গল্প-হৃদয় গহীনে||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। তাইতো আজকে আমি একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করছি আমার লিখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
হৃদয় গহীনে:
![vietnam-4905794_1280 (1).jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZ6CGL1HBbahcSwtgktfM2j4Zxya8iS1HivaAdALt8j4J/vietnam-4905794_1280%20(1).jpg)
Source
ভালোবাসা হয়তো পূর্ণতা পেয়েও মাঝে মাঝে অপূর্ণ থেকে যায়। হয়তো শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। সুদীপ্তা ছোটবেলা থেকেই অনেক আদরে বড় হয়েছে। বাবা-মায়ের আদর স্নেহে সুদীপ্তা যেন সবার কাছেই অনেক প্রিয় হয়ে উঠেছিল। দেখতে দেখতে ছোট্ট সুদীপ্তা বড় হতে লাগলো। সুদীপ্তা যখন নবম শ্রেণীতে পড়ে তখন হঠাৎ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটি ছেলের সাথে পরিচয় হয়। হয়তো রং নাম্বার থেকেই তাদের কথা বলা শুরু হয়। অল্প বয়সে সুদীপ্তার মনে ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল। অচেনা সেই মানুষটির জন্য হৃদয়ে অনুভূতির তৈরি হয়েছিল। হয়তো সেই অনুভূতি থেকেই ধীরে ধীরে ভালোলাগার তৈরি হয়েছিল। কিংবা ভালোবাসার। এভাবে কেটে যাচ্ছিল তার দিনগুলো। কিন্তু দুজনের ভালোবাসার মাঝে একটাই সমস্যা ছিল সুদীপ্তা ছিল হিন্দু ধর্মের আর ছেলেটি ছিল মুসলিম ধর্মের।
সুদীপ্তা প্রতিদিন ছেলেটির ফোন কলের অপেক্ষায় থাকতো। স্কুল থেকে ফিরেই দেখতো ছেলেটি ফোন করেছে কিনা। ছেলেটির একটি ফোন কলের আশায় দিন কাটতো তার। দেখতে দেখতে কেটে গেল একটি বছর। সময়ের সাথে সাথে সুদীপ্ত অনেকটা বড় হয়ে গেল। সুদীপ্তা ছেলেটির কাছে বায়না করলো দেখা করার। কিন্তু কেন জানি ছেলেটি নিজেকে আড়াল করতে রাখতে চেয়েছিল। হয়তো অজানা কোন ভয় তার মনে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু কখনো সুদীপ্তাকে বলে উঠতে পারেনি। হয়তো সুদীপ্তাকে সে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই তো প্রিয় মানুষটিকে হারাতে চায়নি। আড়াল থেকে ভালোবাসতে চেয়েছিল। এভাবে ধীরে ধীরে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সুদীপ্তা কলেজে উঠে পড়ল। আর সেই সাথে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক আরো বেশি গভীর হতে লাগলো। এবার সুদীপ্তা বায়না করলো তার সাথে দেখা করার। অবশেষে ছেলেটিও রাজি হয়ে গেল। ছেলেটির নাম ছিল অয়ন।
সুদীপ্তা কলেজের কথা বলে সেদিনও বেরিয়ে পড়েছিল। কোন এক নিরিবিলি জায়গায় তারা দেখা করতে চাইল। সঙ্গে ছিল সুদীপ্তার বান্ধবী। এরপর সে সুদীপ্তার সাথে দেখা করার জন্য এলো। অয়ন আর সুদীপ্তা না দেখেই দুজন দুজনকে ভালোবেসেছিল। তাদের ভালোবাসাটা ছিল হৃদয় থেকে আসা। এরপর কিছুটা সময় কাটিয়ে যে যার মত বাড়ি ফিরে গেল। আগের মতই তাদের দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। এরপর অয়ন মাঝে মাঝেই সুদীপ্তার গ্রামে আসতো সুদীপ্তার সাথে দেখা করতে। হঠাৎ একদিন সুদীপ্তার বাবা বাড়িতে বললেন সুদীপ্তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাশের গ্রামের কোন এক বড় বাড়িতে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এই কথা শুনে সুদীপ্ত যেন আকাশ থেকে পড়ল। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এরপর সুদীপ্তা অয়নকে তার বিয়ের কথা জানালো। অয়ন কথাটা শুনে দিশেহারা হয়ে পড়লো।কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না সে। সুদীপ্তা যখন মোবাইল ফোনে অয়নের সাথে কথা বলছিল তখন আড়াল থেকে সুদীপ্তার বাবা সবটা শুনে ফেলে। এরপর তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়।
