কালজয়ী প্রেমের উপন্যাস নিমাই ভট্টাচার্যে র “ মেম সাহেব ” এর রিভিউ
আসসালামু আলাইকুম,
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সৃষ্টিকর্তার অপার করুণায় সবাই ভাল আছেন। আপনার ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন অন্তরের অন্তস্থল এ প্রার্থনা করি সদাসর্বদা । বন্যায় চারদিকে শুধু অথৈ পানি। বিশেষ করে সিলেটের এলাকার মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে। তাই আমাদের সবাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়ানো উচিত। কথা না বাড়িয়ে শুরু করছি নিমাই ভট্টাচার্যের কালজয়ী রোমান্টিক উপন্যাস "মেমসাহেব "- এর বুক রিভিউ ।
ভার্সিটিতে যখন আমি প্রথম বর্ষে পড়ি। তখন নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব উপন্যাসটি পড়া হয়। নিমাই ভট্টাচার্য অনেকগুলো উপন্যাস লিখেছেন। মেমসাহেব একটি অসাধারণ উপন্যাস। যারা নোভেল বই পড়তে ভালবাসেন তারা মেমসাহেব পড়েননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শুধু রোমান্টিক উপন্যাস বললে ভুল হবে। একজন পুরুষ সফল হওয়ার জন্য একজন নারীর অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা, সাহস জোগানো এ উপন্যাসের পাতায় পাতায় ভেসে উঠেছে। এখানে বর্ণিত হয়েছে দেশভাগের কথা, এক রিপোর্টারের সংগ্রামী জীবনের অজানা কথা । সাতচল্লিশের দেশ ভাগ পরবর্তী সময়ে কলকাতা শহরের বেকার ছেলেদের অবস্থার বাস্তব চিত্রও ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে।
লেখক উপন্যাসটি শুরু করেছেন দোলা বৌদিকে লেখা চিঠির মাধ্যমে। উপন্যাসের মূল চরিত্র দু’জন। একজন নারী চরিত্রে মেমসাহেব অপরজন এই উপন্যাসের নায়ক বাচ্চু। নিজের অনাড়ম্বর জীবনের দিনগুলোর কল্পকথা শেয়ার করতেই একদিন চিঠি লিখতে শুরু করে দোলা বৌদির কাছে। পাঠককে দুঃখের অমানিশা সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে লেখক মেমসাহেব চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেন। একজন লেখকের স্বার্থকতাতো একানেই । তবে তার আগে উপন্যাসে এসেছে নায়ক বাচ্চুর আবির্ভাব। উভয়ের প্রতিদিনকার গাছপাথর ভালবাসা লেখক এমনভাবে সাজিয়েছেন অনেকে হতো তা হজম করতে পারবেনা। কিন্তু আমার কাছে এমনটি মনে হয়নি।
উপন্যাসের নামঃ মেমেসাহেব
লেখকঃ নিমাই ভট্টাচার্য
উপন্যাসটি যতবার পড়ি, তত বারই চোখের পানিতে বই ভিজে যায়। প্রতিটি পাতায় পরিচ্ছন্ন কি ভালোবাসা, মমতাবোধ,। ভালোবাসার প্রণ পুরুষটির প্রতি অকৃত্রিম .শ্রদ্ধা তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। যারা খুব যতন করে লালন করা ভালবাসর মানুষটাকে হারায়, তারা বুঝবে এর মর্মকথা। প্রিয়জনকে হারানোর যে কি ব্যথা তা মেমসাহেব না পড়লে বুঝা যাবেনা। ভাবতে অবাক লাগে এত নিঃস্বার্থভাবে কাউকে ভালোবাসা যায় । ভালোবাসার মানুষটাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী করার জন্য একজন নারী কি রকম সংগ্রাম করতে পারে তা নিমাই ভট্রাচার্যের এমন "মেমসাহেব" উপন্যাসের মাধ্যমে বুঝা যায় । পড়তে পড়তে মনে হয় আমিই বুঝি ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম।
সারসংক্ষেপঃ
