গল্প-হৃদয় মাঝে||

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে গত কয়েকদিন থেকে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি যে গল্প লেখার মত সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজকে কি পোস্ট করব সেটাও ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই তো ভাবলাম আজকে একটু সময় করে গল্প লিখব। আর তাইতো দারুন একটি গল্প লিখে সবার মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সবার ভালো লাগবে।


হৃদয় মাঝে:


Source


আবির আর নিলয় দুজনে ভালো বন্ধু ছিল। একটা সময় ছিল দুজন দুজনকে ছাড়া এক মুহূর্ত কাটাতে পারতো না। সেই ছোটবেলার বন্ধু আবির এবং নিলয়। সময়ের সাথে সাথে তারা যেমন বড় হতে লাগলো তেমনি তাদের বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়তে লাগলো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধুত্বের গভীরতা যেন আরো বেশি মধুর হতে লাগলো। আবির এবং নিলয় একই কলেজে পড়তো। এরপর কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যখন দুজনে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য কোচিং করতে লাগলো তখন হঠাৎ করেই আবির অসুস্থ হয়ে পড়ল। নিলয় তখন ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে। বন্ধুর অসুস্থতার কথা শুনে আর তার এই অবস্থা দেখে নিলয় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ল। বন্ধুকে নিয়ে সে ডক্টরের কাছে গেল। যদিও তার বয়সটাও তখন অনেক কম ছিল। তবুও সে বন্ধুকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরপর ধীরে ধীরে আবির আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ল।


আবিরের সেই খারাপ সময় গুলোতে নিলয় তখন তার সারাক্ষনের সঙ্গী ছিল। এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। অন্যদিকে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে লাগল তারা। নিলয় ভালো একটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। কিন্তু সে বন্ধুকে ছেড়ে যেতে চায়নি। তাই তো একটা বছর কোথাও ভর্তি না হয়ে পরবর্তী বছর আবির এবং নিলয় একই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য তারা যেন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় সেক্রিফাইস করেছে। বিশেষ করে নিলয় আবিরের জন্য অনেক কিছু করেছে। ধীরে ধীরে আবির যখন সুস্থ হয়ে উঠলো তখন আবারও আবির আগের মতো সবার সাথে সময় কাটাতে লাগলো। হঠাৎ করে তাদের জীবনে একটি মেয়ের আগমন ঘটলো। নিলয় মনে মনে মেয়েটিকে পছন্দ করত। অন্যদিকে মেয়েটির প্রতি আবিরেরও কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আর মেয়েটিও আবিরকে মনে মনে পছন্দ করত।


নিলয় প্রথমে বুঝতে পারেনি মেয়েটি আবিরকে পছন্দ করে। কিন্তু আবির ঠিক বুঝতে পেরেছিল যে নিলয় মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেছে। এভাবে কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। আবির বিভিন্নভাবে মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। মেয়েটির নাম ছিল অদ্রিতা। আবির যতই অদ্রিতার থেকে নিজেকে আড়াল করতে যাচ্ছিল অদ্রিতা যেন ততই তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাচ্ছিল। কিন্তু নিলয়ের কথা ভেবে আবির অদ্রিতার থেকে দূরে চলে যেতে চেয়েছিল। হঠাৎ একদিন আবির নিলয়কে জানায় তার স্কলারশিপ হয়ে গেছে। সে দেশের বাইরে চলে যাবে। এই কথা শুনে নিলয় ভীষণ কষ্ট পায়। কিন্তু কি কারণে সে দেশের বাহিরে চলে যাবে এই কথাটা সে কাউকে জানায় না। আবির অদ্রিতাকে মনে মনে ভালোবাসতো। আর অদ্রিতাও আবিরকে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু নিলয় অদ্রিতাকে ভালোবাসে বলে আবির তাদের মাঝখান থেকে অনেক দূরে চলে যেতে চেয়েছিল। যাতে করে নিলয় এবং অদ্রিতার মাঝে সুন্দর একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।


