গল্প-অভিমানী||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লিখি। গল্পের মাধ্যমে কারো জীবনের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি। কিংবা কল্পনায় কিছু মানুষকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।
অভিমানী:
তরুণীমা খুবই সাধারণ ঘরের মেয়ে। ছোটবেলায় নিজের বাবাকে হারিয়েছে। মা আর মেয়ে দুজনের ঠাঁই হয়েছে মামার সংসারে। মামা তাকে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু মামীর অবহেলা তরুণীমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিত। তার মামা তরুণীমাকে আদর করে অরু বলে ডাকতো। অনেক শখ করে তার বাবা তার নাম রেখেছিল তরুণীমা। কিন্তু বাবার আদরের রাজকন্যা এভাবে কারো সংসারের বোঝা হয়ে যাবে সেটা ভাবতেই তরুণীমার দুচোখ জলে ভিজে যায়। তরুণীমা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতো হয়তো কোন একদিন সে আর তার মা কারো সংসারে বোঝা হয়ে থাকবে না। কোন একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে সে। আর মায়ের দুঃখ ঘুচাবে। সময়ের সাথে সাথে তরুণীমা অনেকটা বড় হয়ে গেল। পড়াশুনাতে বেশ ভালো ছিল তরুণীমা। কিন্তু অর্থের অভাবে সেভাবে পড়াশুনা করতে পারছিল না। হঠাৎ করে তার মামা মারা যায়। এরপর বাধ্য হয়ে তরুণীমা তার মাকে নিয়ে শহরে চলে এলো। শহরের মাটিতে তার ঠাঁই হয়েছিল ঠিকই কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি। ছোট্ট একটি চাকরি করে পেট চালাতো তরুণীমা।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল মা-মেয়ের দিনগুলো। সবে মাত্র স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে সে। কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তরুণীমা শহরে এসেছিল। ভেবেছিল দু-চারটে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাবে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি কঠিন। গার্মেন্টসে চাকরি করে নিজের সংসার চালাত তরুণীমা। মা-মেয়ের সংসার বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল। হয়তো তাদের জীবনে বিলাসিতা ছিল না কিন্তু সুখের কোন অভাব ছিল না। হঠাৎ করে তরুণীমার সাথে পরিচয় হয় সজলের। সজল কলেজ পাশ করে শহরে এসেছে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে শহরের মাটিতে তার ঠাঁই হয়েছে। কিন্তু তার স্বপ্ন যে ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। কারণ শহরের মানুষগুলো যেমন বিচিত্র তেমনি নিজেকে টিকিয়ে রাখা আরও বেশি কঠিন। তরুণীমা যখন সজলকে প্রথম দেখেছিল তখন তার মায়া ভরা মুখের মায়ায় পড়েছিল সে। এরপর ধীরে ধীরে সজলের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।
তরুণীমা জানতে পারে সজলের অনেক ইচ্ছা সে বড় চাকরি করবে। কিন্তু এর জন্য তাকে আরো পড়াশোনা করতে হবে। তরুণীমা কেন জানি সজলের প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে গেল। সজলকে বলল আজ থেকে তরুণীমা তার পড়াশোনার খরচ চালাবে। আর দুবেলা ডাল ভাত সবাই মিলে একসাথেই খাবে। সজল যে বসেছিল তা নয় দু চারটে টিউশনি করাতো সে। তরুণীমা একটু একটু করে টাকা জমাতো সজলের জন্য। যাতে করে তার পড়াশোনায় কোন সমস্যা না হয়। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটা বছর। সজলের পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর সজল তরুণীমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তরুণীমা এতেই অনেক খুশি ছিল। কারণ সে নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষটির স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।
দেখতে দেখতে সজল গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলল। ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি হয়ে গেল। সজল কেন জানি সময়ের সাথে সাথে বদলে যেতে লাগলো। তরুণীমা আড়াল থেকে সজলকে দেখে চোখের জল ফেলতো। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনি। সজলের এই বদলে যাওয়া তরুণীমাকে যেন আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছিল। অন্যদিকে তরুণীমার মা বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল তরুণীমাকে। কিন্তু সে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছিল না। কারণ যাকে ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল তার হৃদয়ে তরুণীমার জন্য কোন ভালোবাসা ছিল না। তাইতো সে ভালোবাসাহীন শূন্য হৃদয়ে নিজের ঠাই করে নিতে চায়নি। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। সজল আজকাল অনেক দেরিতে ঘরে ফেরে। একদিন হঠাৎ করে বলে দিল সে এই নোংরা বস্তির ঘর ছেড়ে দিয়েছে। আর অফিস থেকে তাকে নতুন বাসা দেওয়া হয়েছে। সজল সেখান থেকে নতুন বাসায় চলে গেল। সেখানে গিয়ে সবটা গোছাতে শুরু করলো। অন্যদিকে সজলের এই বদলে যাওয়া তরুণীমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছিল।
