গল্প-অদ্রিতা||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মন চাইলেই গল্প লিখার চেষ্টা করি। যদিও সকাল থেকে মনটা খুবই খারাপ। তাই কোন কিছুই করতে ইচ্ছে করছিল না। এবার ভাবলাম কি পোস্ট করা যায়। আমার সবচেয়ে ভালো লাগার একটি কাজ হল গল্প লেখা। তাইতো আমি সেই ভালো লাগার কাজটি করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার কাছে ভালো লাগবে।


অদ্রিতা:

girl-g2c43e774b_1280.jpg

Source


অদ্রিতা নামটি যেমন মিষ্টি তেমনি মিষ্টি দেখতে অদ্রিতা। মায়া ভরা চোখ আর মায়াবী মুখের মিষ্টি হাসি অদ্রিতাকে যেন আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে। সেই মিষ্টি হাসি মাখা মুখ আর মায়াবী চেহারার আড়ালে কখন যে দুঃখ চলে এলো কেউ বুঝতেই পারলো না। হাসি মাখা সেই মুখের আড়ালে বিষাদের ছায়া জমেছে। বিষন্নতায় ছেরে গেছে অদ্রিতার পুরোটা জীবন। সে আজ হাসতে ভুলে গেছে, গাইতে ভুলে গেছে। হয়তো জীবন থেকে মুক্তি নিতে চায়। হয়তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তবুও অদ্রিতা হারিয়েছে নিজের সুন্দর স্বপ্নগুলো। অদ্রিতার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো যেন অপূর্ণই থেকে গেল। অদ্রিতা দেখতে যেমন সুন্দর ছিল তেমনি ভালো ছিল পড়াশোনাতে। অদ্রিতা শহরের নামকরা একটি কলেজে পড়তো।


আদ্রিতা কলেজে যাবার সময় প্রতিদিন দেখতে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ছেলেটিকে দেখে অদ্রিতার ভালো লাগতো। অদ্রিতা বাঁকা চোখের চাহনিতে ছেলেটির সেই মিষ্টি হাসি দেখে যেত। আর মনে মনে ছেলেটিকে ভালোবাসতে লাগলো। ছেলেটি তাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলেনি। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেনি। এভাবেই চলছিল তাদের দিনগুলো। দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প যেন আরো এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে ভালোবাসি এই কথাটি দুজনের কেউ কাউকে বলতে পারছিলোনা। একদিন সব নীরবতা ভেঙে ছেলেটি এসে অদৃতার সামনে দাঁড়ালো। হাতে তার একগুচ্ছ গোলাপ। অদৃতাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে লাগলো সে। অদ্রিতা মুচকি হেসে গোলাপ গুলো নিয়ে চলে গেল। এভাবে প্রতিদিন ছেলেটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো। অদ্রিতাও ছেলেটির সাথে ইশারায় কথা বলতো। দুজনের এক পলক দেখার মাঝে যেন হাজারো ভালোলাগা লুকিয়ে ছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো।


প্রতিদিনের মতো সেদিনও বেরিয়েছিল সে হাসিখুশি মুখ নিয়ে। হঠাৎ করে তার জীবনে নেমে এলো বিষাদের ছায়া।অদ্রিতা যখন কলেজ থেকে ফিরছিল তখন হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ছোট্ট একটি টিনের ছায়লার নিচে সে কিছুটা সময় দাড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো। গাড়িটি থামতে দেখে অদৃতা প্রথমে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে কেউ একজন তার মুখে রুমাল চেপে ধরল। অদ্রিতা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। যখন অদ্রিতার জ্ঞান ফিরে এলো তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করল একটি বন্ধ রুমে। আর মানুষরূপী কিছু জানোয়ারকে দেখতে পেল তার চারপাশে। অদ্রিতা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। কিন্তু তার চিৎকারের শব্দ চার দেয়ালের মাঝেই বন্দী হয়ে থাকলো। বৃষ্টির শব্দে তার চিৎকারের শব্দ কেউ শুনতে পেল না। নিজের সম্মান হারিয়ে অদ্রিতা আবারো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। হয়তো তার চিৎকার আর আর্তনাদ কেউ শুনতে পেল না। একটা সময় চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলল আদ্রিতা। পড়ে রইলো নিজের ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে। কখন যে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি। এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরে এল তখন দেখল রাস্তার একপাশে পড়ে আছে সে।


