অতিথি||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই গল্প লিখি। তেমনি সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


অতিথি:

CM_20221016191140065.jpg
Device-OPPO-A15(edited)


কথায় আছে প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে নাকি ভালোবাসা রঙিন হয়। ভালোবাসায় রাঙানো দুটি হৃদয় যখন পূর্ণতা পায় তখন সেই মধুর সম্পর্ক আরও বেশি মধুর হয়ে যায়। ভার্সিটি লাইফ থেকে নিলয় ও নীলিমা একে অপরকে ভালোবাসে। সেই প্রথম দিন থেকেই দুজনের মাঝে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। এরপর বন্ধুত্ব থেকে কখন যে মধুর একটি সম্পর্ক তৈরি হলো তারা বুঝতেই পারেনি। অনেক হাসি, আনন্দ, খুনশুঁটির মাঝেই কেটে গিয়েছে তাদের ভার্সিটি লাইফ। অনেক মধুর মধুর মুহূর্তের সাক্ষী তাদের ভালোবাসা। দেখতে দেখতে তাদের পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। দুজনেই নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত সময় পার করতে থাকে। একটা সময় গিয়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে নতুন একটি সম্পর্কে করতে চায়। এভাবে কেটে গেল আরো কিছুদিন। দুজনের পরিবারের সম্মতিতে তারা নতুন জীবন শুরু করতে চায়। তাই তো দুজনেই নিজেদের পরিবারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিল।


অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে দুজন নিজেদের পরিবারকে রাজি করাতে সক্ষম হয়। সেই দিনটি তাদের জীবনে সত্যি অনেক আনন্দের ছিল। দুটি পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। দেখতে দেখতে সেই দিনটি চলে আসে। সময় যত ঘনিয়ে আসে তাদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন আরো মধুর হতে থাকে। অবশেষে নিলয় ও নীলিমা এক হতে চলেছে। তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে। এভাবেই চলছিল তাদের দিনগুলো। দুটি পরিবার বিয়ের উৎসবে মেতে উঠেছিল। দুজনের খুশি যেন আর বাঁধ মানছিল না। তারা দুজনে অপেক্ষা করছিল তাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনটির জন্য। অবশেষে তাদের জীবনের সেই শুভক্ষণ আসে। তারা তাদের মিষ্টি প্রেমের সম্পর্কের পূর্ণতা পায়। বিয়ের পরের দিন হঠাৎ করেই নীলিমা অনুভব করতে থাকে তার শরীর ভীষণ খারাপ লাগছে। তবুও সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে।


এভাবে যতই দিন যাচ্ছিল নীলিমা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। নীলিমা একসময় অনুভব করল তার মাথার চুল গুলো ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে। আর চেহারার মাঝে কেন জানি বিষন্নতার ছাপ পড়েছে। বিয়ের কয়েক দিন যেতে না যেতেই নীলিমা নিজের মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করলো। এই সুখের সংসার যেন তার কাছে আজ ফ্যাকাসে লাগছিল। অবশেষে নীলিমা নিলয়কে সবকিছু খুলে বলল। নিলয় নীলিমাকে নিয়ে একটি নামকরা হসপিটালে গেল। সেখানে ডক্টরের সাথে কথা বলে ও বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নীলিমা ও নিলয় বাসায় ফিরে আসলো। পরের দিন নিলয় হসপিটালে গেল এবং নীলিমার রিপোর্টগুলো ডক্টরকে দেখালো। নিলয় যখন ডক্টরের কাছে গেল তখন জানতে পারলো নীলিমার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেধেছে। এই কথাটি শোনা মাত্রই নিলয় যেন একেবারে পাগল হয়ে গেল। প্রিয় মানুষটির অসুস্থতার কথা মেনে নিতে নিলয়ের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। সে কিছুতেই নীলিমাকে হারাতে চাইছিল না।


নিলয় নিজের বাড়িতে ফেরার সাহস পাচ্ছিল না। কারণ নীলিমার সামনে দাঁড়াতে সে ভয় পাচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিল নীলিমা যদি সব সত্য জানতে পারে তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে। সারাদিন নিলয় এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ালো। অনেকটা পাগলের মত এ রাস্তায় ও রাস্তায় ঘুরে বেড়ালো। অনেক রাত হয়ে গেছে। তাই নীলিমা নিলয়ের জন্য খুবই চিন্তা করছে। অন্যদিকে নিলয় নীলিমার ফোন কলস রিসিভ করছে না। নীলিমার সামনে দাঁড়াতে নিলয়ের বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অবশেষে অনেক রাতে নিলয় বাড়ি ফেরে। বাড়ি ফিরে দেখে নীলিমা ঘুমিয়ে পড়েছে। নীলিমার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয় তাই তো সে ঘুমিয়ে পড়েছে। হয়তো ক্লান্ত শরীরে নিলয়ের প্রতীক্ষায় বসেছিল। নীলিমার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে নিলয়ের হৃদয় যেন বারবার চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠছে। নিলয় বারবার তার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো আর বলছিল তুমি আছো তাই আমার জীবনটা পূর্ণতা পেয়েছে। আমি আমার এই জীবন অপূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে চাই না।


