ছোট বোন, ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

প্রিয় কমরেডগণ, একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আপনারা সবাই ভাল আছেন। আপনারা ভালো থাকেন এটাই আমার একমাত্র কামনা। মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট এই প্রার্থনা সবসময় করি সকলে ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক।
আপনাদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় ছোট বোনকে নিয়ে একটি গল্প লেখার চেষ্টা করলাম ও আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম ভালো লাগলে জানাবেন।

Mimi-01.jpeg

অনেকদিন যাবত লেখালেখি করছি না। তাই অনেক আবেগ নিয়ে লিখতে বসলেও কলমে লেখা আসছে না। সংসারে সবার ছোট বোন আছে। সবাই তাকে ভালোবাসে। বাবা মায়ের আদরের ছোট সন্তান।
গল্পটি লিখতে বসে আমার মনে পড়ে যায় মান্না দের
সেই গানটি ‌‌‌‌" সে আমার ছোট বোন , বড় আদরের ছোট বোন"
‌ যে গল্পটি আমি শুরু করতে যাচ্ছি এর সাথে বাস্তবের মিল থাকতেও পারে । যেহেতু বাস্তবকে নিয়ে গল্প উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ সবকিছু তাই এর চরিত্রটি বাস্তবের কারো কারো সাথে মিলে যেতে পারে।
তারা ছিলো তিন ভাই দুই বোন। মধ্যবিত্ত পরিবার । সংসারে উপার্জনকারী বলতে একমাত্র বাবা। টানাপোড়েন সংসার। তিন ভাই পড়াশোনা করে। চতুর্থ যে সেও ছোট বোন । সেও পড়াশোনা করে । যাকে নিয়ে গল্প সে তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

মধ্যবিত্ত পরিবার। শিক্ষিত পরিবার । মা চেষ্টা করছে সন্তানগুলোকে মানুষের মত মানুষ করার জন্য। তাই নিজে পরিশ্রম করে ছেলেদেরকে লেখাপড়া শিখানোর মরণপণ চেষ্টা করছে। তিন ছেলে বড় । কেউবা পাবলিক ভার্সিটিতে কেউবা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তে পড়াশোনা করছে । বাবার একসাথে তিন সন্তানকে পড়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। টানাটানির সংসার। ধারদেনা করে সংসার চলছে।
ছোট বোনকে নিয়ে যেহেতু এ গল্প লেখা হচ্ছে তার একটি নাম তো দেওয়া দরকার । ধরে নিলাম ছোট বোনটির নাম মিমি। আদরের মিমি। বড় আদরের ছোট বোন মিমি।

মিমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। সুন্দর পাতলা গড়ন। তার অনেক কিছু খেতে মন চায়। অন্য বাচ্চাদের মত তার চিপস , চটপটি নুডুলস এগুলো তার অনেক পছন্দ । কিন্তু এগুলো তাকে কে কিনে দিবে। অভাবের সংসার । তিনবেলা খাবার জোগাড় করতে কষ্ট হয়। তিন ভাই এক বোন সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করছে। কে রাখে মধ্যবিত্ত পরিবারের খবর। এক বেলা খায় আরেক বেলা উপোস থাকে। কাউকে বলাও যায়না সহা যায়না ।বিশেষ করে
মিমির মা বলতে গেলে একপ্রকার না খেয়েই থাকে। মায়েরা বুঝি এমনই হয়। মুখ বুজে সব সহ্য করে যায়। সন্তানের মঙ্গলের জন্যে নিজকে তিলে তিলে বলি করে দেয়। না খেয়েও বলে খেয়েছি।

মিমির ভাইয়েরাও ভার্সিটিতে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। তারা বুঝে বাবা অনেক কষ্ট করে উপার্জন করে। মা অনেক কষ্ট করে সংসারটা চালাচ্ছে। ছেলেরা সকালে না খেয়ে নাস্তার টাকা দিয়ে বই কিনে । এভাবেই তো কষ্ট করে লেখাপড়া করে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা একটা সময় সমাজের উঁচু শিক্ষিত স্তরে জায়গা করে নেয়। মিমি অনেক খেতে চায়। কিন্তু টাকার অভাব সামান্য সস্তা বিস্কুটও খেতে পায়না । বিষয়টি নিয়ে বাবার মায়ের অনেক কষ্ট লাগে। তাই মিমির বাবা মিমির জন্য দোকান থেকে সস্তা দামের বিস্কুট নিয়ে আসে। মিমি সেগুলো পানিতে ভিজিয়ে খুব আনন্দের সাথে খায়। বাবা আমার জন্য তুমি বিস্কুট এনেছো, দেখো আজকে আমি অনেক পড়াশোনা করব। বিস্কুট পেলে মিমি অনেক খুশি। সেদিন সে অনেক পড়াশোনা করে।

ছোট মেয়েটা শুধু বাড়িতে থাকে । অন্য সন্তানেরা পড়াশোনার কারণে ঢাকা-কুমিল্লা চট্টগ্রাম থাকে। মা আর মিমির মধ্যে অনেক ভাব। আদরের মেয়ে পেট ভরে খেতে পায়না তাইতো মায়ের চোখে পানি পড়ে ।

