আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা -২০|| আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি|| @shy-fox 10% beneficiary @abb-school 5%
আসসাামুআলাইকুম ও নমস্কার,
আমার বাংলা ব্লগের সকল প্রাণ প্রিয় ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি সৃষ্টিকর্তা অসীম রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
প্রেম হচ্ছে পবিত্র। প্রেম হচ্ছে এক অনন্য অনুভূতি। কোন মানুষের মধ্যে যখন আবেগ ও ঘনিষ্ঠতা রোমান্টিক ভালোবাসা থাকে সেটাই হচ্ছে প্রেম। বুকের ভেতর কেমন যেন তোলপাড় করা অনুভূতি। তাকে হয়তো কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্বেও এক মধুর এক সম্পর্কের অনুভূতি। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের ধুকধুকানি। ভুলে থাকার হাজার বার চেষ্টা করেও এই হৃদয় থেকে দূরে সরে দেয়া যায় না। প্রথম প্রেম সবসময় জাগ্রত হয় এবং চিরকাল স্থায়ী হয়।
🌷আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি 🌷
ছোট বেলায় থেকেই আমি একটু লাজুক স্বভাবের ছিলাম। করো সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতাম না। মেয়ে মানুষ দেখলে কাছে যেতাম না। স্কুলের বান্ধবীদের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতাম না। কেও জিজ্ঞেসা করলে শুধু প্রয়োজনীয় কথার উত্তর দিতাম। এর জন্য আম্মুর আমাকে সবসময় বকা দিতো আর বলতো তুমি বড় হয়ে কি হবে। সবার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলোনা। একটু ভাল মন্দ সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়। আমি আম্মুকে বলি আমার বেশী কথা বলতে ভালো লাগে না। করণ দেখতেও বেশী সুদর্শন ছিলাম না। মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পেতাম। আমার ভালো লাগাটা শুরু হয় যখন আমি ক্লাস দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমার মামাতো বোনকে ভালো লেগে যায়। সে হচ্ছে আমার আম্মু ফুফাতো ভাইয়ের মেয়ে। দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। ওর নাম ছিল মরিয়ম। তখন মরিয়ম ক্লাস সেভেনে পড়ে। আমার খুব ভালো লাগতো। আমি মনে মনে খুব পছন্দ করতাম কিন্তু বলার সাহস পেতাম না। কারন মরিয়ম জেদী মেয়ে সব কোথায় সিরিয়া ভেবে নিয়ে নেয়। ভাবতাম যদি ওকে প্রোপোজ করি হয়ত ওর বাবাকে বলে দেয়। এই ভয়ে বলার সাহস হতো না।
আবার ভাবতাম এখন যদি না বলি হয়তো সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে। আমার বাড়ী ওদের বাড়ী প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্ব ছিল। আমি মাসে দুই তিনবার মরিয়মদের বাড়ীতে যেতাম শুধু ওকে দেখার জন্য।
একদিন ওদের বাড়ী সামনে বিকেল বেলা আমার এক বন্ধুর সাথে বসে ছিলাম রেললাইনের উপর। মরিয়ম সেই সময়টাই প্রাইভেটে পড়তে যায়। আমি অপেক্ষা করতে ছিলাম ওর জন্য। মরিয়মকে দেখতে পেয়ে দাড়িয়ে পড়লাম। সাথে ওর এক বান্ধবী ছিল। আমি ভাবলাম সাহস করে ওকে প্রোপোজ করে ফেলি। কি ভাবে বলবো আমি বুঝতে পারছিলাম না। মরিয়ম আমাকে দেখে দাড়িয়ে পড়ল। বললো ভাইয়া আপনি এখানে কেনো। আমি বললাম আমার এই বন্ধুর সাথে একটা কাজে গিয়েছিলাম। এখানে বসে একটু দুজন গল্প করছিলাম তারপর তোমার সাথে দেখা হলো। মরিয়ম আমাকে ওদের বাসায় যেতে বলে। আমি বললাম আজ না অন্যদিন যাবো। আমি বললাম প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছ। বলল জী ভাইয়া, আমি বললাম ওকে যাও। আমার বন্ধু আমাকে ইশারা করলো কিছু বলার জন্য। আমি মরিয়মকে বললাম তোমার সাথে কিছু কথা আছে একটু সময় দিতে পারবে। মরিয়ম বলল বলেন। বললাম তোমার বান্ধবীকে একটু সামনের দিকে যেতে বলো। ওর বান্ধবীকে সামনে যেতে বলল। আমাকে বলল এবার বলেন। বলার সাহস পাচ্ছিনা। আমতা আমতা করেই বলে দিলাম। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার কথা শুনে মরিয়ম একটু ভয় পেলো।আমি উত্তর জানতে চাইলাম। মরিয়ম আমাকে বললো আমি অনেক ছোট আমার এই সব ভালো লাগেনা। আব্বু জানতে পারলে আমার সমস্যা হবে। আপনি আর এসব বলার জন্য সামনে আমার আসবেন না। আমরা আগের পরিচয়ে থাকতে চাই। ওর কথা শুনে আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না। দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি শুধু মরিয়মকে বললাম তুমি এসব বিষয়ে তোমার বাড়ীতে কাউকে জানাবে না। মরিয়ম বলল ঠিক আছে।
