গল্প-মায়া||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। যদিও কয়েকদিন থেকে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে। তাই সেভাবে কোন কাজ করতে পারছি না। তবুও আজকে ভাবলাম একটি গল্প লিখে সবার মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
মায়া:
![IMG_20240213_171331.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmbMrsLqZhJEJEKJfvoUNzWTZVMVQbz7ULDcUp3fQu5Gb5/IMG_20240213_171331.jpg)
আবির আজও মায়াকে ভুলতে পারেনি। মায়া যে তার হৃদয়ে মিশে আছে। আবির চাইলেও মায়ার সেই অদ্ভুত মায়া থেকে কখনোই বের হয়ে আসতে পারবে না। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা কখনো ভুলতে পারবে না। কারণ মায়া যে তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন ছিল। হয়তো মায়াকে ছাড়া আজও বেঁচে আছে আবির। কিন্তু ভালো নেই সে। মায়া আর আবির ছোটবেলার খেলার সাথী। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই বোন। মায়া ছোটবেলা থেকেই আবিরকে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু আবির কখনো তা বুঝতেই পারত না। ছোট পাগলি মেয়েটা কখন যে আবিরকে এতটা ভালোবেসেছিল সেটা কেউ বুঝতেই পারেনি। মেয়েটা সারাক্ষণ আবিরের পিছে লেগেই থাকতো। আবিরের সাথে ঝগড়া খুনসুটি সবকিছুতে মেতে থাকত মায়া। মাঝে মাঝে আবির বলতো তোর যেদিন বিয়ে হয়ে যাবে সেদিন আমি তোর অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবো। আবিরের মুখে এই কথা শুনে মায়া হেসেছিল। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে অদ্ভুত এক কষ্ট লুকিয়ে ছিল। কারণ মায়া সারা জীবন আবিরের পাশে থাকতে চেয়েছিল। হয়তো কখনো বলতে পারেনি। দেখতে দেখতে মায়া আর আবির দুজনেই বড় হয়ে গেল। আবির পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চলে গেল
অন্যদিকে মায়া সবে মাত্র দশম শ্রেণীতে উঠেছে। কিশোরী মনে আবিরের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিল সে। আবিরের চলে যাওয়া মায়াকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল। আবির মাঝে মাঝেই মায়ার সাথে ফোনে কথা বলতো। আর বলতো এই পাগলি ভালো করে পড়াশোনা করিস। আর দুষ্টুমিটা না হয় একটু কম করেই করিস। আবেদনের মুখ থেকে পাগলি নামটা শুনে মায়ার ভীষণ ভালো লাগতো। আবিরের সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতো মায়া। কিন্তু আবির কি মনে করবে এই কথা ভেবে কখনোই মায়া আবিরকে ফোন করতো না। আবির যখন তার মায়ের সাথে কিংবা বাবার সাথে কথা বলতো তখন মায়া আড়াল থেকে আবিরের কথা শুনতো। আর প্রতীক্ষায় থাকতো হয়তো আবির দ্রুতই গ্রামে ফিরে আসবে। দেখতে দেখতে কেটে গেল দুটি বছর। এরই মাঝে মায়া স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। মায়ার বাবা প্রথমে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করাতে চাননি। এরপর মায়ার মন খারাপের কাছে হার মেনেছিলেন তিনি। অবশেষে মায়া কলেজে ভর্তি হল।
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও কিছুদিন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মায়া যখন কলেজে উঠলো তখন মায়ার সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেল। মায়ার মায়াবী চোখ আর পাগল করা হাসি আবিরের ভীষণ ভালো লাগলো। কিন্তু কেন জানি মায়া নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আবিরের সাথে কথা বলতেও কেন জানি লজ্জা পায় সে। যখন আবির বাড়ি আসে তখন মায়া আড়াল থেকে আবিরকে দেখে। কাছে এসে কখনো কথা বলতে