আবির নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। সে কয়েক বছর আগেই বিদেশে চলে গিয়েছে। হয়তো তার বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে। আজ অনেক বছর পর আবির নিজের দেশে ফিরছে। কারণ আজ অদ্রিতা এবং নিলয়ের বিয়ে। যদিও অদ্রিতা নিলয়কে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। কিন্তু আবিরের অনুরোধে অদ্রিতা নিলয়ের সাথে সম্পর্ক গড়তে রাজি হয় এবং নিলয়কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। আসলে নিলয় এসবের কিছুই জানতো না। এরপর যখন আবির দেশে আসে তখন নিলয় ও অদ্রিতা দুজনের সাথে দেখা করে। সেদিন ছিল তাদের গায়ে হলুদ। আবির যখন অদ্রিতার গায়ে হলুদ ছোঁয়াতে যায় তখন অদ্রিতার দুচোখ যেন ছলছল করছিল। মনের মাঝে চাপা কষ্ট আর হৃদয়ের না বলা কথা যেন চোখের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল। আবির নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু নিলয় যে তার ছোটবেলাকার বন্ধু। তাই তো তারা নিলয়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।


নিলয় সবকিছু বুঝতে পেরেছিল। কারণ আড়াল থেকে সে আবির এবং অদ্রিতার কথা শুনে ফেলেছিল। অদ্রিতা এখনো আবিরকে ভালোবাসে। আর আবিরও অদ্রিতার প্রতি অনেকটা দুর্বল। কিন্তু বন্ধুত্বের জন্য আবির তার ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে চলেছে। নিলয় যখন সবকিছু বুঝতে পারে তখন সে মনে মনে একটি অন্য প্ল্যান করে বসে। বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। নিলয় যখন বর বেশে বিয়ে করতে যাবে এমন সময় আবিরের জন্যও একই রকমের ড্রেস আনতে বলে এবং আবিরকে পড়ার জন্য অনুরোধ করে। বন্ধুর অনুরোধ রাখতে গিয়ে আবির বেশ লজ্জায় পড়ে যায়। আবির বুঝতে পারছিল না কি করবে। এই দৃশ্য দেখে অদ্রিতা অবাক হয়ে যায়। এরপর নিলয় অদ্রিতাকে আবিরের হাতে তুলে দেয়। নিলয় আবিরকে বলে আমি কখনোই তোর ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে চাইনি। কারণ তোর স্থান আমার হৃদয় মাঝে। এরপর অদ্রিতা এবং আবিরের বিয়ে হয়ে যায়। আর নিলয় হয়তো ক্ষনিকের জন্য কষ্ট পায়। কিন্তু এটা ভেবে তার ভালো লাগে যে তার প্রিয় বন্ধু তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েছে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

আপু আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। সত্যিকারের বন্ধুত্ব এমনই হয়। তারজন্য বলে একজন বন্ধু ভালো হলে জীবন স্বার্থক আর যদি খারাপ হয় তাহলে জীবন শেষ। এমন বন্ধুত্ব বাস্তবে খুব কমই দেখা যায়। যাই হোক অবশেষে নিলয় সব বুঝতে পেরে আদ্রিতাকে আবিরের হাতে তুলে দিয়ে তার বন্ধুত্ব কতটা খাঁটি তা বুঝিয়েছে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু সত্যিকারের বন্ধু এমনই হয়। আসলে বাস্তবে এরকম বন্ধু পাওয়া অনেক মুশকিল। তবুও এই গল্পটি লেখার চেষ্টা করেছি আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

বেশ সুন্দর একটি গল্প আজ আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। নিল এবং আবিরের বন্ধুত্ব যে কত গভীর তা আপনার গল্পটির মাঝে বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিলয় এখানে তার বন্ধুত্বের প্রকৃত পরিচয় দিলেন। হয়তোবা আপেক্ষিক দৃষ্টিতে নিলয় কিছুই পেল না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিলয়ই বিজয়ী। কারণ কথাই তো বলে ভোগে নয় ত্যাগে সুখ।

