নাটক রিভিউ-বিদিশা|

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি@monira999। আমি একজন বাংলাদেশী। আজকে আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে একটি নাটক রিভিউ শেয়ার করতে যাচ্ছি। যেহেতু রমজান মাস তাই নাটক দেখার সময় হয়ে উঠছে না। ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে। তবুও একটি শর্ট নাটক দেখার চেষ্টা করেছি আর আপনাদের মাঝে রিভিউ শেয়ার করতে চলে এসেছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


IMG_20240312_164523.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


❂নাটকের কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য:❂
নামবিদিশা
পরিচালনামোঃ মোস্তফা কামাল রাজ
প্রধান সহকারী পরিচালকমোঃ ওমর ফারুক
সহকারী পরিচালককে এম সোহাগ রানা
অভিনয়েসাবিলা নূর ও আরো অনেকে
দৈর্ঘ্য৩৫ মিনিট
মুক্তির তারিখ৮ মার্চ ২০২৪
ধরনড্রামা
ভাষাবাংলা
দেশবাংলাদেশ
চরিত্রেঃ
  • সাবিলা নূর-বিদিশা
কাহিনী সারসংক্ষেপ


Screenshot_2024-03-12-16-15-05-91.jpg
Screenshot_2024-03-12-16-16-13-98.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


নাটকের শুরুতেই দেখতে পাই এই নাটকের প্রধান চরিত্র অর্থাৎ বিদিশা একটি বাসায় টিউশনি করতে গেছে। আর টিউশনি থেকে ফেরার সময় কিছু বখাটে ছেলে তাকে উত্তপ্ত করছে। এমনকি তার গায়ের রং নিয়েও তাকে অপমান করছে। বিদিশা দেখতে কালো। কিন্তু তার অন্য কোন গুনের অভাব নেই। বিদিশা কালো হলেও তার গুণের একদমই কমতি ছিল না। নম্র, ভদ্র স্বভাবের একটি মেয়ে বিদিশা। আর পড়াশোনাতেও ছিল সেরা। পরের দিন যখন বিদিশা আবারও টিউশনিতে আসে তখন তার স্টুডেন্ট এর মাকে বলে তিনি যেন তার ভাইকে বলে বিদিশাকে একটু এগিয়ে দিতে। কারণ রাস্তার মোড়ের বখাটে ছেলেগুলো তাকে অনেক বাজে কথা বলে। এটা শোনার পর তার স্টুডেন্টের মা বলে তুমি যে কালোর কালো তোমার দিকে মানুষ ফিরে তাকায় এটা ভাবতেই পারছি না। আর তোমাকে টিস করা তো অনেক দূরের কথা। বিদিশা ভীষণ কষ্ট পায় আর সেখান থেকে চলে যায়।


Screenshot_2024-03-12-16-17-27-04.jpg
Screenshot_2024-03-12-16-17-58-24.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


বিদিশা যখন বাসায় ফিরে তখন তার বাবার মুখেও তার কুৎসিত চেহারা সম্পর্কেও কথা শুনতে হয়। বিদিশা দেখতে কালো বলে তার পরিবারের মানুষগুলো তাকে অপমান করতে ছাড়ে না। তার বাবাও তাকে অপমান করে। আর বিদিশা ভীষণ কষ্ট পেয়ে যায়। এরপর পরের দিন বিদিশা জানতে পারে তাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসছে। ছেলের নাকি অনেক বয়স আর তার একটি বাচ্চাও আছে। বিদিশার বাবা কি করে এমন ছেলের সাথে বিদিশার বিয়ের কথা বললেন এটা বিদিশার মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। এরপর ছেলে বিদিশাকে দেখতে চলে আসলো। বিদিশাও তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এবার ছেলেটি বিদিশার সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাইলো। আর বলল তুমি কি কারো সাথে প্রেম করেছো? তখন বিদিশা বলল যে না আমি কখনো প্রেম করিনি। এরপর ছেলেটি বলল তুমি যে কালো তোমার সাথে প্রেম করবে কে। আর বলল আমার একটি সন্তান আছে। সবকিছু জানার পরেও যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমি রাজি আছি। বিদিশাও রাজি হয়ে গেল। এরপর সেই বয়স্ক ছেলেটিও বিদিশার বাবার কাছে মোটা অংকের যৌতুক চাইলো। বিদিশা তখন ভীষণ কষ্ট পেল। আর বাবার মুখ থেকে অনেক কটু কথা শুনল।


Screenshot_2024-03-12-16-21-23-31.jpg
Screenshot_2024-03-12-16-25-37-47.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


