গল্প-শেষ ঠিকানা||

in আমার বাংলা ব্লগ8 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প দেখার চেষ্টা করি। তাইতো আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


শেষ ঠিকানা:

IMG_20231128_153005.jpg


নীলাদ্রি আর নীলিমার ভালোবাসার গল্প কারো কাছেই অজানা ছিল না। ছোটবেলা থেকেই নীলাদ্রি ও নীলিমার একসাথে বেড়ে ওঠা। নীলিমা যখন অনেক ছোট ছিল তখন থেকে নীলাদ্রির বাবা-মা নীলিমাকে বউমা বলে ডাকত। নীলাদ্রি তখন ভীষণ লজ্জা পেতো। মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের উপর ভীষণ রেগে যেত। অন্যদিকে সময়ের সাথে নীলাদ্রি যেমন বড় হতে লাগলো তেমনি নীলিমাও বড় হয়ে গেল। সময়ের সাথে সাথে দুজনে যখন বড় হতে লাগলো তখন দুজন দুজনার প্রতি আলাদা রকমের অনুভূতি অনুভব করতে লাগলো। হয়তো ছোটবেলার সেই কথাগুলো দুজনার মনে ভালো লাগার সৃষ্টি করেছিল। ধীরে ধীরে দুজন দুজনকে আপন করে নিয়েছিল।


দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল আরো কয়েক বছর। নীলাদ্রি যখন উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেল তখন নীলিমা সবেমাত্র কলেজে পা দিল। নীলিমা যেন আগের থেকে আরও বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছে। নীলাদ্রির পড়াশোনার জন্য নীলিমাকে ছেড়ে যেতেই হবে। কিন্তু নীলাদ্রির মন কিছুতেই মানছিল না। নীলাদ্রি নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নীলিমাকে ছেড়ে চলে গেল। হয়তো ভালোবাসি এই কথাটি কখনো নীলিমা কে বলে উঠতে পারেনি। কিন্তু নীলিমার প্রতি তার যে ভালোবাসা ছিল সেটা নীলিমা অনুভব করতে পারতো। নীলাদ্রির চলে যাওয়ার খবর শুনে নীলিমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। ভেবেছিল হয়তো নীলাদ্রি আবারও ফিরে আসবে। তাইতো নীলিমা ভেজা ভেজা চোখেও মুখে হাসি নিয়ে নীলাদ্রিকে বিদায় দিয়েছিল।


সময়ের সাথে সাথে নীলাদ্রি কেমন জানি বদলে যেতে লাগলো। এখন আর আগের মত নীলিমার সাথে কথা হয় না তার। প্রথম প্রথম অনেক কথা হতো। সময়ের সাথে সাথে নীলাদ্রি যেন আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্যদিকে নীলিমা নীরবে চোখের জল ফেলতো। হয়তো চোখের আড়াল হয়ে নীলিমা তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেছে। কিংবা নীলাদ্রি হয়তো নীলিমাকে ভুলেই গেছে। দেখতে দেখতে নীলিমার কলেজ প্রায় শেষ হয়ে গেল। অন্যদিকে নীলাদ্রির কোন খবর নেই। নীলাদ্রির বাবা-মার কাছে মাঝে মাঝে নীলিমা খবর নিতে আসতো। একবার হঠাৎ করে নীলিমা যখন নীলাদ্রিদের বাড়িতে গেল গিয়ে দেখে নীলাদ্রি বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু নীলিমার সাথে দেখা করেনি। তখন নীলিমা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। নীলিমা নিরবে সেখান থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিল। সেদিন নীলিমা অনেক কেঁদেছিল। নিজের ভেতরের চাপা কষ্টগুলো যেন কান্না হয়ে দুচোখে ঝরেছিল।


এরপর নীলিমার বাড়ি থেকে নীলিমার বিয়ে ঠিক করা হয়। প্রথম প্রথম নীলিমা বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। নীলিমার বাবা-মা জোর করে নীলিমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সব আয়োজন করে ফেলে। নীলিমা তখনও বুঝতে পারছিল না কি করবে। কারণ সে যে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরপর কোন কিছু না বুঝেই নীলিমা কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে সে। কারণ তার যে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। ঠিকানাহীন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে নীলিমা। রাস্তায় চলা সারি সারি গাড়ির ভিড়ে গন্তব্যহীন ছুটে চলে নীলিমা। হয়তো অজানা ঠিকানায় কিংবা তার শেষ ঠিকানায়। নীলিমা যখন আনমনে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই একটি গাড়ি এসে জোরে ধাক্কা দিয়ে নীলিমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। নীলিমা ছিটকে পড়ে যায় রাস্তার একপাশে।


নীলিমার ক্ষতবিক্ষত দেহটা যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল তখন পথচারীরা তার পরিচয় খুঁজে বার করার জন্য হাতের ডাইরিটা খুঁজে খুঁজে দেখছিল। অবশেষে পুরো ডায়েরী জুড়ে একটি নাম খুঁজে পেয়েছিল। সেই নামটি ছিল নীলাদ্রির। ঠিকানাহীন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে নীলিমা যেদিন বেরিয়ে পড়েছিল সেদিন ফোন করে নীলাদ্রিকে জানিয়েছিল। কিন্তু নীলাদ্রি আসেনি। তাই তো সে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে পাড়ি জমানার জন্য অচিন পথে হেঁটে চলেছিল। আর তার শেষ ঠিকানায় পৌঁছে গেল। হয়তো তার গন্তব্যের শেষ ঠিকানা মৃত্যু দিয়েই শেষ হলো। এভাবেই হয়তো হাজারো নীলিমা বুকে স্বপ্ন নিয়ে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কখনো ফিরে পায় নিজের গন্তব্য কখনো বা শেষ ঠিকানায় পৌঁছে যায়।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 8 months ago 