 11 months ago 

আপু আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। মাঝে মাঝে গল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে ভালো লাগে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

আপু আপনার গল্পটি সত্যি চমৎকার ছিল ।বন্ধুত্বটা এমনই হওয়া উচিত। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর জন্য সেক্রিফাইস করবে ।তবে বাস্তবে এমন বন্ধু পাওয়া বিরল । সত্যি গল্পটি চমৎকার ছিল । ভীষণ ভালো লেগেছে। অবশেষে পছন্দের দুজন মানুষ এক হয়েছে এটিই বড় কথা। ভালো লাগলো ধন্যবাদ।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু বন্ধুত্বটা এমনই হওয়া উচিত। সেক্রিফাইস নামক শব্দটা যখন বন্ধুত্বের মাঝে থাকে তখন সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো বেশি মধুর হয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

দারুন একটি গল্প লিখেছেন আপু । আসলে বন্ধুত্বের জন্য এভাবে স্যাক্রিফাইস করার নামই হয়তো বন্ধুত্ব । আর আবিরের চোখ দেখে বুঝে গিয়েছিল যার কারণে আবির ওদের দুজনের মিল করিয়ে দিল । আবির যতই দূরে সরিয়ে রাখুক না কোন শেষ পর্যন্ত ওদের দুজনেরই মিল হল ভালোবাসার জয় হলো ।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু বন্ধুর জন্য এভাবে সেক্রিফাইস করার নামই হচ্ছে আসল বন্ধুত্ব। আর দুজন মানুষের ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগে। তাই তো দারুন একটি গল্প শেয়ার করার চেষ্টা করেছি আপু।

 11 months ago 

আপু খুবই দুর্দান্ত গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপু আপনার গল্পটি সত্যি চমৎকার ছিলো। পুরো গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে বন্ধুর জীবনের একটা অংশ। আবিরের বন্ধুত্ব সত্যি বেশ বিরল। আসলে প্রকৃত ভালোবাসা এমনই হয়। ভালোবাসার জন্য জীবনে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। এতো দুর্দান্ত গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 11 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে এবং উপস্থাপন ভালো লেগেছে জেনে অনেক খুশি হলাম। এভাবেই মন্তব্য করে পাশে থাকবেন ভাইয়া।

 11 months ago 

এমন বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। সিনেমায় অনেক দেখেছি বন্ধুর জন্য বন্ধু নিজের প্রেম ভালোবাসাকে বিসর্জন দেয়। হয়তো আমাদের অগোচরে বাস্তবেও এমন বন্ধুত্ব রয়েছে কারো না কারো মধ্যে। তবে এখনকার দিনে এমন বন্ধু পাওয়াটা খুব কঠিন। আসলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত। সম্পর্কের মধ্যে সেক্রিফাইস না থাকলে সম্পর্ক মজবুত হয় না। যাইহোক এমন চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া এরকম বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। হয়তো বাস্তবতায় এরকমটা খুব কম হয়। তবুও কল্পনায় গল্প লিখতে ভালো লেগেছে।

 11 months ago 

বর্তমানে এমন বন্ধুত্ব খুব কম পাওয়া যায়। আর বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার পিছনে একটা মেয়েরই হাত থাকে, হয় ও পছন্দ করে মেয়েকে, না হয় আরেকজন। তবে আবির আর নিলয়ের বন্ধুত্ব যেন ভাইয়ের মতো। নিলয় বুঝতে পেরেই অদ্রিতাকে আবিরের হাতে তুলে দিল। দারুণ লিখলেন আপু

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বর্তমানে এমন বন্ধু পাওয়া অনেক মুশকিল। হয়তো গল্পতে সেই বন্ধুত্ব গুলো দেখতে পাওয়া যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59596.75
ETH 2659.83
USDT 1.00
SBD 2.45