একবার ফিরে এসো||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝেই গল্প লিখি। জানিনা আমার লেখা গল্প গুলো আপনাদের কাছে কেমন লাগে। নিজের মনের আবেগ দিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প লেখার চেষ্টা করি। দেখা যাক আজকে আমি কি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।
একবার ফিরে এসো:
Source
প্রিয়ন্তী গ্রামের মেয়ে। ইউনিভার্সিটির অন্যান্য ছেলে মেয়ের সাথে সে নিজেকে একজাস্ট করতে পারছিল না। হয়তো সবার সাথে মেশার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বড় লোকের উচ্ছন্নে যাওয়া কিছু ছেলে মেয়ে থাকে সবসময় অপমান করে যাচ্ছিল। সাদাসিধে জামা কাপড় পড়ে ইউনিভার্সিটিতে আসতো প্রিয়ন্তী। সবার মত জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক তার ছিল না। এমনকি খুবই সাধারণভাবে ইউনিভার্সিটিতে আসতো সে। আর অন্যদিকে শহরের সভ্য দাবি করা ছেলে মেয়েগুলো তাকে অপমান করার তালে ব্যস্ত থাকতো। আসলে আদৌ কি তারা সভ্য কিনা সেটা শুধু তাদের ব্যবহার বলে দেয়। হয়তো তারা পোশাকে জাঁকজমকপূর্ণতা এনেছে কিন্তু মনটা সেই কুৎসিত হয়ে গেছে। এভাবেই অবহেলা অপমানের মাঝেই প্রিয়ন্তীর দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। মন খুলে কথা বলার মত কেউ ছিল না তার। বন্ধু বান্ধবীদের আনন্দ উল্লাসে শামিল হওয়ার অধিকার ছিল না তার। দূর থেকে দেখতো আর সেই আনন্দ উপভোগ করত। মাঝেমাঝে নিজের অজান্তেই মন খারাপ হয়ে যেত।
গ্রামের সহজ সরল সেই মেয়েটি হঠাৎ করেই কেমন জানি বদলে গেল। একটি ছেলের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করল। ছেলেটির নাম ছিল নিলয়। যারা প্রতিদিন তাকে নিয়ে তামাশা করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো তাদের এক সঙ্গীকেই সে মন দিয়ে ফেলল। হয়তো প্রিয়ন্তীর না বলা কথাগুলো তাকে বলতে পারেনি। তবে দূর থেকে তাকে দেখতো তার কাছাকাছি গেলেই অপমান অপদস্থ হত। নিজের মনের কথাগুলো বলা তো দূরের কথা তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস কোনদিন পায়নি প্রিয়ন্তী। আসলে ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত। যেই মানুষগুলো তাকে সর্বদা অপমান করে সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজনকে কি করে যে প্রিয়ন্তী ভালোবেসে ফেলল বুঝতেই পারল না। হয়তো ভালোবাসা এমনই হয়। কখন কার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় তা নিজেও জানে না। প্রিয়ন্তীর মনেও নিলয়ের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। নিলয়ের গাওয়া গান প্রিয়ন্তীকে মুগ্ধ করেছিল। হয়তো নিলয়ের গানের জন্যই নিলয়কে পছন্দ করতে লাগলো।
নিলয় যখন গিটার বাজিয়ে গান করতো তখন তার পাশে ঘিরে ধরতো তার বন্ধু বান্ধবীরা। প্রিয়ন্তী শুধু দূর থেকে দেখতো আর তার পছন্দের মানুষটির গাওয়া গানগুলো উপভোগ করত। কিন্তু কাছে গিয়ে কখনো গান শোনার সৌভাগ্য তার হয়নি। এভাবে কেটে গেল আরো কিছুদিন। প্রিয়ন্তী তার ভালো লাগার কথাগুলো নিজের ডায়েরীতে লিখে রাখত। কারণ তার ভালো লাগার কথাগুলো বলার মত কেউ ছিল না। এই কংক্রিটের শহরে সে নিজেকে বড় একা মনে করত। আসলে ইট পাথরের দেয়ালে ঘেরা শহরটাকে সে আপন করে নিতে পারছিল না। তবে তার প্রিয় মানুষটির মুখের দিকে তাকিয়ে সেখানে থেকে গেল। একদিন প্রিয়ন্তী দেখল সবাই বলাবলি করছে সেই ছেলেটির জন্মদিন নিয়ে। প্রিয়ন্তী ভাবলো তার প্রিয় মানুষটির জন্মদিন তাই তাকে কিছু উপহার দিতে হবে। নিলয়ের জন্মদিনে নিলয় গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখছে। এই সময় প্রিয়ন্তী এসে নিলয়কে একটি ডাইরি উপহার দিল। নিলয় যদিও কিছু বলল না তবে তার বন্ধু বান্ধবীরা ডায়েরী নিয়ে বেশ হাসাহাসি করল।