চায় না। আবির বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু কিছু বলতে পারেনি। পাগলিটা যদি সবাইকে সবকিছু বলে দেয় তাইতো আবির নিজের ভালোবাসার কথাটা মায়াকে বলতে পারেনি। আবির আবারও ঢাকায় ফিরে গেল। ঢাকায় আবিরের যেন সময় কাটছিল না। বারবার মায়ার সেই মায়াবী মুখটা মনে পড়ছিল আবিরের। কয়েকদিন পরে আবির আবারও গ্রামে ফিরে গেল। এবার সে ভেবে নিয়েছিল মায়াকে তার মনের কথা বলবেই বলবে। তাইতো সে মায়ার জন্য একটি চিঠি লিখল। কিন্তু মায়াকে কিছুই বলতে পারল না। কারণ বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো মায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে ভালো চাকরি করে। বাড়ির সবাই অনেক খুশি। সবার খুশি দেখে আবির কেন জানি আর নিজের ভালোবাসার কথাটা বলতে পারল না। এমনকি চিঠিটাও মায়াকে দিতে পারল না।
মায়াকে কিছু না জানিয়ে আবির শহরে ফিরে গেলো। অন্যদিকে আবিরের ঘর থেকে মায়া সেই চিঠিটা পেয়েছিল। আবির যখন শহরে চলে গিয়েছিল তখন মায়া তার ঘরে গিয়েছিলো। বিছানার উপর পড়ে থাকা আবিরের শার্টটি নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল। মায়া বুঝতে পেরেছিল হয়তো কখনো তার আবিরকে পাওয়া হবে না। এরপর হঠাৎ করেই মায়া বুঝতে পারল আবিরের শার্টের পকেটে কিছু একটা আছে। যখন সে দেখলো আবির মায়ার জন্য চিঠি লিখেছিল। চিঠি পড়ে মায়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। কারণ সে ছোটবেলা থেকেই আবিরকে ভালোবাসে। আর অন্যদিকে আবিরও তাকে ভালোবাসে। কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছে না। মায়া বুঝতে পারছিল না কি করবে। অন্যদিকে মায়ার বিয়ের সব আয়োজন হয়ে গেছে। সবার মুখে আনন্দের হাসি। মায়া আবিরকে ফোন করে আর বলে সে তার কাছে চলে যেতে চায়। কিন্তু আবির পরিবারের কথা ভেবে মায়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তখন আবির ভীষণ কান্না করে। কারণ সে সারা জীবনের জন্য তার মায়াকে হারাতে চলেছে। দুজনের কান্নায় চারপাশ যেন ভারী হয়ে উঠছিল। এমন সময় হাড়াল থেকে মায়ার মা সবটা শুনে ফেলে। কিন্তু উনার কিছুই করার থাকেনা। কারণ মায়ার বাবা চাচারা ভীষণ রাগী। এই সময় এই কথা বলতে গেলে কখনোই মেনে নেবেন না।
মায়া সেদিন সারাদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিল। অনেকেই ডাকাডাকি করেছিল। কিন্তু ঘরের দরজা খুলেনি মায়া। দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নেয়ে এলো তবুও মায়া নিশ্চুপ। তার মুখে কোন কথা নেই। মনে হচ্ছে যেন কোন মৃত মানুষ বিয়ে করতে চলেছে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। আবিরও বাড়ি ফিরেছে। আবির মায়ার দিকে তাকাতেই পারছেনা। কনে বেশে বসে আছে মায়া। মনে হচ্ছে যেন প্রাণহীন নিথর দেহ লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে। মায়ার ভিতর কোন অনুভূতি নেই। হঠাৎ করে মায়া ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। বিয়ের আয়োজন আর অনেক লোকের ভিড়ে কেউ হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করতেই পারেনি। হঠাৎ করে মায়ার মা যখন মায়ার ঘরে এলো তখন দেখল দরজাটা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা খুলেনি মায়া। এরপর দরজা ভেঙে যখন ভেতরে গেল তখন দেখতে পেল গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করেছে মায়া। দড়ি কেটে দিয়েও তাকে বাচাঁনো গেলোনা। মেয়েটা বড্ড অভিমান করেছিল আবিরের উপর। মায়ার নিথর দেহটা পড়ে আছে মাটিতে। আর আবিরের চোখে মুখে বিষন্নতা। হয়তো আবির কাঁদতে ভুলে গেছে। কেন জানি মায়ার পানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবির। মুখে তার কোন কথা নেই। কারন সে তার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছে তার মায়াকে।