গল্প-আমার অস্তিত্ব||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে খুবই ভালো লাগে। তাই তো সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। তেমনি আজকে একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার কাছে ভালো লাগবে।


আমার অস্তিত্ব:

woman-g7527cbbcd_1280.jpg

Source


শ্রাবণী আর সবুজের মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক যেদিন পূর্ণতো পেল সেদিন দুজনেই ভীষণ খুশি ছিল। অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে দুটি মানুষ এক হতে পেরেছিল। বাবা-মায়ের অমতে গিয়েও শ্রাবণী সবুজের সাথে ঘর বেঁধেছিল। অনেক স্বপ্ন, আশা নিয়ে শ্রাবণী নিজের ঘর ছেড়েছিল। সে অনেক সুখ খুঁজে নিয়েছিল সবুজের ওই ছোট্ট কুড়েঘরে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। শ্রাবণী হয়তো বিলাসিতায় বড় হয়নি। তবে বাবা-মায়ের বেশ আদরের ছিল সে। বাবা মায়ের আদর আর সবার ভালোবাসা সবকিছু ছেড়ে সবুজের হাত ধরে ছোট্ট এই ঘরে বাসা বেঁধেছিল শ্রাবণী। তাদের সুখের এই সংসার যেন পূর্ণতা পেয়েছিল। তাদের দুজনের ভালোবাসা দুটি হৃদয় কে শীতল করেছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো।


সময় যত যেতে লাগলো তাদের এই ছোট্ট সংসারে অভাব নামক শব্দটি যেন আরও বেশি আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরল। দুজনে মিলে কিছুতেই যেন সুখ নামক শব্দটিকে আর ধরে রাখতে পারছিল না। সবুজ দিনে দিনে বদলে যেতে লাগলো। শ্রাবণীর উপর মাঝে মাঝেই অত্যাচার করতে লাগলো। শ্রাবণী ভীষণ কষ্ট পেত। তবুও আড়ালে গিয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদত। হয়তো সেই কান্নার শব্দ সবুজের কান পর্যন্ত যেত। কখনো বা সেই শব্দতেও সে বিরক্ত হত। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল শ্রাবণীর দিনগুলো। অন্যদিকে শ্রাবণীর পরিবার অনেকবার শ্রাবণীকে নিতে এসেছিল। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে কিছুতেই সে যেতে চায়নি। অনেক অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে শ্রাবণী তার প্রিয় মানুষটার সাথেই বাকিটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলো।


দেখতে দেখতে সবুজের একটি ছোট্ট চাকরি হয়ে গেল। এখন আর তাদের সংসারে অভাব নামক শব্দটি নেই। কিন্তু সুখ নামক শব্দটি যে কখন হারিয়ে গেছে তা তারা বুঝতেই পারেনি। শ্রাবণী যেন সবুজের কাছে শুধুই একটি অবহেলার নাম। অবহেলার চাদরে মোড়ানো শ্রাবণী যেন নিজেকে আর বাঁচিয়ে রাখতে চায় না। তবুও কেন জানি কোন মিথ্যে আশা নিয়ে বেঁচে আছে শ্রাবণী। অপমান, অত্যাচার আর কথার আঘাত শ্রাবণীকে ক্ষতবিক্ষত করে দিত। সেই কথার আঘাত সইতে না পেরে শ্রাবণী অনেকবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। কারণ সে তার প্রিয় মানুষটিকে রেখে যেতে পারেনি। শ্রাবণী সবকিছুই মেনে নিয়েছিল। নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিল। নিজের আপন মানুষকে বদলে যেতে দেখে বুঝে গিয়েছিল তার কপালে সুখ শুধু ক্ষণিকের। হাসিমুখে সব ব্যথা সহ্য করে নিতে চেয়েছিল সে। শ্রাবণী ভেবেছিল কোন একদিন হয়তো সবুজ আবারো আগের মত হয়ে যাবে। শ্রাবণী হয়তো কল্পনাতেও খুঁজে পেলে সেই প্রিয় সবুজকে। যার হাত ধরে সে ঘর ছেড়েছিল।


