জেনারেল রাইটিং-বেকারত্ব ও অসহায় মানুষ||

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। তাই সময় পেলে নতুন নতুন টপিক নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। আসলে লিখতে ভালো লাগে বলেই লিখার চেষ্টা করি। আজকে আমি বেকারত্ব ও অসহায় মানুষদের নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার এই পোস্ট সবার ভালো লাগবে।


বেকারত্ব ও অসহায় মানুষ:

man-6567467_1280.jpg

Source


সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেকারত্ব যেন বেড়েই চলেছে। আর সেই সাথে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ গুলো। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাবা-মা একটি সন্তানকে লালন-পালন করে। নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে সন্তানকে পড়াশোনা করান। অথচ দিনশেষে যখন বেকারত্ব তার সন্তানটিকে মানসিকভাবে চিন্তিত করে তোলে তখন সেসব অসহায় বাবা-মায়ের হৃদয় কান্নায় ভেসে যায়। যাকে নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখেছিল সে হয়তো তাদের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ। কিংবা বাস্তবতার কষাঘাতে তার স্বপ্নগুলো যেন পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে গেছে। বেকারত্ব সমস্যা যেমন সময়ের সাথে বেড়ে যাচ্ছে তেমনি মানুষের মাঝে আত্মহত্যা করার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। আসলে হতাশা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর শেষ করে দেয় তাজা প্রাণ। অনেক স্বপ্ন বুকে লালন করে একটু আশা নিয়ে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে মধ্যবিত্ত মানুষ। হয়তো তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবতার কষাঘাতে আটকে যায়। কিংবা বাস্তবতার নির্মমতায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।


কোন এক দরিদ্র দিনমজুর পিতা স্বপ্ন দেখে তার ছেলে বড় হয়ে চাকরি করবে। সেদিন হয়তো তাকে আর কষ্ট করে কাজ করতে হবে না। তার ঘাম ঝরানো অর্থ দিয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছিল তার সোনার ছেলের ভবিষ্যৎ। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে দিনগুনতে গুনতে হয়তো ছেলেটির পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয়ে যায় জীবন যুদ্ধ। হয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ কিংবা সমাজের সাথে। চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছে ছুড়তে গিয়ে সেই দিনমজুর বাবার ছেলেটা কখন যে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে বাবা বুঝতেই পারেনি। একদিকে বাবার ঘাম ঝরানো অর্থ দিয়ে নিজের পড়াশোনা করা অন্যদিকে বাবার স্বপ্ন পূরণ সবকিছুই যখন ব্যর্থ হয়ে যায় সেই ছেলেটা হয়তো বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কারণ সে যে ব্যর্থ মানুষ। তার বাবার মুখে দুবেলা হাত তুলে দেওয়ার মত সামর্থ্য তার হয়নি। সার্টিফিকেট অর্জন করেও সে আজ বেকার। শুধু হতাশা আর গ্লানি নিয়েই হয়তো বেঁচে থাকতে হবে তাকে।


কোন এক অসহায় মায়ের সন্তান হয়তো উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছে নামকরা কোন ইউনিভার্সিটিতে। মা এ বাড়ি ওবাড়ি কাজ করে দিনশেষে যা পায় তাই দিয়ে নিজের পেট চালায়। এর ওর কাছ থেকে চেয়ে কিছু টাকা ছেলেকে পাঠায়। মা স্বপ্ন দেখে তার ছেলেটি মানুষের মত মানুষ হবে। মা স্বপ্ন দেখে তার ছেলে তাকে শহরে নিয়ে যাবে। অসুস্থ শরীর নিয়ে লোকের বাড়িতে কাজ করতে যেন তার হিমশিম খেতে হয়। সেই অসহায় মা স্বপ্ন দেখে কোন একদিন সে একটু শান্তিতে থাকবে। হয়তো একটু ভালো থাকবে। কিন্তু ছেলে যে তার আর এলো না। হতাশা আর জীবনের বাস্তবতা তাকে বাঁচতে দিল না। হয়তো নিরবে নিভৃতে ঝরে গেল আরও একটি তাজা প্রাণ। বেকারত্বের হতাশায় হয়তো সে বিলীন হয়ে গেল এই পৃথিবীর বুক থেকে। আর খালি হয়ে গেল সেই অসহায় মায়ের বুক। হয়তো সেই অসহায় মায়ের কান্না কেউ দেখেনা। কেউ পাশে দাঁড়িয়ে বলে না মা তোমার ছেলে হারিয়েছো তাতে কি হয়েছে আমরা তো আছি।


গ্রামে বেড়ে ওঠা সেই মেয়েটি স্বপ্ন দেখে নিজে চাকরি করবে আর নিজের বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াবে। সেই সাথে সমাজের জন্য কিছু করবে। কিন্তু সমাজ কি সত্যি তাকে সুযোগ দিয়েছে? জীবনের বাস্তবতার মত তার স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে। একটির পর একটি চাকরির পরীক্ষায় রিজেক্ট হওয়ার পর তার ভেতরের সেই স্বপ্নগুলো দুমড়ে মুছে গেছে। হয়তো ভেতরটা তার মরেই গেছে। একদিকে বয়স বেড়ে গেল অন্যদিকে বেকারত্বের সমস্যায় জীবন তার এলোমেলো হয়ে গেল। এরপর সেই অসহায় মেয়েটি কোনো এক সময় বাবা-মায়ের কাছে বোঝা হয়ে গেল। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে ছাড়লো না। কারণ সে যে বেকারত্বের কষাঘাতে বলি হয়েছে। এভাবেই তার স্বপ্নের মত ভেঙে গেছে তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন।


