শেষ থেকে শুরু||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। লিখালিখি করতে আমার ভালো লাগে। যখন আমি অবসরে থাকি তখন অন্যের লেখা পড়তে যেমন পছন্দ করি তেমনি নিজেও নতুন কিছু লিখতে পছন্দ করি। তাই আজকে আমি একটি গল্প লিখে শেয়ার করতে যাচ্ছি।


শেষ থেকে শুরু:

love-g3b0755db1_1920.jpg

Source


কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো হয়তো সারা জীবন না বলাই থেকে যায়। হয়তো বলা হয়ে ওঠে না সেই প্রিয় মানুষটিকে। তেমনি আজকে আমি আমার গল্পের অন্যতম চরিত্র নাহিদকে নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরব। নাহিদ সুপ্তিকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতো। নাহিদের বাবা নেই। নাহিদ ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে বড় হয়েছে। নাহিদের মা রাত দিন পরিশ্রম করে নাহিদের জন্য খাবারের জোগাড় করেছে। এই পৃথিবীতে বাবা নামক শব্দটি যার মাথার উপর থাকে না সেই পৃথিবীতে বড় হয়ে ওঠা অনেক বেশি কঠিন। নাহিদ ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল। প্রতিটি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে নাহিদ। শিক্ষকদের গর্ব ছিল নাহিদ। স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে নাহিদ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে তখন দেখা পায় সুপ্তিকর। সুপ্তি তার ডিপার্টমেন্টেই পড়তো। সুপ্তি যেচে নাহিদের সাথে বন্ধুত্ব করেছিল। নাহিদ বন্ধুত্বে বিশ্বাসী ছিল না। কারণ সে ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। তাইতো সে সব সময় সুপ্তিকে এড়িয়ে চলত। কারণ সুপ্তি ছিল বড়লোকের ধনীর দুলালী।


সুপ্তি প্রতিদিন নাহিদের সাথে বায়না করতো চলো ঘুরতে যাই। চলো কোথাও খেতে যাই। নাহিদ সবসময় সুপ্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত। কারণ তার পকেটে পয়সা ছিল না। অন্যদিকে নাহিদের মা অনেক কষ্ট করে তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তাই নাহিদের মনে চিন্তা ছিল যে করে হোক মায়ের কষ্ট দূর করবে সে। মাকে ভালো রাখবে সে। তাইতো নাহিদ রাত দিন পড়াশোনা করে যেতে লাগলো। অন্যদিকে সুপ্তি নাহিদের সাথে আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে লাগলো। সুপ্তির এই বন্ধুত্ব নাহিদের কাছে ভালই লাগতো। তবে নাহিদ ভয়ে ভয়ে থাকতো এই বন্ধুত্ব যেন আর বেশি দিকে না যায়। নাহিদ ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলো সে হয়তো মনে মনে সুপ্তিকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। হয়তো সেই পছন্দ ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নিতে পারে। তাইতো নাহিদ ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। কারণ সে জানত এই পৃথিবীর মানুষগুলো স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। হয়তো আজ তার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে কাল যখন জীবনের বাস্তবতা এসে দুজনের মাঝে দাঁড়াবে তখন সেই বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।


