গল্প-সুপ্রিয়া||

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লিখার চেষ্টা করি। তাই তো আজকে আমি দারুন একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


সুপ্রিয়া:


Source


হাসিখুশি চঞ্চল সেই মেয়েটি আজ শুয়ে আছে ওই সাদা কাপড়ে মোড়ানো রক্তাক্ত চাদরের ভাঁজে। বিলীন হয়ে গেছে তার জীবনের খুশি গুলো। বিলীন হয়ে গেছে তার জীবনের স্বপ্ন গুলো। সুপ্রিয়া পড়াশুনাতে বেশ ভালো ছিল। সে স্বপ্ন দেখেছিল বড় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে। আর তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সুপ্রিয়া বড় হয়ে ডাক্তার হবে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ও নিজের ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করতে সুপ্রিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে সুপ্রিয়া অনেকটা বড় হয়ে গেল। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেল তার স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সুপ্রিয়া। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য সেও এগিয়ে গেল। ভাগ্যক্রমে একটি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে গেল। এভাবেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল সুপ্রিয়া।


দিন যত এগোতে লাগলো পড়াশোনা চাপ ততই বেড়ে যেতে লাগলো। সুপ্রিয়া তবুও হাল ছাড়েনি। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য আর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সে এগিয়ে গেছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। তার সাফল্যের জন্য সবাই তার প্রশংসা করত। এভাবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সুপ্রিয়া নিজেকে গঠন করার চেষ্টা করছিল। মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের শেষ সম্বল ছিল হয়তো এক টুকরো জমি কিংবা তাদের ভিটে মাটি। নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে সুপ্রিয়ার বাবা মা তাকে মেডিকেল কলেজে পড়ায়। তাদের স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় ডাক্তার হবে। আর তাদের সেই মধ্যবিত্ত জীবনের অপূর্ণতা গুলো কোন একদিন পূর্ণ হবে। তার বাবা-মা হাজার স্বপ্ন নিয়ে দিন গুণছিল। দেখতে দেখতে সময়টা কেন জানি খুব দ্রুতই কেটে যাচ্ছিল। হয়তো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সবকিছু। সেই দিনটি ছিল সুপ্রিয়ার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। কারণ সেদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছিল। বুক ভরা স্বপ্ন আর রঙিন আশা নিয়ে সে নিজের বাড়ি ফিরছিল। নিজের রেজাল্টের কাগজ বাবা মায়ের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল সুপ্রিয়া।


কিন্তু মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অনেক বেশি অসহায় করে ফেলে। হয়তো অনেক অপূর্ণ ইচ্ছে পূর্ণ হয়ে ওঠেনা। বাবা মায়ের কাছে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে বাস দুর্ঘটনায় আহত হয় সুপ্রিয়া। তার পরনের সাদা জামাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। তার শরীরের রক্তক্ষরণ তার ভেতরটাকে নিস্তেজ করে দিয়েছিল। বাস দুর্ঘটনার কবলে যারা পড়েছিল তাদের সকলকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সাথে তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। সারি সারি লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কেউ স্বজন হারানোর ব্যথায় চিৎকার করছিস কেউবা নিজের আপন মানুষটিকে খোঁজার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। হাসপাতালের চারপাশ কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল। স্বজন হারানোর ব্যথা আর বাস্তবতার নির্মমতা দেখে অনেকের চোখে জল চলে এসেছে। অন্যদিকে সুপ্রিয়ার সেই ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে আছে হসপিটালের মর্গের কোন এক কোনে।