তারা শুধু ভাবে টাকার অভাবে মেয়েটাকে ভাল কিছু খেতে দিতে পারেনা । দুধ ভাত মিমির অনেক পছন্দ ।একটু দুধ হলে মিমি পেট ভরে খায় । বাবা যখন এক পোয়া দুধ কিনে আনে মিমি তখন অনেক খুশিতে থাকে। সকালে দুধ দিয়ে খাবে, বিকেলেও দুধ দিয়ে খাবে। রাত্রে দুধ থাকে না বলে মা দুধের পাতিলে মধ্যে পানি দিয়ে রাখে। মিমি বলে আমি দুধের পাত্রে পানি দিয়ে ভাত খাব । একথা শুনে মায়ের চোখে পানি চলে আসে ।বাবার চোখ দিয়ে পানি পড়ে । মেয়েটা দুধের পাতিলে পানি মিশিয়ে কত মজা করে দুধ ভাত খাচ্ছে । মিমি বলে মা তুমি কাঁদছো কেন । দেখো কত মজা করে খাচ্ছি। তুমি কেদোনা। কেঁদো না মা জননী। ভাইয়ারা যখন বড় হবে, যখন ভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করবে যখন বড় বড় চাকরি পাবে তখন আমার জন্য অনেক ভালো খাবার আনবে । তখন আমি পেট ভরে দুধ দিয়ে খাবো। তিনবেলা দুধ দিয়ে খাবো। আমার জন্য কাঁদো না মাগো তুমি। একথা শুনে মায়ের বুক ফেটে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে । বুকটা ফেটে যায়, হৃদয় জুড়ে শুধু হাহাকার।

মিমি নিয়মিত স্কুলে যায় আসে। পড়াশোনা করে ভালো । ক্লাস রুটিন মেনে চলে। মা বলে তোমার সব ভাইবোন লেখাপড়ায় খুব ভাল ছাত্র ছাত্রী । তোমার পড়াশোনা খারাপ হলে চলবে না। বড় ভাইদের মান-সম্মান তোমাকে রাখতে হবে। তোমাকে অনেক বড় হতে হবে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হবে।
মা বড় ভাই আমাকে পড়াশোনার জন্য এত মারে কেন । ভাইয়ের মনে কি একটুও কষ্ট হয়না আমাকে এভাবে মারতে । আমারতো মাথায় সবকিছু ধরে না । তোমারতো ভালো খাবার দাও না। আমার বান্ধবীরা কত ভালো খাবার খায়। স্কুলে ডিম দিয়ে টিফিন আনে। অন্য বাচ্চারা কত সুন্দর খাবার আনে।
তারা দুপুরের পেট ভরে খায়। আমার দুপুরে অনেক খিদা থাকে মা । আমার টিফিন পিরিওডে লজ্জায় পানি খেতে পারিনা মানুষ বলে যে পানি খেয়ে থাকি। তাই যখন টিফিনে পর ক্লাস শুরু হয় তখন আমি বাথরুমের কথা বলে, বাথরুমে টেপের পানি খেয়ে ফিরে আসি ।মা ক্ষুধায় আমার ভেতরটা জ্বালাপোড়া করে। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে। তুমি কাঁদছো মা, আমার জন্য কেদোনা মা। আমি জানি আমার ভাইয়েরা অনেক কষ্ট করতেছে ।হোস্টেলে খাইয়া না খাইয়া পড়াশোনা করতেছে । আমাদের এই অভাবের সংসার থাকবে না মা।
একদিন মিমির বড় ভাই ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসে । তার জন্য দু'টি কলম আনে । কলম পেয়ে মিমি অনেক খুশি। ভাইয়েরা যখন ভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসে মিমি তখন অনেক খুশি হয়। কারণ মা তখন অনেক ভাল ভাল রান্না করে। মিমি তখন পেট পুরে খায়।
মিমি বলে দেখো মা আমার পেট টা কত বড় । আমাকে কিছু খেতে দাও নাই আমার পেটটা পিঠের সাথে লেগে আছে। আজ অনেক ভাল রান্না হয়েছে। আজকে তিন প্লেট খাইছি । এসব কথা শুনে ভাইয়ের চোখে পানি চলে আসে। তার কাছে আলাদা টাকাও নাই যে বোনকে দিয়ে যাবে। কিছুদিন থাকার পর ভাই চলে যায় । ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে। অভাবী সংসার ভাইয়া টাকা পয়সা অনেক হিসাব করে রাখে।

Mimi-Lamim-01.jpeg

ভার্সিটিতে যাওয়ার পর মাকে টেলিগ্রাম করে জানায় মা আমি ভার্সিটিতে এসেছি। কিন্তু ২০ টাকা পাইতেছিনা । মনে হয় মিমি নিয়েছে এ কথা জানতে পেরে ভাই মিমি কে ফোন করে অনেক শাসন করে এবং নীতি বাক্য বলে।
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। দুই দিন পর হঠাৎ ভার্সিটিতে ফোন আসে বাবারে তোর মিমি জান নেই । সব শেষ । এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা মিমির স্পট ডেথ হয়। সংসারে দুঃখের অমানিশা নেমে আসে। কি এমন অপরাধ করেছিল আদরের ছোট বোনটি এত স্বল্প সময়ে দুনিয়া থেকে চলে যেতে হল । তার রক্তমাখা লাশ বুকে নিয়ে বড় ভাই চিৎকার করতে থাকে তুই আমাকে মাফ করে দিস। ২০ টাকা নিয়েছিলি পরে জানতে পারলাম তুই স্কুলের দুই জন ছাত্রীর পরীক্ষার ফিস দিয়েছিস। তুই এত ভালো, আমরা জানতে পারেনি বুঝতে পারেনি। তুই তো আর কখনো আমাদের মাঝে ফিরে আসবি না কখনো না, বলে চিৎকার করতে থাকে।

গল্পটি পড়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58559.96
ETH 3156.41
USDT 1.00
SBD 2.44