আসলে কাছের মানুষ যখন পর হয়ে যায়, তখন দুঃখের সীমা থাকে না। নীলিমার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। কিন্তু নীলাদ্রি এমনটা না করলেও পারতো নীলিমার সাথে। নীলাদ্রির জন্যই নীলিমাকে অকালে পরপারে চলে যেতে হলো। তবে এখানে নীলিমার কোনো দোষ নেই। দোষ যদি থাকে, সেটা হচ্ছে নীলাদ্রি এবং তার পরিবারের দোষ। তাদের কারণেই নীলিমা ছোটবেলা থেকেই বুকের মধ্যে ভালোবাসা লালন করেছিল নীলাদ্রির জন্য। যাইহোক পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 8 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া কাছের মানুষ যখন বদলে যায় তখন অনেক খারাপ লাগে। নীলিমা অনেক কষ্ট পেয়েছিল। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 8 months ago 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু নীলাদ্রি ও নীলিমার ভালোবাসার গল্প পড়ে নীলিমার জন্য অনেক খারাপ লাগলো। সত্যি নীলিমা নীলাদ্রিকে মন থেকে ভালবেসেছিল তাই তাকে ভুলতে পরেনি। অবশেষে নীলিমা শেষ ঠিকানা হলো মৃত্যু। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 8 months ago 

নীলাদ্রি ও নীলিমার ভালোবাসার গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভালো লাগলো। আসলে মাঝে মাঝে শেষ ঠিকানা হয়তো মৃত্যু হয়ে যায়।

 8 months ago 

নীলাদ্রি ও নীলিমার গল্পটি এক অসমাপ্ত প্রেম কাহিনি। আসলে পবিত্র ভালোবাসা গুলো কেন জানি পূর্ণতা পায় না।নীলিমার জন্য খুব খারাপ লাগছে যে নীলাদ্রিকে এতো ভালোবাসলো সে আস্তে আস্তে বদলে গেলো। নীলিমার বিয়ে ঠিক করেছে পরিবার। নীলিমা নীলাদ্রিকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করবে না।সেজন্য সে গন্তব্যহীন রাস্তায় নামিয়ে পড়েছিলো।আর ঘাতক গাড়িটি এসে নীলিমাকে ধাক্কা দিয়ে চির বিদায় দিয়েছে।নীলিমার জন্য খুব খারাপ লাগলো।ধন্যবাদ আপু পোষ্ট টি শেয়ার করার জন্য।

 8 months ago 

সত্যি আপু নীলিমা এবং নীলাদ্রির প্রেমের গল্পটি অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী। আসলে ভালোবাসা হয়তো মাঝে মাঝে অপূর্ণই থেকে যায়। মতামতের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 8 months ago 

আমি তো ভেবেছিলাম নীলাদ্রি হয়তো পরবর্তীতে নীলিমার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু সে তো নিজের গন্তব্যে যাওয়ার পর আর নীলিমার সাথে যোগাযোগও রাখেনি। সে অনেক বেশি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে আসার পরেও নীলিমার সাথে দেখা করেনি। যার কারনে নীলিমার অনেক বেশি কষ্ট লেগেছিল। শেষ পর্যন্ত তার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর অজানা গন্তব্যের দিকে চলে গিয়েছিল। সে শেষ ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিল একেবারে শেষে। সত্যি খুব খারাপ লেগেছে গল্পটা পড়ে।

 8 months ago 

মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষটি সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। তাইতো নীলাদ্রি নীলিমার কাছে ফিরে আসেনি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

 8 months ago 

শেষ ঠিকানা গল্পটা পড়তে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। আমি তো ভেবেছিলাম নীলাদ্রি এবং নীলিমার ভালোবাসা হয়তো বেশি ভালোভাবেই হবে‌ এবং তাদের ভালোবাসা অপূর্ণতা পাবে। কিন্তু এখানে তো দেখছি নীলাদ্রি নীলিমাকে তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিল। সে একেবারে পাল্টে গিয়েছিল। নীলিমা শেষ পর্যন্ত এরকম ভাবে মারা গিয়েছে এটা জেনে খুব খারাপ লাগলো।

 8 months ago 

মাঝে মাঝে গল্পগুলো লিখতে ভালো লাগে। আর বিরহ ভরা গল্পগুলো সত্যিই অনেক কষ্টের হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য।

 8 months ago 

আপু আপনার গল্পটি খুবই চমৎকার হয়েছে। অসমাপ্ত প্রেমের গল্পটি লিখেছেন। পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।তবে দুজনের মিল হলে অনেক বেশি ভালো লাগতো ।আমি তো প্রথম প্রথম গুলিয়ে ফেলেছিলাম ।নীলিমা আর নীলাদ্রি ছেলে কে আর মেয়ে কে। নাম দুটি প্রায় একই হয়ে গিয়েছে ।যাই হোক বেশ ভালো লাগলো গল্পটি ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 8 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই ভালো লাগলো আপু। গল্প লিখতে গেলে নাম খুঁজে পাই না। সত্যিই আপু নাম দুটো প্রায় কাছাকাছি হয়ে গেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 64970.70
ETH 3238.82
USDT 1.00
SBD 2.64