আমার বাংলা ব্লক প্রতিযোগিতা-২২//প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি//১০% লাজুক খ্যাককে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুরা

আসসালামু আলাইকুম

প্রীতি ও শুভেচ্ছা

  • আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজ আমি আমার বাংলা ব্লক কমিউনিটিতে প্রতিযোগিতা ২২ এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমাদের আজকের প্রতিযোগিতার বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতি।
    এই অনুভূতিটি সবার আনন্দের হলেও আমারটা ছিল একটু ব্যতিক্রম।বন্ধুরা জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।

  • পৃথিবীটাই হচ্ছে এখন কম্পিটিশনের যুগ তাই আমার কাছে প্রতিযোগিতা করতে খুবই ভালো লাগে। সেটা যেমনই হোক না কেন কিন্তু প্রতিযোগিতা করার জন্য চাই অসংখ্য প্রতিযোগী। তবেই প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। এমন সুযোগ শুধুমাত্র আমি এই কমিউনিটিতে স্বাচ্ছন্দে করার সুযোগ পেয়েছি। আর তার সম্পূর্ণ অবদান হচ্ছে @rme দাদার। কারণ দাদা এই প্লাটফর্মকে আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে নিজের মতো করে এখানে বিচরণ করার জন্য।তাই দাদাকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাচ্ছি অসংখ্য মোবারকবাদ। আর @shovo ভাইয়াকে জানাচ্ছি আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। এছাড়া সকল মডারেটর ও সহযোগীদের জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। যারা এত সুন্দর একটি আয়োজন করেছে তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয়বস্তুতে আসা যাক

Screenshot_20220830-174322_Facebook.jpg

  • মোবাইল ফোন হাতে পাওয়া নিশ্চয়ই ব্যাপারটা খুবই আনন্দের বিষয় আর আমার মনে হয় এমনটা প্রত্যেকের জীবনে ঘটেছে যে যখনি মোবাইল ফোন হাতে পেয়েছে অত্যন্ত খুশিই ছিল এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু না আমার ব্যাপারটা একটু ব্যতিক্রম। আমার হাতে যখন মোবাইল ফোন আসে তখন খুবই আতঙ্কের মাঝে ছিলাম আমি। নিশ্চয়ই আপনারা ভাবছেন সেটা আবার কেমন কথা।! হ্যা বন্ধুরা এমনটাই হয়েছে আমার সাথে তাহলে শুনুন মূল ঘটনা।
  • সময়টা ছিল ২০১৫ সাল আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমার বাড়ি থেকে কলেজ ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। এই পথটা ছিল একটু গ্রামের ভেতর দিয়ে তখন যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল না। অর্ধেক রাস্তা পাকা ছিল বাকি অর্ধেক ছিল কাঁচা রাস্তা। বর্ষার সময় সেখানে রিকশাও যেত না। তাই বেশিরভাগ সময় বন্ধুরা সহ হেঁটে হেঁটে যেতাম আবার হেঁটে হেঁটেই বাড়িতে ফিরে আসতাম। প্রথম এক বছর তেমন কোন সমস্যাই হয়নি হয়তো একটু কষ্ট করতে হয়েছে এমনটাই। যখনই আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠি তখনি ঘটে একটি ঘটনা।

pexels-peter-c-360438.jpg

source

  • আমি কলেজে যেতাম সব সময় আমার এফ্রোন এবং মুখোশ পড়া থাকতো। কিন্তু কোন এক বখাটে ছেলের নজরে আমি পড়লাম। সে সবসময় কলেজ থেকে আমার পিছু ধরা শুরু করত অনেক সময় দেখা যেত আমাদের বাড়ির পাশের বাজার পর্যন্ত আসতো। বিভিন্ন ধরনের উস্কানি মূলক কথা, ঠাট্টা, বিদ্রুপ এমনকি মাঝে মাঝে দূর থেকে আমাকে বলতো মুখোশ খোলার জন্য। 😭আমি একা ছিলাম না আমার সাথে ছিলো আমার চারজন বান্ধবী। তারাও আমার বাড়ির পাশেরই। কিন্তু এদের মধ্যে দুজন আমার সাথে একটু বেইমানি করে।
  • আমি তা জানতামই না তারা আমার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আমার পরিবার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সেই ছেলেটাকে দেয়। সেই ছেলেটাও কিন্তু আমাদের ক্লাসমেট ছিল কিন্তু পড়ালেখা করলে তো আর ভালো মানুষ হওয়া যায় না। সে যাই হোক এই দুটো মেয়ের সহযোগিতার কারণে ছেলেটা আরো বেশি উস্কানি দেওয়ার সুযোগ পেতো। আর আমি ছিলাম খুবই ভিতু প্রকৃতির মেয়ে এই ধরনের পরিস্থিতি কখনো হ্যান্ডেল করতে পারতাম না। শুধুই কান্না করে দিতাম আর বাসায় এসে আম্মুর কাছে এবং আপুদের কাছে সবকিছু বলতাম। তারা আমাকে সাহস দিত এবং বলতো আমি যেন কেয়ার না করে দ্রুত চলে আসি। তারপর থেকে বেশিরভাগই আমি রিকশায় করে যেতাম পেছনে ছেলেটি বাইক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খারাপ কথা বলতো। তখন আমার আতঙ্ক দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে। এমন অবস্থা পরিবারকে বলতে গেলে তারা দেখে আমার পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে এবং আমি মানসিকভাবে টেনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।