দিন যত যাচ্ছিল নীলিমার শরীরের অবস্থা ততই খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। নীলিমা সারাক্ষণ আনমনে হয়ে বসে থাকতো। নীলিমার এই অবস্থা দেখে নিলয়ের খুবই খারাপ লাগতো। কিন্তু কখনোই নীলিমাকে বুঝতে দিত না।নিলয় বলতো তোমার কিছু হয়নি ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ একদিন নিলয় ঘুম থেকে উঠে দেখে নীলিমা পাশে নেই। বারান্দায় তাড়িয়ে দাড়িয়ে আনমনে কি যেন ভাবছে। নিলয় যখন তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো তখন নীলিমা বলল আমি তোমার জীবনে পূর্ণতা এনে দিতে পারলাম না। হয়তো আমি তোমার জীবনের ক্ষণিকের অতিথি। তুমি আমার কাছে অনেক কিছুই লুকানোর চেষ্টা করছো। কিন্তু আমি বুঝে গেছি এই পৃথিবীতে আমার সময় খুবই অল্প। আমি হয়তো অল্প দিনের অতিথি হয়ে তোমার জীবনে এসেছি। নিলয় আজ নীলিমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। অজানা ভয় এসে তার হৃদয় ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়ে যাচ্ছে। এবার নিলয় নীলিমার হাত ধরে বলল আমার এই অপূর্ণ জীবনটিকে তুমি পূর্ণতা দিয়েছো। তাই তোমায় হারিয়ে যেতে দেবো না।


সেদিন সারারাত দুজনের ঘুম হয়নি। নিলয় ও নীলিমা দুজন অনেক কেঁদেছিল। এরপর নীলিমা নিলয়কে বলে তুমি আছো তাই আমি নতুনভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাই। তোমার ভালোবাসা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি জীবনে নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। তুমি আছো তাই আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি। তুমি আমার পাশে আছো বলেই আমি নিজের অসুস্থতাকেও জয় করতে শিখেছি। তবে আমি যদি কখনো হারিয়ে যাই তখন বুঝেনিও মরনের পরেও আমি তোমার পাশেই থাকবো। হয়তো মরণ আমাকে তোমার থেকে দূরে করে দেবে। কিন্তু আমার হৃদয় তোমার কাছেই চিরজীবন রয়ে যাবে। আমি তোমার জীবনের ক্ষণিকের অতিথি হয়ে নয় তোমার ভালোবাসা হয়ে সারাজীবন তোমার হৃদয়ে থাকতে চাই। আজ অনেক বছর পর নিলয় যখন নীলিমার ছবি দেখছিল তখন সেই কথাগুলো মনে পড়ছিল। আর নিলয়ের দুচোখের পানিতে নীলিমার ছবিটি ভিজে যাচ্ছিল। হয়তো নীলিমা নিলয়ের জীবনে অতিথি হয়ে এসেছিল। কিন্তু নীলিমার প্রতি নিলয়ের ভালোবাসা সারা জীবন একই রয়ে গেছে।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

আপনার লেখা গল্পটি বরাবরের মতো বেশ ভাল হয়েছে। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

 2 years ago 

আপু আপনি আমার লিখা গল্পগুলো পড়েন জেনে সত্যি ভালো লাগলো। আসলে আপনাদের কাছে যদি ভালো লাগে তাহলে আমার লেখনি সার্থক হয়। পাঠকের সুন্দর মন্তব্য নতুন করে লেখার অনুপ্রেরণা তৈরি করে।

 2 years ago 

সত্যি আপু ভালোবাসা এমন একটি জিনিস, কখন যে কার হৃদয়ে বাসা বাঁধে বুঝা মুশকিল। দুটি পরিবারের সম্মতিতে তাদের মধুর সম্পর্ক পূর্ণতা পায়।নিলীমা ও নিলয়ের সুখ যেন তাদের কপালে সহ্য না। মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে নিলীমার। একথা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টের। নীলিমা নিলয়কে বলে তুমি আছো তাই আমি নতুনভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাই।কথা গুলো অনেক কষ্টের। নীলিমার প্রতি নিলয়ের ভালোবাসা সারা জীবন একই রয়ে গেছে জেনে ভালো লাগল।

