গল্প-অনুরাধা||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন রকমের গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। যদিও ভালো গল্প লিখতে পারি না। তবুও আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে চলে এসেছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।
অনুরাধা:
Source
আমার আজও মনে পড়ে সেই দিনটির কথা যেদিন আমি প্রথম অনুরাধা কে দেখেছিলাম। এই কথাগুলো ভাবছিল আর নিরবে চোখের জল ফেলছিল নিলয়। নিলয় অনুরাধাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু তার ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারেনি। কোন এক সর্বনাশা ঢেউ এসে তাদের ভালোবাসাকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। হয়তো হৃদয়ের ভালোবাসা হৃদয়ের গহীনে রয়েই গেছে। তাই তো আজও নিলয় অনুরাধাকে ভুলতে পারেনি। নিলয় যখন কলেজে পড়তো তখন প্রথম দেখাতেই অনুরাধা কে ভালোবেসে ফেলেছিল। অনুরাধার লম্বা চুলের বেনুনি আর মিষ্টি হাসি নিলয়ের হৃদয় পাগল করে দিয়েছিল। নিলয় বারবার অনুরাধার সেই মিষ্টি হাসি দেখার জন্য ছুটে চলে যেত। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো।
নিলয় দূর থেকে অনুরাধাকে দেখতো। কখন জানি নিলয়ের মনে অনুরাধার জন্য গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। হয়তো অনুরাধাও সেই ভালোবাসা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনি। অনুরাধাও নিলয়কে মনে মনে ভালোবেসেছিল। নিলয়ের মাতাল করা চোখের চাহনি আর তার পাগল করা ভালোবাসা অনুরাধাকে মুগ্ধ করেছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকটা দিন। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে নিলয় অনুরাধা কে ডেকে পাঠালো। গ্রামের ছোট্ট মন্দিরের পেছনে তারা দেখা করার জন্য এলো। অনুরাধা সেদিন লাল টুকটুকে শাড়ি পড়েছিল। তাকে দেখে নিলের হৃদয় আবারো যেন তার প্রেমে পড়েছিল। সেদিনও নিলয় অনুরাধাকে কিছু বলতে পারেনি। শুধু তার খোপায় একটি শিউলি ফুলের মালা গুজে দিয়েছিল। আর হাতে পরিয়ে দিয়েছিল লাল টুকটুকে কাঁচের চুড়ি।
শিউলি ফুলের ঘ্রাণ যেনো অনুরাধাকে আরো বেশি পাগল করে দিয়েছিল। আর তারা হাতের লাল চুড়ি গুলো রিমঝিম করে বেজে উঠছিল। লাল চুড়ির শব্দের মাঝে যেন অনুরাধা নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিল। দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন। হঠাৎ একদিন অনুরাধা জানতে পারল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এই কথা শুনে অনুরাধা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এমন সময় নিলয় তার পাশে নেই। নিলয়কে খবর পাঠালো অনুরাধা। দুজনে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। নিলয়ের কথামতো অনুরাধা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে অনুরাধা সেই লাল শাড়ি পড়েছিল। আর হাতে পড়েছিল লাল কাঁচের চুড়ি। এভাবেই সে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়ল। স্টেশনে নিলয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু নিলয় এলোনা। অনুরাধা অনেকটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।
নিলয়ের প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অনুরাধার মনে অজানা ভয় বাসা বেধেছিল। নিলয় কিছুতেই আর সেখানে এলোনা। দেখতে দেখতে আঁধার রাত আরও বেশি আঁধার কালো হয়ে গেল। অনুরাধা নিজেকে আরও বেশি গুটিয়ে নিতে লাগলো। এরই মাঝে মানুষ রুপী কিছু হায়েনার দল অনুরাধা কে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। অনুরাধা নিজেকে রক্ষা করতে পারল না। নিজের ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে সারাটি রাত কাটিয়ে দিল। ভেবেছিল হয়তো তার জীবনের নতুন একটি ভোরের আলো ফুটবে। কিন্তু তার ভাবনা মিথ্যে হয়ে গেল। ভোরের আলোর আবছা অন্ধকারে যখন ঝিকঝিক করে ট্রেন চলতে শুরু করল তখন অনুরাধা নিজেকে বিলীন করে দিল। অনুরাধার ক্ষতবিক্ষত দেহটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল স্টেশনের রেল লাইনের ধারে।