অদ্রিতা যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অদ্রিতার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে সবার বুঝতে বাকি রইলো না নরপিসাচরা তার সাথে কি করেছে। অদ্রিতা নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সেদিনের পর থেকে অদ্রিতা কথা বলতে পারে না। হয়তো মানসিক আঘাতের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে অদৃতা। এখন অদ্রিতা হাসতে ভুলে গেছে। হয়তোবা কাঁদতেও ভুলে গেছে। মনের অজান্তে তাকিয়ে থাকে ওই দূর আকাশের দিকে। হয়তো সেখানে যাওয়ার বড় শখ জেগেছে তার। আজকাল সে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর একটি দিন তার জীবনটাকে বদলে দিয়েছে। এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটি দিন। এরপর হঠাৎ করে অদ্রিতা যখন বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল তখন দেখল সেই ছেলেটি তার বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে অদৃতা দু চোখের পানি ফেলল। কোন কিছু বলার ভাষা তার ছিল না। ছেলেটি ইশারায় অদ্রিতাকে নিচে ডাকল। কিন্তু অদ্রিতা সেখানে গেল না। ছেলেটি সারাটি দিন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। একটিবারও তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়নি অদ্রিতা। হয়তোবা তার ভালোবাসার মানুষটির সামনে দাঁড়ানোর মতো সাহস তার নেই। কিংবা নিজেকে আড়াল করে নিতে চায় অদ্রিতা।


ছেলেটি কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে। এভাবে প্রায় প্রতিদিন ছেলেটি তার বাসার সামনে আসতো। একদিন এসে দেখে অদ্রিতার বাসার সামনে অনেক লোকজন। তখন ছেলেটি জানতে চায় কি হয়েছে। পরে একজনের কাছে ছেলেটি জানতে পারে অদ্রিতা সুইসাইড করেছে। এমন সময় উপর থেকে একটি মেয়ে তাকে ইশারা দিয়ে ডাকে। মেয়েটির সাথে দেখা করার পর মেয়েটি একটি চিঠি ছেলেটির হাতে তুলে দেয়। আর মেয়েটি তাকে জানায় তারা আপু আর এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে নেই। নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে সে। নিজেকে এই পৃথিবী থেকে মুক্তি দিয়েছে সে। এই কথাগুলো শুনে ছেলেটি ভীষণ কষ্ট পায়। এরপর যখন ছেলেটি চিঠি খুলে পড়তে শুরু করে তখন সে দেখতে পায় চিঠির ভাষায় অদ্রিতা নিজের মনের আর্তনাদ তুলে ধরেছে। সে বাঁচতে চেয়েছিল। কাউকে ভালোবেসে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল। কারো ভালোবাসায় নিজের জীবনকে সিক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই মানুষরূপী নরপিশাচরা তার জীবনটাকে কেড়ে নিল। সবশেষে অদ্রিতা একটি কথাই লিখেছিল যে সে তাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু তার ক্ষতবিক্ষত জীবনে কাউকে সে জড়াতে চায় না। এমনকি তার সেই ক্ষতবিক্ষত হৃদয় সে কাউকে দেখাতে চায় না। কারণ তার হৃদয়ের আর্তনাদ বড়ই কষ্টের। হয়তো কেউ সইতে পারবেনা। তাই তো সে এই পৃথিবী থেকে নিজেকে মুক্তি দিয়েছে। হয়তো অদ্রিতা বেঁচে রবে মানুষের মুখে মুখে। কিংবা প্রিয় মানুষটির অন্তরে।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

আমাদের সমাজে কিছু অমানুষদের জন্যই হাজারো প্রাণ এভাবে নষ্ট হয়ে যায়।জীবনে বেঁচে থাকার জন্য মানসিক শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। মানসিক দিক দিয়ে শক্তি না থাকলে একজন মানুষ কখনোই বাঁচতে পারে না আর অদ্রিতা ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। কষ্ট লাগলো ছেলেটার জন্য ছেলেটা খুবই আশা নিয়ে অদ্রিতা জন্য অপেক্ষা করত। কিন্তু তার অপেক্ষার অবসান যে এভাবে হবে ছেলেটা সেটা কল্পনাও করতে পারেনি। এত অসাধারণ ভাবে গুছিয়ে সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন‌। গল্পটি পড়ে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে আপু।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু আমাদের সমাজে কিছু অমানুষ আছে বলেই এভাবে হাজারো তাজা প্রাণ নিভে যায়। ধন্যবাদ আপু পোস্ট পড়ে সুন্দরভাবে মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আপু গল্পটি পড়ে অদ্রিতার জন্য সত্যি খারাপ লাগল। সত্যি আমাদের সমাজ কিছু কিছু মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।আর এই সকল নরপিশাচদের ধিক্কার জানাই। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 last year 

গল্পটা পড়ে মন্তব্য করেছেন দেখে ভালো লাগলো। সত্যিই আপু অনেক মানুষ আছে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। আর সেই নরপিশাচরা আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।

 last year 

বেশ সুন্দর ছিল আজকের গল্পটি। আসলে এমনই হয়। আদ্রিতার এমন পরিস্থিতির জন্য কাকে দায়ী করবো আমরা? আমাদের সমাজকে তো অবশ্যই? যেখানে আদ্রিতাদের মেয়েরা নিজেদের সবশ্র হারিয়ে ফেলে আর সেই সাথে হারিয়ে ফেলে নিজেদের ভালোবাসাও । খুব খারাপ লাগলো আদ্রিতার এই জীবনের জন্য। আপনার গল্পগুলো পড়লেই কেমন যেন বিষন্নতা চলে আসে আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56949.15
ETH 2401.26
USDT 1.00
SBD 2.33