অন্যদিকে বিদিশা বন্ধুদের কাছ থেকেও অপমানিত হতো সব সময়। তার কালো চেহারার জন্য নাকি তাদের সেলফি নষ্ট হয়ে যায় এটাও শুনতে হলো তাকে। বাবা, বন্ধু বান্ধবী সবার কাছ থেকে যখন অপমানিত হয়ে বিদিশা একেবারে ভেঙে পড়েছিল তখন বিদিশার মা বিদিশার পাশে দাঁড়ালো। বিদিশার মা বিদিশাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবার অপমানে বিদেশা যখন ভেঙে পড়েছিল তখন বিদিশার মা তাকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। বিদিশার মাতা বিদিশাকে বললেন তুমি এমন কিছু করে দেখাও যাতে করে তোমার ভেতরের আলো সবাই দেখতে পায়। উপরের কালোটা তখন এমনিতেই ঢাকা পড়ে যাবে। তোমার গুনের প্রশংসা করবে সবাই। মায়ের কথায় উৎসাহিত হয়ে বিদিশা পুরোদমে পড়াশোনায় লেগে পড়লো। বিদিশা আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজের সফলতা অর্জন করে নিয়েছিল। বিদিশা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। এরপর থেকে যেন তার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। সে তার স্টুডেন্টের বাসায় গিয়ে বলল সে আর টিউশনি করাতে পারবে না। কারণ তার বিসিএস পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এবং তার খুব শীঘ্রই চাকরি হয়ে যাবে।


Screenshot_2024-03-12-16-28-02-81.jpg
Screenshot_2024-03-12-16-33-36-05.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


বিদিশার জীবনের সফলতার সাথে সাথে তার চারপাশের মানুষগুলোও যেন বদলে যেতে লাগলো। এমনকি তার বাবাও তাকে ভীষণ ভালোবাসতে লাগলেন। বিদিশার প্রতি যত্ন নিতে লাগলেন। এমনকি বিদিশাকে অপমান করা মহিলাটিও তার ছোট ভাইকে নিয়ে বিদিশার বাসায় চলে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু বিদিশা তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছিল। কারণ সেই মহিলাটি বিদিশাকে কালো বলে অনেক অপমান করেছিল। এরপর হঠাৎ করেই যেই বয়স্ক লোকটির উদয় হলো। যে বিদিশাকে যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে করতে চেয়েছিল। এখানেও বিদিশা প্রতিবাদ করল। আর বলল আমি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি কিন্তু চাকরি করতে চাই না। আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? তখন লোকটি বলল তুমি চাকরি করলে আমরা সবাই বসে বসে খাব। তাইতো তোমাকে বিয়ে করব। এরপর বিদিশা লোকটিকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিল। বিদিশার এই প্রতিবাদ দেখে বিদিশার মা-বোনের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিল। বিদিশা নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিল। নিজের সফলতা তার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। নিজের সফলতার মাধ্যমে বিদিশা নিজের সম্মান ফিরে পেয়েছিল।


Screenshot_2024-03-12-16-34-07-64.jpg
Screenshot_2024-03-12-16-41-02-13.jpg

স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব

☬☬☬ব্যক্তিগত মতামত:☬☬:☬


এই নাটকটি আমার কাছে খুবই শিক্ষনীয় মনে হয়েছে। আসলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সবাই সুন্দর। কেউ কালো, কেউ বা খাটো, কেউ বা মোটা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতেই সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তাইতো কারো সৌন্দর্য নিয়ে কাউকে অপমান করা কখনোই উচিত নয়। কালো বলে বিদিশা যেমন সবার কাছ থেকে অপমানিত হয়েছিল তেমনি ভেতরে ভেতরে ভীষণ কষ্টও পেয়েছিল। আসলে আমরা সব সময় মানুষের উপরের রূপ দেখে মুগ্ধ হই। ভেতরের সৌন্দর্য কিংবা ভেতরের মানুষটাকে দেখে মুগ্ধ হই না। রূপের চেয়ে গুণের প্রাধান্য যদি আমরা বেশি দিতাম তাহলে হয়তো সেই মানুষগুলো ভালো থাকতে পারতো। তাহলে হয়তো আমাদের সমাজের হাজার হাজার বিদিশাকে নিরালায় কাঁদতে হতো না। তাহলে হয়তো বিদিশার মত মেয়েরাও একটু ভালো থাকতে পারতো। সব মিলিয়ে নাটকটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। আশা করছি সময় পেলে আপনারাও দেখার চেষ্টা করবেন।


ব্যক্তিগত রেটিং:

