গল্প-নির্জন রাতের আর্তনাদ||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। আর যখন আপনারা গল্পগুলো পড়ে সুন্দর মন্তব্য করেন তখন বেশি ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আমি যখন এই গল্পটি লিখছিলাম তখন আমি প্রচন্ড জ্বর ও মাথাব্যথায় চোখ মেলে তাকাতে পারছিলাম না। তবুও একটি গল্প লিখে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
নির্জন রাতের আর্তনাদ:
Source
নন্দিনী বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। অনেক আদরের সেই ছোট্ট নন্দিনী দিনে বড় হয়ে উঠেছে। বাবা মায়ের চোখের আড়ালে সে পরান নামক একটি ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছে। পরাণ তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষ। নন্দিনী পরানকে অনেক ভালোবাসতো। নিজের ভালোবাসায় আগলে রাখতো তার প্রিয় মানুষটিকে। এভাবে চলছিল তাদের দিনগুলো। হয়তো খুব একটা বেশি দিনের সম্পর্ক নয় তাদের। তবে সম্পর্কের মাঝে অদ্ভুত মায়া তৈরি হয়েছিল। পরান সব সময় নন্দিনীকে খুশি রাখার চেষ্টা করত। নন্দিনী পরানের ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করত। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের সুন্দর দিনগুলো।
একদিন হঠাৎ করে পরান জানায় আর খালাতো বোনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। এই কথা শুনে নন্দিনী ভিশন ভেঙ্গে পড়ে। নন্দিনী যেন দিশাহারা হয়ে পড়ে। সে কিছুতেই পরানকে হারাতে চায়না। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে পরানকে পেতে চায় সে। এবার নন্দিনী কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে। নন্দিনী যখন ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর চিন্তায় দিশেহারা ঠিক সেই সময় পরান নন্দিনীকে বলল চলো আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে যাই। পরানের কথায় নন্দিনী যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পেল। কিন্তু পরক্ষণেই তার বাবা-মায়ের মুখখানি মনে পড়ে গেল। এবার নন্দিনী বলল সে কিছুতেই তার বাবা মাকে এভাবে ঠকাতে পারবেনা। পরানের আবেগময় কথা আর ভালোবাসার মিথ্যে বুলি গুলো নন্দিনীকে যেন নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে পালাতে উৎসাহিত করল। পরের দিন সকাল বেলায় নন্দিনী বেরিয়ে পড়ল পরানের সাথে দেখা করার জন্য। এরপর পরান তাকে জানানো তারা আজ রাতেই এখান থেকে পালিয়ে যাবে। নন্দিনীর মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। বাবা মায়ের কথা ভাবতেই বেশ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু পরানের সেই হাসিমাখা মুখ আর হৃদয় ভোলানো কথাগুলো তার সব কষ্ট গুলোকে ভুলিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে দিন পেরিয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে এলো তখন নন্দিনী বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল। চলে গেল তাদের নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানে গিয়ে দেখে পরান আগে থেকেই সেখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে পরানকে দেখে যেন কান্নায় ভেঙে পড়ল নন্দিনী। আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে আসতে তার ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছিলো না সে। আর বাবার একটি কথা বারবার কানে আসছিল সাবধানে যাস মা। নন্দিনী ও পরান দুজনেই চলে গেল একটি রেল স্টেশনে। তারা অনেকটা সময় সেখানে অপেক্ষা করলো। এরপর পরান নন্দিনীকে বলল তার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই। আর নন্দিনী তখন হাসিমুখে বলল আমি সবটা ম্যানেজ করে নিয়ে এসেছি। বাবার জামানা কিছু টাকা আসার সময় আমি ব্যাগে তুলে নিয়ে এসেছি। নন্দিনীর মুখে এই কথাগুলো শুনে পরানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
