জেনারেল রাইটিং- অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে অনেক ভালো লাগে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টপিক নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। আজকে আমি অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিয়ে কিছু কথা লিখতে চাই। আশা করছি আমার লেখাগুলো সবার ভালো লাগবে।
অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ:
আজকে হঠাৎ করে সকালবেলায় যখন ঘরের কাজ করছিলাম তখন গেটের কাছে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। গেট খুলে দেখি একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম তাকে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছিল। কারণ এভাবে কখনো কাছ থেকে তাদেরকে দেখার সুযোগ হয়নি। আমি যখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার কাছে কিছু সাহায্য চাইল। আমি তাকে কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতেই পারছিলাম না। এরপর বললাম আপনি একটু দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি। সে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রইলো আর ফেলফেলিয়ে তাকিয়ে রইল।
এরপর যখন আমি তার হাতে টাকা দিলাম সে অনেক খুশি হয়ে গেল। আর বলল বোন আপনার নাম কি আর বাবার বাসা কোথায়? আমিও তার কথার উত্তর দিলাম। এরপর আমিও জানতে চাইলাম আপনার বাসা কোথায়? সে বলল এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। তিনি বেশ হাসি খুশি ভাবে আমার সাথে কথা বলল। আসলে এসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সাথে খুব একটা কথা বলার সুযোগ কখনো হয়নি। আজকে যেহেতু বাসায় এই সুযোগটা হয়েছে তাই আমিও কেন জানি উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আসলে এসব মানুষদের সম্পর্কে জানতে আমার ভালো লাগে। আমার সাথে কথা বলার পর উনার চোখ যেন পানিতে ছলছল করছিল। তিনি যাওয়ার সময় আমাকে একটি কথাই বলেছিল যে আমাদেরকে কেউ এভাবে আপনি করে সম্বোধন করে না। কিংবা ভালোভাবে কথাও বলে না। আসলে আমি কখনোই এসব মানুষদেরকে ছোট করে দেখিনা। তাইতো আজকে যখন কথা বলার সুযোগ হয়েছে তখন ভালোভাবেই কথা বলেছি।
আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি। হয়তো তারাও কারো না কারো ভাই কিংবা তারাও কারো না কারো বোন। তাদেরও হয়তো ভাই, বোন, মা-বাবা আছে। হয়তো সবাই থেকেও আজ তাদের কেউ নেই। কারণ তারা সমাজের কাছে অবহেলিত। হয়তো তারা মাথা উঁচু করে বাঁচার মত সম্মান পায় না। তবে নিজের আত্মীয়-স্বজন সবার থেকে যখন তারা অসম্মানিত হয় এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই থাকে না। আমি যখন ওই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষটির সাথে কথা বলছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম যে তিনি তার বাবা মাকে অনেক মিস করেন। তার পরিবারের কাছে থাকতে চান। তার পরিবারের ভালোবাসায় সিক্ত হতে চান। কিন্তু সমাজের সাথে সাথে পরিবারও তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাইতো তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর সাহায্যের হাত বাড়ায়।