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আপু খুব সুন্দর একটি গল্প লিখলেন মায়া। গল্পটির নামটিও বেশ সুন্দর।আবার তার ভিতরে লেখাগুলো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। আমরা জানি ডাক্তার বা উকিলের কাছে কোন কথা গোপন করতে নাই। ঠিক এরকমভাবে কারো মনে কারো জন্য ভালোবাসা থাকলে সাথে সাথে বলে দেয়া দরকার। আবির আর মায়াও এত কাছে থেকেও অনেক ভুল করেছে তারা দুজন দুজনকে মনের কথা না জানিয়ে।মায়া আবির দুজন দুজনকে এতটাই ভালোবাসতো। কেউ জানতো না। কিন্তু যখন মায়া আবিরের পকেট থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলো তখন করার কিছু ছিল না।আর মায়াও আবিরের মায়া ও ভালোবাসা রেখে অন্য কারো সাথে সংসার করা সম্ভব হবে না।আসলে এটাই নিয়ম কেউ চলে যায় আর মায়াটুকু রেখে যায়। ঠিক তেমনি মায়ার সবটুকু মায়া আবিরকে দিয়ে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে।ধন্যবাদ আপু আপনাকে।খুব সুন্দর করে একটি গল্প লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমার লিখা গল্প আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। মাঝে মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না আপু।
আসলে প্রকৃত ভালবাসার মিলন না হলে কষ্টের সীমা থাকে না। মায়া এবং আবির একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসতো, তাই আবিরের উচিত ছিলো মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে রাখা। পরবর্তীতে পরিবার হয়তোবা এমনিতেই সবকিছু মেনে নিতো। একজন মানুষ কতোটা ভালবাসলে নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে, সেটা সবারই জানা। দারুণ লিখেছেন আপু। গল্পটি পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো। যাইহোক বরাবরের মতো আজকেও চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া প্রকৃত ভালোবাসার মিলন না হলে সত্যি অনেক খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে পরিবার পরিস্থিতি অনেক কিছু বদলে দেয়।
সবসময়ই আপনি খুব সুন্দর কিছু গল্প শেয়ার করে আসছেন। আজকের এই গল্পটিও অনেক সুন্দর হয়েছে৷ আসলে প্রকৃত ভালোবাসার যদি মিল না হয় তাহলে অনেক কষ্ট হয়। এখানে মায়া এবং আবির দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে। তাই আবির চাইলে মায়াকে নিজের কাছে রাখতে পারত। পরবর্তী সময়ে পরিবার অবশ্যই তা মেনে নিত। অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আমি চেষ্টা করেছি গল্প লেখার। সত্যি ভাইয়া মাঝে মাঝে প্রকিত ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভালোবাসা সুন্দর যদি একে অপরকে নিজের করে পায়। মায়া এবং আবির দুজনে দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসতো তবে কখনো কেউ কাউকে বলতে পারেনি। শেষ পর্যায়ে মায়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল যার কারণে আবিরও কিছু করতে পারেনি। আর মায়া যদিও তাকে বলেছিল আবিরের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু আবির তা করেনি। আজ বিয়ের দিন মায়া নিজেকে নিজেই শেষ করে দিয়েছিল গলায় দড়ি দিয়ে এটা দেখে খুব খারাপ লেগেছে।
মাঝে মাঝে ভালোবাসা প্রকাশ করা হয় না। কিংবা ভালোবাসা প্রকাশ করার ভাষা থাকেনা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।