অস্তিত্বে মিশে আছো তুমি||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই গল্প লিখি। আজকে একটি ভিন্ন ধরনের গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প আপনাদের ভালো লাগবে। যারা আমার লেখা গল্প নিয়মিত পড়েন তাদের কাছে অবশ্যই এই গল্পটি ভালো লাগবে।


অস্তিত্বে মিশে আছো তুমি:

pregnancy-g83393bac6_1920.jpg

Source


সাদিয়া ও রোমান একে অপরকে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই তারা একে অপরকে ভালোবাসে। সাদিয়া ও রোমান একই গ্রামে বড় হয়েছে। কখন যে ধীরে ধীরে তাদের মাঝে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে তা তারা বুঝতেই পারেনি। দিন যত যেতে লাগলো মনের ভালোবাসা ততই বেড়ে গেল। এভাবেই কেটে গেল আরও বেশ কিছুদিন। হঠাৎ করে রোমান সাদিয়াকে বলল তার চাকরি হয়েছে। তাই তাকে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে হবে। রোমানের চলে যাওয়ার কথা শুনে সাদিয়ার ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। কারণ রোমানকে ছাড়া একটি দিন কাটানো তার জন্য বেশ কষ্টের ছিল। রোমানকে না দেখে দিন কাটাতে সাদিয়ার বেশ কষ্ট হবে। তাইতো সে মন খারাপ করে বসে রইল। সাদিয়ার মন খারাপ দেখে রোমান বললো আর কিছুদিন অপেক্ষা কর। এরপর তুমি সারা জীবনের জন্য আমার কাছে চলে আসবে। এভাবেই কেটে গেল আরো কিছুদিন। নিয়মিত তাদের দুজনের মাঝে কথা হতো। সাদিয়া মাঝে মাঝে রোমানকে চিঠি লিখতো। রোমানও সাদিয়াকে চিঠি লিখতো। কারণ তারা মনে করতো চিঠিতে বেশি ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায়। প্রিয়জনের পাঠানো চিঠি বারবার পড়তে তাদের দুজনেরই ভালো লাগতো।


এবার তাদের মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক আরো বেশি পূর্ণতা পেতে চলল। দুজনের পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। সেই দিনটি তাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। কারণ তারা তাদের প্রিয় জনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। এভাবেই শুরু হল তাদের মিষ্টি দাম্পত্য জীবন। রোমান যেহেতু চাকরি করতো তাই তাকে কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের কর্মস্থলে চলে যেতে হল। ছুটি পেলেই রোমান বাড়ি চলে আসতো। এভাবেই কেটে গেল একটি বছর। হঠাৎ একদিন সাদিয়া রোমানকে বলল তুমি বাড়ি আসবে কবে? রোমান বললো আমি ছুটি পেলেই বাড়ি চলে যাব। সাদিয়া রোমানের অপেক্ষায় রইলো। দেখতে দেখতে সেই দিনটি ঘনিয়ে এলো। সাদিয়া তার প্রিয় মানুষটির আসার প্রতীক্ষায় ছিল। কারন সে তার প্রিয় মানুষটিকে একটি খুশির সংবাদ দিতে চেয়েছিল। সাদিয়া মা হতে চলেছে এটা এখনো রোমানকে জানায়নি। আসলে সে রোমানকে চমকে দিতে চেয়েছিল। অবশেষে রোমানের বাড়ি ফেরার দিন এলো। পুরোটা রাস্তা জুড়ে সাদিয়ার সাথে রোমান কথা বলছিল। আর কতক্ষণ সময় লাগবে এসব ভাবতে ভাবতে রোমান বাড়ি ফিরছিল। সাদিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রোমানের সময় কেটে যাচ্ছিল।


হঠাৎ করেই বিকট এক শব্দে সাদিয়া আতকে উঠলো। চারপাশে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল। কিন্তু রোমানের কোন কথা শোনা যাচ্ছিল না। সাদিয়া এই পরিস্থিতিতে একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বুঝতে পারছিল না কি করবে। সাদিয়া দিশেহারা হয়ে পরলো। রোমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু কোনভাবেই রোমানের সাথে কথা বলতে পারছিল না। এরপর টিভিতে দেখল রোমান যেই বাসে বাড়ি ফিরছিল সেই বাস এক্সিডেন্ট করেছে। অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আবার অনেকে আহত হয়েছে। রোমানের বাড়ির লোকজন সহ সাদিয়া সেখানে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল। যেহেতু তাদের বাড়ি থেকে সেখানে যাওয়ার দূরত্ব অনেক বেশি তাই সেখানে তাদের পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগলো। হসপিটালে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রোমানকে খুঁজে পাচ্ছি না তারা। এরপর যখন তাদেরকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হলো তখন তারা রোমানকে খুঁজতে লাগলো। সাদিয়া মর্গে যেতে চাইছিল না। কারণ সে বিশ্বাস করত তার সেই প্রিয় মানুষটি তাকে ছেড়ে যেতে পারে না।