সুপ্রিয়ার বাবা-মা সেই দূরের গ্রাম থেকে হয়তো কিছু জানতেই পারিনি। এরপর যখন সুপ্রিয়ার ব্যাগ থেকে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায় তখন তারা সুপ্রিয়ার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। যখন কোন বাবা-মা চোখের সামনে মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পরে থাকতে দেখে তখন কোন বাবা-মা নিজেকে স্থির রাখতে পারে না। অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের সুপ্রিয়া বড় ডাক্তার হবে। আর সবার পাশে দাঁড়াবে। এক নিমিষেই যেন বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন মাটির সাথে মিশে গেল। একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা অন্যদিকে নিজেদের বাঁচার লড়াই। সবকিছু মিলিয়ে যেন সুপ্রিয়ার বাবা-মা আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছিল। শেষ সম্বল ভিটে মাটি টুকু যে আজ পাওনাদারের কাছে বন্ধ রয়েছে। সুপ্রিয়ার ছোট বোনটাও যে স্বপ্ন দেখতো সেও বোনের মত ডাক্তার হবে। তার ছোট ভাইটার লেখাপড়ার খরচ চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার সেই আশা পূর্ণ হলো না সুপ্রিয়ার। আর অপূর্ণ রয়ে গেল বাবা-মায়ের ইচ্ছে গুলো। হারিয়ে গেল তাদের সব স্বপ্ন। সুপ্রিয়ার ক্ষতবিক্ষত দেহ তার বাবা-মাকে যেন অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছিল। হয়তো নিজের মেয়ের সাথে তাদের এই শেষ দেখাটা অনেক বেশি কঠিন ছিল। প্রাণহীন নিথর দেহটা যেন আজ সবকিছু ভুলে গেছে। নিজের দেওয়া কথাগুলো রাখতে পারেনি সে। বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারেনি আমি আজ থেকে তোমাদের দায়িত্ব নিলাম। হয়তো অনেকেই দুর্ঘটনার জন্য জীবনের অপূর্নতাগুলো পূর্ণ করতে পারেনা। কখনো বাস্তবতার কষাঘাত কখনো বা বাস্তবতার নির্মমতা সব স্বপ্নগুলোকে বিলীন করে দেয়। এভাবেই হয়তো দুর্ঘটনায় হারিয়ে যায় অনেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন।


জানিনা আমার লেখা গল্প আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। তবে মাঝে মাঝে চেষ্টা করি গল্প লিখে সবার মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সবার ভালো লাগবে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

অসাধারণ গল্প লিখেছেন আপু। গল্পটি পড়ে সত্যিই অনেক খারাপ লাগলো। সুপ্রিয়া তার সুখবরটি বাবা মাকে জানাতে পারল না। বাবা-মা দের কত স্বপ্ন থাকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। বাবা-মা কতো কিছুই না করে সন্তানদের মানুষ করার জন্য। যাই হোক, সুন্দর এই গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে । চমৎকার একটি গল্প পড়লাম আজ।

 11 months ago 

সত্যি আপু সুপ্রিয়া তার নিজের খুশির দিনে বাবা-মাকে দেখতে পেল না। আর খুশির খবর জানাতেও পারল না। আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

প্রত্যেক পিতা মাতা তার সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে থাকে কেউ চায় তার সন্তান ভালো লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হোক এবং সমাজের মুখে উজ্জ্বল করুক পাশাপাশি অনেকে চায় তার সন্তান ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হোক। যাইহোক অনেক সুন্দর একটি কাহিনী আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যা পড়ে বেশ কিছু জানতে ও ধারণা অর্জন করতে পারলাম, অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রত্যেকটি পিতা মাতার অনেক স্বপ্ন থাকে তার সন্তানকে নিয়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

আমার বড় আপুও মেডিকেলে পড়াশোনা করতো। কিন্তু ক্যান্সারে আমার আপুকে হারিয়েছে সেই ২০১২ সালে। আপনার গল্পটা পড়ে আপুর কথা মনে পরে গেল। সুপ্রিয়ার সুখবর বাবা মা এর কাছে পৌঁছানোর আগেই সুপ্রিয়া হারিয়ে গেল। আসলে একটি দূর্ঘটনার ফলে কত স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় নিমিষেই!

 11 months ago 

ভাইয়া আপনার বড় আপুর কথা শুনে সত্যিই অনেক খারাপ লাগলো। আসলে জীবনের বাস্তবতা গুলো হয়তো মাঝে মাঝে গল্পের মাঝে চলে আসে। তবুও আমরা চাই এভাবে যেন কোন বাবা-মার স্বপ্ন ভেঙে না যায়।

 11 months ago 

আমি প্রায়ই একটা কথা বলি মানুষের জীবন ভয়ংকর সুন্দর। মানুষের জীবনের কিছু ঘটনার কোনো ব‍্যাখ‍্যা থাকে না। এই যেমন সুপ্রিয়ার বাব মায়ের একমাএ সম্বল মেয়েটা শেষমেশ এইরকম একটা পরিস্থিতির স্বীকার হলো। এটা কোনো বাবা মায়ের পক্ষেই সহ‍্য করে নেওয়া সহজ না। আপনার গল্পটা বেশ হৃদয়বিদারক ছিল আপু। তবে সুন্দর লিখেছেন। ভালো লেগেছে আমার কাছে।।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া মানুষের জীবন ভয়ংকর সুন্দর। হয়তো বিভিন্ন পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। হয়তো এই কষ্ট অনেক বেশি। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59378.58
ETH 2646.25
USDT 1.00
SBD 2.46