সুপ্তির থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য নাহিদ তার গ্রামের বাসায় চলে গেল। নাহিদ ভাবল হয়তো কিছুদিন মায়ের কাছে থেকে আসলে সুপ্তিকে ভুলতে পারবে। অন্যদিকে সুপ্তি হয়তো নাহিদকে না দেখতে পেয়ে অনেকটা দূরে সরে যাবে। সুপ্তিকে ছেড়ে থাকতে নাহিদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। ভিতরে যেন অদ্ভুত শূন্যতা তৈরি হয়েছিল নাহিদের। যে শূন্যতা হয়তো সুপ্তি ছাড়া অন্য কেউ পূর্ণ করতে পারবে না। তবুও সে জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে সুপ্তি নাহিদের অনুপস্থিতিতে অনেকটা একাকীত্ব বোধ করছিল। সে বারবার ভাবছিল নাহিদ তাকে না বলে কেন চলে গেল। সুপ্তির জীবনে আজ একটি বিশেষ দিন। তাই সে নাহিদকে বারবার খুঁজতে লাগলো। যে দিনটির জন্য সুপ্তি অনেক দিন অপেক্ষা করেছে। সুপ্তি স্কলারশিপে দেশের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাই সে তার সেই খুশি নাহিদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চায়। সুপ্তি অনেক কষ্টে নাহিদের ঠিকানা খুঁজে বের করে শেষবারের মতো নাহিদকে সেই ঠিকানায় চিঠি পাঠায়। নাহিদের ফোন বন্ধ ছিল তাই চিঠি ছাড়া তার সাথে যোগাযোগ করার মত কোন মাধ্যম ছিল না। নাহিদের কাছে যখন সুপ্তির চিঠি পৌঁছায় তখন অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল নাহিদ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আমি বুঝতে পেরেছি তুমি তোমার জীবনের বাস্তবতা নিয়ে লড়াই করছো। তাই তো তোমায় আমার ভালবাসার মায়ায় ফাঁসাতে চাইনি। হয়তো আমার ভালোবাসা তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিত। আমি চাইনি তোমার ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো সব হারিয়ে যাক। তাই তো আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি।


couple-g724ffcbb6_1920.jpg

Source


নাহিদ যখন সুপ্তির লেখা চিঠিটি পড়ছিল তখন মনের অজান্তেই দু চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। কারণ সেও যে সুপ্তিকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু কখনো বলতে পারেনি। আর বলতেও চায়নি। কারণ সে জানে তার জীবনের বাস্তবতা তাকে ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এবার নাহিদ আবারও তার প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে গেল। নিজের মতো করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে নাহিদ। পড়াশোনা, ক্লাস সবকিছুর মাঝেই ব্যস্ত থাকতো নাহিদ। মোট কথা সুপ্তিকে ভুলে যেতে সে সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যেই ডুবে থাকতো। তবুও সে সুপ্তিকে ভুলতে পারছিল না। কারণ জীবনে প্রথম কাউকে ভালো লাগলে তাকে ভুলা যায় না। কিন্তু সে কখনো তার ভালোলাগার কথা সুপ্তিকে বলতে পারেনি। হয়তো কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো না বলাই থেকে যায়। এভাবেই সুপ্তি এবং নাহিদ নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হয়তো তারা ভালো আছে। না হয়তো ভালো থাকার চেষ্টা করছে। তবুও তারা নিজের জীবনকে নিজের মতো করে সাজানোর চেষ্টা করছে।


আজ কয়েক বছর পর সুপ্তি ও নাহিদ মুখোমুখি। তাদের কোন এক বন্ধুর বিয়েতে দুজনে এসেছে। অনেক বছর পর দুজনে মুখোমুখি হয়ে নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কারো মুখে নেই কোন ভাষা। নীরবতা ভেঙে নাহিদ প্রথমে জানতে চাইলো তুমি একা এসেছো নাকি তোমার পরিবারকে নিয়ে এসেছো। এবার সুপ্তি নাহিদকে প্রশ্ন করল তুমি পরিবার বলতে কাকে বোঝাচ্ছ আমার বাবা মাকে? নাহিদ কিছুটা নীরব থেকে বলল আমি তোমার নিজের পরিবারকে বোঝাচ্ছি। এবার সুপ্তি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল আমার কথা না হয় পরে জানলে এবার বল আমাদের ভাবি কোথায়? ভাবি নিশ্চয়ই দেখতে অনেক সুন্দর তাইনা নাহিদ? সুপ্তি যখন এই কথাগুলো বলছিল তখন নাহিদ বারবার খেয়াল করছিল তার চোখের কোনে অনেকটা ভিজে গেছে। হয়তো কাঁদতে পারছে না সবার সামনে। এবার নাহিদ সুপ্তির হাত ধরে বলল কিছু কথা না হয় না বলাই থাক। তখন সুপ্তি নাহিদ কে বলল হয়তো অনেক কিছুই না বলা আছে। হয়তো বলার সুযোগ সময় হয়ে ওঠেনি। নাহিদ বলল সেটা কি শুধু তোমার ক্ষেত্রেই হয়েছে সেটা তো আমার জীবনেও হয়েছে। এবার নাহিদ একটি গোলাপ নিয়ে সুপ্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আর বলল দুজনের পথ চলা কি এক হতে পারে না? অতীতের কথাগুলো না হয় না বলাই থাক। আমাদের এই পথ চলা না হয় শেষ থেকে শুরু হয়ে যাক। এবার সুপ্তি সত্যি সত্যি কেদে ফেললো। এভাবে একটি সম্পর্কের শেষ থেকে শুরু হলো।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

