প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানোর কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি- পর্ব ১|| @shy-fox 10% beneficiary @abb-school 5%

আমার সকল প্রিয় ভাই ও বোনেরা। কেমন আছেন সবাই। আশা করছি সৃষ্টিকর্তা অসীম করুণাময় আপনারা সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহ্ রহমতে আপনাদের ভালোবাসায় অনেক ভাল আছি।

সোর্স

আমি আজ আপনাদের মাঝে আমার স্কুল জীবনের আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানোর কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে কাটানো সেই স্মৃতি গুলো এখন অনেক মিস করি।আমি যখন ক্লাস ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। তখন আমার ছোট একটা ঘটনার কেন্দ্র করে স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।

আমি ছিলাম একটু লাজুক প্রকৃতি ছাত্র। পড়া লেখার বিষয়ে মোটামুটি ছিলাম। ক্লাস সেভেনে উঠার একমাস পর আমাদের স্কুলে একজন শিক্ষক জয়েন্ট করেন। তার নাম হচ্ছে মালেক স্যার। তিনি ছিলেন একজন ইংরেজী শিক্ষক।

স্যার জয়েন্ট করার পর আমাদের প্রধান শিক্ষক স্যার মালেক স্যার সাথে ছাত্রদের ক্লাসে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা স্যারের সাথে এক এক করে পরিচিত হই। মালেক স্যার তার সম্পর্কে ভালো মন্দ অনেক কিছু বলেন। তিনি আরো বলেন পড়া লেখার বিষয়ে তিনি খুব কঠিন। কোন ছাত্র তার ক্লাস মিস করতে পারবে না। যে ক্লাস মিস করবে তাকে শাস্তি পেতে হবে। যে ছাত্র পড়া পারবে না তাকেও শাস্তি পেতে হবে।

আমরা তো সবাই পাচ্ছিলাম মালেক স্যাররে কথা শুনে। আমি তো আরো ভয় পাচ্ছিলাম কারণ আমি ইংরেজিতে অনেক দুর্বল। স্যার আরো বলেন যে আমার সাবজেক্ট যে ভালো করবে তাকে পুরুস্কার দেয়া হবে।

যাইহোক স্যার কথা গুলো শুনতে অনেক ভালো লাগলো। তিনি খুব রোমান্টিক একজন মানুষ। আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন আচরন করেন। প্রথম দিন কোনো ক্লাস নিলেন না। তিনি বললেন কাল থেকে তোমাদের ক্লাস নেয়া হবে। পরের দিন থেকে আমাদের মালেক স্যার ক্লাস নেয়া শুরু করলেন। কয়েকদিন স্যার আমাদের সাথে খুব ভালো আচরন করলেন। আমি নিয়ম চেষ্টা মালেক স্যারের ক্লাসে উপস্থিত থাকার। কোন স্যারের পড়া না শিখলেও মালেক স্যারের ইংরেজি পড়া শিখার চেষ্টা করি। কারণ মালেক স্যারের ইংরেজি পড়া না শিখলে কান ধরে বাহিরে দাড় করিয়ে রাখে মেয়েদের সামনে। তাই চেষ্টা করি পড়া শিখার কারণ আমাকে যেনো লজ্জা পেতে না হয়।

একদিন অনেকে ছাত্র মালেক স্যারের পড়া দিতে পারেনি সেই দিন আমিও পড়া পারিনি। স্যার অনেক রাগ করলেন। স্যার এক ছাত্রকে অফিস থেকে বেত আনতে বললেন চার পাঁচটা। আমি তো খুব ভয় পাচ্ছিলাম আজ স্যারের হতে বেতের বাড়ি খাবো।