৯/১০

নাটকের লিংক




আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 7 months ago 

আমার কাছে আপনার শেয়ার করা এই নাটকটা রিভিউ খুবই ভালো লেগেছে। এই নাটকটা আসলেই শিক্ষনীয় ছিল। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে হয়তো একই গায়ের রং দিয়ে তৈরি করে নি কিন্তু সৃষ্টির সবকিছুই সুন্দর। অনেকেই হয়তো গায়ের রং নিয়ে অনেক কথা বলে, অনেক হাসিঠা করে। কিন্তু গায়ের রঙের দিকে না তাকিয়ে, একটা মানুষের যোগ্যতার দিকে তাকানো উচিত। মেয়েটাকে নিয়ে সবাই সব সময় অনেক হাসি ঠাট্টা করত। কিন্তু যখন সে একটা স্থান অর্জন করেছে এমন কি সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন সবাই তার সাথে ভালো ব্যবহার করতেছে। কাউকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করার অধিকার আমাদের নেই। আমার কাছে এই নাটকটা খুব ভালো লেগেছে, সময় পেলে দেখার চেষ্টা করব।

 7 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু গায়ের রং নিয়ে কাউকে কিছু বলা উচিত নয়। কারণ সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 7 months ago 

এরকম নাটক গুলোর মধ্যে শিক্ষনীয় ব্যাপার থাকে। আর এই নাটকগুলো আমি খুবই পছন্দ করি। প্রত্যেকটা মানুষের উচিত এই নাটকটা দেখা। তাহলে প্রত্যেকটা মানুষ এই নাটকটার থেকে শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। এই নাটকের পুরো কাহিনী এত সুন্দর ছিল যে আমার কাছে সত্যিই খুবই ভালো লেগেছে। যে মেয়েটাকে নিয়ে প্রত্যেকটা মানুষ হাসির ঠাট্টা করত, সেই মেয়েটা নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক বড় একটা স্থান অর্জন করেছে এটা সত্যি গর্বের বিষয়। তার এই সফলতার কারণেই সে এখন সম্মান পাচ্ছে। আর ওই মহিলাটাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে একেবারে।

 7 months ago 

সত্যি ভাইয়া এই নাটকটি ভীষণ শিক্ষনীয় ছিল। আর এই ধরনের নাটক দেখতে অনেক ভালো লাগে। সত্যি কথা বলতে যোগ্যতা অর্জন করলে তখন সবকিছুই বদলে যায়।

 7 months ago 

রমজান মাসটা সবারই ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কাটে। আমিও বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম নাটকটি দেখব তবে সময় করে উঠতে পারছিলাম না। এখন আপনার রিভিউ টি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। নাটকটির মধ্যে অনেক শিক্ষনীয় দিক আছে। আসলে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে কখনো তাকে বিচার করা উচিত নয়।

 7 months ago 

ঠিক বলেছেন আপু রমজান মাসে সবার ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। তবুও এই নাটক রিভিউ শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 7 months ago 

খুব সুন্দর একটি নাটক এর রিভিউ শেয়ার করেছেন আপনি৷ একদমই সুন্দর একটি নাটক ছিল এটি৷ এই নাটকের ছোট ছোট অনেকগুলোকে ক্লিপ আমি দেখেছিলাম৷ আজকে আপনার কাছ থেকে এই নাটক এর রিভিউ দেখে খুব ভালো লাগলো৷ আসলে এই নাটকগুলোর মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে৷ কারণ এরকম ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে৷ এভাবে প্রতিনিয়ত এরকম ঘটনাগুলো ঘটছে তা দেখেও আমরা না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছি৷ তাই জন্য বিভিন্নভাবে আমাদেরকে শিক্ষনীয় বিষয়গুলোর মাধ্যমে তা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ যা এই নাটকের মধ্যেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটি নাটকের রিভিউ শেয়ার করার জন্য৷

 7 months ago 

নাটকটি সত্যিই দারুন ছিল। আর শিক্ষনীয়ও ছিলো। আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। তাই তো নাটক রিভিউ শেয়ার করেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।

 7 months ago 

আমার কাছেও এই নাটকের অনেকগুলো ছোট ক্লিপ দেখেই এই নাটকটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হয়ে গেল। অবশ্যই চেষ্টা করব দেখে নেওয়ার।

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago 

খুব সুন্দর একটি নাটক রিভিউ শেয়ার করেছেন আপু।নাটকের গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। মানুষের পরিচয় চেহারায় না নিজের যোগ্যতায় হয়।চেহারা খারাপ হলে সকলেই কথা শুনায়।আর একটা ভালো কিছু করলে সকলেই ধন্য ধন্য করে।খুবই ভালো লেগেছে আপনার শেয়ার করা নাটক রিভিউ টি। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি নাটক রিভিউ সকলের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

নাটকের গল্পটি দারুন ছিল। মানুষের উপরের চেহারা দেখেnকখনো কারো যোগ্যতা নির্বাচন করা যায় না। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62716.82
ETH 2447.73
USDT 1.00
SBD 2.65