যদিও সজল কখনো তাদের ভালোবাসা অস্বীকার করেনি কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে বদলে যেতে দেখে তরুণীমা নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল। সজলের জীবন থেকে নিরবে সরে এসেছিল। কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে তরুণীমা তার মাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেল। সজল হয়তো সেই অভিমান দেখতে পেল না। কারণ সজলের যে সেই সময়টাও নেই। কিংবা সজল তার ভালোবাসাকে খুঁজেছিল। এভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। হঠাৎ একদিন তরুণীমার সাথে আবারও সজলের দেখা হল। কিন্তু সেই দেখাটা ছিল অনেক বেশি বেদনার। তরুণীমা যখন হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল তখন জানতে পারে ট্রাকের চাপায় কোন এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। তার ক্ষত-বিক্ষত দেহটা পড়ে আছে রাস্তার একপাশে। তার মানিব্যাগ থেকে পাওয়া আইডি কার্ডের মাধ্যমে সবাই জানতে পারে সেই মৃত ব্যক্তিটির নাম ছিল সজল মাহামুদ। নামটি শুনে তরুণীমার বুকের ভেতর কেন জানি হাহাকার করে উঠেছিল। দৌড়ে গিয়ে সেই ক্ষতবিক্ষত দেহটা দেখার চেষ্টা করেছিল। সেই ক্ষতবিক্ষত দেহটা আর কারো ছিল না সেটা ছিল তার ভালোবাসার মানুষ সজলের। হয়তো তরুণীমা সজলের উপর ভীষণ অভিমান করেছিল। কিন্তু সজলের এই নির্মম পরিণতি তাকে আরো বেশি কষ্ট দিয়েছিল।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপনি। পড়ে আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। তবে তরুণীমার জন্য খুব খারাপ লাগলো। মেয়েটির কপালে সুখ ছিল না। যা একটু কষ্ট করে প্রিয় মানুষটিকে পড়ালেখা করে করিয়েছে। মাঝখানে সজলের বদলে যাওয়া দেখে তরুণীমা সহ্য না করতে পেরে দূরে চলে গিয়েছে। দূরে গিয়েও সেই প্রিয় মানুষটিকেও সে হারিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আমার লেখা গল্প পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
মা মেয়ের সংসার নিয়ে গল্পটি বেশ চমৎকার লিখেছেন ৷আসলে এমন ঘটনা বাস্তবে ও আছে দিদি ৷ যারা ছোট্ট থাকাতে মা কিংবা বাবা কে হারিয়ে শুন্য হয়েছে ৷ তারা জানে বাস্তবটা কতটা কঠিন ৷তবে শেষের দিকে তার প্রিয় মানুষটিও চলে গেলেো ৷ আসলেই তরুনীমার জীবন টাই কষ্টের ৷
যা হোক গল্পটি বেশ সুন্দর লিখেছেন ৷অসংখ্য ধন্যবাদ
মাঝে মাঝে জীবনের খারাপ সময় গুলো কখনো শেষ হয়ে যায় না। একটির পর একটি কষ্ট জীবনে থেকেই যায়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
অভিমানী শিরোনামে সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু। গল্প সমাজের কথা বলে, মানুষের কথা বলে। তরুণীমা-সজলের ঘটনা নিয়ে গল্পের প্লটটা দারুণ।তরুণীমাকে সংগ্রামী ও বাস্তবধর্মী মনে হয়েছে। সেই তুলনায় সজলের ক্যারেক্টারটি অন্যের সাহায্যে বেড়ে উঠা-লড়াকু নয়। কিন্তু সজলের মৃত্যু বিয়োগান্তক করে ফেললো গল্পটিকে। সবমিলে ভাল হয়েছে গল্পটি। অনেক ধন্যবাদ আপু,গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু গল্প সমাজের কথা বলে, গল্প মানুষের কথা বলে। আমি চেষ্টা করেছি ভিন্ন রকমের কিছু চরিত্র উপস্থাপন করার জন্য।
আসলেই ভালোবাসার মানুষের চেনা রুপ যখন অচেনা হয়ে যায়, তখন সত্যিই ভীষণ কষ্ট হয়। আমার মনে হয় এর চেয়ে বড় কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই। তরুণীমা সজলকে পড়াশোনার ব্যাপারে এতো সাপোর্ট করলো এবং গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করালো, কিন্তু সজল সফল হয়ে তরুণীমাকে অবহেলা করলো। তবে তরুণীমার মনমানসিকতা খুবই ভালো। কিন্তু সজলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা জেনে ভীষণ খারাপ লাগলো। যাইহোক গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমে যখন গল্পটি পড়ছিলাম বেশ ভালো লাগছিল যে অবশেষে তরুণীমার জীবনে ভালোবাসার একজন মানুষ এসেছে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার মানুষের স্বভাবের পরিবর্তন দেখে তরুণীমা অভিমান করেছিলো যে নীরবে তার কাছ থেকে সরে গিয়েছে। শেষে যে তার সঙ্গে এভাবে দেখা হবে এটা কল্পনা করিনি আপু।ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।