গল্প-জীবন প্রদীপ||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লিখার চেষ্টা করি। তাইতো আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


জীবন প্রদীপ:

ai-generated-8085404_1280.png

Source


সময়টা হয়তো বড় কঠিন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কষ্টের দাড়িপাল্লা যেন ভারী হয়ে চলে। আনমনে কথাগুলো ভাবছে নীলিমা। নীলিমা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল অয়নকে। কিন্তু ভালোবাসা কেন জানি সময়ের সাথে সাথে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। দুই পরিবারের অমতে দুজন মানুষ ঘর বেঁধেছিল। সুখে শান্তিতে পরিপূর্ণতা পেয়েছিল তাদের দুজনের ভালোবাসার সংসার। হয়তো বিলাসিতা ছিল না কিন্তু দুজনের বোঝাপড়া ছিল অনেক বেশি মজবুত। ছোট্ট এই সুখের সংসারে কখন যে অন্ধকারের কালো ছায়া নেমে এলো নীলিমা বুঝতেই পারেনি। অয়ন সময়ের সাথে সাথে বদলে যেতে লাগলো। অয়নের এই ভিন্ন রূপ নীলিমাকে ভীষণ কষ্ট দিত। নীলিমা মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবতো আর সেই অয়নকে খোঁজার চেষ্টা করত। যাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। যার হাত ধরে চলে এসেছিল এই ছোট্ট কুঁড়েঘরে।


এখন আয়নের ছোট্ট একটি চাকরি হয়েছে। তাদের সংসারে হয়তো অভাব নামক শব্দটি ঘুচে গেছে। কিন্তু ভালোবাসার অভাব আঁশটিপিষ্টে বেঁধে ফেলেছে তাদের। দুজন মানুষের মধ্যে যে ভালোবাসাটা ছিল সেটা কেন জানি সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে। নীলিমা সারাদিন ঘরে বসে অয়নের জন্য অপেক্ষায় থাকে। অয়ন কখন অফিস থেকে ফিরবে এই প্রতীক্ষায় নীলিমার দিন কেটে যায়। দেখতে দেখতে কেটে গেল প্রায় দুটি বছর। এই দুই বছরের মাঝে নীলিমা মুখ ফুটে কখনো অয়নের কাছে কিছু চায়নি। প্রথম প্রথম অয়ন নীলিমাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু সময় যত যেতে লাগলো ভালোবাসার রং যেন ফ্যাকাসে হতে লাগলো। যেই ভালোবাসার টানে নীলিমা ছুটে চলে এসেছিল সেই ভালোবাসা যেন আজ তার কাছে বেরঙিন। নীলিমার বারবার মনে হচ্ছিল সে হয়তো অন্য কোন অয়নকে দেখছে। হঠাৎ একদিন নীলিমা অয়নের ফোনে একটি মেসেজ দেখল। অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে সে। অয়নের এরূপ বদলে যাওয়ার কারণ নীলিমা বুঝতে পারল।


দু চোখের নোনা জল যখন নীলিমার গাল বেয়ে মাটিতে পড়ছিল তখন হঠাৎ করেই নীলিমার মনে পড়ে গেল তাকে বাঁচতে হবে। হয়তো অন্য কারো জন্য বাঁচতে হবে। নীলিমা এবং অয়নের সন্তান এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে। নীলিমা নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছে। কিন্তু তার ভালোবাসার শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু হারাতে চায় না। দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। নীলিমা অয়নকে কখনো বুঝতেও দেয়নি যে সে সবটা বুঝে গেছে। অয়নের মিথ্যে অভিনয় আর মন ভুলানো কথাগুলো নীলিমার কাছে আজ বড্ড বেশি বেমানান লাগে। আড়ালে গিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে নীলিমা। অয়নের সেই মিথ্যা কথাগুলো তার হৃদয়ে অনেক বেশি আঘাত করে। হয়তো সেই আঘাতের ভাগীদার কেউ হয় না। আজ কেন জানি নীলিমার বড্ড বেশি একা একা লাগছে। বারবার ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখছে অয়ন কখন আসবে। হয়তো তার প্রতীক্ষার প্রহরার কাটছিল না। এদিকে নীলিমার শরীরটা বড্ড বেশি খারাপ ছিল। বারবার অয়নকে বলেছিল সে যেন আজ অফিসে না যায়।