সাদিয়ার পা যেন এগোচ্ছে না মর্গের দিকে। সাদিয়ার সাথে যারা এসেছিল তারা ধীরে ধীরে প্রত্যেকটি লাশ দেখার চেষ্টা করল এবং তাদের প্রিয় মানুষটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করলো। অবশেষে একটি লাশ দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। সাদিয়ার বুঝতে বাকি রইল না সেটা আর কেউ নয় তার প্রিয় মানুষটি। সাদিয়া সেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না। কারণ তার ভালোবাসার এই মানুষটির মৃতদেহ দেখার দৃশ্য সে মেনে নিতে পারবে না। এরপর নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে সে শেষবারের মতো তার প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য গেল। তার হাতে পড়া হাত ঘড়িটি দেখে সাদিয়া চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আসলে এই হাতঘড়িটি সে তাকে উপহার দিয়েছিল। যেদিন রোমান প্রথম চাকরিতে যায় সেদিন সাদিয়া এই ঘড়িটি উপহার দিয়েছিল। রোমানের লাশ দেখে সাদিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন সে বুঝতে পারল তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার চারপাশে সবাই আছে শুধু তার প্রিয় মানুষটি নেই। যাকে সে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।


সাদিয়া নিজের অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিল। সে মনে মনে বারবার বলছিল রোমান তুমি আমার অস্তিত্বে মিশে আছো। আর তোমার দেওয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার আমি আগলে রাখবো। আমার নিজের অস্তিত্ব দিয়ে তাকে আগলে রাখবো। হয়তো তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছো। তবে তোমার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার আমার জীবনে রয়ে গেছে। যাকে আমি সারা জীবন আগলে রাখবো। আমার এই সন্তানের মাঝেই আমি তোমার অস্তিত্ব খুঁজে নেব। এই সন্তানের মাঝে আমি নিজের সুখ খুঁজে নেব। সাদিয়া মনে মনে এই কথাগুলো ভাবছিল আর তার দুচোখ বেয়ে পানি পরছিল। আসলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হয়তো তার ছিল না। তবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিল। কারণ সে আর প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছে কিন্তু তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার সে হারাতে চায় না। তার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহারের মাঝেই সে তার ভালোবাসার অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কারণ তার ভালোবাসা সারা জীবন বেঁচে থাকবে অস্তিত্বের মাঝে। হয়তো রোমান ও তার ভালোবাসা তাদের সন্তানের মাঝে বেঁচে থাকবে।


হয়তো এভাবেই প্রিয় মানুষ হারিয়ে যায়। কিন্তু তাদের দেওয়া ভালোবাসার উপহার সারা জীবন রয়ে যায়। হয়তো সেই উপহারের মাঝে তাদের অস্তিত্ব লুকিয়ে থাকে। হয়তো সারা জীবন সেই প্রিয় মানুষটি আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকে। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

প্রথমে গল্পটি পড়ে বেশ মজা পেয়েছিলাম এবং নিজেকে অনেক ভালো লাগছিল।কারণ তাদের প্রেম সার্থক হয়েছিল বিয়ে পর্যন্ত এগোতে পেরেছে সেই জন্য।কিন্তু শেষের মুহূর্তের জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না পড়ে খুব খারাপ লাগলো।হয়তো বাকি জীবনটা তার অনাগত সন্তানকে নিয়ে কাটাবেন।ধন্যবাদ আপু।।

 2 years ago 

কিছু কিছু গল্প আছে হয়তো মাঝ পথেই থেমে যায়। হয়তো সার্থক জীবন পেয়েও সেই জীবন ধরে রাখতে পারি না আমরা। যাই হোক আমার লেখা গল্পটি পড়ে মন্তব্য করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে।

 2 years ago 

অসাধারণ একটু ছোট গল্প। প্রথমে মিলন তারপর ট্র‍্যাজেডি।তারপর প্রিয় মানুষের স্মৃতি কে আকড়ে বেচে থাকার প্রত্যয়।খুবই সুন্দর হয়েছে গল্পটি আপু।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

মাঝে মাঝে মিলনের মাঝেও ট্র‍্যাজেডি ঘটে। হয়তো প্রিয় মানুষটিকে আটকে রাখা যায় না। এভাবেই হয়তো হারিয়ে যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া মতামতের জন্য।

