মায়া||আমার বাংলা ব্লগ [10% shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার
আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগ" সম্প্রদায়ে একটি ব্লগ তৈরি করতে যাচ্ছি। গল্প লিখতে আমার ভালো লাগে। হয়তো মানুষের জীবন থেকেই গল্পের তৈরি হয়। হয়তো আমাদের চারপাশের মানুষের জীবনের মুহূর্তগুলো গল্পের ভাষায় প্রকাশ পায়। তেমনি আজকে একটি সুন্দর গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।
মায়া:
গ্রামের নাম শিমুলতলী। সেই ছোট্ট গ্রামে মায়ার বেড়ে ওঠা। মায়ার জন্মের সময় মায়ার মা তাকে ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। অনাদর, অবহেলায় বেড়ে উঠেছে মায়া। ঘরে তার নতুন মা এসেছে। কিন্তু নতুন মা মায়াকে আপন করে নেয় নি। একদিকে বাবার অভাবের সংসার অন্যদিকে ঘরে সৎ মা। মায়া যেন এক বন্দি কারাগারে বড় হচ্ছিল। মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছোট মায়া ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। মায়া যতই বড় হতে লাগলো তার সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করলো। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা মায়াকে দেখে দুষ্ট লোকের চোখ পড়ে গেল। বখাটেদের উৎপাত যেন মায়ার জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। মায়া নিজেকে গুটিয়ে রাখত। ঘরে সৎ মায়ের অত্যাচার বাইরে বখাটেদের উৎপাত মায়া যেন নিজের জীবনের গতি হারিয়ে ফেলেছিল। ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে মায়ার বাবা মারা গেল।
মায়ার মা মারা যাবার পর তার বাবাই ছিল তার আশ্রয়স্থল। তার বাবাই ছিল তার একমাত্র আপনজন। সৎ মায়ের সংসারে বাবা তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করত। হঠাৎ করে বাবার চলে যাওয়া মায়াকে আরো ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। মায়ার বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ার সৎ মা তার উপর আরো অত্যাচার শুরু করল। মায়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য নানান রকমের ফন্দি আঁকতে লাগলো। হঠাৎ একদিন পাড়ার এক মাতব্বর মায়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল। এর আগেও তিনি চারটি বিয়ে করেছেন। বাবার বয়সী সেই মাতব্বর কে বিয়ে করতে মায়া রাজি হচ্ছিল না। অনেক টাকা লোভ দেখিয়ে মায়ার সৎ মাকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে সেই মাতব্বর। মায়ার সৎ মা লোভে পড়ে সেই লম্পট মাতব্বরের হাতে মায়া কে তুলে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাতব্বরের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে রাতের অন্ধকারে মায়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। অজানা এক পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে মায়া।
রাতের আঁধারে অচেনা পথের উদ্দেশ্যে যখন মায়া বেরিয়ে পড়ে তখন হঠাৎ করে একজনের দেখা পায়। লোকটি দেখতে বেশ ভাল ছিল। যেচে সে মায়ার সাথে কথা বলতে চাইছিল। মায়া প্রথমে তাকে দেখে দূরে সরে গেল। নির্জন এই রাত মায়ার কাছে যেন আরও বেশি ভয়ংকর লাগছিল। হঠাৎ করে সে অনুভব করল সেই লোকটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আর বলছে তোমার ভয় নেই আমি এখানেই আছি। মায়া নিজের কথাগুলো লোকটিকে খুলে বলল। লোকটি তাকে বলল এই পৃথিবীতে কেউ একা নয়। হয়তো মানুষকে আপন করে নিতে হয়। লোকটির কথায় মায়া কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল। এভাবে রাত যত গভীর হতে লাগলো মায়ার ভয় তত বাড়তে লাগলো। ধীরে ধীরে যখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করল তখন মায়া যেন নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখল।
রাতের আঁধারের সাথে সাথে মায়া নিজের অতীতকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। নিজেকে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। তার পাশে যে মানুষটি ছিল তার সাথে মায়ার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সকালে যখন স্টেশনে ট্রেন আসলো তখন সেই লোকটির সাথে মায়া ট্রেনে উঠে পড়ল। অচেনা শহরের উদ্দেশ্যে মায়া রওনা দিল। কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে মায়া যখন শহরে এসে পৌঁছালো তখন শহরের সাজ সজ্জায় মায়া নিজেকে বেমানান মনে করল। আসলে গ্রামের সেই মায়া আজ শহরে এসেছে তাইতো তার কাছে সবকিছু নতুন লাগছে। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে সেই লোকটির সাথে মায়া ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। সেই মানুষটিকে ভরসা করে মায়া তার সাথে তার দেখানো পথে যেতে লাগলো। মায়া যখন দেখল তারা একটি বাড়িতে প্রবেশ করছে তখন সে লোকটিকে বলল এটা কার বাড়ি? লোকটি বলল এটা আমার খালার বাড়ি। তুমি এখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। তুমি এখানে নিজের বাড়ির মতই থাকবে। মায়া খুশি মনে সেই বাড়িতে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল সেই বাড়িতে আরো কিছু মেয়ে আছে। মায়াকে সেখানে রেখে লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল তখন মায়া পেছন থেকে তাকে ডেকে বলল আপনি কবে আসবেন? লোকটি বললো আমি সবকিছু ঠিক হলেই তোমাকে নিয়ে নতুন সংসার করবো। আমাকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। এবার মায়া বলল আমি আপনার অপেক্ষায় রইলাম।