হয়তো তাদের জীবনটাও সুন্দর হতে পারতো। হয়তো তারাও মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারতো। যদি আমরা তাদেরকে যোগ্য সম্মান দিতাম তাহলে আমাদের চারপাশের সেইসব মানুষগুলো সুন্দর একটি জীবন পেতে পারতো। সবাই যদি তাদেরকে যোগ্য সম্মান দিতো তারাও হয়তো একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারত। মানুষ হিসেবে তারাও সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারতো। হয়তো তারাও স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করতে পারতো। মাঝে মাঝে মনে হয় সমাজ সংসার নিজেই কিছু নিয়ম সৃষ্টি করেছে। আর সেই নিয়মের বেড়াজালে আমরা সবাই আটকে যাই। আর তৃতীয় লিঙ্গের সেই মানুষগুলোকে আমরা দূরে সরিয়ে দেই। সেই মানুষটির কথা কখনো আমরা ভেবে দেখিনা। নিজের আপন মানুষগুলোর থেকে দূরে সরে থাকতে তাদের কতটা কষ্ট হয় সেই কথা হয়তো কেউ ভেবে দেখে না। তাদেরও যে অনুভূতি আছে সেটা হয়তো কেউ বুঝতেই পারে না। তারাও যে কষ্ট পায় কিংবা প্রিয়জনের জন্য চোখের পানি ফেলে এটা কেউ বুঝতেও চায় না।
আমার কেন জানি সেইসব মানুষগুলোর জন্য ভীষণ কষ্ট হয়। কারণ তারা যদি স্বাভাবিক মানুষ হতো তাহলে হয়তো আমরা তাদেরকে এভাবে অবহেলা করতাম না। বিশেষ করে পরিবার থেকে যখন সেই মানুষগুলো বিতাড়িত হয় তখন সেই মানুষটির জীবন অনেক বেশি কষ্টের হয়ে যায়। আমরা সবাই পরিবার নিয়ে বাঁচি। একা একা বেঁচে থাকাটা যেমন কঠিন তেমনি জীবনের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয়। হয়তো সময়ের সাথে সাথে তারাও চোখের জল ফেলা বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা কষ্ট পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সেই সব মানুষগুলোও যে হৃদয় আছে এই কথাটি আমরা বুঝতে চাই না। তারাও যে কষ্ট পায় এই অনুভূতি আমাদের মধ্যে জন্মায় না। আমাদের একটু সহানুভূতি আর একটু ভালোবাসায় হয়তো তাদেরকে ভালো রাখতে পারে। জানিনা আমার এই লেখাগুলো আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আমি নিজের অনুভূতি থেকেই এই কথাগুলো লিখার চেষ্টা করেছি।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
মুগ্ধ হয়ে গেলাম আপু আপনার লেখা গুলো পড়ে। আসলে আমাদের মধ্যে মানবিকতা নেই বললেই চলে তাই তো আমরা ওদের কথা তেমন করে ভাবতে পারি না। আমরা নিজেদের কে সৃষ্টির সেরা জীব বলে দাবী করি। কিন্তু আমরা কি সত্যিকার অর্থে আমাদের সকল দায়িত্ব গুলো পালন করতে পারি। জাস্ট অসাধারন ছিল আপু।
খুব সুন্দর একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট শেয়ার করেছেন আপু। আর একদম ঠিক বলেছেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আমাদের সমাজে অবহেলিত। অথচ এই মানুষ গুলো আমাদের কারো না কারো সন্তান। এদের জন্মে তাদের হাত নেই। অথচ মানুষ হিসেবে অমারা অনেকেই তাদের অবজ্ঞা করি, এড়িয়ে চলি।আমাদের সবার উচিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি্র বদল।গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সত্যি কথা বলতে আপু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে দেখে আমি আগে খুব ভয় পেতাম। তবে আমার যখন বাবু হয় তখন তারা আমাদের কাছে টাকা নিতে এসেছিলেন এবং খুবই কাছ থেকে আমি তাদেরকে দেখেছি। তারা খুবই মিশুক এবং ভাল মনের মানুষ। আমরা না বুঝে তাদেরকে কত গালিগালাজ করি। আপনার ব্লগটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
আপনার পোস্টটা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। বর্তমান সমাজে এমন মানুষ গুলো আসলেই অবহেলিত। কারণ মানুষ সামাজিকভাবে তাদেরকে মর্যাদা দিতে চায় না। এজন্য তারা সবার কাছেই সাহায্যের হাত বাড়ায়। তাদের সাধারণ মানুষের মতো বাঁচার অধিকার দেয়া হয় না বলেই তারা সবার কাছে হাত পাতে। আমি কয়েকবারই এদের সম্মুখীন হয়েছি এবং সরাসরি দেখা হয়েছে। তবে তাদের জন্য যদি সবকিছুর সুব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তোবা তারা আজকে অবহেলিত থাকতো না।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেদের কেউ সম্মান করে না। সত্যি এদের কেউ সম্মান করলে এরা অনেক আনন্দ পায়।আর যদি তাদের সাথে একটু ভালো ব্যবহার করা যায় তাহলে তারা মন প্রাণ ভরে দোয়া করে।আপনার পোস্ট থেকে আমাদের সবারই শিক্ষা নেওয়া অবশ্যই উচিত। ধন্যবাদ আপু।
আসলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কেউ এভাবে চিন্তা করে না। তারা মানুষ হয়েও মানবেতর জীবন-যাপন করে। সমাজ মুখে মুখে বুলি ছুড়লেও এদের সঠিক মূল্যায়ন করে না বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। যাইহোক আপনি আপনার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছেন জেনে ভালো লাগলো। তবে আমাদের সবার উচিত মানসিকতা পরিবর্তন করা। ধন্যবাদ আপু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য।
এই মানুষ গুলো আসলেই ভীষণ অবহেলিত ৷ আসলে আমরাই এদের অবেহলা করি ৷ আমরাই ভুলে যাই তারাও মানুষ ৷ তাদের জীবন আমাদের মতো সুন্দর হতে পারতো , আমাদের ভবনা চিন্তা আর দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দর এবং ঠিক থাকলে ৷ যাই হোক , মানুষ হয়ে মানুষকে সম্মান করা উচিত ৷ আপনি এবারই প্রথম এই মানুষ গুলো সাথে কথা বলেছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো ৷ ধন্যবাদ আপু
আসলেই এই ধরনের মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা একেবারেই উচিত না। সবারই উচিত তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদেরকে সম্মান দেওয়া। এবং কি নিজেদের মতো করে তাদেরকেউ দেখা উচিত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষটা আপনার বাসায় আসার পর, আপনি তাকে সাহায্য করেছিলেন এবং তার সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করার পর সেও অনেক খুশি হয়েছিল দেখে ভালো লাগলো। আসলে সেই মানুষগুলোর ইচ্ছে করে ফ্যামিলির সাথে থাকতে, ভালোভাবে জীবন অতিবাহিত করতে। কিন্তু এরকম একটা সমাজ, এরকম একটা বিশ্ব তাদেরকে সেই সুযোগটা দেয়নি। আপনার লেখাটা সত্যি মন ছুঁয়ে গিয়েছে।
আপনি আজকে অনেক সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেটার মধ্যে শিক্ষা নেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সাথে বেশিরভাগ মানুষই খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু এটা করা কারো উচিত হয় না। সবার উচিত ভালোভাবে তাদের সাথে কথা বলা। কারন তারাও তো আমাদের মতই মানুষ, পশুতো না। মানুষ তো পশুর সাথেও ভালো ব্যবহার করে। সেই মানুষগুলোর সাথে ভালোভাবে কথা বললে বোঝা যায় তাদের জীবনের বিষয়ে। আমি মনে করি সেই মানুষগুলোর জীবন কথা শুনলে প্রত্যেকটা মানুষের চোখে জল চলে আসবে। কারণ তারা না থাকতে পারে ফ্যামিলির সাথে থাকতে, না থাকতে পারে রাস্তাঘাটে সম্মান নিয়ে। প্রত্যেকটা মানুষ তাদেরকে অবহেলার চোখেই দেখে।
এই মানুষদের সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করা উচিত না। এই মানুষরাও সাধারণ মানুষের মত বেঁচে থাকতে চায়। তাদের জীবনের সবকিছু সাধারণ মানুষদের সাথে একসাথে সম্পন্ন করতে চায়৷ তবে বিভিন্ন কারণবশত এই সমাজ তাদেরকে সুযোগ দেয় না এবং এই সুযোগ থেকে তারা প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হয়৷ তবে এই মানুষগুলো যখন আপনার বাসায় এসেছিল আপনি তাদের সাথে খুব ভালোভাবেই কথা বলেছিলেন এবং এর ফলে তারা অনেক খুশি হয়েছিল শুনে আমারও অনেক ভালো লাগলো৷ অনেক ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