আমার পড়া প্রেমের উপন্যাস গুলির মধ্যে মেমসাহেব সবচেয়ে সেরা। জানি এ নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। এই উপন্যাসের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকেই আবার প্রেম নিয়ে লেখককের বেশি বাড়াবাড়ি কথা বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়নি। উপন্যাসটিতে অনেক উত্থান পতন রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিক। তবে প্রেমটাই আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। উপন্যাসের মূল চরিত্র বাচ্চু মায়ের ভালোবাসা আদর সোহাগ পাননি। তিনি ছিলেন সামান্য একজন সাংবাদিক । খুব সাধারণভাবে দিন যাপন করতেন। তার এই ছন্নছাড়া জীবনে মেমসাহেব মেয়েটির যখন আবির্ভাব হয় তার জীবনের নতুন করে উত্থান শুরু হয়। পৃথিবীতে পুরুষদের সফলতার পেছনে নারীদের অবদান রয়েছে মেম সাহেব এই উপন্যাসের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মেম সাহেবের অনুপ্রেরণায় সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু হয়ে ওঠেন একজন আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিক। তাকে নিয়ে শুরু হয় টানাটানি । তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে।
উপন্যাসের নায়ক তার ক্যারিয়ারে সাকসেস হলেও ভালোবাসার মানুষকে ঘর করতে ব্যর্থ হন। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। শুধু সময়ের অপেক্ষা। মেমসাহেব এর মেজদিদির সহোযোগিতায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সংসার সাজাতে শুরু করে। এই তো ফাগুনে মেমসাহেবকে একেবারে আপন করে নেওয়া হবে। কত পরিকল্পনা ! কত স্বপ্ন ! কত সাধ ! কত আকাঙ্ক্ষা! প্রিয়জনকে নিয়ে কেনা ঘর বাঁধতে চায় ! কিন্তু বাস্তবে কয়জন প্রিয়জনকে নিয়ে সোনালী সংসার গড়ে ! তাইতো আগে থেকেই গ্রীন পার্ক নামক স্থানে নতুন বাসা ঠিক করে যাবতীয় সব কিছু তৈরী করে রাখা হয়। মেমসাহেবের শখের রকিং চেয়ার, অর্গান, হেয়ার-ড্রায়ার, বাগান সব কিছু ঠিক করে রাখা হয়।
কিন্তু মেমসাহেব কি ফিরেছিলো তার স্বপ্নের গ্রীন পার্কের ঠিকানায় ? সেতো তার ভালোবাসার মানুষের কাছে কিছু চাইনি। মেয়েদের তো কত ধরনের চাহিদা থাকে স্বর্ণ অলংকার, গহনা, টাকা-পয়সা শাড়ি আরো কত কিছু। মেম সাহেবের তার কিছুই ছিলো না? সে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পেতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণ হলোনা। একটি রাইফেলের বুলেট এসে লেগেছিল মেম সাহেবের বুকের মধ্যে।
লেখক একজন মা হীন সন্তান। তিনি কোনদিন মায়ের আশীর্বাদ পাননি। মা বিহীন জীবন আসলে ছন্নছাড়া। একজন মানুষের জীবনের প্রয়োজনে। তার জন্ম দিন গুলোতে বাবাকে ছাড়া আর কখনো মায়ের সান্নিধ্য হয়নি। মা যে পালিয়ে গিয়েছে দূর আকাশে । একটি ছেলের জীবন গুছানোর জন্য মায়ের অস্বীকার্য অবদান রয়েছে লেখক তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। মা একজন মানুষের জীবনে প্রথম নারী। নারী সব সময় মমতাময়ী হয় । যে পুরুষ মায়ের ভালোবাসা পায় না তার হৃদয়টা পাথর হয়ে যায়। আর জীবনটা আক্ষেপের মধ্য দিয়ে বড় হয়। সে দেখে তার সহপাঠীদের প্রতি মায়েদের কি ভালোবাসা, মা কিভাবে তাদের গুছিয়ে দেয় ।
ভাইজান আপনার কবিতা আবৃত্তি ও লেখা দুটোই সুন্দর। জাস্ট একটু ডিসকর্ডে নিয়মিত সময় দিন , আশাকরি ভালো কিছু প্রত্যশা আপনি করেন । ধন্যবাদ।
জি ভাই, ইনশাআল্লাহ ভাই আমি এখন ডিসকোর্ড এর প্রতি আরও মনোযোগী হবো।