সুদীপ্তা কোনভাবেই আর অয়নের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না। অনেক কষ্ট করে সুদীপ্ত তার বান্ধবীর মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছিল অয়নকে। অয়নকে বলেছিল তার সাথে দেখা করার জন্য। এদিকে বিয়ে বাড়িতে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছিল। সবাই যে যার মত বিয়ের আয়োজন করছিল। সেই ফাঁকে সুদীপ্তা বেরিয়ে পড়ল অয়নের সাথে দেখা করার জন্য। দুজনে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অবশেষে সুদীপ্তা আর অয়ন দুজনে পালিয়ে গেল। এরপর কোথায় গিয়ে উঠবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অয়নের এক দূর সম্পর্কের বোনের বাসায় গিয়ে উঠলো তারা। সেখানে যাওয়ার পর কাছের এক মৌলভী ডেকে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করা হলো। আর সুদীপ্তার অনুরোধে তাকে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করল অয়ন। কিন্তু বিধাতা তাদের কপালে সুখ লিখে রাখেনি। সুদীপ্তার বাবা অয়নকে আর সুদীপ্তাকে খুঁজে বের করল। যেহেতু অয়ন মুসলিম ধর্মের ছিল তাই তো সুদীপ্তার বাবা এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এরপর সুদীপ্তার কপালের সিঁদুর মুছে ফেললেন তিনি। অনেকটা জোর করে অয়নের কাছ থেকে সুদীপ্তাকে কেড়ে নিলেন। সুদীপ্তা তার বাবার সাথে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হল। অন্যদিকে অয়ন কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। সেদিন অয়ন ও সুদীপ্তা অনেক চিৎকার করে কেঁদেছিল।
এভাবেই কেটে গেল দুই দিন। অয়ন কোনোভাবেই সুদীপ্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। কনে বেশে বসে আছে সুদীপ্তা। কিন্তু তার দুচোখে জল ছল ছল করছে। হয়তো অনুভূতি হারিয়ে গেছে কিংবা নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে বরপক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে। সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর সুদীপ্তা সেই সময় ঘরে একাই ছিল। হঠাৎ করে সুদীপ্তা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে যখন সুদীপ্তার এক কাকিমা তার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে বিয়ের বেনারসি শাড়ি সুদীপ্তার গলায় জড়ানো। সুদীপ্তা আত্মহত্যা করেছে। এরপর বিয়ে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। সুদিপ্তার বাবা দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। আর নিজের মেয়ের মৃতদেহ ঝুলতে দেখেন। শেষ হয়ে যায় একটি ফুলের মত জীবন। অন্যদিকে অয়ন যখন জানতে পারে সুদীপ্তার বিয়ে হচ্ছে তখন সে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। আর নিজের ডায়েরীতে লিখে যায় তুমি সারা জীবন থাকবে আমার হৃদয় গহীনে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আপনার লেখায হৃদয় গহিনী গল্পটা পড়তে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আপনি সব সময় অনেক সুন্দর করে কবিতা লিখে থাকেন। সুদীপ্তা এবং অয়ন একে অপরকে অনেক বেশি ভালোবাসতো ভিন্ন ধর্মের হলেও। তারা বাধ্য হয়ে পালিয়ে বিয়ে করার পরেও সুদীপ্তার বাবা গিয়ে নিয়ে আসে তাকে। পরবর্তীতে সুদীপ্তার অন্য একটা বিয়ের দিন দুজনেই মারা গিয়েছে, এটা দেখে অনেক খারাপ লাগলো।
আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে মাঝে মাঝে নিজের মতো করে জীবন সাজাতে গিয়েও অনেকে ব্যর্থ হয়ে যায়।