দিনের আলো যখন ফুরিয়ে গেল চারপাশে যখন সন্ধ্যা নামতে শুরু করলো। তখন সেই বাড়ির পরিবেশ একবারে বদলে গেল। মায়ার কেন জানি সেখানে আর ভালো লাগছিল না। সবকিছুই যেন তার কাছে বিষাক্ত লাগছিল। হঠাৎ করে মায়া অনুভব করল তার ঘরে অন্য কোন মানুষ এসেছে। সেই ভয়ংকর লোকটির লালসার শিকার হয়ে গেল মায়া। নিজের শেষ সম্মানটুকু রক্ষা করতে পারল না। তার কান্না সেদিন কেউ দেখেনি। চার দেয়ালের মাঝে মায়া বন্দী হয়ে গেল। সেদিন মায়া চিৎকার করে কেঁদেছিল। কিন্তু কাউকে পাশে পাইনি। নতুন শহরে এসেও মায়ার যেন শান্তি নেই। চারপাশের মানুষের লালসার শিকার হয় মায়া। নিজের শেষ সম্মানটুকু রক্ষা করতে পারেনি সে। বিষাক্ত এই জীবনে মায়া নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিল না। যাকে ভরসা করে মায়া এখানে এসেছিল তার প্রতীক্ষায় মায়া বসে ছিল। কিন্তু প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। কারণ মায়া বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। যাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিল সেই মানুষটি তাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে। অবশেষে মায়া নিজেকে আর আটকাতে পারল না। এই মানুষরূপী পশুদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নিজের গায়ে জড়ানো শাড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল। যেই শাড়ি পরে নতুন বউ সাজার স্বপ্ন দেখেছিল সেই শাড়ি আজ তার গলায় ঝুলল। এই বিষাক্ত পৃথিবী মায়াকে বাঁচতে দিল না।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মায়া আছে যারা ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে ভুল জায়গায় চলে আসে। হয়তো সেখান থেকে মুক্তির কোন পথ খুঁজে পায় না। হয়তো নিজের জীবন দিয়েই মুক্তি পায় তারা। এরকম হাজারো মায়া চার দেয়ালের মাঝেই কেঁদে মরে। হয়তো কেউ তাদের কান্না বোঝেনা। চার দেয়ালের ইটের মাঝেই তাদের কান্না গুলো আটকে যায়। হয়তো কারো হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই তো তাদের জীবন দিয়ে নিজেকে মুক্ত করতে হয়।
একদম সত্যি এবং বাস্তবসম্মত একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সত্যি এরকম অনেক মায়া রয়েছে যারা তাঁর জীবন দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় আমি একজন মানুষ কোন একটি খারাপ কাজ করার আগে অনেক চিন্তা করে অনেক ভেবে নিজের বিবেকের কাছে হেরে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসি। কিন্তু যারা এরকম সহজ সরল মায়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে কিছু টাকার বিনিময়ে, তাদের বিবেক গুলো কোথায় থাকে তাদের তো এরকম মা বোন থাকে কিভাবে তারা পারে এরকম একটা মেয়েকে তার জীবনের শেষ সীমানায় পৌঁছে দিতে? আমি ভেবে পাইনা। আসলে আমাদের মনুষত্ববোধক কোথায় সামান্য কিছু টাকার কাছে নিজের মনুষ্যত্বগুলোকে এভাবে বিক্রি করে দেই আমরা। খুব খারাপ লাগে। তবে এই ধরনের গল্প আমরা যদি সবাই ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়ি আমার বিশ্বাস আমাদের সকলেরই বিবেক জাগ্রত হবে। ধন্যবাদ আপনাকে এত চমৎকার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জীবনের বাস্তবতা থেকে গল্প গুলোর তৈরি হয়। হয়তো এমন অনেক মায়া আছে যারা নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। আর এমন মানুষ আছে যারা নিজের বিবেককে বিক্রি করে দিয়ে মায়ার মত মেয়েদেরকে বিপদের মতো ফেলে দেয়। ভাইয়া আপনি আমার পোস্ট পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এমনই অনেক মায়ারা হারিয়ে যায় ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে। অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটি আপু। ধন্যবাদ সুন্দর বাস্তবধর্মী গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
হয়তো মানুষকে বিশ্বাস করে একজন অন্য পথে হারিয়ে যায় কিন্তু সেই মানুষটি যখন বিশ্বাস ভেঙে দেয় এবং নিজের বিবেক বিক্রি করে দেয় তখন আর কিছুই করার থাকে না।
এটি গল্প হলেও আমাদের সমাজে এরকম অসংখ্য মায়া রয়েছে। এরা সমাজের কুৎসিত মানুষের লালসার শিকার হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে মায়ার ভাগ্যটা ভীষণ খারাপ বলতে হয় কারন সে জীবনে কোন আশার আলো দেখতে পায়নি। শেষ পর্যন্ত করুন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
খুব ভালো লিখনী ছিল।
সমাজের বাস্তব চিত্রগুলো থেকেই গল্পের তৈরি হয়। হয়তো এরকম অনেক মায়া আছে যারা সমাজের কুৎসিত মানুষের লালসা শিকার হয়। হয়তো অনেক কথাই অপ্রকাশিত থেকে যায়। কিন্তু তারা তাদের জীবন দিয়ে সবকিছুর সমাপ্তি টেনে যায়।