 2 years ago 

গল্পের প্রথম দিকে রোমান্টিকতায় ভরপুর। পড়তে বেশ ভালই লাগছিল কিন্তু শেষে এসে এভাবে কষ্ট পেতে হবে এটা আশা করিনি। যাকে ভালবেসে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে কাছে পেয়েছিল তাকে আর দীর্ঘদিন পাশে পেল না। সাদিয়া আর রোমানের ভালোবাসার গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

জ্বী ভাইয়া গল্পের প্রথম দিকে রোমান্টিকতায় ভরপুর।এরপর হয়তো কষ্ট এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। আসলে আমাদের জীবন এরকমই। হয়তো কখনো সুখ কখনো দুঃখ। তবুও সবকিছু মেনে নিয়েই চলতে হয়।

 2 years ago 

প্রতি বছর আমাদের দেশে অসংখ্য সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রান হারাচ্ছে প্রতিদিন আর এরকম গল্প তৈরি হয়ে চলেছে। যাক গল্পটা আমার অনেকটাই বাস্তবভিত্তিক মনে হয়েছে। ধন্যবাদ আপু গল্পটি ভাগ করে নেয়ার জন্য। সুন্দর ছিল লিখনী।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমাদের দেশে প্রতিবছর হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে। এর ফলে আমাদের প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে জীবনের বাস্তবতা আমাদেরকে মেনে নিতে হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া আমার মতামতের জন্য।

 2 years ago 

রোমান আর সাদিয়ার গল্পটি অনেক ভালো লেগেছে।বেশ রোমান্টিক ছিল কিন্তু শেষের দিকে এসে অনেক খারাপ লাগলো।রোমানের মৃত্যুর মাধ্যমে যে গল্পটি শেষ হবে সেটা ভাবতেও পারিনি।রোমান তার সন্তান কে দেখে যেতে পারলনা।ধন্যবাদ সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য আপু।

 2 years ago 

আসলে কিছু কিছু মৃত আছে যেগুলো আমরা মেনে নিতে পারি না। রোমানরা এভাবেই হয়তো হারিয়ে যায়। সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য তাদের হয়না।মতামতের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

গল্পের শুরু টা ছিল অনেক মিষ্টি মধুর, কিন্তু শেষের অংশ টা খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা যা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টদায়ক। রোমান সাদিয়ার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে তাই সে কখনো রোমন কে ভুলতে পারবে না, কিন্তু তার অনাগত সন্তানের কথা ভেবে সাদিয়াকে ভালো থাকতে হবে। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

আমাদের জীবন মানেই হয়তো এভাবেই সুখ দুঃখের খেলা। হৃদয়বিদারক ঘটনা গুলো সবসময় ঘটেছে।অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে সাদিয়াকে বেচেঁ থাকতে হবে।

 2 years ago 

আপু আপনার লিখা অস্তিত্বে মিশে আছো তুমি গল্প টা পড়তে পড়তে খুব আনন্দ লাগছিল। আসলে ভালোবাসা গুলো পূর্নতা পেলে খুব ভালোই লাগে। তবে শেষের অংশ টা পড়ে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে😭😭 শরীলের লোম গুলো কাটা দিয়ে উঠেছে আমার।ধন্যবাদ আপু আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমার লিখা গল্পটি পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। সত্যি আপু ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে ভালো লাগে। তবে সুখ সবার কপালে সয় না। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

 2 years ago 

আহারে! ভগবান এত নিষ্ঠুর কেনো হয়ে ওঠেন মাঝে মাঝে, রোমান আর সাদিয়া কি সারাজীবন সুখে কাটাতে পারত না তাদের ছোটো সোনাকে নিয়ে?এ ভাবে কেনো কেড়ে নিলো ভগবান রোমান কে? আমার চোখ টা সাময়িক ছলছল করে উঠলো। কারণ শুরু থেকে এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। গল্পের পটভূমি খুব সুন্দর রচনা করেছো বোন।

 2 years ago 

সৃষ্টিকর্তা মাঝে মাঝে নিষ্টুর হয়ে যায়। প্রিয় মানুষটিকে কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দেয়। আপু আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 2 years ago 
খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপু। সাদিয়া ও রোমান একে অন্যকে অনেক ভালবাসত। দুজনের বিয়ে হল। সাদিয়ার বাচ্চা হবে এই সারপ্রাইজ খবরটি ওমান কে দেবে বলে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রোমানের আর সেই সৌভাগ্য হয়নি। আপনার রোমান্টিক ট্রাজেডি গল্পটি পড়ে শেষ পর্যন্ত খারাপ লেগেছে। ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ আপু।
 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া ভাগ্য আমাদের সাথে বেইমানি করে।তাইতো সন্তানের কথা রোমান জানতেই পারলো না।সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 63968.11
ETH 2756.38
USDT 1.00
SBD 2.66