লাইভ স্টাইল-একটি ব্যস্ততম দিন আর আমার অনুভূতি||
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে একটি ভিন্ন ধরনের পোস্ট শেয়ার করতে যাচ্ছি। কালকে সারাদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় কেটেছে। আর কি কারণে এত ব্যস্ত ছিলাম সেই বিষয়ে একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার অনুভূতি জেনে আপনাদের ভালো লাগবে।
একটি ব্যস্ততম দিন আর আমার অনুভূতি:
Location
Location
জীবন যেমন অদ্ভুত তেমনি জীবনের সমীকরণ মেলানো বেশ কঠিন। জীবনের বাস্তবতা মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। গতকালকে আমি তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। আর এখন তিনি অবসরে আছেন। আসলে জীবন সত্যি বড় কঠিন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ অনেক কিছুই শিখে যায়। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে বাবা অনেকবার ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলেন। দিনশেষে সবাই ঠকিয়েছে। কিংবা প্রতারণা করেছে। যারা ভালো মানুষ তারা সবাইকে খুব সহজেই বিশ্বাস করে। আর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই অনেকে তাদেরকে একেবারে ঠকিয়ে যায়। বাবার ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। সেই গল্পগুলো না হয় অন্য একদিন করব।
Location
Location
জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে হয়তো জীবন চলে যায় জীবনের মতই। আমরা হয়তো চেয়ে চেয়ে দেখি কিছুই করতে পারি না। হয়তো বাবার জন্য তেমন কিছুই করা হয়ে ওঠেনা। অনেক কষ্ট করে বাবা নিজের জীবনের নতুন স্বপ্নে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমার দাদুর বেশ কিছু জমে ছিল নদীর খুবই কাছাকাছি। যেই জমিগুলো যখন তখন নদী ভাঙ্গনে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তবুও বাবা কোন এক আশায় নতুনভাবে সেই ভাঙ্গা ঘড়ার খেলায় মেতেছেন। নদীর কূল ঘেঁষে বাবার যেই জমিগুলো ছিল সেই জমিগুলোর বুকে ফসল ফলানোর চেষ্টা করেছেন। কয়েকদিন থেকেই বাবা বলছিল তোমরা কোনদিনও আমার জমিগুলো দেখতে গেলে না। এরপর গতকাল যখন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠলাম তখন মা বলল আজকে গিয়ে ঘুরে আসতে পারো। ছোট বোনকে বললাম যাবি নাকি? সে বলল ঠিক আছে যাবো।
Location
সেই লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। কিছুদূর পর্যন্ত মোটরসাইকেলে গেলাম। এরপর গিয়ে দেখি সেখানে কোন রাস্তাই নেই। ভুলভাল রাস্তায় বারবার চলে যাচ্ছিলাম আমরা। রাস্তার মাথায় গিয়ে দেখি রাস্তার শেষ সেখানেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। এরপর আবার অনেক কষ্ট করে ঘুরে এসেছি। কিছুদূর আসার পর দেখলাম চারিদিকে শুধু বালুচর। যদিও এরকম রাস্তায় হাঁটার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই। তাই প্রথমবার গিয়ে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। আমার জন্য পা এগোতেই চাচ্ছিল না। ভিশন ক্লান্ত লাগছিল। মনে হচ্ছিল যেন সামনের সেই নদীতে গিয়ে নেমে পড়বো। তবে চারপাশের পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছিল। অনেক কষ্ট করে নদীর বুকে জেগে ওঠা চর পার করেছি আমরা।
Location
কিছুদূর যাওয়ার পর আমার বোন বলল সে আর যাবে না। তার পা ব্যথা করছে। এরপর বললাম এতদূর যখন এসেছি তখন যাবোই। অবশেষে আমরা ধীরে ধীরে নিজের লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছালাম। বালুচর পার হওয়ার পর যখন নদীর কাছাকাছি গেলাম তখন এত ভালো লাগছিল যেটা বলার মত নয়। নদীর পাড়ের মিষ্টি হাওয়া আর সুন্দর প্রকৃতি মনে হচ্ছিল যেন আরও কিছুটা সময় সেখানে কাটাই। এরপর দেখলাম একটি নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। উঠে পড়লাম নৌকায়। নৌকা ভ্রমণের সেই গল্পটা না হয় আরেকদিন শেয়ার করব। তাই আজকে আর সেদিকে গেলাম না। এরপর আমরা নদী পার হয়ে গেলাম। নদী পার হয়ে যাওয়ার পর দেখলাম আমাদের জমিগুলোর এক কোনায় একটি বড়ই গাছ। বড়ই আমার খুবই পছন্দের। তাই আমার বোন বেশ কিছু বড়ই হাত দিয়ে ছিড়ে নিল। গাছটি ছোট হলেও অনেক বড়ই ছিল। তাই আমি আর আমার বোন মিলে বেশ কিছু বড়ই সেখান থেকে নিলাম। এরপর কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি বাবা সেখানে আছেন।
Location