ভালবাসার পুর্ণতা গুলো দেখতে ভীষণ ভাল লাগে । সেইটা গল্পে হোক কিংবা বাস্তবে । আপনার আজকের গল্প কাহিনি শেষ থেকে শুরুটি পড়েও বেশ ভাল লাগলো ।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে অনেক ভালো লাগে। সেটা গল্পে হোক কিংবা বাস্তবে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া আপনার মতামতের জন্য।

 2 years ago 

গল্পটি পড়ে আমার বেশ ভালই লেগেছে আসলে মানুষের জীবনে ভালোবাসা জিনিসটি থাকবেই। আর ভালবাসা না থাকলে মানুষের মনুষত্ব হারিয়ে যায়। এখন আর গল্প কাহিনী শেষ থেকে শুরু করে আমার খুব ভালো লেগেছে ধাপগুলো চমৎকার ছিল ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

আমার লিখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 2 years ago 

শেষ থেকে শুরু গল্পের কাহিনী আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে।ভালোবাসা ছাড়া প্রতিটি জীবন অর্থহীন।ভালবাসার চমৎকার একটি গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো।♥♥

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটির কাহিনী আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। ভালোবাসা ছাড়া প্রত্যেকটি জীবন অর্থহীন এই কথাটি আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

 2 years ago 

আপু কী বলবো অসম্ভব ভালো লেগেছে ৷আপনি ঠিক ঠাক বলেছেন?যে ছেলের বাবা নামক নামটি উঠে গেছে সে যানে বাস্তবটা কতো কঠিন আর কীভাবে চলতে হয় ৷আরও একটি বিষয় ভালো লাগলো মা মা তো পৃথিবীর সেরা সুখ যে তার সন্তানের জন্য সবসময় চিন্তা করে ৷তার মায়ের জন্য যে নাহিদ তার জীবনকে রঙিন করতে পারছে এটাই সবচেয়ে সুখের ৷

আর হে শুন্য পকেটে ভালবাসা থাকে না ভেবেই নাহিদ কাউকে ভালবাসতে পারি নি ৷যদিও বয়সটা তা মানে নি ৷জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন ৷আপনার ব্লগটি খুব ভালো লাগলো ৷

 2 years ago 

ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। আমিও চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে এই সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 2 years ago 

আপু আপনারা শেষ থেকে শুরুর গল্পটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। অনেকটা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে আমার। ভালোবাসা পূর্ণতা পায় গল্পগুলো খুব ভালো লাগে। আর যেসব গল্প অথবা সিনেমাতে ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না তখন অনেকটাই খারাপ লাগে। আপনার গল্পটা পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর হলে গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে এবং হৃদয় ছুঁয়ে গেছে দেখে ভালো লাগলো। ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পায় তখন গল্পগুলো আরো বেশি সুন্দর হয়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

 2 years ago 

এবার সুপ্তি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল আমার কথা না হয় পরে জানলে এবার বল আমাদের ভাবি কোথায়? ভাবি নিশ্চয়ই দেখতে অনেক সুন্দর তাইনা নাহিদ?

আপু অনেক সুন্দর গল্প লিখেছেন।তো আমার মনে হচ্ছে নাহিদ ও কোনো বিয়ে না করে এতদিন অপেক্ষায় ছিল।তাছাড়া শেষমেশ এত বছর পরও তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল দেখে ভালো লাগলো।চাইলে শেষ থেকে ও শুরু করা যায়।ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু দুজন দুজনার প্রতীক্ষায় ছিল। তাই তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59575.00
ETH 2607.14
USDT 1.00
SBD 2.43