সেই ডাইরিতে প্রিয়ন্তীর না বলা কিছু কথা লেখা ছিল। হয়তো ইশারায় নিজের মনের কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছে। যখন ডায়েটি খুলে সবাই পড়তে লাগলো তখন প্রিয়ন্তী লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। সবার অপমান সহ্য না করতে পেরে প্রিয়ন্তী সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু ছেলেটি তখনও নিশ্চুপ ছিল। কেন জানি ছেলেটি প্রিয়ন্তীকে কখনো অপমান করতে চায় না। তাই ছেলেটি একেবারে নিশ্চুপ থেকে নিজের কাজগুলো করছিল। সেদিনের পর থেকে প্রিয়ন্তীকে আর ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। এভাবে কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন। হঠাৎ একদিন নিলয়ের অ্যাক্সিডেন্ট হলো। সবাই মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। এক্সিডেন্ট এর কারণে নিলয়ের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলল। নিলয়ের এই অবস্থা দেখে তার বন্ধু-বান্ধবী সবাই খুবই কষ্ট পেল। কিন্তু ডক্টর বললেন যদি কেউ উনাকে একটি চোখ দান করে তাহলে সে আবারও নিজের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে। তখন কেউ এগিয়ে এলোনা। সবাই যে যার মত দূরে সরে গেল। হঠাৎ একদিন ডাক্তার বলল আপনার জন্য একটি চোখ পাওয়া গেছে একজন আপনাকে একটি চোখ দান করতে চায়। কালকেই আপনার অপারেশন। নিলয়ের অপারেশন করতে নিয়ে যাওয়ার সময় নিলয় অনুভব করল কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে অনুভব করতে পারল হয়তো তার কাছের কেউ এসেছে। কিন্তু বুঝতে পারছিল না আসলে কে এসেছে। কারণ সে তো দেখতে পায় না।
অবশেষে নিলয়ের অপারেশন হয়ে গেল। নিলয় আবারও নিজের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেল। নিলয় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে লাগলো। আর জানার চেষ্টা করতে লাগল আসলে কে তাকে চোখ দান করেছে। অনেক চেষ্টা করেও নিলয় কিছুতেই জানতে পারছিল না। এরপর ডক্টরকে অনেক রিকোয়েস্ট করার পর জানতে পারল একটি মেয়ে তাকে চোখ দান করেছে। আর সেই মেয়েটির নাম প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তী নামটি শুনেই নিলয়ের বুকের বাপাশে চিনচিন করে ব্যথা করতে লাগলো। আসলে যেই মানুষটিকে সে এতটা অপমান করেছে তার বন্ধু বান্ধবীরা তাকে এতটা অপমান করেছে আর বিপদের সময় সেই মেয়েটি নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ নিজের একটি চোখ দান করেছে এটা ভাবতেই নিলয়ের খারাপ লাগছে। আসলে নিলয় খুবই অপরাধ বোদে ভুগছে। নিলয় প্রিয়ন্তীকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু নিলয় তাকে কোথাও খুঁজে পেল না। প্রিয়ন্তীর এভাবে হারিয়ে যাওয়া নিলয় মেনে নিতে পারছিল না। নিলয় শুধু বারবার বলতে লাগলো আর একবার ফিরে এসো। আর একবার তোমায় তোমার চোখের আলোয় দেখতে চাই।
গল্প লিখতে ভালো লাগে বলেই গল্প লিখি। তবে জানিনা গল্প গুলো পড়তে আপনাদের কেমন লাগে। তবে আপনাদের উৎসাহ আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে।
প্রিয়ন্তী এবং নিলয়ের গল্পটি পড়ে প্রথমে খুব ভালো লাগলে ওঅবশেষে অনেক খারাপ লাগছে আমার। আসলে এমন অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে যা কখনো প্রকাশ করার মতো না।শহর আর গ্রাম থেকে আসা মানুষের মধ্যে বিশাল একটা তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।পোশাকে, আচার-ব্যবহারের মধ্যে এমন একটা ভাব থাকে যেন মনে করে তারা নিজেরা সব থেকে ভাল।আর যারা গ্রাম থেকে আসে তারা যেন সেকেলে স্বভাবের।ধন্যবাদ সুন্দর একটি প্রেমের কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
প্রিয়ন্তী ও নিলয়ের গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আসলে কিছু কিছু গল্প আছে সব সময় পূর্ণতা পায় না। হয়তো কিছুটা খারাপ লাগা থেকেই যায়। আসলে গ্রাম থেকে যারা শহরে আসে তারা হয়তো শহরের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। আর শহরের মানুষগুলো হয়তো তাদেরকে আপন করতে জানে না।