সেই সকালবেলায় অয়ন বেরিয়ে গেছে। একবারও নীলিমার খবর নেয়নি। নীলিমা বুঝতে পারছিল তার শরীরটা খুব একটা ভালো নেই। হাতে তার সেই পুরনো ডাইরি। যেখানে অয়ন ও তার ভালোবাসার কথা লিখেছিল নীলিমা। আজ বড্ড বেশি লিখতে ইচ্ছে করছিল নীলিমার। তাই তো সেই ডায়রির পাতা উল্টাতেই সেই পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছিল নীলিমার। নীলিমা কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিল। আর বারবার সেই পুরনো মানুষটার ভালোবাসার স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছিল মনে। সময় যেমন বদলে গেছে তেমনি সেই চিরচেনা ভালোবাসার মানুষটিও যে বদলে গেছে। নীলিমা কথাগুলো ভাবছিল আর মনের অজান্তেই কিছু কথা ডায়েরিতে লিখেছিল। হয়তো নিজের কষ্ট থেকে সে নিজের মনের কথাগুলো লিখেছিল। হয়তো এই লেখাই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা। নীলিমা ভাবছিল অয়ন হয়তো কোন একদিন এই ডায়রি পাবে। মনের অজান্তে যদি কোন একদিন ডায়েরির পাতা খুলে তাহলে তার হৃদয় কেঁপে উঠবে। এসব ভাবতে ভাবতেই এর মাঝে হঠাৎ করে নীলিমা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অয়নকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল নীলিমা। কিন্তু অয়ন ফোনটা রিসিভ করেনি। ঠিক সন্ধ্যা বেলায় যখন বাড়ি ফিরে এলো তখন দেখল ভেতর থেকে দরজাটা লাগানো। অনেক ডাকাডাকির পর নীলিমা দরজা খুলছে না। এরপর কোনরকমে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো অয়ন। ভেতরে ঢুকে দেখে নীলিমা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।


নীলিমাকে নিয়ে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায় অয়ন। হসপিটালে নেওয়ার পর নীলিমার অবস্থা দেখে ডক্টর ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে ডক্টর এসে অয়নকে জানায় তারা মা এবং বাচ্চা কাউকেই বাঁচাতে পারেনি। হয়তো সময়মতো নীলিমাকে হসপিটালে নিয়ে এলে সেও বাঁচতে পারতো। হয়তো বেঁচে যেত দুটি জীবন প্রদীপ। হয়তো অয়নের জন্যই আজ মা ও শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। সেদিন অয়ন চিৎকার করে কেঁদেছিল। নিজের স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু ভালোবাসা যখন হারিয়ে যায় তখন তার জন্য কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেই। ভালোবাসার মানুষটিকে যদি আগলে রাখতে পারতো তাহলে হয়তো দুটো জীবন প্রদীপ নিভে যেত না। হয়তো কোন একদিন নীলিমার সেই ডাইরিটা অয়ন হাতে পাবে। হয়তো নীলিমার সেই আর্তনাদ বুঝতে পারবে অয়ন। সেদিন ডুকরে ডুকরে কাঁদবে অয়ন। কিন্তু তার ভালোবাসার নীলিমা আর কখনোই ফিরে আসবে না। হয়তো এভাবেই অবহেলায় শেষ হয়ে যায় তাজা প্রাণগুলো। আমরা সবাই ভালোবাসার ভিখারি। হয়তো ভালোবেসে ভালো থাকতে চাই। কিংবা ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে একটু বাঁচতে চাই।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 last year 

গল্প টা পড়ে খুব বেশি খারাপ লাগছে আপু। আসলে সত্যি পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করে কখনো সুখী হওয়া যায় না।আর ছেলেরা খুব সহজে কিছু পেয়ে গেলে তারা তার মূল্য দিতে জানে না।আপু আপনার গল্প টা বাস্তবের সাথে অনেক মিল রয়েছে। এমন গল্প আরও চাই আপু।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু পরিবারের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করে কখনোই কেউ সুখী হয় না। তবে যখন ভালোবাসার মানুষটি বদলে যায় তখন সত্যিই অনেক খারাপ লাগে। চেষ্টা করব এরকম নতুন নতুন গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

এই ধরনের গল্প পড়লে বা কাহিনী শুনলে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। একটি মেয়ে কতোটা ভালোবেসে নিজের পরিবার ছেড়ে, একটি ছেলের সাথে আলাদাভাবে ঘর বাঁধে। কিন্তু কিছু ছেলে আছে একটা সময় পাল্টে যায়। ভালোবাসার মানুষকে একেবারে ভুলে যায়। এই গল্পের অয়ন আসলে একজন অমানুষ। তাইতো অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। অয়ন মানুষ হলে নীলিমাকে এতো কষ্ট পেয়ে মরতে হতো না। যাইহোক এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