এরপর দুজনে একটি ট্রেনে উঠে গেল। কোন এক অজানা পথে পাড়ি জামাচ্ছে তারা। নন্দিনী শুধু বারবার জানতে চাচ্ছে তারা কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু পরান কিছুতেই কিছু বলছে না। শুধু বলছে সবটা দেখতেই পাবে। মা-বাবার কথা মনে করে নন্দিনীর দুচোখের পানি পড়ছে। কখন যে দু চোখের কোনে পানি গড়িয়ে গাল পর্যন্ত এসেছে বুঝতেই পারেনি সে। এরপর হঠাৎ করে নন্দিনী ঘুমিয়ে যায়। ঘুম ভেঙে যায় মাঝরাতে। ঘুম ভেঙে দেখে পরান তার পাশে নেই। পরানকে না দেখে নন্দিনী বেশ আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়। আর সেখানে দেখতে পায় মানুষরূপী কিছু জানোয়ারকে। যারা নন্দিনীর দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে ছিল। নন্দিনী বারবার চিৎকার করে পরানকে ডাকতে লাগে। কিন্তু তার চিৎকারে পরান আর ফিরে আসেনি। সেইসাথে নন্দিনী হারিয়ে ফেলল নিজের শেষ সম্মানটুকু। নন্দিনীর আর বুঝতে বাকি রইল না তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে ভালোবাসতে পারেনি। শুধুই অভিনয় করেছে।
নন্দিনী যখন নিজের সম্মানটুকু হারিয়ে কোন এক কামরার কোনায় গিয়ে বসেছিল তখন হঠাৎ করেই কেউ একজন তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল তোমাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তাই তো তুমি আমাদের সাথে যাবে। এই কথা শুনে নন্দিনী যেন আকাশ থেকে পড়ল। তার ভালোবাসার মানুষটি থাকে বিক্রি করে দিবে এটা সে কখনো ভাবতেই পারেনি। লাখ টাকার বিনিময়ে নন্দিনীকে বিক্রি করে দিয়েছে পরান। এসব শুনে নন্দিনীর তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে বুঝতে পেরেছিল এই ভয়ংকর রাত থেকে তাকে শুধু মৃত্যুই রক্ষা করতে পারে। কোন কিছু না ভেবে ট্রেন থেকে ঝাপ দেয় নন্দিনী। নন্দিনীর ক্ষতবিক্ষত দেহটা হয়তো দেখার মত ছিল না। হয়তো কেউ দেখেনি তার ভেতরের কষ্ট। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে যখন নন্দিনী এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে তখন তার কষ্ট এই অন্ধকার রাত দেখেছে। একটি অন্ধকার রাতের সাথে সাথে নন্দিনীও সেই অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। শেষ করে দিয়েছে নিজের সুন্দর জীবন।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আপু, নির্জন রাতের আর্তনাদ গল্পে নন্দিনীর করুন কাহিনী পড়তে পড়তে আমি যেন বেদনার স্রোতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। পরান কে ভালোবেসে নন্দিনীকে এভাবে যে সেই ভালোবাসার মূল্য চুকাতে হবে তা হয়তো নন্দিনী দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। পরানের মিথ্যে ভালবাসায় অজানার পথে পাড়ি দিয়ে নন্দিনী হারালো তার সম্মানটুকু, হারালো তার তরতাজা প্রাণটা। সত্যিই আপু, অন্ধকার রাতের সাথে সাথে নন্দিনীও যেন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। নন্দিনীকে নিয়ে যদিও বা আপনি গল্প লিখেছেন, তবুও এই গল্প পড়ে কেন জানি আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। যাইহোক আপু, প্রতিনিয়ত সুন্দর সুন্দর গল্পগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপু নির্জন রাতের আর্তনাদ গল্পে নন্দিনীর জন্য অনেক খারাপ লাগল। সত্যি আপু এমন কিছু মানুষ আছে যারা ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না। পরান নন্দিনীকে নিয়ে বিক্রি করে দেবে এটা আসলেও অনেক দুঃখ জনক ঘটনা।সত্যি অবশেষে নন্দিনী বাধ্য হয়ে রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি গল্পটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
বেশ দুর্দান্ত গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে সবার ভালোবাসা কপালে জুটে না। ভালোবাসার কারণে অনেকে জীবনের অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। গল্পের মাঝে বেশ কষ্টের কাহিনী লুকিয়ে আছে যা সত্যি হৃদয়বিদারক। আপনার গল্প উপস্থাপন বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মানুষ ভুল করে অনেক সময় ভুলে পড়ে নিজের আবেগের বশে, কারণ ভালোবাসা আর মন এমন একটা জিনিস যখন মনটা কোন স্থানে এমন ভাবে জড়িত হয়ে যায় তাকে ফেরানো বড়ই কঠিন। আর এই আবেগঘন মনটা তখনই ধ্বংসের পথে নেমে যায় যদি তার সাথে প্রিয়জন বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণা করে থাকে।
এই ধরনের কাহিনী বাস্তবেও ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত। হয়তো অনেক সময় আমরা শুনি,আবার অনেক সময় শুনি না। তবে পরানের মতো এই সমস্ত নরপিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। একটি মেয়ে কতোটা বিশ্বাস করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু সেই বাটপার গুলো এভাবে মেয়েদেরকে ঠকায়। তাই আমি মনে করি মেয়েদের উচিত বাবা মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।