গল্প-অন্তরালে||

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমি মাঝে মাঝে গল্প লিখি। হয়তো কোন কিছু না ভেবেই গল্প লিখতে বসে পড়ি। যদিও খুব ভালো গল্প লিখতে পারি না। তবুও মাঝে মাঝে নিজের মতো করে গল্প লিখার চেষ্টা করি। তাই আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


অন্তরালে:

fantasy-4220505_1280.jpg

Source


বড়লোক বাবার বখাটে ছেলে শুভ্র। বাবা-মায়ের আদর আহ্লাদে ছেলেটা দিনে দিনে আরো বেশি বখাটে হয়ে উঠছে। বন্ধু-বান্ধবী, ফুর্তি এসব নিয়েই মেতে থাকে সে। শুভ্র টাকার জোরে সবকিছু কিনে নিতে চায়। এমনকি টাকার দাপটে সব কিছুই করতে চায় সে। অন্যদিকে অনামিকা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা তার স্কুল শিক্ষক। পড়াশুনার জন্য শহরে আসতে হয়েছে অনামিকাকে। অনামিকা পড়াশোনাতে যেমন ভালো তেমনি দেখতে অনেক সুন্দরী। নিজের ইউনিভার্সিটি লাইফে পড়াশোনা ছাড়া কোন কিছুতেই মনোযোগ ছিল না তার।


অনামিকা শহরের নামকরা একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। আর সেই সূত্রেই শুভ্রর নজরে আসে অনামিকা। অনামিকা যেই হোস্টেলে থাকতো সেই হোস্টেলের অনামিকার রুমমেট শুভ্রর খুবই কাছের বান্ধবী। মেয়েটিও শুভ্রর মতই একদম বখাটে হয়ে গেছে। কোন এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েটিও নেশার জগতে ডুবে গেছে। অনামিকা প্রথমে জানতো না মেয়েটির এই করুন পরিণতি। অনামিকা টিউশনি করতো আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতো। অন্যদিকেও শিক্ষক বাবা প্রতি মাসেই তাকে হাত খরচের টাকা দিত। তবুও অনামিকা নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য টিউশনি করাতো।


অনামিকা সেই রুমমেট মাঝে মাঝেই দেরিতে হোস্টেলে ফিরতো। অনেক সময় তো ফিরতই না। এসব বিষয়ে অনামিকা ভীষণ বিরক্ত হত। অনেকবার রুম চেঞ্জ করতে চেয়েও অনামিকা রুম চেঞ্জ করতে পারেনি। তার রুমমেটের এরকম জীবন যাত্রা তার পড়াশোনার খুবই ব্যাঘাত ঘটাতো। তবে কি আর করার মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তাই সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলছে। দিনগুলো মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল অনামিকার। কিন্তু হঠাৎ একদিন টিউশনি থেকে ফেরার সময় কিছুটা দেরি হয়ে যায় তার। অনামিকা একা একাই হেঁটে যাচ্ছিল। এরপর হঠাৎই একটি গাড়ি এসে অনামিকার সামনে দাঁড়ায়। আর অনামিকা সেই রুমমেট বলে আমিও তো হোস্টেলে ফিরছি তুমি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।


অনামিকা নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার রুমমেটের জোড়াজড়িতে গাড়িতে উঠে পরে। সেদিনের পর থেকে অনামিকাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর কেটে যায় বেশ কিছুদিন।হঠাৎ একদিন অনামিকার ক্ষতবিক্ষত দেহটা রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। অনামিকার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ অনামিকার লাশ হস্তান্তর করেছিল। অনামিকাকে যারা ধর্ষণ করে ফেলে রেখে গিয়েছিল তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই খুনি এবং ধর্ষক আর কেউ ছিলনা শুভ্র এবং শুভ্রর বন্ধুরা ছিল। এরপর থেকে অনামিকার সেই রুমমেটকে আর দেখা যায়নি। মেয়েটি হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু অনামিকার ছোট বোন মনিকা ব্যাপারটি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। নিজের বোনের মৃত্যু মেনে নেওয়া সত্যি অনেক কঠিন। মেয়েটি বেরিয়ে খুনির সন্ধানে। মনিকা শহরে চলে আসে। আসার পর সেই মেয়েটির ঠিকানা নিয়ে তার সাথে দেখা করে। অনেক অনুরোধ করার পর মেয়েটি সবকিছু স্বীকার করে।


মনিকা তার বাবাকে সবকিছু জানায় এবং তিনি পুলিশের কাছে সবকিছু বলে। পুলিশকে সবকিছু জানানোর পর পুলিশ বলে ময়নাতদন্তে নাকি তার অনামিকার শরীরে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছে। আর শেষ পর্যায়ে পুলিশ ঘোষণা করে অনামিকা নিজের ইচ্ছায় ছেলেদের সাথে গিয়েছিল এবং অতিরিক্ত নেশার কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। এসব শুনে মনিকা ও তার বাবা খুবই কষ্ট পায়। কারণ সে জানে তার বোন এরকম নয়। মনিকা আবারো নিজের বোনের মৃত্যুর বদলা নিতে নেমে পরে। অবশেষে মনিকা নিজের বোনের মৃত্যুর বদলা নিতে পেরেছিল। মনিকা শুভ্রর পার্টিতে জয়েন করেছিল। আর সেই পার্টির মাঝেই ড্রিংসে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিল মনিকা। কারণ মনিকা জানতো শুভ্র পার্টি শেষে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরবে। পরদিন খবর আসে শুভ্র রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আর তার দুজন বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছে। সেদিন মনিকার মুখে হাসি ফুটে এসেছিল। অন্তরালে থেকেই মনিকা নিজের বোনের মৃত্যুর বদলা নিয়েছিল।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 4 days ago 

শুভ্রর মতো ছেলেদের শেষ পরিণতি এমনটাই হওয়া উচিত। তবে অনামিকার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। এতো মেধাবী একটি মেয়ের জীবন শুভ্রর মতো ধর্ষকদের কারণে শেষ হয়ে গেলো। যাইহোক অনামিকার বোন মনিকা প্রতিশোধ নিতে পেরেছে, এটা জেনে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 60913.22
ETH 2643.10
USDT 1.00
SBD 2.58