অদৃশ্য পরাধীনতার শিকল||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। আজ আমি আমার অভিব্যক্তি থেকে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করে নিয়েছি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কতটুকু স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি তা আমরা নিজেরাই জানিনা। আমার লেখা কথাগুলো আপনাদের কাছে তিক্ত মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। আসলে বাস্তবতা ও কল্পনা দুটো আলাদা জিনিস। তাই আমি পরাধীনতার অদৃশ্য শিকল নিয়ে কিছু কথা উপস্থাপন করবো। স্বাধীন দেশের মানুষ হয়েও আমরা কি করে আজও স্বাধীনতা পেলাম না সেই বিষয়ে আমি আমার মনের অগোচরে লুকানো কথাগুলো আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো।
অদৃশ্য পরাধীনতার শিকল:
Source
লাখো বাঙ্গালীর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। স্বাধীনতার অর্জনের জন্য বাংলার হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রাণ নিবেদন করেছে। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা সকলেই জানি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু যারা আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে ও তারা আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করেছে অদৃশ্য পরাধীনতার শেকল আজও আমাদের দেশের মানুষের পায়ে পড়ানো আছে। সেই অদৃশ্য পরাধীনতার তাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এই দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু এই দেশের মানুষ আজো স্বাধীনতা পায়নি। তারা আজও না খেতে পেয়ে দিন কাটায়। এই দেশ সেদিন স্বাধীন হবে যেদিন এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষ দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারবে। এদেশের সেই অবহেলিত মানুষ গুলো যোগ্য মর্যাদা পাবে। কারণ তারা অদৃশ্য পরাধীনতার শেকল পায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
Source
হাজার ত্যাগ-তিতিক্ষার পর অর্জিত স্বাধীনতা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষ ভালো থাকবে এবং খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে। নিজের স্বাধীন দেশের মাটিতে যদি না খেয়ে বাঁচতে হয় এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই থাকতে পারে না। স্বাধীন দেশের মানুষ হয়েও স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারে না অনেকে। কারণ স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য তাদের সেই সুযোগ সুবিধা তৈরি করা হয়নি আজও। আসলে স্বাধীন দেশের মানুষ বলে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে আমরা সেই অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াই না। আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা যুদ্ধে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলেই এগিয়ে এসেছে। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম এবং জীবনের বাজি রেখে যুদ্ধ করে তারা এই দেশকে স্বাধীন করেছে। যুদ্ধের সময় যখন ধনী-দরিদ্রের কোন বৈষম্য ছিলনা তখন আজ এই দেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর কেন এই বৈষম্য। সমাজের উঁচু শ্রেণীর ও নিচু শ্রেণীর মধ্যে কেন এত ভেদাভেদ। আমার মনে হয় যেদিন এই বৈষম্য দূর হবে এবং উঁচুতলার মানুষের সাথে নিচু তলার মানুষ একই সারিতে বসে দুবেলা খেতে পারবে সেদিন এই দেশ প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে। এই দেশের মানুষগুলো পাবে সেই স্বাধীনতার স্বাদ। সেদিনই তারা পরাধীনতার অদৃশ্য শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে।
Source
আমরা স্বাধীন জাতি। আমরা নিজেকে স্বাধীন বলে দাবী করি। কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশের মানুষ গুলো এখনোও পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে আছে। তাদের এই পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করতে হয়ত কেউ এগিয়ে আসবে না। তারা নিজের চেষ্টায় দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাড় করে। তারা যদি না খেয়ে থাকে তবুও কেউ দেখতে আসবেনা। তারা সারাজীবন পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে বেঁচে থাকবে এই স্বাধীন পৃথিবীতে। একটি দেশ যখন স্বাধীনতা অর্জন করে তখন দেশের মানুষগুলোও স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা তখনই পূর্ণতা পায় যখন দেশের মানুষগুলো স্বাধীনভাবে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। যখন তাদের পায়ে বাঁধা সেই অদৃশ্য পরাধীনতার শিকল হারিয়ে যাবে বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে তখনই এই দেশ পুরোপুরিভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
Source