 2 years ago 

কখন কার হৃদয়ে কার জায়গা হয় সেটা সত্যিই বোঝা যায় না। কিন্তু যখন ভালোবাসার মানুষটি জীবনে এসেও হারিয়ে যায় তখন সত্যি অনেক খারাপ লাগে। হয়তো দুটি মানুষের মাঝে মধুর মুহূর্ত ক্ষণিকের ছিল। কিন্তু হৃদয়ের বন্ধন ছিল সারা জীবনের।

 2 years ago 

সত্যিকারের ভালোবাসার একটি ছোঁয়া পেলাম আজকে আপনার এই ব্লগের মধ্যে। আসলে ভালোবাসা গুলো এমনই হয়, প্রকৃত ভালোবাসা একে অন্যের জন্য অনেক বেশি কেয়ারিং হয়।তবে দুঃখ লাগলো এতটুকুও নীলিমার বিষয়টি জেনে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

আমার এই লেখার মাধ্যমে সত্যিকারের ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে প্রকৃত ভালোবাসাগুলো হয়তো এমনই হয়। সুখ দুঃখের মাঝেও ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাকে সারা জীবন।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে ভালোবাসা রঙিন হয়। ঠিক বলেছেন আপু ভালোবাসা এমনই হয় বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসাই পরিণত হয়। এমনিতেই ভার্সিটি লাইফ অনেক আনন্দ হয় শুনছি বড়দের কাছ থেকে। আসলে আপু আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে প্রিয় মানুষটির অসুস্থর কথা শুনে। কেউ কখনো মেনে নিতে পারে না এমন অসুস্থতা ক্যান্সার রোগের।

 2 years ago 

প্রিয় মানুষটি যখন পাশে থাকে তখন ভালোবাসা আরো রঙিন হয়ে যায়। হয়তো বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা তৈরি হয়। কিন্তু একটি সময় সেই প্রিয় মানুষটি যখন হারিয়ে যায় তখন মেনে নেওয়া যায় না।

 2 years ago 

আপনার এই কথার সাথে আমি একমত ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে ভালোবাসা রঙিন হয় এবং পরিপূর্ণতা পায়।তবে ভালোবাসার মানুষটি দূরে সরে গেলে ভালোবাসা সাদা কালোয় রুপ নেয়।

 2 years ago 

সত্যি আপু ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকলে ভালোবাসা যেমন রঙিন হয় তেমনি পরিপূর্ণতা পায়। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটি দূরে গেলে ভালোবাসা সাদা কালোয় রূপ নেয়।

 2 years ago 

কেনো যে মাঝে মাঝে ভালোবাসা গুলো এই ভাবে হারিয়ে যায় জানি না। ভগবান কি নিলিমা কে সুস্থ করে দিতে পারত না? কেন এমন হয়? মন টা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো গল্প টা পড়ে। বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো।

 2 years ago 

সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কেন যে হারিয়ে যায় সেটা মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা। হয়তো গল্পের মতই বাস্তবতায় এরকম চিত্র অনেক দেখা যায়। নীলিমা যদি সুস্থ হয়ে উঠতো তাহলে হয়তো তাদের দুজনের পথ চলা আরো বেশি সুন্দর হতো।

 2 years ago 

প্রত্যেকটা লাইনের ভালবাসার এক অদ্ভুত অনুভূতি আমি বুঝতে পেরেছি। ভালোবাসা সত্যিই একটি অনুভূতি এবং এই অনুভুতি কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আপনার ব্লগটি অসাধারণ ছিল।।

 2 years ago 

ভালোবাসায় ভরা অনুভূতিগুলো যখন লেখার মাঝে ফুটে ওঠে তখন প্রত্যেকটি লাইন আলাদা রকমের অনুভূতি তৈরি করে। সত্যি ভাইয়া সত্যিকারের ভালোবাসা সারা জীবন অনুভূতিতে বেঁচে থাকে। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 2 years ago 

সত্যিকারি ভালোবাসা গুলো মনে হয় এমনই হয়।তাদের হয়ত ভালোবাসা কমতি হয় না,তবে মানুষগুলোই হারিয়ে যায়।হয়ত নীলিমা নিলয়ের কাছে ক্ষনিকের অতিথ হয়ে এসেছিলো,কিন্তু মনের
তো আজীবনের জন্য রয়ে যাবে।ভালো লাগলো আপু গল্পটা পড়ে।ধন্যবাদ

 2 years ago 

সত্যিকারের ভালোবাসার মাঝে হয়তো কোন কমতি থাকে না। কিন্তু প্রিয় মানুষ গুলোই হারিয়ে যায়। হয়তো চাইলেও সেই মানুষগুলোকে ধরে রাখা যায় না। কারণ তারা ক্ষনিকের অতিথি হয়ে জীবনে আসে। কিন্তু মনের মাঝে তাদের জন্য ভালোবাসা সারা জীবন থেকে যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64373.04
ETH 2775.53
USDT 1.00
SBD 2.66