হয়তো কোন এক বৃদ্ধ বাবা এখনো স্বপ্ন দেখে তার ছেলেকে নিয়ে। ছেলে কোন একদিন তার মাসের বেতনের টাকা তুলে দেবে তার হাতে। সেই টাকা দিয়ে অসহায় স্ত্রীর চিকিৎসা করবে। আর বলবে তুমি অনেকদিন বেঁচে থাকবে আমার সাথে। আমাদের ছেলে তোমার ভালো চিকিৎসা করাবে। কিন্তু হায়! বাস্তবতা তো তার থেকেও কঠিন। হয়তো সেই ছেলেটি আর কখনোই বলতে পারেনা এই নাও বাবা আমার এই মাসের বেতন। এসব চিন্তা করতে করতে যখন সেই ছেলেটা হতাশায় ডুবে যায় তখন নিজেকে মুক্তি দিতে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কিন্তু বেকারত্ব যে তাকে মুক্তি দেয়নি। এভাবেই শেষ হয়ে যায় একজন অসহায় পিতা মাতার স্বপ্ন। যাইহোক চেষ্টা করেছি বাস্তবতা নিয়ে লিখার জন্য। লেখালেখি করতে আমার ভালো লাগে। তবে জানি না আজকের লেখাগুলো পড়ে আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। বাস্তবতার প্রেক্ষাপট থেকে লিখার চেষ্টা করেছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 11 months ago 

বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে মানুষ আরো কোনঠাসা হয়ে যাবে। এরকম অনেকেই রয়েছে যারা লেখাপড়া করে আর আশানুরূপ চাকরি পায় না। অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সবমিলিয়ে আপনার লিখনী ভালো ছিল।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বেকারত্ব দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। মানুষ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। আর আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 11 months ago 

বাস্তবতা বড়ই কঠিন আপু! বাংলাদেশে জব মার্কেটের অবস্থা আর কি বলবো! খুবই খারাপ অবস্থা। গ্রাম থেকে উঠা আসা একটা ছেলে শহরে এসে এতো সহজেই চাকরি পায় না। দিনের পর দিন তাকে সংগ্রাম করতে হয়। একটি পরিবার চেয়ে থাকে তার দিকে। বেকারত্ব একটি দেশের জন্য অভিশাপ! আমাদের মত দেশে উচিত ছিল সবাইকে কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা, তবেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করে খেতে পারবে।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বাস্তবতা অনেক কঠিন। বর্তমানে বেকারত্ব অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে শেষ হয়ে যাচ্ছে অনেকের জীবন।

 11 months ago 

আমাদের সমাজে সবচেয়ে যারা বেশি ভোগান্তির স্বীকার হয় তারা হচ্ছে মধ্যবিত্ত। পারে না নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে। পারে না নিজের মনের কষ্টগুলো মানুষকে বুঝানোর। ঠিক বলছেন আপু দারিদ্রতার কষাঘাতে কোন রকম সার্টিফিকেট অর্জন করলেও তা কাজে লাগাতে পারে না। আপনার রাইটিং গুলো সব সময় অনেক ভালো লাগে আমার কাছে পড়তে।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু মধ্যবিত্তরাই বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

 11 months ago 

আসলে বর্তমানে বাস্তবতার কাছে জীবনের সব স্বপ্নই ধুলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। ধনীদের অনেক টাকা আছে তারা চলে যেতে পারবে গরিবরা ভিক্ষা করতে পারবে কিন্তু মধ্যবিত্তরা! মধ্যবিত্তরা অসহায় হয়ে থাকে কারণটা ধনীদের মতো টাকা ও নেই আবার গরিবদের মতো হাত পাতে সাহায্য নেওয়ার অভ্যাসও নেই। আমাদের বাংলাদেশ বেকারত্ব সমস্যা বর্তমানে অনেক বড় একটি সমস্যা বেকারত্ব মানুষকে অসহায় করে তোলে। আমি মনে করি বেকারত্ব জীবনটা অনেক কঠিন এবং কষ্টের। একমাত্র যে ব্যক্তি বেকারত্ব জীবন অতিবাহিত করেছে সেই ব্যক্তিই জানে বেকারত্বের করুন দশা। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সবার স্বপ্ন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর অসহায় মানুষগুলো আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ছে। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 11 months ago 

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটা আসলেই জঘন্য। দিনদিন পড়াশোনার মান এতো বাজে হয়ে যাচ্ছে, যা বলার মতো নয়। প্রতি বছর এতো এতো শিক্ষার্থী পাশ করে বের হচ্ছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। দিনদিন বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমানে সার্টিফিকেট ধুয়ে পানি খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি মনে করি জেনারেল লাইনে পড়াশোনা না করে, টেকনিক্যাল লাইনে পড়াশোনা করলে খুব ভালো। কিছু একটা করে তো পেট চালানো যায় অন্তত। যাইহোক এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

আপনার পোষ্ট এ আপনি একদম আমাদের দেশের খুব করুন বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন মনিরা আপু। এ যেন আসলেই অধিকাংশ ঘরের কাহিনি। কত বাবা মায়ের স্বপ্ন, কত যুবক-যুবতীর আত্নহত্যার কারণ, কত মানুষের ভালোবাসা হারানোর কারণ এই বেকারত্ব। সরকারি চাকরি তো সোনার হরিণের চেয়েও দামী,, এখন তো প্রাইভেট চাকরির বাজারও ভীষণ মন্দা!!

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59834.01
ETH 2665.66
USDT 1.00
SBD 2.46