প্রথমে আমাকেই ডাকলেন স্যার। কারণ আমি প্রথম সারিতে ছিলাম। স্যার জিজ্ঞাসা করলেন কেনো পড়া শিখিস নাই। আমি বললাম স্যার শিখেছিলাম ভুলে গেছি। স্যার বলল আজ থেকে আর ভুলে যাবিনা। দুটি বেত এক জায়গাই করে মারতে শুরু করলেন অনেক জোরে। প্রথম আঘাতেই বেত ভেঙ্গে যায়। দ্বিতীয় বেতের আঘাতটা আমার হাতের আঙ্গুলে লেগে ফেটে যায়। আমি স্যার কে কেঁদে কেঁদে বললাম আমার আঙ্গুল ফেটে গেছে। আমি নিচে বসে পড়ি। আঙুল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। স্যার দেখে আমাকে আর আঘাত করলেন না। স্যার আমার বন্ধুদের বললেন মোশারফ কে ডাক্তাররে কাছে নিয়ে যাও। কারণ আমার প্রচন্ড রক্ত বের হচ্ছে। আমার বন্ধুরা আমাকে এক ফার্মেসিতে নিয়ে গেলেন। সেখান হাতে ব্যান্ডেজ করে আবার স্কুলের নিয়ে আসলো।

স্যার আমাকে দেখে আফসোস করতে লাগলেন।
আমাকে স্যার ছুটি দিয়ে দিলেন। বললেন হাত ভালো হলে স্কুলে আসতে। আমি স্যার কে বললাম আপনি মন খারাপ করিয়েন না। হঠাৎ করে হয়ে গেছে। আমি কাল স্কুলে আসবো। আমি আজকে মধ্যেই সুস্থ্য হবো। স্যার আমার পরে কোন ছাত্রকে মারেনি। আমাকে ছুটি দিলেন। আমি বাড়ীতে চলে আসলাম।

আমার বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি স্যার অনেক আফসোস করেছেন। স্যার এটাও বলেছেন এর পর থেকে আর বেত দিয়ে মারবেনা। যে ছাত্র পড়া পারবেনা কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবে।

আমি দুই দিন পর স্কুলে গেলাম। স্যার আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার খোজ খবর রেখেছেন। আমাদের প্রথম ক্লাস ছিল ইংরেজি। স্যার ক্লাস প্রবেশ করেই আমাকে ডাকলেন আমার কি অবস্থা দেখার জন্য। বললেন আঙুল ভালো হয়েছে তোর। আমি বললাম জী স্যার। স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি স্যার কে বললাম আমার কিছুই হয়নি আপনি মন খারাপ করবেন না। যদি এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ করেন আমার সবাই অনেক কষ্ট পাবো। আমার সকল বন্ধুরা একসাথে বলে উঠলো জী স্যার।

স্যার হয়তো ভেবেছে আমি তার উপর মন খারাপ করে আছি। কিন্তু না তেমন কোনো ব্যাপার না। বিকালে স্কুল মাঠে আমরা বারোজন ছাত্র স্যারের সাথে দেখা করি। প্রাইভেট পড়ার জন্য। আমাদেরকে দেখে এগিয়ে আসলেন। তিনি বললেন কি ব্যাপার তোরা কোথায় যাচ্ছিস। আমি মজা করে বললাম স্যার আপনার সাথে ফুটবল খেলবো। স্যার ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন। স্যার হেসে বললেন তাই নাকি আচ্ছা খেলবো। আমি বললাম স্যার আমরা আপনার কাছে প্রাইভেট পড়তে চাই।

স্যার বললেন আমি যেখানে থাকি সেখানে পরিবেশ ভাল না। আমি বাসা পরিবর্তন করতে চাই। তোদের পরিচিত কোনো ভালো বাসা আছে কি না। আমি বললাম আমি আপনাকে বাসা খোঁজে দিবো। আমার আত্মীয় একটি বাসা আছে তারা সবাই শহরে থাকে। আপনি চাইলে সেটি ব্যবস্থা করে দিতে পারি। স্যার বললেন ঠিক আছে কাল তোদের বাসায় যাবো বাসা দেখতে।

(চলবে)

ধন্যবাদ সবাইকে
@mosarofhosen