আমার ফাঁসি চাই , আমার কবিতার খাতা থেকে
জীবন যুদ্ধে আমি এক ব্যর্থ সৈনিক ।
কোন কাজই পরিকল্পনামাফিক হয় না আমার
যা ভাবি ঘটে তার ঠিক উল্টো ।
পৃথিবীটা করছে বিমাতা সুলভ আচরণ আমায়
প্রতিদিন নিঃশেষ হতে চলেছি ।
চিন্তার করাল গ্রাস চতুর্দিকে জাপটে ধরেছে,
সময়ের প্রতিযোগিতায় কেবল আমিই পিছিয়ে।
যেখানে পরে হাত আমার সেখানেই ব্যর্থতার ছোঁয়া,
যেন স্বর্ণ হয়ে যায় পাথরকণা
আর পারছিনা, এভাবে চলবে আর কতদিন ?
মনে হয় অবাস্তব আলেয়ার পেছনে ছুটছি মিছিমিছি
জীবনের সুন্দর স্বপ্নগুলোয় ক্রমশই পড়ে যাচ্ছে ভাটা
বাঁচার ইচ্ছে গুলো মরীচিকার মত সরে পড়ছে দূর থেকে দূর ।
বাঁচতে চাইনা, আমি আর বাঁচতে চাইনা,
আমার ফাঁসি চাই।
বাবা-মায়ের এক বেকার সন্তান আমি ,
চাকরির জন্য প্রতিনিয়ত হন্যে হয়ে ঘুরছি
অন্যের দ্বারে দ্বারে
সোনার এই হরিণ দিচ্ছে না ধরা ।
ঘরেতে ঘাতক ব্যধিতে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাঁপছে ছোটবোন
দুবেলা ভাত দিতে পারছিনা, আবার ওষুধ
বিধবা মা কাদতে কাদতে চোখ দুটিতে পড়ে গেছে ছানি ।
কারো জন্য যাচ্ছেনা কিছুই করা।
চাকরি নেই, প্রেমিকার মনে তাই বিষাদ ছায়া
হারানোর ভয়তাকে যাচ্ছেনা মানা
নচিকেতার নেয় বলতে পারছিনা
চাকরিটা বেলা এবার হয়ে গেছে সত্যি।
সবকিছু ক্রমশই হয়ে যাচ্ছে ব্যর্থ ।
মনে হচ্ছে জন্মই আমার আজন্ম পাপ,
হতভাগা মুখখানি আর কাউকে দেখাতে চাইনা ঝীর্ণ পৃথিবীকে
চিৎকার বলতে ইচ্ছে করছে আমায় ,
আমার ফাঁসি চাই ।
আমি এক ব্যর্থ স্বামী, পিতা
সামান্য বেতনের চাকুরীজীবী
অভাব আর ঋণের বোঝায় বড়ই ভারাক্রান্ত ।
পরনে স্ত্রীর ছেড়া পোশাক,
নেই মেয়ের স্কুলের ড্রেস,
দিতে পারছিনা ছেলের পরীক্ষার ফিস,
এ কথা যায়না কাউকে বলা।
পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে পাওনাদারদের ভয়ে,
অফিসেও সম্মানটুকু নেই, সবার কাছে টাকা নেওয়া ধারে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিষাক্ত সাপের নেয়
নিরন্তর ছো্বল মাড়ছে।
দিনশেষ হয়ে গেলে ঘরে ফেরার আগ্রহ গেছে হারিয়ে ,
ঘরেতে অসহায় স্ত্রী বিনিদ্র রাত জাগে ।
কি করবো আমি ? কি করার আছে আমার ?
লজ্জায় অবনত হয়ে আসছে আমার সমস্ত চিন্তার জগত
বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু হারিয়ে ফেলেছি ক্রমশ,
অসহায়ের মতো মৃত্যুচিন্তা ক্রমশ সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে
মৃত্যু ব্যতীত অসছেনা অন্য সমাধান।
তাই বলতেই হয়
আমার ফাঁসি চাই ।
ধরনীতে আমি এক ব্যর্থ স্টুডেন্ট।
পড়াশুনা লাগেনা ভাল আমার,
বীজগণিত আর পাটিগণিতের জটিল অংক খেলেনা মাথায়,
ইংরেজিতে পাশ সেতো আরেক এভারেস্ট জয়।
সহপাঠীরা চলে গেছে উপরের ক্লাসে,
বাবা আর ভাইয়ের প্রতিদিনকার শাসন ভালো লাগেনা আর ।
কিন্তু আমার মাথায় যে ঢুকছেনা কিছুই
এই সমাজ কি আমাকে জোর করে পড়াবে ?
বইয়ের কাল লেখাগুলো দেখলে আমার এসে যায় চোখে জল,
কি করবো , বারবার চেষ্টা করা স্বত্যেও
মাথায় ডুকেনা পড়া আমার।
প্রতিদিন স্যারদের পিটুনি
আর বাসায় ফিরলে বাবা মায়ের বকুনি ।
প্রতিদিন কুঁকড়ে কুঁকড়ে খাচ্ছে আমায়।
শেষবারের নেয় স্কুলে ডেকে নেয় বাবা আর মাকে,
করে অপমান, না পড়ার দায়ে আমার ।
তা কি করে সহা যায় ? মানা যায়?
বলে দেয় ফেল করলে এবার, স্কুলে রাখা হবে না আর ।
ভাগ্য কি সহসায় দেয় ধরা,
এবারও যে আমি ফেল্
স্কুল শেষে ফিরছি আর ভাবছি
এ পৃথিবী আর আমার নয়।
এ পৃথিবী আর ভালো লাগছে না
কিভাবে বাবা-মাকে দেখাবো পোড়া মুখখানি আমার
কিরুপে যাব সহপাঠীদের সামনে,
কি মুখ নিয়ে যাব মাঠে ।
হে বিধাতা, কি অপরাধ ছিল আমার
কেন আমাকে মানুষ করে পাঠালে ?
জন্তু জানোয়ার হলে তো কোন চিন্তা- দুশ্চিন্তা থাকতো না আমায়,
থাকতো না মান-অপমানের প্রশ্ন
তার চেয়ে বরং মরে যাওয়াটাই কি শ্রেয় ?
হে বিধাতা আকুল মনে তোমার নিকট করি ইবাদত
দাও আমার মৃত্যু নতুবা
চাই আমার ফাঁসি।
অনেক সুন্দর একটি কবিতা আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন কবিতাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাই, আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সামনের দিনগুলোতে ভালো লিখতে পারে।