বাবা চারপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের জমিগুলো দেখালেন। আর গম ক্ষেত, ভুট্টা ক্ষেত এবং বিভিন্ন শাক সবজির ক্ষেতগুলো দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছিল। প্রতিদিন অনেকগুলো লোক সেখানে কাজ করে। আর বাবা সবার দেখাশোনা করছিলেন। কেউ মেশিনে পানি তুলছিলেন জমিতে পানি দেওয়ার জন্য, কেউবা সার ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। আবার অনেকে জমির ঘাস গুলো পরিষ্কার করছিলেন। বাবা যখন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উনার ফসলের ক্ষেতগুলো দেখাচ্ছিলেন তখন ওনার মুখে যেন আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিল। তবে আমার কেন জানি ভেতরটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল😭। বাবারা কত কষ্ট করে আমাদের জন্য কিন্তু তাদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। এই বয়সে এসেও কতটা পরিশ্রম করে তারা। আমি একদিন সেখানে গিয়ে হাপিয়ে উঠেছি অথচ বাবা প্রত্যেকদিন সেখানে যান দেখাশোনা করার জন্য। আজকে যখন এই লেখাগুলো লিখছিলাম তখন আমি নিজের কান্না ধরে রাখতে পারিনি😭😭। মাঝে মাঝে মনে হয় এই জীবন বৃথা। কারণ কখনো বাবার পাশে দাঁড়াতে পারলাম না। সারা জীবন চাকরি করে পরিশ্রম করেছেন আর এখন শেষ বয়সে এসেও পরিশ্রম করতে হচ্ছে। জীবনের বাস্তবতাটা সত্যিই অনেক বেশি কঠিন।
আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।
আপনার বাবার সাথে দুই বোন মিলে নিজেদের ফসলের মাঠ দেখতে গিয়েছিলেন জেনে বেশ ভালো লাগলো। গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসলেই অনেক বেশি ভালো লাগে আপু। হ্যাঁ আপু যারা কৃষি কাজ করে তাদের অনেক কষ্ট হয় সত্যি। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
গ্রামীন প্রকৃতির মাঝে এত সুন্দর পরিবেশে দারুন সময় কাটিয়েছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
আপনার এই পোষ্ট সম্পর্কে আমি আগেই কালকে ডিস্কোডে আপনার সাথে কথা বলে কিছুটা জানতে পেরেছিলাম।
আসলে এরকম ভাবে ঘোরাফেরা করা একটু কষ্ট হলেও মজাটা অন্যরকম।
ব্যস্ত ময় একটা দিন ছিল। সেই সাথে কষ্টও অনেক হয়েছে।
তবে ফটোগ্রাফি গুলো কিন্তু দারুন লাগলো।
সত্যি ভাইয়া প্রথমে অনেকটা কষ্ট হয়েছিল। তবে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও বেশ ভালো সময় কাটিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
আপু মুহূর্ত পড়ার আগে আমি আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখছিলাম। নদীর চরের ফটোগ্রাফি এবং আবাদি জমিগুলোর ফটোগ্রাফি গুলো বেশ ভালো করেছেন। সত্যি সবাই মিলে ঘুরাঘুরি করতে খুবই ভালো লাগলো। বেশ ভালো লাগলো আপনার শেয়ার করা অনুভূতি পড়ে।
ফটোগ্রাফি গুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি আপু আমরা গিয়ে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু ঠিক বলেছেন,যারা সৎ থাকতে চাই,তাদেরকে সবাই ঠকিয়ে যায়। আপনার বাবার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। চড়ে গিয়ে দারুন একটি দিন অতিক্রম করেছেন। গম ক্ষেত আর নদীর চরের ফটোগ্রাফি গুলো দারুন ছিল। ধন্যবাদ।
সত্যি ভাইয়া যারা সৎ থাকতে চায় তারা সব সময় ঠকে যায়। আর সব সময় মানুষকে সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
আপু এরই নাম বুঝি বাবা ৷ যে বাবা তার সন্তানদের পরিবারের জন্য কত কিছু সহ্য করে ৷ আর আমরা বিনিময়ে কিছুই দিতে পারি না ৷ সবচেয়ে ভালো লাগলো আপনার বাবার জমি জমা গুলো এখন কি সুন্দর ফসল হচ্ছে ৷ এই অবসর সময়ে নিজের জমি টুকু চাষ করেই হয়তো সময় অতিবাহিত করতে চায় ৷ আপনার বাবার জন্য দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ থাকে সবসময়েই ৷ আর আপনি দারুন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন ৷
সত্যি ভাইয়া বাবারা সবসময় পরিবারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। আর তারা হাসিমুখে সব কষ্ট সহ্য করে নেয়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
পৃথিবীতে সবচেয়ে অবহেলিত একটি নাম হচ্ছে বাবা। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে ঠিকই, কিন্তু দিনশেষে তাদেরকে ততোটা মূল্যায়ন করা হয় না,যতটুকু মা'কে মূল্যায়ন করা হয়। তবে যার বাবা নেই, সে ই বুঝে বাবা কি জিনিস। প্রতিটি বাবা সন্তানদের মাথার উপর বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে যান। আপু সহজ সরল লোকেরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারে না। কারণ সবাই ঠকাতে চায়। আপনার বাবার ক্ষেতগুলো দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আপনারা দুই বোন গিয়ে জমিগুলো দেখেছেন,এতে করে আপনার বাবাও খুব খুশি হয়েছেন। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে বাবা। আমরা হয়তো বাবার কষ্ট কখনো বুঝতে পারি না। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।