প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানোর কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি- পর্ব ৩|| @shy-fox 10% beneficiary @abb-school 5%

আমার বাংলা ব্লগের সকল প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি সৃষ্টিকর্তা অসীম রহমতে সবাই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

সোর্স

দ্বিতীয় পর্বের পর....

আমি আজ আপনাদের মাঝে আমার স্কুল জীবনের আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানোর কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানো সেই স্মৃতি গুলো এখন অনেক মিস করি।আমি যখন ক্লাস ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। তখন আমার ছোট একটা ঘটনার কেন্দ্র করে স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।

আমাদের স্যার নতুন বাসায় উঠে গেলেন। কয়েক দিন কেটে যাওয়া পর একদিন স্কুলে টিফেনর সময় স্যার সঙ্গে দেখা করলাম। জানতে চাইলাম কেমন আছেন স্যার নতুন বাসায় কেমন দিন চলছে। স্যার উত্তরে বললেন আল্লাহ্ রহমতে ভাল আছি কিন্তু বাবু টা এই বাসায় আসার পর শুধু কান্না করে চলেছে। আমি বললাম স্যার কোনো অসুখ হয়নি তো। স্যার বললেন জানিনা ডাক্তারের কাছে নিয়ে ছিলাম। কিন্ত তার পরেও কান্না থামছে না।

স্যার কে বললাম আজ বিকেল বেলা আপনার সাথে দেখা করবো। এক হুজুরের কাছে নিয়ে যাবো। স্যার উত্তরে বললেন ঠিক আছে। বিকালে আমি স্কুল থেকে বাসায় চলে আসলাম। তারপর বাসা থেকে খাওয়া দাওয়া করে আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্যার বাসার দিকে রওনা হলাম। স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল। স্যার কে বললাম ভাবীকে নিয়ে চলেন স্যারের বাবু তখনো কান্না করছে।

তারপর আমরা রওনা হলাম। হজুরের বাসা বেশি দূরে নয়। মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা আমার হেঁটেই গেলাম।
আমরা একটু সন্ধ্যার আগে পৌঁছলাম। একটু পরে মাগরীবের আযান দিবে। হজুর নামাজের জন্য মসজিদে আসতেসে আমি হুজুর কে সালাম দিলাম। হুজুর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কি খবর তোমার। বললাম ভালো আছি আপনি কেমন আছেন। তিনি উত্তর দিলেন আলহামদলিল্লাহ্। আমি বললাম আমার আমার স্যারের মেয়ে অনেক কান্না করছে হুজুর একটু দুয়া করে দেন। হুজুর বললেন বাবু স্যারের কাছে নিতে। তারপর হুজুর দুয়া করে ফু দিলেন কয়েকবার। বাবুর আসতে আসতে কান্না থামছে।

ভাবি অনেক খুশি হলেন। আমি হুজুর কে বললাম কি হয়ে ছিল। তিনি বললেন দুষ্টু কিছু ছিল তাই বাচ্চা কান্না করেছিল। হুজুর বললেন আর কোনো সমস্যা হবেনা। কাল সকালে আর একবার আসতে বললেন।
আমি বললাম ঠিক আছে হুজুর। আমার বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। বাবু ঘুমিয়ে পড়েছে আমি ভাবির কাছে জানতে চাইলাম। ভাবি হেসে উত্তর দিলেন হা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবুর জন্য দুজন দুইদিন ঘুমাতে পারিনি। ভাবি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। তিনি বললেন কাল বিকেল বাসায় আসতে। আমরা দুই বন্ধু স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

এর পর থেকে স্যারের কোনো সমস্যা হলে আমাকে খবর দিতো। আমি চেষ্টা করতাম স্যারকে সাহায্য করতে। আমরা অনেক ছাত্র স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। আমার কাছে স্যার প্রাইভেটে বেতন নেয়নি। আমি দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছি। আমাকে একটা কথাই বলত তুই আমার ভায়ের মতো। ভাবীও আমাকে বলতো আর আকবর টাকা দিতে চাইলে আমাকে মারবে। স্যার কোথাও ঘুরতে গেলে আমাকে সঙ্গে নিতেন।

এভাবে একটি বছর কেটে যাই। স্যারের বদলির চিঠি আছে। তার নিজের এলাকার স্কুলে এলাকার বদলি।
স্যারের বিদায় বেলায় নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।
অনেক কান্না করেছিলাম। স্কুলের সকল ছাত্র ছাত্রী মালেক স্যারের জন্য চোখের জল ফেলে ছিল। সবার প্রিয় হয়ে উঠেছিল মালেক স্যার। স্যারও অনেক কান্না করেছিল।

অনেক কষ্টে তাকে বিদায় দিতে হয়েছিল। স্যার যাবার সময় বলেছিলেন ভালো থাকিস। মন দিয়ে পড়া লেখা করিস। যদি পারিস আমাকে দেখতে যেতে। সেদিন স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা ছিলো। এর পর আর দেখা হয়নি।

আজ আপনাদের মাঝে আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানো কিছু স্মৃতি শেয়ার করতে পেরে নিজের খুব ভালো লাগলো। আশা করছি আপনাদেরও ভালো লেগেছে।

(শেষ)

ধন্যবাদ সবাইকে,

@mosarofhosen