আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যদিও ভালো গল্প লিখতে পারিনা। তবুও নিজের অনুভূতি থেকে গল্প লিখার চেষ্টা করি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।

হিয়া ও অয়ন দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। পরিবারের অমতে গিয়েই তারা ছোট্ট সুখের ঘর বেঁধেছিল। অনেক অভাব অনটন আর ঝর ঝাপটার মধ্য দিয়ে তারা সংসার জীবন শুরু করেছিল। এক বেলা খেয়ে দিন পার হয়েছে তাদের। তাদের মিষ্টি মধুর ভালোবাসা তাদের জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিত। আর অয়নের ভালোবাসা হিয়াকে যেন পূর্ণতা দিয়েছিল। তাইতো হিয়া হাজার কষ্টের মাঝেও নিজেকে সুখী করে নিয়েছিল। আর ছোট্ট সুখের সংসারে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল অয়ন হিয়ার সুখের সংসার। কখনো খুনসুটি, কখনো ভালোবাসা, কখনো বা একটু ভুল বোঝাবুঝির মাঝে হয়তো কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। তাদের এই ছোট্ট সুখের নীড়ে কখনো কোন দুঃখ ছিল না। হয়তো বিলাসিতা ছিল না কিন্তু সুখের কোন কমতি ছিল না। অয়ন চেষ্টা করছিল ছোটখাটো একটি চাকরি যোগাড় করার।

যেহেতু দুজনের পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি। তাই অয়নের চাকরি যোগাড় করাটা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। দুশ্চিন্তায় অয়ন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছি না। অয়ন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় তার হাজারো কষ্ট হলেও সে তার প্রিয় মানুষটিকে তার বাবা-মার কাছে রেখে আসবে। হয়তো হিয়া সেখানে ভালো থাকবে। অয়ন মনে মনে এই কথাগুলো ভাবছিল আর দুচোখে পানি ঝরছিল।এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। অয়ন যখন হিয়াকে বলে সে যেন তার বাবার কাছে চলে যায় তখন হিয়া ভীষণ মন খারাপ করেছিল। অয়নের উপর বেশ অভিমান করেছিল। অয়নকে ছেড়ে যাওয়ার কথা হিয়া কল্পনাতেও ভাবতে পারেনা।

হিয়া বলেছিল কোন একদিন আমি সত্যিই তোমাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যাব। সেদিন তুমি শুধু আমাকে কল্পনাতেই খুঁজে পাবে। কখনো বাস্তবে আর পাবে না। সেদিন হিয়া অয়নকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল। বলেছিল আমি বিলাসিতা চাই না তোমার সাথে দু মুঠো ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। অয়ন সেদিন হিয়াকে বলেছিল এভাবেই সারা জীবন আমার পাশে থেকো। সময়ের সাথে সাথে কেটে গেল আরো কিছুদিন। হঠাৎ করে তাদের এই ছোট্ট কুঁড়েঘরে সুখের বার্তা এল। হিয়া মা হতে চলেছে। অন্যদিকে অয়ন এদিক-ওদিক দৌড়াচ্ছে চাকরির সন্ধানে। দিনশেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছে। এই অবস্থায় এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। হিয়ার মায়াবী চোখ আর মলিন মুখের হাসি দেখে অয়নের ভেতরটা যেন আরও বেশি হাহাকার করে উঠছিল। অয়ন বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করা শুরু করে। কারণ তাদের ঘরে নতুন অতিথি আসতে চলেছে।

দিনমজুরের কাজ করে যে কয়টা টাকা উপার্জন করে তাই দিয়ে হয়তো ডাল ভাত যোগাড় করতে পারে। এত কষ্টের মাঝে তবুও যেন হিয়ার মুখে হাসির কমতি ছিল না। হাজারো কষ্টের মাঝে সে তার সুখ খুঁজে নিয়েছিল। অয়নের এই ভালোবাসার মাঝে হিয়া স্বর্গীয় সুখ খুঁজে পেয়েছিল।হঠাৎ একদিন তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। অয়ন সেদিনও বেরিয়ে পড়েছিল কাজের সন্ধানে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কোন কাজ পাচ্ছি না। এদিকে তাদের কুঁড়েঘরের এর টিনের ফুটো দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়ছিল। একটা সময় বৃষ্টির সাথে সাথে পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। হিয়া বুঝতে পারছিল না কি করবে। তাই তো বারবার পানি মোছার চেষ্টা করছিল। এমন সময় হঠাৎ করে হিয়া পা পিছলে পড়ে যায়। সেদিন হিয়া চিৎকার করে সবাইকে ডেকেছিল। কিন্তু বৃষ্টির সেই শব্দে কেউ হিয়ার চিৎকার শুনতে পায়নি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অনেক কান্নাকাটি করেছিল হিয়া। কিন্তু হিয়ার সেই কান্নার শব্দ কারো কানে বেজে ওঠেনি।

হঠাৎ এক সময় বৃষ্টি থেমে যায়। অয়ন নিজের ঘরে ফিরে আসে। ঘরে ফিরে এসে দেখে বৃষ্টির পানি তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আর সেই সাথে লাল রক্তমাখা পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। এই দৃশ্য দেখে অয়ন দৌড়ে চলে যায়। আর গিয়ে দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাতরাচ্ছে হিয়া। অয়ন কোন কিছু না ভেবেই হিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য। অনেক কষ্টে একটি ভ্যান গাড়ি জোগাড় করে হিয়াকে হসপিটালে নিয়ে যায়। কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। হসপিটালে যাওয়ার আগেই হিয়া এই পৃথিবী থেকে চলে যায়। আর অয়ন হারিয়ে ফেলে তার ভালোবাসার হিয়াকে। দেখতে দেখতে কেটে গেল একটি বছর। আজ হিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী। আজ কেন জানি বারবার হিয়ার বলা সেই কথাটি মনে পড়ছিল অয়নের। হিয়া তাকে বলেছিল যেদিন সে থাকবে না সেদিন অয়ন যেনো তাকে কল্পনায় খুঁজে নেয়। অয়ন হিয়াকে হারিয়ে বুঝতে পারছে কল্পনায় প্রিয় মানুষটিকে খুঁজা কতটা কষ্টের।