কিন্তু সময় বড় বেইমান। সময়ের সাথে সাথে সবুজ যেমন বদলে গেছে তেমনি তাদের সম্পর্কের মাঝেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আজকাল অনেক রাত করে সবুজ বাড়ি ফিরে। হয়তো অনেক সময় বাড়ি ফেরেনা। কিন্তু কখনো শ্রাবণী কে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে না সে। এরপর শ্রাবণীর দুঃখ ভরা জীবনে খুশির সংবাদ আসে। শ্রাবণী জানতে পারে সে মা হতে চলেছে। সে অপেক্ষায় থাকে সবুজকে সেই খুশির সংবাদ দিবে বলে। শ্রাবণী মনের মাঝে অনেক আনন্দ নিয়ে সবুজের প্রতীক্ষা করেছিল। কিন্তু সেদিনও সবুজ আসেনি। হয়তো প্রতীক্ষার প্রহর অনেক বেশি কঠিন। তবুও শ্রাবণী প্রতীক্ষায় ছিল। দুদিন পর সবুজ এলো। তার সাথে একটি মেয়েও এসেছে। লাল টুকটুকে শাড়ি পরা মেয়েটিকে দেখতে ভারী মিষ্টি। শ্রাবণী নিরব দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছিল। শ্রাবণী কেন জানি কোন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল। এমন সময় সবুজ বলল এই মেয়েটি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয়। তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল সে। তাইতো সে বাসায় ফিরতে পারেনি। সরল মনে শ্রাবণী যেন সবটাই মেনে নিয়েছিল।


এরপর মাঝরাতে যখন শ্রাবণীর ঘুম ভেঙে যায় খন সে দেখতে পায় সবুজ তার পাশে নেই। মিটি মিটি পায়ে হেঁটে গিয়ে শ্রাবণী সবুজকে খুঁজতে থাকে। শ্রাবণী যখন সেই মেয়েটির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তখন মেয়েটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। আর সবুজ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। বলছিল সে কিছুতেই এই সময় এই বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে পারতো না। তাইতো বাচ্চাটির এবসন করতে বাধ্য হয়েছে সে। এই কথাগুলো শুনে শ্রাবণীর আর কিছুই বোঝার বাকি রইল না। শ্রাবণী মা হতে চলেছে সেই খবরটি আর সবুজকে দেওয়া হলো না। সেই রাতেই শ্রাবণী সবুজের বাসা থেকে বেরিয়ে গেছিল। সব সম্পর্কের বন্ধন ছিন্ন করে শ্রাবণী নিজের অস্তিত্বকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। শ্রাবণী মেনে নিয়েছিল নিজের ভাগ্যকে। শ্রাবণী বুঝে গেছিল তার মাঝে বেড়ে ওঠা তার অস্তিত্বই তাকে একদিন ভালো রাখবে। তাই তো সে মিথ্যে সম্পর্কের মায়াজাল থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল। সবুজ জানতেও পারলো না তার অনাগত সন্তানের কথা। হয়তো বিধাতা এভাবেই তাকে শাস্তি দিয়েছেন। একদিকে তার ভালোবাসার মানুষটি তার জীবন থেকে চলে গেল অন্যদিকে তাদের সন্তানের কথা সবুজ কখনোই জানতে পারলো না। আর নিজের অস্তিত্ব নিয়ে অনেক দূরে হারিয়ে গেল শ্রাবন্তী।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে প্রথম দিকে অনেক ভালো লেগেছিল। তবে পরবর্তীতে শ্রাবন্তীর জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে শ্রাবন্তীর মত এমন অনেক শ্রাবন্তীকে বাধ্য হয়ে ঘর ছাড়তে হয়। তবে সবুজ তার অনাগত সন্তানের কথা জানতে পারল না। আর এদিকে শ্রাবন্তী তার অস্তিত্ব নিয়ে অনেক দূরে চলে গেল, অস্তিত্ব নিয়েই বেঁচে থাকবে।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু হয়তো শ্রাবণী তার অস্তিত্ব নিয়ে চিরটা কাল বেঁচে থাকবে। আর নিজের অস্তিত্বকে আগলে রাখবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