সেইদিন আমি অনেক কষ্ট পেয়ে ছিলাম। বুকে যেন আমার রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো। অনেক কষ্ট নিয়ে আমি বাড়ীতে চলে আছি। আমি হাজার চেষ্টা করেও ওর কথা গুলো ভুলতে পারছিলাম না। শুধু ওর কথায় মনে পড়ে। ভালো করে ঘুমাতে পারছিলাম না। এরপর থেকে ওদের বাড়ীতে বেশি যেতাম না। শুধু দুর থেকে দেখে চলে যেতাম। আমি আরো কষ্ট বেশি পেতাম। পড়া লেখা মন দিতে পারতাম না। আর ভাবত প্রেমের যন্ত্রণা এতো কঠিন কেন।
এভাবে কয়েকটি বছর কেটে যায়। আমি অনেক বার ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমি কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলাম। আমি কয়েকটি বছর ওকে চোখে চোখে রেখেছি। ওকে যেনো কেউ বিরক্ত না করে। ওর বান্ধবীর কাছ থেকে মরিয়ম খবর রাখতাম। মরিয়ম এসএসসি পরীক্ষা দেয়। আমিও ডিগ্রি পড়তেছি। এর আগে ওরে সামনে খুবই কম যেতাম। বেশি আমার সঙ্গে কথা বলত না। শুধু প্রয়োজনীয় কথা হতো।
একদিন আমার ছোট খালার বিয়েতে আসে। মরিয়ম এসেছে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি মনে মনে ভাবলাম আর একটিবার ওর সামনে দাঁড়াবো। আমি সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। যখনি ওকে একা পাবো তখনি আবার বলবো। আমি তোমাকে এখনো অনেক ভালোবাসি।
বিকালে নদীর পারে আমার ছোট বোনকে নিয়ে মরিয়ম ঘুরতে যাই। আমিও ওদের সাথে যায়। আমি ভাবতেছি এই সময় আমাকে বলতে হবে। আমার ছোট বোনকে ইশারা দিলাম ওর থেকে দূরে থাকতে। আমার ছোট বোন জানত আমি মরিয়মকে পছন্দ করি। তারপর আমার ছোট বোন মরিয়মের থেকে একটু দূরে সড়ে যায়। আমি মরিয়মকে আবার নতুন ভাবে প্রোপোজ করি। শেষে এটাও বলে দেই আমার জীবনে তুমিই শুরু তুমিই শেষ । মরিয়ম বেশি কিছু না বলে শুধু একটাই কথা বললো। আমাকে কিছু সময় দিতে হবে ভাবার জন্য। আমি বললাম ওকে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আমি ওই দিন সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু ভাবতে ছিলাম ওর উত্তরা টা কি হবে।
পরদিন সকালে আমি মরিয়মের কাছে উত্তরটা জানতে চাইলাম। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মরিয়মকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার উত্তর টা চায়। মুখে এক ঝলক হাসি দিয়ে জানিয়ে দিল ঠিক আছে আমি সারা জীবন তোমার পাশে থাকতে চায় । সেইদিন আমার জীবনের শ্রেষ্ট দিন ছিলো যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা।
সম্পর্ক হওয়ার পর আমি মরিয়মকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি আমাকে সেইদিন কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলে। সে বলল আমি প্রেমের বিষয়ে কোন কিছু বুঝতাম না। সেই সময় আমার ভালো লাগেনি। তাই তোমাকে ফিরেয়ে দিয়েছি। তোমার সম্পর্কে আমার বান্ধবীর কাছ থেকে অনেক কিছু শুনার পর। আমি একটু একটু করে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম আর একবার আমার সামনে এসে বলো এখনো তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিবনা।
এর পর থেকে আমাদের সম্পর্ক এগোতে থাকে।
আমরা দুই বছর সম্পর্ক করার পর আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমাদের বাবা মা কেউ রাজি ছিল না। দুই বছর পর যখন আমার কন্যা সন্তান হয় তখন সবাই মেনে নেয়। এখন আমার দুটি সন্তান একটি ছেলে একটি মেয়ে। এখন আমরা অনেক সুখী। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
প্রথম প্রেমে কখনো ভোলা যায় না। প্রথম প্রেমে কোন অপরাধ থাকেনা। প্রথম ভালোবাসা যা হয়ে থাকে মন থেকেই হয়ে থাকে এই ভালবাসার কোন সীমা রেখা থাকে না। যেটুকু ভালোবাসা জন্ম নেয় মনের গভীরে থেকেই জন্ম নেয়।
আজ আমি সত্যিই আনন্দিত আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো শেয়ার করতে পেরে।
ধন্যবাদ সবাইকে,
প্রথমেই অভিনন্দন জানাচ্ছি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। আসলে এই প্রতিযোগিতা খুবই ভিন্ন এবং ইউনিক ছিল। যদিও আমি এখনো অংশগ্রহণ করি নাই তবে খুবই তাড়াতাড়ি করব। আপনার প্রেমের কাহিনী শুনে খুবই ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।