যমে।
আমি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।আমি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানায় বসবাস করি।আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশকে খুবই ভালোবসি।বর্তমানে আমি গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরী স্কুলের একজন শিক্ষক।আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।আমি বিশ্বাস করি, আমার এই সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার সৃজনশীল কাজটি সার্থক হবে। তাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের মাঝে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৃজনশীল জিনিস নিয়ে উপস্থিত হতে।
আমার কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ফেসবুক টুইটার
VOTE @bangla.witness as witness
OR
কি সুন্দর লাগছে ভাইয়া মরিচের খেত। আপনার মামার মরিচের ক্ষেত দেখে তো আমার মনে হচ্ছে যে আমিও যদি গিয়ে মরিচ তুলতে পারতাম। লাল লাল মরিচ গুলো পেকে পেকে আছে কি ভালো লাগছে দেখতে।আপনারা তো অনেকগুলো মরিচ তুলেছেন। সকাল ছয়টা থেকে মরি মরিচ তুলে যাচ্ছে আবার এগারোটার দিকে তার পরীক্ষা সত্যি অবাক লাগলো ।আসলেই বাবা যে কি জিনিস বেঁচে থাকতে অনেকেই বোঝেনা চলে গেলে বোঝা যায় বাবার মর্মটা। সত্যি ছেলেটার কাহিনীটা পড়ে খুব খারাপ লাগলো ।আর এক এক কেজি মরিচের জন্য মাত্র ১০ টাকা করে পাবে আপনার মামাতো তারপর আবার কিছু টাকা বেশি দিয়ে দিল।
যারা হারিয়েছে তারাই বোঝে বাবার মর্ম ।
আমি শুধু এটাই ভাবছি ছেলেটার মধ্যে কি পরিমান ইচ্ছাশক্তি থাকলে এতটা কষ্টের পরও পড়াশোনা করে যাচ্ছে, পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে আমরা পড়াশোনা শুরু করে দেই কিন্তু ছেলেটি সকাল থেকে কাজ করছে পরীক্ষা দিতে যাবে বলে। এখান থেকে কাজ করে সে পরীক্ষার হলে যাবে ব্যাপারটা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এরকম ইচ্ছা শক্তি মানুষ গুলো বড় হলে অনেক বড় কিছু হতে পারে সেই দোয়াই করছি।
ইচ্ছাশক্তি রয়েছে বলেই সে আজকে এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে
সত্যি খারাপ লাগছে এতোটুকু বয়সে এত বড় দায়িত্বের বোঝা ছেলেটির মাথার উপরে। নিজে পড়াশোনা করছে আবার বোনকে পড়াশোনা করাচ্ছে সেই সঙ্গে পরিবারের ভরণ পোষণ তো আছেই ।সত্যি খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা আপনি তুলে ধরেছেন ভাইয়া ।তারপর আবার ওই দিনই তার পরীক্ষাও রয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে আপনি ঠিকই বলেছেন বাবা হচ্ছে বটগাছের মত ।মাথা উপর থেকে বটগাছ চলে গেলে মানুষের জীবনটা সত্যি অসহায় হয়ে যায় ।এটা যাদের আছে তারা বুঝতে পারবে না ।অনেক ভালো ছিল আপনার লেখাটা ।অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
আমিও তার কথা শুনে প্রথমেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম
সত্যি ভাইয়া গল্পটি পড়ে যেমন খারাপ লাগলো তেমন ভালো লাগলো। খারাপ লাগলো এটা শুনে যে এত অল্প বয়সে বাবাকেও হারালো এবং এই বয়সে তাকে এত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ভালো লাগলো এটা শুনে যে সংসারের কিছু দায়িত্ব সে নিজে নিয়েছে। নিজের বোনের পড়ার খরচ চালাচ্ছে এবং নিজেও পরীক্ষা দিচ্ছে। এমন ছেলে ঘরে ঘরে জন্মানো উচিত। আপনার মামাকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ছেলেটিকে কিছু টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
আসলেই তার এই জীবনে থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত
একজন বাবা হারা সন্তানই জানে জীবন সংগ্রাম কতটা কঠিন এবং বাস্তব। এই ১৪ বছর বয়সে ছেলেটা নিজের লেখাপড়া চালাচ্ছে, আবার মা এবং বোনের খরচও চালাচ্ছে। খুব ভালো লাগলো এটা জেনে যে ছেলেটাকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে দিয়েছিলেন। তবে চাইলে মাঝেমধ্যে ছেলেটা খোঁজ নিতে পারেন।
এটা সত্যিই অনেক বড় একটা ব্যাপার নিজের লেখাপড়া চালানো এবং পরিবার চালানো
আপনার গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো এবং অনেক সুন্দর করে লিখেছেন। ১৪ বছরের ছেলে সংসারের জন্য অনেক কাম কাজ করতেছে। ছেলেটির একটি বড় বোন আছে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি এবং ছেলেটি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। পড়ালেখার ফাঁকে অনেক সুন্দর করে ফ্যামিলির জন্য কাজ করতেছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সে নিজে উপার্জন করে নিজের এবং বোনের লেখাপড়ার খরচ চালাই
পৃথিবীতে বাবা নামক শব্দটি অনেক বড়। বাবা না থাকলে একটি পরিবারে বোঝা যায় কতটা কষ্ট। আর আপনার গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো ভাই। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
যারা বাবা হারিয়েছে তারাই জানে এই শব্দটার মানে
আসলে যে আপনজন হারিয়েছে সে বুঝে আপনজন হারানোর ব্যথার গভীরতা কত? আপনার পুরো পোষ্ট টি পড়ে পড়ে খুব ভালো লাগলো। অল্প বয়সে ছেলেটির উপর অনেক দায়িত্ব পড়লো। ছেলেটি যেন ভবিষ্যতে ভালো কিছু হতে পারে । পোস্টটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
যারা আপনজন হারিয়েছে তারাই বুঝতে পারে আপনজন হারানোর গভীরতা কত বড়