জীবন চলার পথে বাঁধা আসতেই পারে তাই বলে থেমে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই, যেখানে বাঁধা আসবে সেখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে।আর তাই শ্রাবণী নিজের অস্তিত্ব কে বিলীন রা করে নতুন করে সবকিছু শুরু করার জন্যই সেদিন রাতে সবুজের ঘর থেকে অজানা উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছিলো।এরকম কত ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে যাচ্ছে কত মেয়ে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে মুখ বুজে স্বামীর অন্যায় গুলো সহ্য করে দিনের পর দিন সংসার করে যাচ্ছে।আমার অস্তিত্ব গল্প টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপু।অসাধারণ লেখনী আপনার।অসম্ভব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপু।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু জীবনে চলার পথে অনেক বাধা আসে। তাই বলে যদি কেউ থেমে যায় তাহলে সবচেয়ে বড় ভুল করবে। শ্রাবনীয় নিজের অনাগত সন্তানকে নিয়ে হয়তো ভালো থাকার চেষ্টা করবে। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আসলে কিছু কিছু ভালোবাসা এরকমই হয়। ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার সত্ত্বেও অনেক মানুষ সুখে থাকতে পারে না। হয়তো এটা তাদের দুর্ভাগ্য। সবুজ তার সন্তানের কথাও জানতে পারেনি। শ্রাবণী অনেক ধৈর্য ধরেছিল কিন্তু সে সবশেষে চলে গিয়েছিল। আসলে এরকম সম্পর্ক গুলো অনেক সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। অনেক খারাপ লেগেছে আপনার সম্পূর্ণ গল্পটা পড়ে।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু কিছু কিছু ভালোবাসা এমনই হয়। ভালোবাসার মানুষটি সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। তাই তো শ্রাবণী বাধ্য হয়ে সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসেছিল। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপনার গল্পটি পড়ে প্রথমে অনেক ভালোই লাগলো। শ্রাবন্তী তার ভালোবাসা মানুষের জন্য ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। অথচ সেই সবুজের ঘরে সেই সুখী হতে পারে নাই। এবং শ্রাবন্তীর গর্ভের বাচ্চার কথা বলে নাই সবুজকে। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসার ঘর এমন হয়ে যায়। সত্যি আপনার পোস্টটি পরের দিকে পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা গুলো গল্পের ভাষায় ফুটে ওঠে। শ্রাবণী অনেক ভালোবেসেছিল তার প্রিয়জনকে। কিন্তু শেষে এসে ধোকা খেয়ে গেল। তাই তো নিজের অস্তিত্ব নিয়ে নিজের রাস্তায় এগিয়ে গেছে।

 last year 

কিছু ভালোবাসার মানুষ আছে এগুলো সময় পুরিয়ে গেলে তখন আপনজনটাকে আর চিনে না। যেমন হয়েছে শ্রাবন্তীর বেলা। আসলে অতিরিক্ত ভালবাসলে ভালবাসার মূল্য পাওয়া যায় না তখন। যে সামন্তী তার প্রিয় মা বাবা পরিবারকে ছেড়ে সবুজের কাছে আসলো। সেই প্রিয় সবুজ টি এক সময় তার পর হয়ে গেল। অথচ শ্রাবন্তীর গর্ভে তার বাচ্চা তাও সে জানতে পারল না। এরকম গল্প খুবই কষ্টদায়ক।

 last year 

গল্পের প্রথমদিকে খুব ভালো লেগেছিল পড়ে। কারণ শ্রাবণী সবুজকে বিয়ে করে বেশ সুখী ছিলো। সত্যিকারের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে সত্যিই খুব ভালো লাগে। তবে পরবর্তীতে সবুজের পরিবর্তনটা মেনে নিতে পারলাম না। একটি মেয়ে যখন পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে বাসা থেকে চলে আসে, তখন সেই মেয়ের সাথে এমন আচরণ করা মোটেই ঠিক না। কারণ একটি মেয়ে তখন সত্যিই অসহায় হয়ে যায়। যারা এমন নিকৃষ্ট কাজ করে, তাদের বিচার অবশ্যই নির্মমভাবে হয়ে থাকে। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62255.52
ETH 2449.42
USDT 1.00
SBD 2.63