এই ধরনের গল্পের কাহিনী আপনার ভালো লাগে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। প্রিয় মানুষটির হাত ধরে যখন কেউ ঘর বাঁধে তখন অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন সেই মানুষটি বদলে যায় তখন অনেক খারাপ লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য প্রকাশের জন্য।

 last year 

আসলে সময় থাকতে যদি ভালোবাসার মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে অসময়ে চিৎকার চেঁচামেচি কান্না করে কোন লাভ নেই। নীলিমার কষ্ট হয়তো অয়ন বুঝবে একদিন। এভাবে যারা নিজের ঘরে স্ত্রীদেরকে রেখে বাইরে পরকিয়ায় লিপ্ত থাকে তারা কখনো সুখী হয় না। শেষমেষ অয়নের কারণে দুটি জীবন দিতে হলো।হয়তো সে শাস্তি সে নিজে ভোগ করবে। আপনার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে এবং খুবই হতাশার একটি গল্প।

 last year 

হয়তো ভালোবাসার মাঝেও অনেক সময় ভুল থেকে যায়। তাই তো ভুল মানুষকে বেছে নিয়ে জীবনের করুণ পরিণতি হয়। আপু আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আজকে আপনার লেখা জীবন প্রদীপ গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আপনার লেখা গল্পে নীলিমার চরিত্র বেশ দুর্দান্ত ছিলো। গল্পটা পড়ে নীলিমার জন্য কষ্ট হচ্ছে। বলা যায় যে বর্তমান সমাজের বাস্তব কিছু চরিত্র গল্পের মাধ্যমে আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন। এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

হয়তো এভাবেই অবহেলায় শেষ হয়ে যায় নীলিমার মত মেয়েদের জীবন। তবুও কেন জানি সবাই ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

এমন হাজারো কাহিনী চোখের সামনে দেখেছি। যখনই কেউ পরিবারের অবাধ্য হয়ে কোন ছেলেকে বেশী মূল্যায়ণ করে এবং সেই ছেলেটিকে জীবন সঙ্গী হিসাবে মেনে নেয়। তখনই সেই মেয়েটির কপালে নেমে আসে সীমাহীন ‍দুঃখ। আর এক সময়ে সেই ছেলেটিও আর তাকে মূল্যায়ণ করে না। অনেক সুন্দর একটি গল্প আজ আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। শুভ কামনা রইল আপনার প্রতি।

 last year 

এরকম চিত্র চোখের সামনে অনেক দেখতে পাওয়া যায়। হয়তো ভালোবেসে জীবন দিতে হয় অনেককে। এভাবেই হয়তো দিনের পর দিন তাদের চোখের সামনে এই নির্মমতা দেখতে পাই আমরা। ধন্যবাদ আপু।

 last year 

আপু আপনার গল্পগুলো বেশীর ভাগ সময়ই কষ্টের হয়।😂 নীলিমার এভাবে বিদায় সত্যি ই কষ্টকর।সময়মতো হয়তো গেলে বাঁচানো যেতো। অয়ন তার ভুল গুলো পরে বুঝে কি লাভ?? নীলিমাকে তো আর ফিরে পাবেনা।ধন্যবাদ আপু কষ্টের এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

কেন জানি কষ্ট নিয়ে লিখতে ভালো লাগে। তাই তো যখনই লিখতে বসি তখনই কষ্টের গল্প গুলোই লিখতে ইচ্ছে করে। আসলে ভুল করার পর যখন ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে যায় তখন ভুল বুঝেও আর কোন লাভ হয় না।

 last year 

অনেক খারাপ লেগেছে আমার কাছে এই গল্পটা পড়ে। আমার তো চোখে জল চলে এসেছিল। আসলে মানুষ ভালোবেসে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায় ভালোবাসার মানুষটার সাথে থাকার জন্য, কিন্তু অয়ন এভাবে বদলে যাবে তা নীলিমা একেবারেই বুঝতে পারেনি। আমি তো মনে করি আয়নের কারণে ই এখন নীলিমা এবং তার সন্তান মারা গিয়েছে। হয়তো একদিন সে সেই ডাইরিটা পাবে। সম্পূর্ণ গল্পটা শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

 last year 

আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনার চোখে জল চলে এসেছে জেনে সত্যিই খারাপ লাগলো। আসলে অনেক সময় জীবনের বাস্তবতা গুলো বড় কষ্টের হয়। যাই হোক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

 last year 

আমি যখন আপনার এই গল্পটি পড়ছিলাম তখন নীলিমা এবং তার সন্তানের জন্য বুকটা যেন একেবারে কেঁপে উঠেছে। অনেক বেশি কষ্ট লেগেছে তাদের এরকম পরিণতির কথা শুনে। অয়ন যদি নীলিমার ফোন ধরতো এবং কি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে চলে আসতো তাহলে এরকম কিছুই হতো না। নীলিমা এবং তার সন্তান একেবারে সুস্থ থাকতো। নীলিমার মৃত্যুর কথা শুনে খারাপ লেগেছে। বাস্তবিক ঘটনাগুলোকে তুলে ধরে এরকম গল্প গুলো লিখলে সত্যি অনেক বেশি খারাপ লাগে।

 last year 

নীলিমা এবং তার সন্তানের জন্য আপনার খারাপ লেগেছে জেনে সত্যিই আমার কষ্ট লাগলো। আসলে ভালোবাসা যদি কেউ ধরে রাখতে না জানে তাহলে এভাবেই হারিয়ে যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 67338.51
ETH 2672.27
USDT 1.00
SBD 2.72