নিলয় এলো কিন্তু তার যে বড্ড দেরি হয়েছে। আর অভিমান করে অনুরাধা পর পাড়ে পাড়ি জমিয়েছে। নিজের জীবনটাকে বিলীন করে দিয়েছে ওই রেল লাইনের মাঝে। অনুরাধা জানতেই পারল না নিলয়ের কি হয়েছিল। নিলয় যখন অনুরাধার কাছে আসার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল তখন একটি গাড়ি নিলয় কে ধাক্কা দিয়েছিল। অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের বেডে ছিল নিলয়। আর যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন ছিল মধ্যরাত। নিলয় নিজের আহত শরীর নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল স্টেশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু নিলয় আর তার অনুরাধাকে পেলনা। পেলো শুধু তার ক্ষতবিক্ষত দেহটা। আর লাল কাঁচের চুড়িগুলো টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল স্টেশনের কোন এক কোনায়। হয়তো সেই মানুষরূপী জানোয়াররা নির্মল অত্যাচার করে সেই রঙিন কাঁচের চুড়িগুলো ভেঙে দিয়েছিল। আর ভেঙে দিয়েছিল অনুরাধার রঙিন স্বপ্নগুলো। আর নিলয় হারিয়ে ফেলেছিল তার ভালোবাসা।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আপু আপনার গল্পের উইক পয়েন্ট আমি বলবো শেষে কি হচ্ছে বুঝে যাওয়া! আপনার গল্পে শেষের দিকে প্রায়ই চরিত্রগুলোকে মেরে ফেলেন। আশা করছি আরেকটু ডিপ ইমোশন ইনজেক্ট করলে দারুণ গল্প হবে। তবে আপনার আজকের গল্পটিও কিন্তু দারুণ হয়েছে আপু। অনুরাধার শেষ পরিণতি এমন নাও হলে পারতো
শেষ পরিণতি কেনো জানি মৃত্যু দিয়েই শেষ হয়ে যায়। একটু ভিন্ন ভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। সময়ের সাথে সাথে আশা করছি লেখার ধরন বদলে যাবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
অনুরাধা ও নিলয়ের ভালোবাসার এমন পরিণতি সত্যি ভীষণ কষ্টকর। তাদের গভীর ভালোবাসা চিরতরে বিলীন হয়ে গেল। রেল স্টেশনে থাকা হায়েনার দল নিলয় ও অনুরাধার ভালোবাসাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিল ঠিক অনুরাধার দেহের মত করে। নিলয় ও অনুরাধার ভালোবাসার শুভ পরিণয় ঘটলো না এজন্য খুব খারাপ লাগলো আপু। তবে আপনি কিন্তু গল্প খুব সুন্দর লিখেন। এর আগেও আমি আপনার গল্প পড়েছি, তাই আপনার গল্প লেখার দক্ষতা সম্পর্কে আমার বেশ ভালো ধারণা রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত খুব সুন্দর সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে উপহার দিবেন এই প্রত্যাশা করছি।
সেই হায়েনার দল অনুরাধা ও নিলয়কে এক হতে দেয়নি। তাইতো গল্পের শেষ পরিণতি একটু ভিন্ন ছিল। ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুরাধা ও নিলয়ের ভালোবাসার গল্প পড়ে দুজনের জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে এখানে কারো দোষ নেই। সত্যি নিয়তি তাদের ভাগ্যে কখনো মিলন লেখেনি তাই হয়তো দুজনের মিলন হলো না। আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপু।
মাঝে মাঝে নিয়তি দুজনকে এক হতে দেয়না। তাদের ভাগ্য হয়তো অনেক কষ্টের। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।
অনুরাধার গল্পটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগছিল প্রথমদিকে পড়তে। তবে শেষে যে এরকম কিছু হবে এটা ভাবতেই পারিনি একেবারে। দুজনে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নিলয় আসতে দেরি হয়েছিল। এরই মধ্যে অনুরাধার সাথে ঘটে গিয়েছিল জঘন্যতম এক অপরাধ। তবুও সে অপেক্ষা করেছিল। তবুও নিলয় আসেনি দেখে সে নিজের জীবনটা দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আসলে তো নিলয়ের সাথে ঘটে গিয়েছিল একটা এক্সিডেন্ট। কিন্তু সে তার আহত দেহ নিয়ে ও মাঝরাতে এসেছিল, কিন্তু তখন আর অনুরাধাকে পায়নি।
দুজনে একসাথে জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তাদের সপ্ন পূর্ণ হয়নি। মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা দুজন মানুষকে এক হতে দেয়না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
প্রকৃত ভালোবাসার মিলন না হলে কষ্টের কোনো সীমা থাকে না। নিলয় এবং অনুরাধা একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবেসেছিল ঠিকই, কিন্তু নরপিশাচরা তাদেরকে এক হতে দিলো না। আসলে শুধু ভালোবাসলেই হয় না,ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার ভাগ্যও থাকতে হয়। তাদের ভাগ্য সহায় ছিলো না বলে,সেদিন নিলয় আহত হয়েছিল। যদি নিলয় আহত না হতো, তাহলে তারা ট্রেনে চড়ে অনেক দূরে চলে যেতে পারতো। যাইহোক বরাবরের মতো আজকেও চমৎকার একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু। রোমান্টিক গল্প পড়তে বরাবরই আমার ভীষণ ভালো লাগে। যাইহোক এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া সত্যিকারের ভালোবাসা পূর্ণতা না পেলে অনেক কষ্ট হয়। হয়তো চাইলেও অনেক সময় প্রিয়জনের সাথে ঘর বাঁধা হয়ে উঠে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।