প্রথমের দিকে গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লাগছিল কিন্তু শেষের টুকু পরে খুবই খারাপ লাগলো। অবশেষে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছিল কিন্তু সুদীপ্তার বাবা জোর করে তাদেরকে আলাদা করেছিল এবং অবশেষে সুদীপ্তা আত্মহত্যা করেছিল। সত্যি খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
মাঝে মাঝে গল্পের শুরুটা ভালো লাগলেও শেষটা অনেক কষ্টের হয় আপু। যাই হোক চেষ্টা করেছি ভিন্ন ধরনের একটি গল্প লিখে উপস্থাপন করার জন্য।
আপু আপনার গল্পটি পড়ে বেশ ভালই লাগছিল প্রথমদিকে। আসলে অয়নও সুদীপ্তা দুজনে বেশ ভালোভাবে বিয়ে করে নিয়েছিল। কিন্তু সুদীপ্তা তার বাবা তাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসল। তারপর তাকে আবার বিয়ে দেব। আসলে বাবা-মার এই জোরের জন্য অকালে তার প্রাণটা চলে গেল । অবশেষে দুজনে আত্মহত্যা করলো। তাদের ভালোবাসা চির অমর হয়ে রইল।দুজনের মারা যাওয়া দেখে অনেক খারাপ লাগলো।
আমার গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লাগলো জেনে সত্যি খুশি হলাম আপু। আসলে মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের ভুল সিদ্ধান্ত তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়। তাইতো আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।
গল্পটা প্রথম প্রথম পড়তে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগছিল, তবে শেষের দিকটা পড়ে খুব খারাপ লেগেছে। মেয়েটাকে তার বাবা তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং অন্য আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটা আত্মহত্যা করেছিল এই কথাটা শুনে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আর মেয়েটির বিয়ের কথা শুনে ছেলেটাও বিষ পান করেছিল। তারা যেভাবে পালিয়ে গিয়েছিল তাদেরকে যদি না পাওয়া যেত তাহলে হয়তো তারা সুখে থাকতো।
ঠিক বলেছেন আপু পরিবারের জন্যই দুটো জীবন শেষ হয়ে গেল। হয়তো সবকিছু ঠিক হতে পারতো। যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
গল্পটা বেশ ভালো লাগছিল পড়তে প্রথম দিকে ।তাদের যখন বিয়ে হলো মনে হচ্ছিল সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আমাদের সমাজে এখন ও দু'ধর্মের বিয়ে মেনে নেয়ার মানষিকতা তৈরি হয়নি। তাইতো সুদীপ্তাকে ও অয়নকে এভাবে জীবন দিতে হল ।বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে । ধন্যবাদ আপু।
সমাজ ধর্ম এসবের উর্ধ্বে ভালোবাসা। কিন্তু মাঝে মাঝে ভালোবাসা হার মেনে যায়। মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
আসলে অনেক সময় কাউকে না দেখে, শুধুমাত্র কথাবার্তা বলার মাধ্যমেই প্রেমের সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রকৃত ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু পরিবারের ভুলের কারণে অনেক সময় তাজা প্রাণ চলে যায়। এই গল্পের সুদীপ্তা এবং অয়নের জন্য ভীষণ খারাপ লাগলো। সুদীপ্তার পরিবার অন্যায় করেছে তাদের দুজনের সাথে। যেহেতু সিঁদুর পরিয়েছে অয়ন সুদীপ্তাকে,সুদীপ্তার পরিবারের উচিত ছিলো মেনে নেওয়া। গল্পটি পড়ে খুব মর্মাহত হলাম। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সত্যি ভাইয়া মাঝে মাঝে দূর থেকেও ভালোবাসা হয়। হয়তো সেই ভালোবাসা অনেক সময় পূর্ণতা পায় না। কিন্তু হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। যাই হোক আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা সত্যিই অনেক কঠিন হয়ে যায়।