pexels-jessica-lewis-creative-583842 (1).jpg

source

  • তখন আমার সেজো আপুর হাতে একটি নতুন মোবাইল ছিল আপুর নতুন বিয়ে হয়েছে দুলাভাই আপুর জন্য তখনকার সময় একটি ফোন পাঠিয়েছিল। আমরা এটাকে টাচ মোবাইল হিসেবেই চিনতাম। 😆😆হাহাহা। আর তখন প্রথম প্রথম স্কাইপিতে মানুষ ভিডিও কলে এক জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় কথা বলতো। কিন্তু ভীষণ লজ্জা পেতাম ভিডিও কলে কার সাথে কথা বলতে। তখন আপু সিদ্ধান্ত নেয় এই মুহূর্তে কলেজে কি ঘটছে না ঘটছে কিছুই তো আমরা জানি না। আমার বোনের যদি কোন সমস্যা হয়ে যায় বা ওই বখাটে ছেলেকে যদি কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আমরা তো জানবই না। তারপর আপু সিদ্ধান্ত নেয় আপুর হাতের মোবাইলটি আমাকে দিয়ে দেবে। আমি কলেজে যাওয়া থেকে আসা পর্যন্ত চালাবো এবং কলেজে থাকাকালীন সময়ে সম্পূর্ণ আপডেট আম্মুকে বলতাম।
  • সেই প্রথম আমার হাতে মোবাইলটি দিয়েছিল এই মোবাইলটি হাতে পেয়ে আমি আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু আমার ভেতরে ছিল সেই আতঙ্ক সেই ভয় না জানি কখনো আমার মান সম্মানে কোন ব্যাঘাত ঘটে। সেই খবরটা আমার পরিবারকে জানাতে হবে। কিছুদিন মোবাইলটা এভাবে চালানোর পর আপু একেবারে আমাকে মোবাইলটা দিয়ে দেয় এবং আপুর জন্য ভাইয়া আরেকটি নতুন মোবাইল পাঠিয়েছিল। এভাবে আমার পুরো একটা বছর অনেক কষ্টের কেটেছিল তারপর আমি পরীক্ষা দিয়ে কোনমতে উদ্ধার হয়ে এসেছি। এরপর পড়ার জন্য আমি দূরে চলে আসলেও সে বখাটে ছেলেটি ফোনে আমার নাম্বার জোগাড় করে বিভিন্নভাবে ডিস্টার্ব করতো। এমন কি আমার পরিবারের সবাইকে হুমকি দিত। আমি নাকি আমার পরিবারের জন্য তার সাথে কথা বলতাম না। যাইহোক এমন একটি ঘটনার মাধ্যমে আমি আমার হাতে প্রথম মোবাইল পেয়েছিলাম। অবশ্য এখন এই ধরনের সিচুয়েশন নিজেই হ্যান্ডেল করতে পারি। এরপর আরো অনেক মোবাইল হাতে পেয়েছি কিন্তু প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতিকে আমি কখনোই ভুলবো না। এটি আমার জীবনে চিরস্মরণীয় একটি অনুভূতি। আপনাদের সাথে শেয়ার করার সুযোগ পেলাম।

pexels-terje-sollie-336948.jpg

source

🌺 আশা করি আমার আজকের প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতি টি আপনাদের ভালো লাগবে।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 🌺

🌺 ধন্যবাদ সবাইকে আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও পড়ার জন্য🌺

Sort:  
 2 years ago 

আপনি কোন আতংকের মাঝে দিন অতিবাহিত করেছেন তা ভাবতেই শিউরে উঠছি।খারাপ কিছু হয়নি এজন্য ঈশ্বর কে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া এখন সময়টা ছিল আমার জন্য খুবই আতঙ্কের একটি সময়। সেই সময় মোবাইল হাতে পাওয়াটা আমার জন্য জরুরি হয়ে উঠেছিল আনন্দের বিষয় নয়।

 2 years ago 

পুরো ঘটনা পড়লাম। প্রথম থেকেই সাহসী ভাবে চলচে ছেলেট হয়তো আরো পিছিয়ে যেতো। যাক এখন সাহসী হয়েছেন ভালো লাগলো বিষয়টি। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

আসলেই আপু সেই সময়টা আমার জন্য খুবই আতঙ্কের বিষয় ছিল। এখন হয়তো সময়ের সাথে সাথে নিজেকে হ্যান্ডেল করতে পারি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি খুব সহজেই মানিয়ে উঠতে পারি।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62904.22
ETH 2571.38
USDT 1.00
SBD 2.76