আপনার গল্প আমি আগে কখনো পড়িনি আজ প্রথম পড়লাম দারুন গল্প লিখেন তো আপু আপনি। খুবই ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। আসলেই গ্রাম থেকে কোন মেয়ে শহরে কলেজে ভর্তি হলে প্রথম প্রথম একটু হাসি তামাশার পাত্রই হতে হয় আস্তে আস্তে মনে হয় ঠিক হয়ে যায় টিভি নাটকে দেখেছি। আর প্রিয়ন্তী মন থেকে নিলয়কে ভালোবেসে ছিল বলেই শত অপমানের পরও তাকে এতটা ভালবাসতে পেরেছিল। আর বিপদের সময় সেই পাশে ছিল, যেটা নিলয় বুঝতেও পারিনি আর যখন বুঝল তখন আর ওকে খুঁজে পেল না। সত্যিই ভালো লাগলো আপনার লেখাটা।
আপু আপনি যেহেতু আজকে প্রথম আমার লিখা গল্প পড়লেন জেনে ভালো লাগলো। যারা আমার লিখা গল্প পড়ে তারা সবাই প্রায় গল্পগুলোই পড়ে। আসলে তারাই ঘুরেফিরে মন্তব্যগুলো করে। আজকে থেকে নতুন একজন সদস্য বেড়ে গেল আপু। যাই হোক চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
আপু অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। 👌 যদি ও পড়ে পরে খারাপ লাগলো। 😔গ্রাম থেকে শহরের ভার্সিটিতে এসে ভর্তি হলে এমনটা হয় আসলে, সবার সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না।প্রিয়ন্তী আর নিলয়, আসলে প্রিয়ন্তী সত্যি ভালবেসেছিল বলেই নিলয়ের পাশে ছিল সব সময়। কিন্তু নিলয় তা বুঝতে পারেনি।আর যখন বুঝলো, তখন সে প্রিয়ন্তীকে হারিয়ে ফেলল।খুব ভাল লাগলো আপু। অনেক অভিনন্দন আপনাকে। 🥰
আপু আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। আসলে গ্রাম থেকে আসা ভার্সিটির অনেকেই হয়তো হেনস্থার শিকার হয়। হয়তো নিজের ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও অপমানিত হয়। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসা না বলাই থেকে যায়।
আরে বাহ্ আরেকটা চমৎকার প্লট। আজকেও আপনার নামকরণটা বেশ ভাল লেগেছে। প্রিয়ন্তী নামটা ভীষণই মিষ্টি লাগে আমার কাছে। বিশ্বাস করবেন কিনা, ভার্সিটি লাইফ এর শুরুতে ফেসবুকে এই নাম দিয়ে সার্চ করে কয়েকটা মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও পাঠিয়েছিলাম 😉। যাই হোক গল্পটা তো সুন্দর হয়েছে সেটা নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে চাইলে কিন্তু আরেকটু হ্যাপি এন্ডিং দেওয়া যেত, তাই না আপু? আসলে এ ধরনের লেখা পড়লে শেষে এসে কেমন একটা আফসোস থেকে যায়। সেখান থেকেই বললাম।
আর আপু, গল্পের প্রথম দুই লাইনে ছোট্ট একটা মিসটেক একটু চোখে লাগলো। সংশোধন করে দেবেন কেমন।
ভাইয়া আমি সব সময় চেষ্টা করি নতুন কোন প্লট নিয়ে নতুন একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। এই নাম দিয়ে যেহেতু ফেসবুকে সার্চ দিয়েছিলেন তাই মনে হচ্ছে এই নামটি আপনার খুবই পছন্দের। প্রিয়ন্তী নামের কেউ একজন আপনার প্রিয় মানুষ হোক এই কামনা করি। যাইহোক ভাইয়া আমি হয়তো ভুল করে সেই প্রথম লাইনটি খেয়াল করিনি। এবার ঠিক করে দিয়েছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপু গল্পটা পড়ে ভালই লাগলো। এমন হাজারো প্রিয়ন্তী রয়েছে আমাদের সমাজে যাদের পোষাক তেমন ভাল না হলেও তাদের মনটা অনেক ভাল। আর ভালবাসার কথা বললেন না। সেটা কখন কার উপর কিভাবে হয়ে যায় সেটা বলা সত্যিই মুশকিল। যেমনটা হয়েছে প্রিয়ন্তীর মাঝে। শেষে তাদের মিলটা হলে ভাল লাগতো। ধন্যবাদ আপু।
সত্যি ভাইয়া আমাদের সমাজে এমন হাজারো প্রিয়ন্তী আছে যারা অন্যের চোখে অবহেলিত। অনেকে হয়তো পোশাক কিংবা চালচলন দেখে মানুষ নির্বাচন করে। কিন্তু পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষটিকে মূল্যায়ন করে না।
আপু মাঝে মধ্যে আপনার লেখা পরি অনেক ভাল লাগে আমার অনুরোধ আপনি একটা উপন্যাস লেখার চেষ্টা করতে অনেক ভাল হবে।ধন্যবাদ আপু