যে দেশের মানুষ খাবারের অভাবে ও চিকিৎসার অভাবে মারা যায় সে দেশে কিসের আবার স্বাধীনতা। আজ যখন চারপাশে স্বাধীনতার জয়জয়কার ও স্বাধীনতার ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে তখন সেই খেটে খাওয়া মানুষগুলো দুবেলা খাবারের জন্য নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আসলে তারা এবং তাদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ তারা এখনো পায়নি। আগেও যেমন তারা না খেয়ে দিন কাটাত তেমনি আজও তারা সেই একই ভাবে দিন কাটাচ্ছে। এ স্বাধীন দেশের মাটিতে বাস করলেও তারা স্বাধীনতা পায়নি। এই স্বাধীন দেশের মাটিতে বাস করলেও তারা সঠিক চিকিৎসা পায়নি। কারণ তারা আজও অবহেলিত। আর এই অবহেলিত মানুষ গুলো যেদিন মুক্ত পৃথিবীতে সুখের হাসি হাসতে পারবে এবং আনন্দে বাঁচতে পারবে সেদিন তারা প্রকৃত স্বাধীনতা পাবে। হয়তো তাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ আরও অনেক বেশি কঠিন। তারা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা শুনেছে কিন্ত নিজের স্বাধীনতা অর্জনের কথা ভুলে গেছে। কারণ যেখানে তাদের দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাড় করা কষ্টের কাজ সেখানে স্বাধীনতার কথা চিন্তা করাও বিলাসিতা।
Source
পরাধীনতার অদৃশ্য শিকল থেকে এই মানুষগুলো সেদিনই মুক্তি পাবে যেদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। একে অন্যের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করবে। যেদিন এই অসহায় মানুষগুলো পেট ভরে দুবেলা খেতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসবে সেদিন স্বাধীনতার সেই রঙিন ছোঁয়া তাদের হৃদয়ে লাগবে। যেখানে তাদের পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা সেখানে স্বাধীনতা নামক বিলাসিতা উপভোগ করা তাদের কাছে অনেক বেশী হাস্যকর। পেটের যন্ত্রণা নিবারন করার ক্ষমতা যদি তাদের না থাকে তাহলে তারা এই স্বাধীনতা দিয়ে কি করবে। স্বাধীন দেশে থেকেও যদি তারা দুবেলা ডাল ভাত খেতে না পারে তাহলে এই স্বাধীনতা তাদের কাছে মূল্যহীন। এই স্বাধীন দেশে বাস করেও যদি তারা বিনা চিকিৎসায় মারা যায় তাহলে এ স্বাধীনতা কাদের কাছে শুধুই বিলাসিতা। না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া ও বিনাচিকিৎসায় মরে যাওয়া মানুষগুলো নিজের স্বাধীনতাকে কখনো উপভোগ করতে পারে না। কারণ তারা সেই সময়টি পায় না নিজের স্বাধীনতাকে অন্তর দিয়ে উপভোগ করার। অন্তরে যদি কষ্ট থাকে তখন স্বাধীনতা উপভোগ করা কখনও হয়ে ওঠে না। তাদের মুখে কখনোই ফুটে ওঠে না সেই স্বাধীনতার বিজয়ের হাসি। তাই তারা পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে আছে।
আজ আমি বিজয়ের মাসে পরাধীনতার শেকল নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি। আশা করছি আমার লেখা এই কথাগুলো আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের সৃষ্টি হয়। যেটার জন্য এক নদী রক্ত দিয়ে জয় করতে হয়েছে ।আপনি খুব সুন্দর করে পরাধীনতার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অদৃশ্য পরাধীনতার শিকল এই বিষয় নিয়ে আপনার অনেক মূল্যবান কিছু কথা মাঝে মাঝে শেয়ার করেছেন। লেখাটা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। আসলে একটা কথা আপনি একদম ঠিক বলেছেন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে কিন্তু তারপরেও প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদটা আমরা এখনো পাইনি। আপনি অনেক মূল্যবান কিছু লেখার পাশাপাশি খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন দেখে ভালো লাগলো। পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি ঠিকই বলেছেন, শুধু অন্য দেশের শাসন থেকে রক্ষা পাওয়ার নাম স্বাধীনতা না। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ই হচ্ছে মূল স্বাধীনতা। আপনার লেখে পড়ে অনেক ভালো লাগছে আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
লাখো শহীদের রক্তে কেনা এই দেশ হাজার নয়।
আর আজকের এই পরাধীনতার জন্য দায়ী করবেন কাকে। এই শিকল তো আমরা নিজ হাতে নিজেদের হাতে পরেছি। যেটা ভাঙ্গার চাবি এখন খুঁজে পাচ্ছি না। যাইহোক সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
পরাধীনতার শিকল আজ ভেঙে গেছে, বাঙালি আজ স্বাধীনতার সুখ খুঁজে পেয়েছে।তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ বাঙালির জন্য পরম আনন্দের।সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ আপু।
নিঃসন্দেহে বলব আপনার এই পোস্টটির মধ্যে যথেষ্ট জ্ঞান সম্পন্ন এবং মেধার বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষনীয় একটি পোস্ট তুলে ধরেছেন আমাদের মধ্যে। যেখানে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে,রয়েছে সচেতন দৃষ্টি ভঙ্গি। আরও রয়েছে গরিব-দুঃখী অবহেলিত মানুষের ন্যায্য অধিকার পাবার জোরালো দাবি। সব মিলিয়ে বলব আপনার পোস্ট আমার খুবই ভালো লেগেছে।এমন পোস্ট আমাদের একান্ত কাম্য।